আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! আমি জানতাম নিশি আসবেই । ও আমার উপর রাগ করে থাকতে পারে !!
কখনই না । আর যাই হোক আমার সাথে রাগ করে নিশি কথা বলবে না এমন টা হতেই পারে না ।
সকাল বেলা ওকে মেসেজ করে জানিয়েছিলাম যে এখানে আসতে । দেখলাম আসতে আসতে হেটে হেটে আমার পাশে এসে বসল ।
মুখটা এখনও গোমড়া । এতো গোমরা করে রাখার কি দরকার বাবা । মানুষের একটু ভুল হতে পারে না । তাই বেলে এতো রাগ করে থাকতে হবে !
বললাম
-কথা বল না কেন ?
- রে বাবা আমার ভুল হয়েছে । মুখ দিয়ে এমনিই কথাট বের হয়ে গেছিল ।
আমি বলতে চাই নি ।
-ঐতো সত্যি কথা মুখ দিয়ে এমনিই বের হয়ে যায় !
নিশির কথাটা কেমন যেন একটু ধরে এল । মনে হল যেন এখনই কেঁদে ফেলবে । ঠিক গত কালটাতেও এমন এ হয়ে ছিল ।
আসলে নিশি এমনিতেই একটু বেশি কথা বলে ।
এতো কথাটা মেয়েটার পেটের মধ্যে আছে !! বা একজন মানুষ যে এটো কথা বলতে পারে তা আমি নিশির সাথে পরিচয় না হলে বুঝতেই পারতাম না ।
নিশিকে চিনতাম একই ক্লাসে পড়ার সুবাদে। মাঝে মঝে চোখাচোখি হত ! কথা হত না । সামনা সামনি পড়ে গেলে ও হয়তো একটু হাসতো, আমি হয়তো একটু হাসতাম ! ব্যস এই পর্যন্ত । এর বেশি কথা হয় নি আর ।
কিন্তু সেদিন হল ।
আমাদের ক্লাস থেকে একটা এসাইনমেন্ট দিয়েছিল । গ্রামীন জীবনের উপরে একটা সচিত্র রিপোর্ট তৈরি করতে হবে । আমরা আগে ঠিক করা ছিল যে আমরা সাবাই একসাথে যাবো । বেশ একটা পিকনিক পিকনিক ভাব হবে ।
কিন্তু আমি ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি কেউ নেই । সবাই চলে গেছে । বন্ধুকে ফোন দিয়ে জানলাম যে আমার দেরি দেখে ওরা আমাকে না নিয়েই চলে গেছে ।
একবার ভাবলাম থাক আর না যাই । ওদেরটা কপি করলেই চলবে ।
কিন্তু ভূপেন স্যার বেশ জাদরেল টাইপের লোক । ধরতে পারলে একেবারে জিরো বসিয়ে দিবে ।
বসে বসে ভাবছিলাম কি করবো ঠিক এমন সময় কেউ একজন আমার সামনে এসে দাড়াল । বলল
-তোমাকেও রেখে চলে গেছে না ?
মুখ তুলে দেখলাম নিশি । পেষ্ট কালারের একটা লং স্কার্ট পরেছে আর সাদা টপসের সাথে নীল ওড়না ।
-হুম ।
-আমাদের ক্লাস মেইট গুলা কি রকম বেক্কাল দেখেছ ? আরে মনুষের কি একটু দেরি হতে পারে না । কত রকম কাজ থাকে ! কত রকম ঝামেলা থাকে ! সকাল বেলা উঠে দেখি ট্যাপ থেকে পানি পরছে না । তুমি বল সকাল বেলা যদি ঠিক মত পানি না পরে তাহলে কারো কি মাথা ঠিক থাকে । মা বলল যে পানির পাম্ম নাকি নষ্ট হয়ে গেছে ।
আর রিজার্ভ পানিও রাখা নাই । এখন বল সকাল বেলা ফ্রেস হব কিভাবে ! আর সকাল বেলা .................
