ব্লগার না পাঠক হওয়ার চেষ্টায় আছি সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গিল ১১ টার দিকে। বেলা ১২ টার দিকে কারেন্ট আসিল। অনেকে ব্যাপারটাতে কিঞ্চিত তব্দা খাইতে পারেন। আসল ব্যাপার তা না! আমাদের দেশে আসলে তো কারেন্ট যায়ই না। মাঝে মাঝে ঘুড়ে বেড়াতে আসে!! যা হোক, কারেন্ট আসিল।
কারেন্ট আসনের পরে আমি টিভি ছাড়িলাম। রিমুটের উপ্রে ইচ্ছামতন নির্যাতন চালাইতে চালাইতে হঠাত করিয়া থামিয়া গেলাম। পাঠককুল মনে লইতে পারেন হয়ত গুরুত্বপূর্ণ কোন সংবাদ দেখিয়া আমি থামিয়ে গেছি। আসলে তা না। আমি থামিলাম চামেলী খ্যাত ক্যাটরিনার নাচানাচি দেখিয়া।
আসলে ঘটনা হইল হিন্দি জিনিসপত্রে আমার আগ্রহ যথাসামান্য। কিন্তু লোকমুখে শুনা যে চামেলী নাকি মারাত্মক গরম। বিশেষত উনি নাকি সকল ১৮+ এমনকি ১৮- বালকদেরও লুল বানাইয়া দেন!! যাহা হউক, এত্ত দিনে বুঝলাম আমি কি জিনিস মিস করছি। নিজেকে লুল সম্প্রদায়ের কলঙ্ক বলিয়া মনে লইল। আমি গোগ্রাসে উহাকে গিলিতে লাগিলাম।
আহহহ!!! কি তাহার জিরো ফিগার!! কি তাহার বডি!! কোন এক টিভির এডে দেখিয়াছিলাম শব্দ স্পষ্ট এবং ছবি জীবন্ত। আমার টিভির শব্দ স্পষ্ট। কিন্তু ছবি জীবন্ত না হওয়ার দরুণ বারংবার কপাল চাপড়াইতে লাগিলাম। ক্ষণকালের মধ্যে দেখিলাম চামেলী আপু একবার লাফাইয়া স্ক্রীনের এ মাথা হইতে ও মাথা পর্যন্ত যাইতেছেন এবং বাতাসে উহার এলোচুল ভাসিতেছে। অন্য কিছুও যে ভাসিতেছিল না তাহার সম্ভাবনা এক্কেবারে উড়াইয়া দেওন যাইত না! উহার উদ্দাম নৃত্য দেখিয়া মনে লইল আমার টিভির ছবি জীবন্ত না হওয়া সত্ত্বেও ভাঙ্গিয়া যাইবেক।
যেহেতু ছবি জীবন্ত নহে সেহেতু টিভি ভাঙ্গে নাই। আমি ঈশ্বরের প্রতি বারংবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিলাম যে জীবন্ত ছবি ওয়ালা টিভি কিনি নাই। দিনের প্রাক্কাল যার শুরু হইল এমনি লুলীয় ভাবে তাহার দিন কেমন যাইবেক পাঠককুলই অনুমান করিয়া লন।
বৈকালে টুংটাং গিটার বাজাইতাছি। আমি আবার গিটারে বিশেষ পারদুরশী কি না!! গিটারে সুর তুলিবার পারি আর না পারি আমি কইলাম গিটার দিয়া ড্রামস বাজাইবার পারি।
যাহা হোক, আমার গিটারের প্রেকটিস সেশন চলিতেছিল। হঠাত করিয়া ঘরে ঢুকিল আমার এক ছুডু ভাই। তাহাকে দেখিয়া আমি আরও মনযোগ দিয়া গিটারে সুর তুলিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিতে লাগিলাম, পাছে মান-সম্মান সব ডুবিয়া যায় কি না!! যাহা হোক, কিছুক্ষণ পর বালক কহিল, “ভাইয়া, একটা কথা বলি?” আমি কি কথা কহিবার চায় জানিবার চাহিলাম। ও কহিল, পাশের বাসার এক ললনা আমার দিকে নাকি অপলকে তাকাইয়া আছে। আমি আড়চোখে তাকাইলাম।
