আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আগাম নির্বাচনের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ!

আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। বেশ কয়েকটি ইস্যুকে সামনে রেখে আগামি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতেই সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনাও চলছে ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ পর্যায়ে। স্বাভাবিক হিসাবে আগামি ২০১৩ সালের শেষে বা ২০১৪ সালের শুরুতে দশম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। আগাম নির্বাচন হলে অন্য রাজনৈতিকদলগুলো কী সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেসব নিয়েই সরকারি উচ্চ পর্যায়ে এখন পর্যালোচনা চলছে। প্রধান বিরোধীদল পুরো প্রস্ত্ততির সুযোগ না থাকায় রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে আগাম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে- এমনটাই প্রত্যাশা সরকারি দলের।

আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ পর্যায়ে নেতা আগাম নির্বাচনের কারণ হিসেবে বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বিরোধীদলের অবস্থানের বিপরীতে দলীয় সরকারের অধীনের নির্বাচনের ইস্যুতে আওয়ামী লীগ কঠোর। এ ইস্যুতে মেয়াদের শেষ প্রান্তে বিরোধীদলকে অস্থিতিশীল কোনো অবস্থার সৃষ্টির সুযোগ দিতে রাজি নয় সরকার। এজন্যই আগাম নির্বাচন। অন্য আরেক নেতা জানান, অতীতের অভিজ্ঞতা বলে মেয়াদের শেষ দিকে স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসন সরকারের কথা শুনতে চায় না। পুলিশ প্রশাসনও দূরে সরে যায়।

প্রশাসনের কোনো কোনো অংশ সরাসরি বিরোধীদলের পক্ষে নামে। এতে ক্ষমতাসীন সরকার বেকায়দায় পড়ে। তাছাড়া সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে বিরোধী দলের কর্মীরাও উৎসাহের সঙ্গে যে মাঠে নামবে সেটিও আওয়ামী লীগ জানে। এসবের কোনোটারই সুযোগ না দিতে আগাম নির্বাচন। আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় উদ্বিগ্ন কূটনৈতিক অংশীদার ও উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আগাম নির্বাচনের মাধ্যমে এক নতুন বার্তা দিতে চায় সরকার।

বোঝাতে চায় আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের প্রতি অনুরক্ত, তাই মেয়াদের আগেই নির্বাচন দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সূত্রগুলো জানিয়েছে, এসব দিক বিবেচনা করে আগাম নির্বাচনের ইস্যুতে চিন্তভাবনা চলছে। কোনো কিছুই এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে আওয়ামী নেতাদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগের নির্দেশ আছে দলের পক্ষ থেকে। এটা আগামি নির্বাচনকে সামনে রেখেই।

অপরদিকে, আগাম নির্বাচনের জন্য মোটেও প্রস্ত্তত নয় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোনো আন্দোলনও তারা জমিয়ে তুলতে পারেনি বিভিন্ন মামলার কারণে। এমন অবস্থায় আগাম নির্বাচন দিয়ে সরকারি দলের ফায়দা তুলতে চাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলেই নির্বাচনের প্রস্ত্ততি শুরু হবে, এমনটাই বিএনপির মনোভাব। যদি আগাম নির্বাচন হয় তাতে বিএনপি সম্পৃর্ণ অপ্রস্ত্তত থাকবে।

আর বিভিন্ন মামলার কারণে তারেক রহমান আগাম নির্বাচনের আগে দেশে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়েও আছে সংশয়। যদি বিএনপির দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়কের আদলে অন্য কোনো রকমের সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন করা হয়, তাহলে বিএনপি’র সেখানে অংশ না নেয়াটাও হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্নসাপেক্ষ। জনগণও বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ নাও করতে পারে। সরকারি এক শীর্ষ নেতার মতে, ‘এটাই রাজনৈতিক কৌশল। এই সুবিধা নিতে পারাটাই রাজনীতি।

’ সূত্রের খবর, জাতীয় পার্টির বিষয়ে সতর্কাবস্থানে আছে আওয়ামী লীগ। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিরোধীদলের ভূমিকায়ই রাখতে চান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির নির্বাচনের অংশ নেয়া বা না নেয়ার পটভূমিতে এরশাদকেই তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করা হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় পার্টিকে যেকোনো অবস্থাতেই পাশে পাবে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, এ ধরনের পরিস্থিতি হলে জাতীয় পার্টিতে ভাঙন দেখা দিতে পারে।

তবে ‘জাতীয় পার্টির ভাঙনকে বড় কোনো ইস্যু মনে করেন না ক্ষমতাসীনরা। এরশাদ কোন দিকে যাবেন সেটাই মুখ্য। আর জেলের বাইরে থাকতে ক্ষমতাসীনদের থেকে দূরে থাকা এরশাদের পক্ষে সম্ভব নয়’ মন্তব্য সরকার দলীয় নেতার। অপর রাজনেতিক শক্তি জামায়াতে ইসলামীর অবস্থানকে বেশ কৌশলগত বলে মনে করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুতে বেশ চাপে থাকা জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই সরকারের সঙ্গে ‘গোপন সম্পর্ক’ রক্ষা করছে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

তবে দলগতভাবে না হলেও ব্যক্তিগতভাবে অনেক জামায়াত নেতা সরকারের সঙ্গে যে সম্পর্ক রাখছেন তা এখন ওপেন সিক্রেট। আগাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে জামায়াতের সবুজ সংকেত পাবে বলে আশা করছে আওয়ায়ী লীগ। বলা হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে বিএনপি নেতারা এখন আর মুখ খুলছেন না। বিষয়টি জামায়াতকে ক্ষুব্ধ করেছে। সরকার মনে করে এতে এই দুই দলের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

একারণেই হয়তো বিএনপি নেতারা আদালতে হাজির হলেও জামায়াত নেতারা হননি। জামায়াত নেতাদের গ্রেফতারের ব্যাপারে সরকারের তৎপরতার ঢিলেমিকে সরকারের কৌশল হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জামায়াতের ব্যাপারে চাপ এবং ছাড়- এ দু’টো পথেই এগুচ্ছে আওয়ামী লীগ। দেশের রাজনৈতিক উত্থান-পতনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, জাতির ক্রান্তিলগ্নে অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকে জামায়াত। কোনো একটি বিষয়ে জামায়াতের অস্থিতিশীলতার নজির অতীতে রয়েছে।

১৯৮৬ সালে এরশাদের অধীনে আওয়ামী লীগ এবং জামায়াত নির্বাচনে গিয়েছিল। তখন বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। আবার জামায়াতের সমর্থন নিয়ে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করে। আবার ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জামায়াত বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এককভাবে নির্বাচনে গিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার পথকে সুগম করেছে।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দেখা যায়, অন্তত ৩৪টি আসনে জামায়াত-বিএনপির ভোটের সংখ্যা ছিল আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি। কিন্তু ওই আসনগুলোতে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ এবং ক্ষমতায় আসে। এসব কারণে সরকারি দল আশা করছে, আগামী নির্বাচনে তারা জামায়াতকে অংশীদার করতে পারবে। আর জামায়াত যদি আগামী নির্বাচনে আসে, তাহলে বিএনপি না আসার বিষয়টি ততো জোরালো হবে না বলে বলছেন সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারক সূত্রটি বার্তা২৪ডটনেট/ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।