দেখলাম যে নিশি ননস্টপ কথা বলেছে । আরে এতো কথা বলার দরকার কি । আমি বুঝতে পেরেছি ।
আমি বললাম
-এখন চলে গেছে আর কি করবা বল?
-কি করবো মানে ! ওগুলারে কাছে পাই না ! এমনমজা দেখাবো ! তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল ।
এতো বড় সাহস আমাকে না নিয়ে চলে যায় !
-আচ্ছা ঠিক আছে আমি যাই ।
-কোথায় যাবা ?
-বাসায় যাবো !
-আরে এসাইনমেন্টরর কি হবে ?
-করে নিবো নে !
-ভুপেন স্যার কে চেনো না ? একদম জিরো বসিয়ে দিবে ! তুমিও আন্ডা পাবা ! আমিও আন্ডা পাবো । তারপর, সেই আন্ডা দিয়ে আমরা একটা মুরগির তা দিয়ে মুরগির বাচ্চা ফোটাবো । সেই বাচ্চা বড় হবে । ডিম পাড়বে ! ওখান থেকে আরো ডিম পাবো .........
এই মেয়েটা সমস্যা কি ? এতো কথা বলে কেন ?
নিশি ডিম আর মুরগি নিয়ে কথা বলেই চলছিল ।
আমি মাঝ খান থেকে বললাম
-যদি ডিম ফুটে মোরগ বের হয়?
-মানে?
-মানে বুঝলা না ? মানে আমরা যে আন্ডা দুটো পাবো সেটা দিয় যদি মুরগি বের না হয়ে মোরগ বের হয় তাহলে কি হবে ?
-আরে তাই তো ? এটা তো ভাবি নি । তাহলে তো আমাদের ব্যবসা শুরুর আগে শেষ হয়ে যাবে ।
নিশিকে খুব চিন্তিত মনে হল । সামান্য ডিম থেকে মুরগি না মোরগ বের হবে এটা নিয়ে যে কেউ এতো চিন্তায় পড়ে যেতে পারে আমার ভাবনার বাইরে ছিল । কিন্তু নিশির এই ছেলেমানুষী কেন জানি আমার খুব ভাল লেগে গেল ।
ওকে বললাম
-চল ডিমের ব্যবসা না করলেও চলবে । আমরা দুজনই যাই । আর ওরা খুব বেশিক্ষন আগে যাই নি । ধরে ফেলতে পারবো ।
নিশির মুখটা উজ্জল হয়ে উঠল ।
-আমিও তাই ভাবছিলাম । ডিম পেয়ে কি লাভ বল ! আর শুনো আমি কিন্তু ডিম একদম পছন্দ করি না । ডিম একটা খাওয়ার জিনিস হল বল ? আমার ভাল লাগে সরষে ইলিশ আর গরুর ভুনা । তুমি কি জানো সরষে ইলিশ কিভাবে রাধে ?জানো আমি না ..........।
নিশির কথা চলতেই থেকে ।
আমি নিশির আর একটু কাছে গিয়ে বাসলাম । বললাম
-এতো কেন রাগ করছো ? আমি কি মন থেকে বলেছি কথাটা?
নিশির ঠোট দুটো কেমন একটা কেঁপে উঠল । চোখের পাতাও যেন একটু ভারু হয়ে উঠল । কি কিশোরী সুলভ আচরন ! যেন এখনও কেঁদে উঠবে ! এমন টা কেন করছে !
