.............................................. ইয়াবা যুবসমাজে একটি পরিচিত নেশার নাম। এই নামের সঙ্গে কম বেশি সকলেই পরিচিত। ইয়াবার সর্বনাশী কালো হাত আকঁড়ে ধরেছে দেশের যুবসমাজকে। দেশে মাদকের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখের মত। এদের মধ্যে বড় অংশ তরুণ প্রজন্ম, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৫ বছর।
বর্তমানে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীদে মধ্যে ইয়াবার প্রভাব ভয়ংকর রুপ নিয়েছে। দিনে দিনে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মরণ নেশা ইয়াবার বিরোদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি। কঠোর আইনি ব্যবস্থা না থাকায় আইনের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা সরবরাহকারী ডিলাররা। আবার ধরা পড়ছেনা এর মূল মাফিয়া চক্র।
২০১০ থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত র্যাবের অভিযানে ২৯ লাখ ৬০ হাজার ৭৯০ টি ইয়াবা উদ্ধার হলেও এর সঙ্গে জড়িত মূল হুতারা ধরা পড়েনি।
মাদকটির মূল উপাদান মেথঅ্যামফিটামিন। একসময় যা সর্দি ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ওষুধ হিসেবে ব্যবহূত হতো কোনো কোনো দেশে। ব্যবহার করা হতো ওজন কমানোর চিকিৎসায়ও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ক্লান্তি দূর করতে ও সজাগ থাকতে সেনাদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল মেথঅ্যামফিটামিন।
পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষ বিশেষত শিক্ষার্থী, দীর্ঘযাত্রার গাড়িচালক ও দৌড়বিদেরা এটি ব্যবহার শুরু করেন। ধীরে ধীরে এর কুফল বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া উদ্ঘাটিত হতে থাকায় বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। তবে বিশ্বের কয়েকটি দেশে এর উৎপাদন চলতেই থাকে। মেথঅ্যামফিটামিনের সঙ্গে ক্যাফেইন মিশিয়ে ব্যবহূত হতে থাকে মাদকদ্রব্য হিসেবে। থাইল্যান্ডে এই মাদকটির উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি।
ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশে। গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, পেথেডিনের পথ ধরে বাংলাদেশেও এখন সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মাদকটি। অনেকে একে বলে ‘ক্রেজি মেডিসিন’ বা পাগলা ওষুধ। অনেকের কাছে তা নাজি স্পিড বা শুধু স্পিড। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এর লেনদেন হয় ‘বাবা’ নামে।
হালের মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের কাছে এ মাদকটি সমধিক পরিচিত ‘ইয়াবা’ নামেই। ইয়াবা একটি থাই শব্দ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যা নামলেই গুলশান, ধানমন্ডি, বনানী ও উত্তরার বিস্তীর্ণ এলাকার অলিগলিতে উঠতি ছেলেমেয়েরা যেখানেই জড়ো হচ্ছে সেখানেই চলছে ইয়াবা সরবরাহ। মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে এক সময় হেরোইনসেবীদের সংখ্যা বাড়ত। এখন ইয়াবা আসক্তদের নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা।
শাড়ির আঁচলে অসহায় মায়েরা অশ্রুতে চোখ মোছেন নীরবে। বাবার বুকে গভীর বেদনা- দীর্ঘশ্বাস। সন্তানকে নিয়ে দেখা বড় বড় স্বপ্ন এখন ইয়াবার কারণে দুঃস্বপ্ন হয়ে যাচ্ছে।
ঢাকা শহরেই রয়েছে ইয়াবার অনেক ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা। লোক চক্ষুর আড়ালেই চলে এই ব্যবসা।
ছাত্রদের নতুন টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভালই কাটছে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের। পুরাণ ঢাকার আজিমপুর, ল²ীবাজার, লালবাগ রোড এই সব এলাকা ইয়াবা সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। অনেক তরুণ ব্যবসায়ীও আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করছে এই পেশাকে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়া সদরঘাট, যাত্রাবাড়ি, কমলাপুর, মিরপুর-১২, তেজগাও বস্তিসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চলছে এর রমরমা ব্যবসা। দেশে আসা ৮০ ভাগ ইয়াবা মায়ানমারের সীমান্ত পথ দিয়ে আসছে এই ক্ষতিকর নেশা।
বাকী ২০ ভাগ আসে ভারত থেকে।
১৯৯৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ম্যানটেল হেলথ যৌথ জরিপে মাদক নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা ছিল ৩০ লাখ। আর বর্তমানে মাদক নির্ভরশীলদের সংখ্যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিপুল সংখ্যক লোকের জন্য বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার মাদক আসছে দেশে। এই বিপুল পরিমাণ মাদক ঢাকার অলি-গলির ডিলারদের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে সারা দেশে।
এক সময় হেরোইন ও গাজার রমরমা ব্যবসা ছিল রেল বা বাস স্টেশনে। এখন ইয়াবার সুবাধে অভিজাত পক্রীয়ায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সাইবার ক্যাফে, বিভিন্ন সপ সর্বত্র ডিলারদের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল-কলেজ ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে গড়ে উঠেছে ইয়াবা আগ্রাসন। সঙ্গে গাজা, সিগারেট, হেরোইনও চলছে সমান হারে।
— ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।