জালিমের ফাঁসি হোক, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক, রাজাকারদের ফাঁসি হোক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে শক্তিশালী রাজা-বাদশাহ-একনায়ক কর্তৃক দুর্বল প্রতিবেশী দেশ দখল ছিল স্বাভাবিক বিষয়। তখন ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতিই কার্যকর ছিল। সে সময় বিশাল আকারের ভূমির মালিক রাজশক্তি দূরবর্তী এলাকায় দখলীকৃত ভূখন্ডে আশ্রিত রাজ্য ও করদ রাজ্য স্থাপন করত।
১ম ও ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী দেশ দখল প্রক্রিয়া আধুনিকতার মুখোশ পরে এবং দখলে রাখার চেয়ে বিভিন্ন কৌশলে টার্গেটরত দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করার নীতি গ্রহণ করে। এ নীতিকে বৈধতা দেয় সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট জাতিসংঘ।
এভাবে আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। প্রাচীনকালে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দখলীকৃত দেশের জনগণের ভালো-মন্দ, সুখ-দুঃখের ব্যাপারে কম-বেশি যত্নবান ছিল কিন্তু তথাকথিত আধুনিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি টার্গেটকৃত দেশের জনগণের সুখ-দুঃখ ভালো-মন্দ বা জীবনমৃত্যু নিয়ে মাথা ঘামায় না।
তাদের লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দু হলো সংশ্লিষ্ট দেশ লুণ্ঠন করা, গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে দেশের জনগণকে নিশ্চিহ্ন করা, মিশনারী-এনজিওদের মুসলমানদের ধর্মান্তর করা এবং মুসলমানদের মধ্যে মতবাদ-মতভেদ তৈরি করে হানাহানিতে লিপ্ত করিয়ে ভূখন্ডটি অবাধে ব্যবহার করার অধিকার লাভ করা। এজন্য বর্তমান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সংশ্লিষ্ট দেশে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অথবা জোরপূর্বক তাঁবেদার শক্তি প্রতিষ্ঠা করে উক্ত তাঁবেদারকে দিয়ে দেশপ্রেমিকদের নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে গৃহযুদ্ধ বাঁধায় এবং গৃহযুদ্ধ বন্ধের অজুহাতে সংশ্লিষ্ট দেশে বহুজাতিক বাহিনী অথবা তথাকথিত জাতিসংঘ বাহিনী প্রেরণ করে। উক্ত বাহিনীর কাজ হলো তাঁবেদার পুতুল সরকারকে রক্ষা করা এবং সাম্রাজ্যবাদী লুটপাট নির্বিঘ্ন করা।
শোষণ লুণ্ঠন নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে তাঁবেদার সরকারের অনুষঙ্গ হিসেবে সংশ্লিষ্ট দেশে গৃহযুদ্ধ অনিবার্যভাবে সংঘটিত হয়। কেননা সংশ্লিষ্ট জাতির আত্মমর্যাদাসম্পন্ন স্বাধীনচেতা জনগণ তাঁবেদার সরকার ও তার প্রভুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।
ইহুদীবাদী ইহুদীরা কর্তৃক রচিত উনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন মতবাদ যথা- ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মতবাদ, সমাজতান্ত্রিক মতবাদ, ডারউইনিজম, ভৌগোলিক, আঞ্চলিক, ভাষাগত জাতীয়তাবাদী মতবাদসমূহ এবং বস্তুবাদী ও ভোগবাদী সভ্যতা উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিশ্বের প্রতিটি দেশে নীতি-নৈতিকতাহীন পাশ্চাত্যপন্থী অসংখ্য তাঁবেদার সৃষ্টি হয়।
চরিত্রহীন, লম্পট, মদ, নারী ও নেশায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত এসব মেরুদন্ডহীন লোভী ব্যক্তিদেরকে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দেশে বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে প্রতিষ্ঠিত করে।
সময় সুযোগ মতো এদেরকে অর্থ-বিত্ত ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নিজ দেশ ও জনগণের সর্বনাশ সাধনে কাজে লাগায় এবং এদেরকে দিয়ে তাঁবেদার সরকার ও দল গঠন করে।
যে সকল সেক্টর থেকে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের এজেন্ট রিক্রুট করে তা হলো : নৈরাজ্যবাদী কমিউনিস্ট, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী দল ও গোষ্ঠী, জাতিসংঘ-বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-আমেরিকান সিটি ব্যাংক-এর সংশ্লিষ্ট দেশের কর্মচারী, সাম্রাজ্যবাদী দেশ কর্তৃক পরিচালিত বহুজাতিক কোম্পানি ও এনজিওর কর্মচারী, গোত্রীয় জাতিগত ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, পাশ্চাত্যপন্থী বুদ্ধিজীবী, চরিত্রহীন, লম্পট-অর্থ আত্মসাৎকারী ব্যক্তি, পলাতক সন্ত্রাসী, নেশাখোর ব্যক্তি, দুর্নীতিপরায়ণ ও লোভী রাজনীতিক-সামরিক কর্মকর্তা- আমলা ও ব্যবসায়ী, পাশ্চাত্যপন্থী ইসলাম উনার বিদ্বেষী সাংবাদিক, ইহুদীবাদী ইহুদী কর্তৃক পরিচালিত লায়ন ও রোটারী ক্লাব সদস্য, বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক বাহিনীতে কর্মরত অনুগত কর্মকর্তা, কাদিয়ানী ও বাহাই সম্প্রদায়, ইসকন, ধর্ম ব্যবসায়ী ফেরকার মাওলানা-অধ্যাপক ইত্যাদি।
বর্তমান বিশ্বের সকল তাঁবেদার দল ও সরকারের শ্রেণীচরিত্র একই। সাম্রাজ্যবাদীরা সবসময় সংখ্যালঘু ও চরিত্রহীনদের নিয়ে তাঁবেদার দল ও সরকার গঠন করে। যাতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে গঠিত সরকার সংখ্যাগুরুদের ভয়ে সাম্রাজ্যবাদের পক্ষপাতে আশ্রয় নিয়ে করদ রাজ্যে বা আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
যেমন- ১. বাংলাদেশে ফখরুদ্দীন, ভারতের মনমোহন সিং, আফগানিস্তানের হামিদ কারজাই ও ইরাকের নূরী আল মালিকী, মিশরের বর্তমান বিরোধী দলের প্রধান এল বারাদি বিশ্বব্যাংক ও বহুজাতিক কোম্পানি কর্মকর্তা ছিল। এরা সাম্রাজ্যবাদীদের এজেণ্টরূপে সব সময় তাদের আশ্রয়েই থাকে।
২. ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী দস্যু শক্তি বিভিন্ন দেশে যাদেরকে ক্ষমতাসীন করে তারা ছিল সংখ্যালঘু। যথা- সিরিয়ায় যে হাফেজ-আল আসাদ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয় সে সরকারের শাসক সম্প্রদায়, বড় ব্যবসায়ী ও সামরিক কর্মকর্তারা আলভী শিয়া (মাত্র ৭%) অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সুন্নী মতাবলম্বী। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।