নিশি আগে এমনটা করতো না । এই যেমন কথায় কথায় অভিমান গাল ফুলানো ।
আমাদের সম্পর্ক ছিল স্বাভাবিক ।
ও কথা বলত । বলেই যেত আর আমি শুনতাম । আমার সব থেকে বেশি ভাল লাগত ওর কথা বলার ভঙ্গি । ও যখন কথা বলত ওর চোখ দুটো কেমন নড়াচড়া করতো আর ওর ঠোট দুটো কেমন তরঙ্গায়িত হত ।
আমি খুব ইনজয় করতাম এগুলো । আর একটা ব্যপার আমার খুব ভাল লাগত ! সেটা হল যখন আমরা কফি কিংবা চা খেতাম একসাথে এক চুমুক খাওয়ার পরই ও কাপ দুটো বদলে নিতো । আর বদলে নেবার পর যে একটা হাসি দিত ঐ হাসিটাও খুব সুন্দর লাগতো ।
নিশি আমাকে পেয়ে যেন মনের মত একজনকে পেয়েছিল । আর তা হবেই বা না কেন ।
ও এতো পরিমান কথা বলত যে ওর সব বন্ধুবান্ধবই বিরক্ত হয়ে যেত । মুখের উপর বলত চুপ করতে ।
কিন্তু কোন দিনই ওকে চুপ করতে বলতাম । আমি যে ওর কথা বলাটা পছন্দ করছি ও এটা খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিল । সব কিছু ভালই চলছিল তারপর একদিন সেই অঘটন ঘটে গেল ।
ভার্সিটির ক্যান্টিনে বসে ছিলাম কফি খাবো বলে । ক্লাস শেষ হতেই ওর কথা বলা শুরু হয়েছিল । আর যেন শেষ হবার নামই নেই ।
ঐ নিশি কথা বলছিল ওদের ফার্নিচারের অবস্থান নিয়ে ।
-কি হয়েছে শোন , আমার বড় বোনটা আছে কদিন থেকে কি এক বাস্তু না ফাস্তু কি এক জিনিস পড়ছে ।
সে অনুযায়ী নাকি ঘরের খাট থাকতে হবে উত্তর দক্ষিন বরাবর । এখন আমরা বাথরুমের দিকে মুখ করে ঘুমাই । আচ্ছা তুমি বল বাথরুমের দিকে মুখ করে কেউ ঘুমায়?
-না তা অবশ্য ঘুমায় না ।
-আর সেদিন আমার মা সেদিন একটা ডাস্টবিন কিনে এনেছে । আর সেটা রেখেছে একদম ফ্রিজের কাছাকাছি ।
এখন আমরা একই জায়গায় খাবার রাখি আবার একই জায়গায় ময়লা ফেলি ! হিউ কুল ইজ দ্যাট? এক গাদা পাগলের সাথে বসবাস করছি ।
-হুম । তা তো বুঝতেই পারছি ।
-তার উপর কিছু বলতে গেলেই আমার ছোট ভাইটা বলে আমি নাকি বেশি কথা বলি । আরে তুই এখন নিজেই ঠিক মত কথা বলতে পারিস না আবার আমাকে বলিস বেশি কথা বলি !! কিসের মধ্য যে আমি আছি না !
এর মধ্য কফি চলে এল ।
এক চুমুক দিয়ে ও আমার কাপটা বদলে নিল । তারপর ওর চেয়ার টা আমার দিকে আর একটু নিয়ে এসে বলল
-শোন আমাদের যখন বাড়ি হবে তখন আমরা কোন বাস্তু ফাস্তু মানবো না । আমার যেটা ভাল লাগবে সেভাবে ঘর সাজাবো । ঠিক আছে ?
আমি খানিক না বেশ অবাক হলাম । বললাম
-আামদের ঘর মানে ?
নিশি ঠোট কামড়াল ।
ওর মুখ দেখে মনে হল কি যেন একটা বলে ফেলেছে যেটা ওর বলা একদম ঠিক হয় নি । আবারও বললাম
-আমাদের ঘর মানে কি ?
-অপু, তুমি রাগ কর না প্লিজ ।
আবারও ওর চোখে কেমন অস্থিরতার ভাব দেখলাম । একবার মুখ ঢাকলো আবার আমার দিকে তাকিয়ে লজ্জা মিশ্রিত হাসি হাসলো । তারপর বলল
-আপু আই থিংক আই এম ইন লাভ উইথ ই্উ ।
দেখ আমি এতো জলদি বলতে চাই নি । মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে । প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড । ডু ইউ?
