১৯৯৩ সাল হতে জনাব শফিক রেহমান সম্পাদিত যায়যায়দিন পত্রিকা বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস’র প্রচার, প্রচলন ও প্রসার ঘটায়। প্রথমবারের জনপ্রিয় ম্যগাজিনটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে ভালোবাসা দিবস পালনের সূচনা করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রেমিক-প্রেমিকা,স্বামী-স্ত্রী,মা-বাবা,ভাইবোন,বন্ধু-বান্ধবসহ সকল স্তরের লোকরাই ভ্যালেন্টইন ডে পালন করলেও বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস পালন মূলত প্রেমিক-প্রেমিকায় সীমাবদ্ধ। কিন্তু এদিনে বাংলাদেশে প্রেমিক-প্রেমিকরা যা করেন তা শুধু ভালোবাসা দিবস নয়,অশ্লীলতা দিবসও। এদিন বের হলে চোখে পড়ে নানান বৈচিত্রময় দৃশ্য।
রিক্সা,ট্রেক্সি এবং সিএনজিতে জড়িয়ে উরুতে বসে প্রেমিক-প্রেমিকরা ভালোবসা দিবস পালন করতে দেখা যায়। ভালোবসার নামে বিভিন্ন পার্ক, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও মিনি চাইনিজের আলো আঁধারিতে প্রেমিকার স্তন দলাদলি, চুমুর নামে শরীর চেটে নেওয়া শরীরে হাত বুলানোসহ অসভ্যতা আর লাম্পট্য শিকারে পড়ে বাঙালী আধুনিক সেক্সি ললনারা। কতিপয় মেয়েরা ভালোবাসাকে পবিত্র অবলম্বন ভাবলেও এসব লম্পট পুরুষের ফাঁদে পড়ে নারীরা হারায় সম্ভ্রম। কখনও গোপনে ধারনকৃত এসব কর্মের ভিডিও চিত্র ও কথোপকথন মিডিয়াতে প্রকাশ পাচ্ছে অর্থের বিনিময়ে। বোকা মেয়েরা পুরুষ মানুষকে চেনেনা বলে প্রতারনার শিকার হয় বেশি।
সে সাথে ভোগে মেয়ের অভিভাবকরাও। প্রতিদিন প্রত্রিকা পড়লে বুঝা যায় সেসব লুটেপুটে নেয়া নারীরা নষ্ঠ জীবনের হাজারও কষ্টের কাহিনী। বন্ধু-বান্ধব,সহপাঠী,আত্মীয় স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি,সহকর্মীদের মেলামেশায় ও ফৃ আড্ডায় মা-বাবার কিংবা অভিভাবকের বাধানিষেধ না থকালে অনৈতিকতার স্বাধীন হস্তক্ষেপ কখন যে সন্তানদের জীবন নষ্ঠ ও বিভীষিকাময় করে তা বুঝা মুশকিল। তার উৎকৃষ্ট উদাহারন প্রতিভাবান অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় একান্ত সাক্ষাৎকারে প্রভা বলেন ‘অপুর্ব-রাজিব আমার জীবনকে ধংববস করেছে, অপুর্ব নাকি প্রভাকে বলেছেন অনেকদিন প্রেম থাকলে সেক্স হতে পারে,বর্তমানে যারা প্রেম করেছে তারা কেউ ভার্জিনা না, আমিও না, তুমিও না।
তার কথা যে সত্যি বর্তমান প্রেমিক প্রেমিকার ফৃ কালচারেই বুঝা যায়। মেয়েদেরকে দৈহিকভাবে দুর্বল করতে পারলে প্রেমিকই প্রেমিকাকে বিশ্বাসা করেনা তার চিত্রায়িত হয়েছে প্রভার সাক্ষাৎকারে। অনেক কিছু হারিয়ে প্রভা নিজের ভুল বুঝতে পারলেও তিনি সবার থেকে দূরে,কাউকে মুখ দেখাতে পারছেননা। এমনকি কোথাও বের পর্যন্ত হচ্ছেনা বলে জানান। তার জীবন অনেকটা যাবজ্জীবনের আসামীর মতো।
