আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৌমিত্র – প্রিয় বন্ধু, প্রিয় সহকর্মী

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় মোবাইলটা বেজেই চলেছে। এত ভোরবেলা কে ফোন করছে? আজ কি আমার মর্নিং শিফট? না, নাতো , আজ আমার জেনারেল শিফট ডিউটি। চোখে চশমা নেই, তাই অনেক হাতড়ে বের করলাম মোবাইল ফোনটা। আলভির ফোন। “আলভি, কি ব্যাপার?” আমি বললাম।

ওপাশ থেকে আলভি বলছে,“পরাগ ভাই, উঠছেন? একটা ব্যাড নিউজ আছে। সৌমিত্র ভাই মারা গেছে। নাফিজ ভাই যাচ্ছেন উনার বাসায়। আপনিও চলে যান উনার বাসায়। ” আমি বিস্ময়-হতবাক-হতবুদ্ধি হয়ে বললাম,“ঠিক আছে”।

ফোনটা কেটে গেল। আমি তাড়াতাড়ি ক্যালেন্ডার দেখতে লাগলাম, আজ কি পয়লা এপ্রিল নাকি? না, আজ ছাব্বিশে নভেম্বর। নাফিজ ভাইকে ফোন করলাম, “ভাই, কি হইছে?’’। “কিছুই তো বুঝতে পারছিনা। তুমি চলে এসো, চকবাজার অলি খাঁর মসজিদের সামনে।

”কোনরকম মুখটা ধুয়েই বের হয়ে পড়লাম। রিকশা ভাড়া মেটানোর সময়ই দেখতে পেলাম নাফিজ ভাই আর আজাদ ভাইকে। নাফিজ ভাই বলল, “রাত তিনটের সময় নাকি সৌমিত্রের রুম থেকে তীব্র গোঙানির আওয়াজ আসছিল। তখনই সৌমিত্রের মা যান ওর ঘরে। ছেলের মাথাটা কোলে নিয়ে মা জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে? মা ছেলেকে পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করেন।

বন্ধ হয়না গোঙানি। আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে যায় দেহটা। ঠোঁটের কোণা দিয়ে বের হতে থাকে ফেনা। অ্যাম্বুলেন্স আসে, পাশেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। ডাক্তার নাড়ী দেখে, একটা কাগজে সাইন করলেন – ব্রট ইন ডেড- ডেথ সার্টিফিকেট।

” ছাব্বিশ বছরের একটা ছেলে। বলা নেই, কওয়া নেই, এভাবে চলে যেতে পারল। বন্ধুরা, সহকর্মীরা সান্ত্বনা দেয়,“সৌমিত্র বোধ হয় এতটুকু আয়ু নিয়েই এসেছিল। ” মন যে মানে না। ওপর-ওয়ালা ‘মায়া’ জিনিসটা কেন দিলেন? নিথর পড়ে আছে দেহটা, এখনো তাজা।

অশ্রু-আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে গেছে। বুক ফেটে কান্না আসে। গতকাল বিকেলেইতো ওর সাথে ক্যান্টিনে বসে চা-সিঙ্গারা খেলাম। কত্ত মজার মজার কথা বললাম। “লাভ ইন দ্যা টাইম অফ কলেরা” সৌমিত্রের প্রিয় একটা মুভি।

আমি অনেকবার ওকে মুভিটা আনতে বলেছি, কিন্তু নবাবজাদার আনতে মনে থাকেনা। আমি বললাম, “আজকে বাসায় গিয়ে তোমার প্রথম কাজ হচ্ছে মুভিটা পেন-ড্রাইভে কপি করা। ” কিন্তু ওর কাছ থেকে এই মুভি কখনও আমার পাওয়া হয়নি। পরে নাফিজ ভাইয়ের কাছে জেনেছি, ওর পেন-ড্রাইভ ঘেঁটে পাওয়া গিয়ে ছিল এই মুভিটা। এইত কিছুদিন আগের কথা।

আমি আর কায়সার একইদিনে চাকুরিতে জয়েন করলাম। কায়সার একজন হাসিখুশি ছেলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল, নাম সৌমিত্র দাস। এখানে ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টে জয়েন করেছে আমাদের কিছুদিন আগে। চুয়েট থেকে পাস করা, চিটাগাং এর ছেলে। খুব স্বতঃস্ফুর্ত একটি ছেলে, নিমিষেই আপণ করে নিল।

ভাল মানুষ দুনিয়াতে বেশিদিন বাঁচেনা। সৌমিত্রের কথা ভাবলে মনে হয় খুব সে খুব চমৎকার একটি ছোটগল্প – ঝটপট শুরু আর কাহিনী ডালাপালা মেলার আগেই শেষ। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।