আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন : দ্য ইকোনমিস্ট

void(1); লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছেন (দ্য প্রাইম মিনিস্টার সেটস দ্য কান্ট্রি অন এ ড্যাঞ্জারাস পাথ)। এ অবস্থায় বাংলাদেশকে ধ্বংস থেকে শেখ হাসিনাকে নিবৃত্ত করতে দিল্লির সচেষ্ট হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছে সারা বিশ্বে বহুল পঠিত এই সাময়িকীটি। ইকোনমিস্টের চলতি সংখ্যায় ‘বাংলাদেশ’স টক্সিক পলিটিক্স, হ্যালো দিল্লি, ইট ইজ আপ টু ইন্ডিয়া টু ট্রাই টু স্টপ শেখ হাসিনা রুইনিং বাংলাদেশ’ শিরোনামে ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় ৩৩ নেতাকে অগ্নিসংযোগের সাজানো মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। জানুয়ারি মাসে একটি অদ্ভুত সামরিক অভ্যুত্থানের গুজবের খবরকে সামরিক বাহিনীর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে শেখ হাসিনা যতই কঠোর হচ্ছেন জনগণ ততই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

ঈষত্ সংক্ষেপিত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো। অনুবাদ করেছেন ইলিয়াস হোসেন। বাইরের বিশ্ব বাংলাদেশ সম্পর্কে খুব কমই নজর রাখে। কারণ এর কোনো কিছুরই পরিবর্তন হয় না। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্ব সঙ্কটে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের ১৭ কোটি দরিদ্র মুসলমান পৃথিবীর নিকৃষ্ট শাসনের মধ্যে বসবাস করছে। যেহেতু এদেশের রাজনীতিকরা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে আগ্রহী নয়, তাই বাইরের বিশ্বকে একাজ করতে হবে। নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যখন পালাক্রমে দেশ শাসন করেছিলেন তখন অবস্থা খারাপ ছিল, কিন্তু বর্তমানে অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের ১৮ মাস আগে বাংলাদেশে রাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ হচ্ছে, বিরোধী দলের নেতাদের জেলে পাঠানো হয়েছে, রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে গুম আর খুন বেড়েছে। আগামী নির্বাচন কার অধীনে হবে এবং স্বচ্ছ হবে কিনা তা নিয়ে বিবাদ দেখা দিয়েছে।

এ অবস্থায় অনেক পর্যবেক্ষক সন্দিহান হয়ে পড়েছেন যে, দেশটিতে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা। বাংলাদেশে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাপক লোডশেডিং এবং নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়া নিয়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, এ অবস্থার জন্য সরকারই দায়ী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক খারাপ কাজের তালিকা বলেছেন তিনি। বিরোধী দলের একজন তরুণ নেতাকে (ইলিয়াস আলী) এক মাস আগে অপহরণ করা হয়েছে এবং খুব সম্ভবত তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এর আগে (বিএনপির) আরও দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে। বেগম জিয়া বলেছেন, এ ঘটনায় প্রায় ৩ হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা শুধু ভীতি প্রদর্শনের জন্য নয়, আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্যও করা হয়েছে। আরও অনেক অন্ধকার দিক রয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরও অনেক রহস্যজনক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

সৌদি কূটনীতিককে হত্যা করা হয়েছে। ট্রেড ইউনিয়ন নেতা আমিনুল ইসলামকে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। দুর্নীতি তদন্ত করায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে ইকোনমিস্টের এই সংবাদদাতার পথ অনুসরণ করেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। জানুয়ারি মাসে একটি অদ্ভুত সামরিক অভ্যুত্থানের গুজবের খবরকে সামরিক বাহিনীর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

দেশের সবচেয়ে স্বনামখ্যাত ব্যক্তি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হেনস্তা করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বাতুলতা রোগে আক্রান্ত শেখ হাসিনা তাকে রাজনৈতিক হুমকি বলে মনে করে থাকেন। এ মাসে ঢাকা সফর করার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাত্ করে তাকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। মন্ত্রীরা তার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং সরকার তার গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যাপারে তদন্ত করার জন্য কমিশন গঠন করেছেন।

ড. ইউনূস বলেছেন, ‘আমরা খুবই উদ্বিগ্ন, যে কমিশন গঠন করা হয়েছে তাকে মালিকানার বিষয়ে সুপারিশ করতে বলা হয়েছে। ’ কার্যত সরকার গ্রামীণ ব্যাংককে গ্রাস করতে চায়। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির দীর্ঘ অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি এতটা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে যে, দাতারাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুতে ঋণদান বন্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দাতা দেশ জাপানের উপ-প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে দুর্নীতি বন্ধের কথা বলেছেন। দুর্নীতির অভিযোগে রেলমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধ্যমে তাকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাকে মন্ত্রিসভায় পুনর্বহাল করা হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা নিয়ে জোরালো সন্দেহ দেখা দিয়েছে। হিলারির কথা ফের উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবশ্যই সব দলের অংশগ্রহণে হতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে, নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে বিরোধী দল অংশ নিতে পারে।

অত্যন্ত লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের ইসলামপন্থিদের এবং ভারতের বিদ্রোহীদের দমন এবং বাংলাদেশের বাজার খুলে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে বাহবা দিলেও ভারতের কংগ্রেস পার্টি বর্তমানে সঙ্গত কারণেই অবস্থানের পরিবর্তন করেছে। ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত্ করে তাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। খালেদা জিয়াও ভারতকে বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী বলে মন্তব্য করেছেন, যা দলটির ভারত বিরোধিতার নীতির পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত। শেখ হাসিনা যতই কঠোর হচ্ছেন জনগণ ততই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

বিরোধী দলে থাকার সময় যে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য তিনি মাসের পর মাস আন্দোলন করেছেন, ক্ষমতায় এসে সংবিধান পরিবর্তন করে তিনিই সেই ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনে পরিণতি উপলব্ধি করে শেখ হাসিনা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে আলোচনার পথ খোলা রাখতে চাচ্ছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বেগম খালেদা জিয়া বিক্ষোভ সমাবেশ এবং অনশন পালন করেছেন। তবে শুধু রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীই নয়, নাগরিক সংগঠনের ওপরও শেখ হাসিনা খড়্গহস্ত হয়েছেন। বেসরকারি সংগঠনের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি।

বিরোধী দলের বিরুদ্ধেও লুটপাট, দুর্নীতি ও ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ আছে এবং তারা এসবকে লুকাতে চায় না। একজন প্রবীণ বিএনপি নেতা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন যদি বিএনপি বয়কট করে তবে বিএনপি সমর্থকরা রাস্তায় ২০ দিন বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালাবে। ঢাকার জরাজীর্ণ সড়কের মতোই বাংলাদেশের রাজনীতিও যানজটকবলিত। আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিদেশি কূটনীতিক এবং পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

তাদের মন্তব্য, বাংলাদেশের সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে । সংবাদ সূত্র মূল প্রতিবেদন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।