কন্যা সাথে সাথে জানালা হইতে সরিয়া গেল। এমন সময় ব্যাকগ্রাউন্ডে বালাম ভাইয়ের গান বাজিবে “এভাবে আর ডেক না// বাঁকা চোখে চেও না// পাগল হয়ে যাব// আমায় খুজে পাবে না// লুকোচুরি খেল না// দিও না যাতনা// প্রেম যমুনার মাতাল ডিঙ্গায় আমার পার কর না...” পাঠককুল হয়ত ভাবিতে পারেন আমি ভয়ানক ইশমার্ট যে ললনারা আমার দিকে লুলের ফিমেল ভার্সন হইয়া তাকাইয়া থাকে। আসল ঘটনা কইলাম তা না!! আমি শাকিপ খানের চেয়ে সামান্য বেশি ইশমার্ট বলিয়া কুনু ললনা আমার দিকে দ্বিতীয় বারের মত চাহে না। আপসুস। ললনারা আবার পছন্দ করে আরজে নিরবের মত হ্যাণ্ডচাম পুলাগো।
তয় এই ডিজুইস সুন্দরী ললনা কেনু আমার দিকে বাঁকা চৌক্ষে তাকাইয়া আছিল তাহা আমি বুঝিলাম ক্ষণকালের মধ্যেই! ললনা খুব সম্ভবত আমার গিটারের দিকে তাকাইয়া আছিল। ঈশ্বরের প্রতি কঠিন শুক্রিয়া জানাইলাম যে আমি পিক ব্যতেরিকে গিটার বাজাইতাছিলাম এবং ললনার বাসা আমার বাসা হইতে কিঞ্চিত দূরে ছিল বলিয়া সাউন্ড ওই ললনার কান পর্যন্ত পৌছাতে পারে নাই। পৌছালে ললনা বহু আগেই উল্কার বেগে স্থান ত্যাগ করিত। তাহা হয় নাই বলিয়া নিজেকে রকস্টার ভাবিতে লাগিলাম।
সন্ধা পার হইয়া রাত হইল।
তেমন কিছু ঘটিল না। রাতের বেলা গেলাম আমার এসাইনমেন্ট প্রিন্ট করিতে। উমা!! রাস্তায় বাহির হইতেই দেখিলাম এক যুবক আরেক যুবতীর হাতে হাত ধরিয়া, চোখে চোখ রাখিয়া সরু রাস্তা দিয়া আমার বরাবরে আসিতেছে। উহারা যেইভাবে হাটিতেছিল তাহাতে রাস্তায় অবশিষ্ট স্থান বলিয়া তেমন কিছু আছিল না! এমনটা আমি সর্বশেষ দেখিয়াছিলাম শাকিপ খান অভিনীত কোন এক ছবিতে। যাহা হউক, উহারা যখন আমার হইতে কয়েক সেমি দূরে তখন আমি কাশি দেওনের একটা চেষ্টা করিলাম।
কাজ হইল। উহারা তব্দা খাইয়া একে অন্যের হাত ছাড়িয়া দিল। উহাদের দেখিয়া তখন মনে লইল উহারা বেহেশত হইতে দোযখে আসিয়া পড়িয়াছে। অতঃপর আমি এই প্রেমিক-প্রেমিকাদ্বয়কে চিড়িয়া বের হইয়া গেলাম। আমার এই চিড়িয়া বের হওয়া দেখিয়া যুবক ভাইয়া আমার দিকে বজ্র দৃষ্টিতে তাকালেন।
আমি উহার দৃষ্টিতে ভস্মীভূত হইয়া গেলাম। ভাবিলাম একবার কই , প্রেম করবেন পার্কে যান, রাস্তায় এমনে হাত ছড়াইয়া ঘুড়াঘুড়ি করনের মানে কি!!
