খোঁচাইলে উষ্টা দিমু .. বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ইরাক,আফগানিস্তান দখল;বিশ্ব হারামী ইসরাইলীদের যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনের ভূখন্ড দখলের জন্য ভয়ংকর মরনাস্ত্র ব্যবহার করা লাগে যেমনি,তেমনি আমাদের দেশের সরকারের পদলেহী থুক্কু ‘সরকারসেবী’ পুলিশেরও ভয়ঙ্কর সব অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে পাবলিকের উপর ঝাঁিপয়ে পড়ে রাজপথ দখলে নেওয়া লাগে। যাদের কাছে পড়ালেখা করে শিক্ষিত হয়ে পুলিশ হয়েছে সে শিক্ষক সমাজের কাছ থেকে রাজপথ দখলে নিতে পুলিশ হরেকরকম অস্ত্রের ব্যবহার করেই ক্লান্ত হয়না শুধু। অসভ্য ভাষায় গালি দিয়ে জানিয়ে দেয় আমজনতা,বিরোধীদল কিংবা শিক্ষক সবই এক!
হাজার হাজার মাইল দূরের বিশ্ব মোড়ল আর বিশ্ব হারামীরা থেকে শুরু করে বাকশালী ডাইনীর বাকশালী পুলিশ সবারই দখলের অন্যতম হাতিয়ার হরেকরকম মরনাস্ত্র। কিন্তু পুরুষের মন দখলের জন্য নারী জাতির কোন মরনাস্ত্র ব্যবহার করা লাগে না। মেয়েদের মধুর কন্ঠের ‘ভাইয়া’ ডাকই পুরুষের মনে এমন ভাবেই দোলা দেয় যে মন দখল হয়ে যায় কয়েক সেকেন্ডে।
‘আল্লাহ!ভাইয়া,আপনার কন্ঠ যা সুইট না’;‘ভাইয়া,আপনি এত্ত এত্ত ভাল যে কি বলব’;‘জানেন ভাইয়া,আপনার মত ভদ্রছেলে আমার জীবনেও একটা দেখিনি’;‘ওফ!ভাইয়া এইমাত্র আপনার কথা ভাবছিলাম আর আপনি এসে গেলেন!’ টাইপের ডায়লগ দিয়ে স্বার্থ উদ্ধারের কোন জুড়ি নেই মেয়েদের।
জীবনে প্রথম ‘ভাইয়া’ ডাকের খপ্পরে পড়ি ঢাকার একটি সিনেমা হলে। ঢাকায় তখন আমি একেবারেই নতুন। বাংলা সিনেমার কঠিন ভক্ত রুমমেট মাসুমের একদিন শখ জাগলো আমার সাথে ছবি দেখবে। নাছোড়বান্দা মাসুমকে কোনভাবেই বোঝাতে পারলাম না,৩ঘন্টা নষ্ট করে বাংলা সিনেমার জলহস্তিনীদের নাচুন-কুদন দেখতে মোটেও আগ্রহী না।
নিরূপায় হয়ে ৬টা-৯টা শো দেখার জন্য সিনেমা হলে গেলাম। টিকেটের জন্য কাউন্টারের দিকে যাব অমনি পেছন থেকে বেশ মিষ্টিসুরে ‘ভাইয়া’ ডাক শুনে দেখি পেছনে দাঁড়ানো বেশ সুন্দরী দু’টি মেয়ে। একজন বেশ আহলাদি সুরে বলল-ভাইয়া,এই প্রথম হলে ছবি দেখতে এসেছি। কি করব বুঝতে পারছিনা। টাকা দিচ্ছি।
আমাদের জন্যও দুটি টিকেট নিন প্লিজ।
সুন্দরীদের আবদার বলে কথা! মাসুম মেয়েদুটোর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ৪টি টিকেট আনল। ছবি শুরু হতে বাকী পনের মিনিটের মধ্যে দাঁিড়য়ে চা খেতে খেতে পরিচয় পর্ব হয়ে গেল মিতু,নীতুর সাথে। একসাথে হলের ভেতর ঢুকলাম। মাসুম আমাকে বাম পাশে রেখে মিতু,নীতরু পাশে বসতে চাইলেও সুযোগ পেলনা।
উল্টো আমাদের দুইজনকে দুইপাশে রেখে মাঝখানে বসে পড়ল মিতু,নিতু। সিনেমা শুরু হলে নায়কের রিক্সার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে বড় হয়ে যাওয়া এবং নায়িকার সাথে ধাক্কা খেয়ে প্রেমে পড়ে যাওয়া পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে দেখলেও আর দেখতে ইচ্ছা হলনা। পরিচালকের ১৪গুষ্টি উদ্ধার করার কষ্টটুকু না করে এরচাইতে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া অনেক ভাল। তাই চোখ বন্ধ করলাম। সিটে বসে শীতল পরিবেশের বেশ আয়েশী ঘুম নীতুর খোঁচায় ভেঙে গেল।
সিনেমা শেষ কিনা জানতে চাইতেই নীতু জানাল বাসা থেকে কল এসেছে তাই তাদের চলে যেতে হচ্ছে। মিষ্টি হাসি উইথ ধন্যবাদ দিয়ে ওরা চলে গেল।
সিনেমা শেষে বাইরে বেরিয়ে চা খেয়ে মানিব্যাগ বের করতে গিয়ে দেখি মানিব্যাগ নেই। মাসুমেরও একই দশা!বুঝতে বাকী রইলনা ‘ভাইয়া’ ঢেকে আমাদের সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে!সেই থেকে কোন মেয়ে ভাইয়া ডাকলে বুক ধক করে উঠত। কিন্তু,আজকে ‘ভাইয়া’ ডাক শুনে মনটা ত্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেল।
যার জানের জান প্রাণের প্রাণ,কলিজার টুকরা ছিলাম সেই রুমু ওর স্বামীর সামনে আমাকে ভাইয়া না ঢেকে অনন্ত বন্ধু পরিচয় দিতে পারত!কত সহজভাবে ৪বছরের প্রেমিককে দুইমাসের স্বামীর সামনে ভাইয়া বানিয়ে দিলরে দোস্ত!