নিশি আবারও হাসলো সেই লজ্জা মিশ্রিত হাসি ।
সেদিন অনেকক্ষন নিশির দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।
আর সেদিনই আমি নিজে ও আবিষ্কার করলাম যে আমি নিজেও ওকে অনেক পছন্দ করি । অনেক বেশি ।
-প্লিজ তুমি রাগ কর না । কালকে আমার মাথা একটু গরম ছিল । বাসা থেকে একটু রাগারাগি করেছিলম ।
এাবর নিশির চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল । বাচ্চা দের মত ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল
-তাই বলে তুমি আমার সাথে এমনটি করবে ? জানো আমি কতটা কষ্ট পেয়েছি ।
-সরি বেবি । আর কখনও হবে না ।
সত্যি কালকে মেজাজটা একটু খারাপই ছিল ।
বাড়ি থেকে রাগারাগি করে এসেছিলাম । আর একটা কাজ করছিলাম । বেশ জরুরী কাজ । এমন সময় নিশি এসে হাজির । আর ও মানে তো হাজারও কথার মেলা ।
আমি কেবল বলেছিলাম
-নিশি আমি একটু ব্যস্ত আছি । এখ কথা শুনতে ভাল লাগছে না ।
-কেন ? না আমার কথা শুনতে হবে ।
-দেখ এখন ভাল লাগছে না । বকবকানী থামাও ।
নিশি আর কিছু বলল না । চুপ করে গেল । কাজটা শেষ হবার পর মন খানিকটা শান্ত হয় । পাশে তাকিয়ে দেখি নিশি নেই । গেল কোথায় ?
তারমানে ও খনই চলে গেছিল ।
এই জন্য কোন কথা বলে নি ।
ফোন দিলাম । ফোন ধরলো না । বুঝলাম মহারানি রাগ করেছে ।
-আর কখনও হবে না ।
এবার থেকে যাই হোক তোমার কথা সবার আগে শুনবো । সব কিছু বাদ দিয়ে । প্লিজ রাগ কর না ।
-আর কখনও আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে নাতো !! তাহলে কিন্তু আমি মরে যাবো ।
-আর কখনও করবো না বেবি ।
এক কফিয়ালা যাচ্ছিল । নিশিকে বললাম
-কফি খাবে?
-না খাবো না ।
-খাও না । কি হবে খেলে !
দুকাপ নিলাম । না বললেও দেখলাম ও কাপটা নিল ।
এক চুমুক দেওয়ার পর আমার কাপ বদলিয়ে নিল । তারপর সেই হাসি ।
মনে মনে বললাম যাক রাগ কমেছে ।
-শোন ।
-হুম
-এবার থেকে আর কখনও যদি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছ টো তোমার খবর আছে ।
একবারে রাত আট টার বাংলা সংবাদ । বুঝেছ? আমি কত শখ করে ওনার সাথে কথা বলতে আসবো আর উনি আমার সাথে মেজাজ দেখাবে । আমি তোমার মেজাজের ধার ধারি? তুমি আমার..........
আমি জানি এ কথা চলতেই থাকবে । পুরা একদিন আমার সাথে কথা বলেনি । শোধ তো তোলবেই ।
আমিও শুনতে থাকি ওর কথা গুলো।
বিঃদ্রঃ আমার পছন্দের মুভি আছে । নাম ইচ্ছে, ভারতী বাংলা আর্ট ফ্লীম । নিশির প্রোপজের অংশটুকু খানিকটা ঐ ছবির এরকম একটা দৃশ্য থেকে অনুপ্রানিত ।
আর গল্পটা লেখা আমার টিয়াপাখিকে কল্পনা করে ।
আামর টিয়াপাখি ঠিক নিশির মতই এতো কথা বলে ! এতো মিষ্টি করে বলে !! মনে হয় সারাক্ষন কেবল ওর কথাই শুনি !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।