জীবনের সবটুকুর ভুলের মাশুল তাকে একাই বহন করতে হচ্ছে। অন্তত প্রভার জীবন থেকে মেয়েদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে, মানুষের ভুল থাকতে পারে কিন্তু অনৈতিক ভুলগুলি অনুশোচনায় শুদ্ধ করা যায়না। সব প্রণয়ে পরিণয় হয়না বলে বিবাহপূর্ব দৈহিক ভালোবসা এক প্রকার কলর্গালের কাজ। বর্তমানে অধিকাংশ পুরুষেরা নারীর দেহের আশায় ভালোবাসার খেলায় মত্ত হয়ে স্বার্থসিদ্ধির জন্য খুনও করে যাচ্ছেন। আগেকার দিনের মতো দেবদাস-পার্বতী,রোমিও-জুলিয়েট, শিরি-ফরহাদ,লাইলি-মজনুর ভালোবাসা এখন খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
ভালোবাসাবাসি মানুষের সহজাত প্রকৃতি, আর এসব ভালোবাসারও পার্থক্য রয়েছে। মায়ের প্রতি সন্তানের,স্বামী-স্ত্রীর, ভাইয়ে-বোনে,শিক্ষক-ছাত্রের পাড়া-প্রতিবেশি,বন্ধু-বান্ধবের ভালোবাসা ভিন্ন হলেও মূলত ভালোবসা মাত্রই হার্দিক। মনোবিদদের ভালেবাসার চর্চায় ভালোবাসকে ৪ টি গোত্রে ভাগ করেন। যথা-১। ফ্রয়েডিয় ২।
প্লেটোনিক ৩। অপটিমিস্টিক বা আশাবাদী ৪। পেসিমিক বা নৈরাশবাদী। ফ্রয়েডিয়রা খোলামেলাভাবে জৈবিক,প্লেটোনিকরা নিস্কাম বলে প্রত্যেক মানুষের জীবনে প্লেটোনিক প্রেমের জন্ম হয়। অপটিমিস্টিক বা আশাবাদীরা সুযোগের অভাবে চরিত্রবান বলে অনেকটা প্লেটোনিকের মতো।
এধরনের প্রেমিক-প্রেমিকরা সুস্থ ও শান্ত মস্তিস্কের হয়। এরা প্রেমের বিষয়টি কবিতা,গান, গল্প উপন্যাস আর
শিল্পের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে, পেসিমিক বা নৈরাশবাদীরা পুজিঁবাদী। ভালেবাসাকে পুজিঁ করে এরা স্বার্থসিদ্ধির আশায় মগ্ন। এরা নারীর জীবনকে ধ্বংস করতেও পিছপা হননা, এরা অনেকটা লোচ্চা প্রকৃতির। স্বার্থ ও দেহ লোভীরা, প্রেমিকাকে নিয়ে হোলিখেলায় মত্ত হয়ে নাচানাচি করে বলে বেহিসেবি আচরণের শিকার হয় বোকা মেয়েরা।
পুরুষের স্বার্থের শিকার হয়ে নরক যন্ত্রণায় বাস করেছে অনেক প্রেমিকা। ভলোবাসার পুর্বে ভালেবাসার মানুষকে চিনতে না পারলে বেহিসেবি ভালোবাসার জন্য প্রভার মতো জীবনের সবটাই ঝক্কি-ঝামেলার শিকার হবে মেয়েরাই। মেয়েদের জীবনটা একটা সাদা পাতার মতো, একজন যতটা পাপ করবে ততোটা দাগ পড়বে। এদাগ তোলা যায়না বলে ভালেবাসার নামে দৈহিক সর্ম্পক মানেই ভ্রামরী মিত্রতা। অভিভাবদের বুঝা উচিত পাশ্চত্য সংস্কৃতির অনুকরনে আধুনিকতার বিশ্বাসী হয়ে টাইট-পিট জিন্স প্যান্ট, পাতলা টি-শার্ট, স্যন্ডোগেঞ্জি কিংবা স্বল্প বসেনে শরীরের কামনাময় অংশ অনাবৃত রেখে আপনার মেয়েটি খারাপের দিকে যাচ্ছে কিনা? ছেলেমেয়েরা মা-বাবার শাসনের মধ্যে না থাকলে ভালোটার বদলে খারাপটাই শিখবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