-আধঘন্টা ধরে তোর বকবক সহ্য করেছি। ‘ভাইয়া সমাচার’ নাম দিয়ে তুই ব্যর্থ প্রেমের উপন্যাস লিখ আমি গেলাম।
রাজুর বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি রাত ৮টা। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ি রোড়ে এই সময়টায় ঝানজট আর গাড়িতে প্রচন্ড ভীড় থাকে। তার উপর ২০১২সালের অন্যতম সেরা জোকস ‘আমি আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রনে সফল’ সাহারা খালার সফল বাংলাদেশে টিউশনি করে পাওয়া ৪হাজার টাকা নিয়ে গাড়ির মধ্যে উঠার সাহস পেলাম না পকেটমারের ভয়ে।
এসি বাসের কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো রিক্সাকে ‘মামা যাত্রাবাড়ি যাবা?’ বলা শেষ হবার আগেই টাইট জিন্স আর টিশার্ট পড়া একটা মেয়েও একই রিক্সাকে ডাক দিল। আশপাশে তাকিয়ে দেখি আর রিক্সা নেই। সুন্দরী মেয়েকে রিক্সায় না উঠিয়ে আমাকে রিক্সায় উঠাবে তরুন রিক্সাওয়ালা এমন স্বপ্ন না দেখে হাঁটা শুরু করতেই মেয়েটি বলল,এক্সকিউজমি ভাইয়া,আমিও যাত্রাবাড়ি যাচ্ছি। আপনি আমার সাথে আসতে পারেন। একা যেতে ভয় করছে।
আর ভাড়াটা শেয়ার হলে আপনারও লাভ আমারও লাভ!
রিক্সায় সুন্দরী মেয়ের পাশে বসা ছেলেকে দেখে কত শতবার যে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরেছি!আর সেই সুযোগ এসে গেল!মেয়েটি কোন কারণে যদি আবার মত পাল্টে ফেলে এই আশংকায় তড়িঘড়ি রিক্সায় উঠে বসলাম। রিক্সায় উঠে আমার শরীর ঘেষে বসে বলল,আমি উর্মি। আপনি?এভাবেই শুরু হল আলাপ। একটু পর রাস্তার আলোতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,সেকি আপনার ত্বকের যতœ নিননা ?কেমন ছিটছিটে দেখাচ্ছে আপনার ত্বক।
এরপর কিভাবে ত্বকের যতœ নিতে হবে এই নিয়ে ব্যাপক জ্ঞান দেওয়া শেষে উর্মি বলল,আপনিতো স্টুডেন্ট।
অত সময় নেই ত্বকচর্চার। তাই সহজ বুদ্ধি দিচ্ছি। ইয়াবা খাবেন। ত্বক ফর্সা,উজ্জলই হবেনা শুধু যৌবন শক্তিও বাড়বে বলে আচমকা হাত ধরে চাপ দিতেই বুঝতে পারলাম ইয়াবা কন্যার খপ্পরে পড়েছি। কিন্তু বুঝতে বেশ দেরী হয়ে গেছে!একটা অন্ধকার গলির ভেতর রিক্সা ঢুকে যেতেই রিক্সা ঘিরে দাঁড়াল ৩টি ছেলে।
মানিব্যাগ মোবাইল কেড়ে নিয়ে উর্মি ভাংতি ৫০টাকা আর সিমটা খুলে দিয়ে বলল,সাবধানে যাবেন ভাইয়া!আবার কোন ইয়াবা গ্রুপের খপ্পরে পড়লে এই ৫০টাকাও থাকবেনা!
পাঠক,যে দেশে এমপির এপিএস ইয়াবা ব্যবসা করে সে দেশে ইয়াবা সুন্দরীর ‘ভাইয়া’ ডাকের খপ্পরে আপনিও পড়তে পারেন। সাবধান হবার কথা বলার দরকার আছে কি?
ভিমরুল,দৈনিক আমার দেশ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।