গেলাম প্রিন্টের দুকানে। গিয়া দেখি দুই দুই জন অপেক্ষ মান ললনা। দুকানে বসিয়া আছে এক ছুকড়া। আমি কহিলাম প্রিন্ট করমু।
ছোকড়া কহিল কিছুক্ষণ ওয়েটাইতে। কিছুক্ষণের মধ্যে মালিক চলিয়া আসিবেন। আমি আর কুনু কথা না কহিয়া ডাইরেক্ট প্রিন্ট করিতে পিসির সামনে গেলাম। ছোকড়া কহিল, “আফনে প্রিন্ট করতে পারেন!!” আমি কহিলাম “দেখ, পারি কিনা। ” পাশে বসিয়া থাকা ললনা কহিল, “ভাইয়া, একটু কাজ করে দিতে পারবেন।
” আমি লজ্জায় লাল হইয়া গেলাম। উহার মত একজন আগুন সুন্দরী আমার মত গাধার নিকট সাহায্য চাইয়াছেন ভাবিতেই মনটা আনন্দে ভরিয়া উঠিল। তাহারপর উনি কহিলেন যে উনার ইয়ে বিদেশে থাকেন! উহাকে একখান মেইল করিয়া দিতে হইবেক। আমি মেইল করিয়া দিলাম, ছবি এটাচ করিয়া দিলাম। এই ফাঁকে দুকানের লোক আসিলে তাহাকে কহিলাম প্রিন্ট করিয়া দেওয়ার কথা।
উনি প্রিন্ট করিতে থাকিলেন। আর এদিকে কাজ শেষ হওনের পরে ললনা আমাকে কহিল কত টাকা লাগিবে?!! আমি কিঞ্চিত তব্দা খাইয়া গেলাম। কহিলাম, “না না, কুনু টাকা লাগবে না। ” ললনার ছোট বোন কহিল “ভাইয়া, আপনি অনেক ভাল। ” এই প্রথম কুনু ললনা আমার লগে এমুন ভাষায় কথা কহিল আমি লজ্জায় পুরাই নীল থুক্কু লাল হইয়া গেলাম।
সংবিত ফিরিয়া পাইলাম, দুকানের মালিক যখন প্রিন্ট বন্ধ করিয়া আমার দিকে ছুটিয়া আসিয়াছেন। আমাকে কহিলেন, “উনারা চলে গেলে কেন??” আমি কহিলাম উনাদের কাজ শেষ তাই চলে গেছেন। দুকানদার ভাইজান আমার দিকে এমুন ভাবে তাকাইলেন যেন আমি বিশাল কিছু করিয়া ফালাইছি। উনি কহিলেন মানুষের উপকার করিবান ভালু কথা আফনে আমার ভাত মারেন কেনু?? আমি বুঝিয়াও না বুঝবার ভান করিলাম। কারণ এইমুহূর্তে এইসব জিনিস বুঝিতে গেলে বিশাল বিফদ।
আমি অবাক হইয়া কহিলাম “কি!! কেন!! ওমাগো!!! কি হইছে!!!!” আমার এইসকল কথা বার্তা শুনিয়া দুকানদার ভাইজান আর কথা বাড়াইলেন না। অতঃপর দুকান হইতে নিচে নামিলাম।
নিচে আসিয়া রিকশাওয়ালা মামাকে জিগাইলাম “মামা, যাবেন??” মামা কই যাইতে হইবেক জিগাইলে জানাইলাম আমার গন্তব্য। পাশেই এক ললনা আমাকে অতিক্রম করিতে লাগিল। উনি আমাদের কথোপকথন শুনিয়া কিছু না কহিয়াই রিকশায় উঠিয়া কহিলেন “মামা, চলেন!!” ঘটনায় আমিই যে শুধু কিঞ্চিত তব্দা খাইছি তাহাই নয় রিকশাওয়ালা মামাও তব্দা খাইয়া গেলেন।
আমি ভাবিলাম একবার কই “আফু, আপনে যতই সুন্দরী হন রিকশা কইলাম আফনে না আমি ঠিক করছি। হুহ...” কিছু কথা কহিতে যামু এমুন সময় ললনা কহিল আপনিও আমার সাথে যাইতে পারেন। রিকশাওয়ালা মামা মুচকি হাসিলেন। আমি কুনু কথা না কইয়া হাটা ধরলাম আর মনে মনে নিশ্চিত হইলাম দেশ আসলেই অনেক আগাইয়া গেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।