একথা অতীব সত্য যে, পরিবারই হচ্ছে সন্তানের জন্য উকৃষ্ঠ বিদ্যপীঠ যেখানে মা-বাবারই সন্তানকে খুব কাছে থেকে সচেতনভাবে শিক্ষা দিতে পারে। অতি আদরে সন্তান নষ্ট হয় বলে মুলত সন্তান-সন্ততির নষ্ট হওয়ার পিছনে অধিকাংশ দায়ী প্রথমে মা,পরে বাবা কারন অনেক মা সন্তানদের অপ্রীতিকর ঘটনাসমুহ গোপন করে রাখায় এসব সমস্যার মূল্য দিতে হয় সন্তানকে। আর সেসব মা-বাবার চেয়ে অপদার্থ আর কে হতে পারে ! যার সন্তানটি দিনদিন নষ্টের পথে পা বাড়াচ্ছে আর তার খবর মা-বাবা রাখলনা। প্রত্যেক মা-বাবার এসত্যি উপলদ্ধি করা উচিত যে, একজন মা-বাবা সমাজ ও রাষ্ট্রেস সফল হতে পারে কিংবা মৃত্যুটা সার্থক হয় একজন গর্বিত সন্তাদের পিতা মাতা হতে পারলে। বলা হয় শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে সব শিশুর অন্তরে।
পরিশেষে প্রেমিকাদেরকে বলছি,ভালোবসার ক্ষেত্রে প্রেমিক পুরুষের যেসব কথার সবটুকুই মিথ্যা হতে পারে তা জেনে নিন-
1. আমি মনে করিনা তোমার অমুক বান্ধবিটি তোমার চেয়ে সুন্দর।
2. আগে তোমাকে কতটা ছেলে কিস করেছে তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই।
3. জামাটা খোল! আমি শুধু তোমাকে দেখব, স্পর্শ করবনা।
4. তোমাকে বিয়ে করবে বলে তোমার সাথে সেক্স করতে চাই,তা তুমি বিশ্বাস করনা কেন, কিংবা তুমি যদি আমাকে সত্যিকার ভালোবাস, তাহলে সেক্স করতে বাধা কোথায়।
5. আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ট সুন্দরীটি আমার পাশে বসে আছে।
6. আমার যা প্রয়োজন সবটাই তোমার কাছে আছে, তোমার মতো লক্ষী মেয়ে আর হয়না তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবনা ইত্যাদি।
7. তুমি আমার জীবনের প্রথম ও শেষ বলে তোমার জন্য আমি সব করতে পারি।
8. তুমি জাননা যে, তোমার ভিতর কি মোহনীয় শক্তি আছে, রূপে তুমি অপরূপ,গুনে অদ্বিতীয়, তোমাকে যে, একবার দেখবে সে কোনদিন তোমাকে ভুলতে পারবেনা। তোমার মতো সুন্দরী আর কোন মেয়ে আমি জীবনে দেখব কিনা সন্দেহ হয়।
9. বিয়ের পর তুমি শুধু আমার কাছে থাকবে, তোমাকে কিছু করতে হবেনা, তুমি রাগলে আমি ভালোবসা দিয়ে সব রাগ পানি করে দেব।
এসব কথায় বিশ্বাস করে ভালেবাসা দিবসে চুমোয়-চুমোয় অশ্লীলতায় মেতে উঠে অবাধে মেলামেশা করাটা ভালোবাসা দিবস নয় বরং পুরুষ কর্তৃক মেয়েদের প্রতারিত হওয়ার দিন।
লেখক : সাহিত্য ও সংস্কৃতি কর্মী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।