আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দারুচিনির ঘ্রাণে ভরা বিবাহ

ন্যায়ের পথে আজকে থেকেই লড়াই শুরু কর, নাহল কালকে খুব ক্ষুদ্র অন্যায়ের সামনেও তুমি মুখ থুবড়ে পড়বে। কখনো সাহস হারাবে না, তোমার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাই অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। ১. ঘুম ভেঙ্গে গেল অর্ণবের। একটি ফোন এসেছে। ধরতে ধরতে কেটে গেছে কলটা।

স্ক্রিনে দেখল কার নাম্বার। নাম্বারটি অপরিচিত। এখন বাজে রাত আড়াইটা। এতরাতে কে ফোন দিল তাকে। এসব ভাবতে ভাবতে আবার ফোনটা বেজে উঠল।

তড়িঘড়ি করে রিসিভ করল। - হ্যালো। আপনি কে বলছেন, প্লিজ? - জ্বি, প্রথমেই সালাম আপনার জন্য। আপনি আমাকে চিনবেন, তবে পরিচয়টা দিতে চাচ্ছি না। আমি আপনার নিকটতম একজনের বন্ধু।

- আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না আপনার কথা। দয়া করে ব্যাপারটা ক্লিয়ার করবেন কি? - আসলে আমি আপনার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর ফ্রেন্ড। - তো তুমি এতরাতে আমাকে ফোন দিলে কেন? - আপনার কি তার কথা মনে আছে? - কার কথা? বি....ন....দু-র নাকি? - না আসলে বলতে চাচ্ছিলাম আপনার খুকির কথা। - খু...কি...ও আচ্ছা তুমি জানলে কোথায় খুকির কথা? - আপনার বান্ধবী বলেছে আমাকে। - সে কি বলেছে? - সে বলেছে, আপনার সাথে নাকি খুকি নামের কার সম্পর্ক আছে? আপনি নাকি প্রতিরাতেই তাকে স্বপ্নে দেখেন? বিন্দুর সাথে তাকে নিয়ে গল্প করেন? আপনি নাকি তাকে বিয়েও করতে চান? - সে যা বলেছে তার সবি সত্য।

কিন্তু তোমার সমস্যাটা কোথায়? তুমি কেন আমাকে কল দিয়েছ সেটা আগে বল? - আপনি কি জানেন বিন্দু আপনাকে কত ভালোবাসে? আপনি যে তার কাছে অন্য একটি মেয়ে নিয়ে কথা বলেন আবার তাকে বিয়ে করতে চান সেটিও বলেন তাতে বিন্দু যে কষ্ট পায় সেটি বুঝেন না। আপনার মধ্যে কি মায়া-দয়া বলতে কিছুই নেই। বিন্দু যদি আজ সুইসাইড করে তার জবাব কি দিতে পারবেন আপনি সবার সামনে? - আচ্ছা তুমি খুকির সম্পর্কে কতটুকু জান যে আমাকে এত কথা শোনাচ্ছো? - যতটুকু আপনি বিন্দুকে বলেছেন ততটুকুই। - তাহলে তোমাকে আমার আর কিছুই বলার নেই। কাল বিন্দুকে নিয়ে আমার বাসায় এসো খুকি সম্পর্কে বাকি কথা শোনাবো।

২. সবেমাত্র কলেজ ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখেছে অর্ণব। পড়াশুনায় ভালো। বেশি মেধাবী না আবার খারাপও না। প্রায় সাড়ে পাঁচফুট লম্বা এই ছেলেটার গায়ের রং দুধে আলতা। বাবা-মার একমাত্র ছেলে।

সবসময় নামী-দামী প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছে অন্যসব হাইসোসাইটির ছেলেমেয়েদের সাথে। সে যখন জীবনটা বুঝতে শিখেছে তখন থেকে অনেক মেয়ের সান্নিধ্য পায়। সবাই তাকে আপন করে নিতে চায়। কিন্তু তার কাছে কাউকেই ভালো লাগে না। তার ধ্যান-জ্ঞান সব শুধু এক খুকির জন্য।

যাকে সে প্রতিটি সময় স্বপ্নে দেখে। তার চোখ শুধু খুঁজে বেড়ায় খুকিকে। খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে পেয়ে যায় সে তার খুকিকে। তার এক ক্লাশ নিচে পড়ে। স্বপ্নে দেখা সেই ফুলপরীটাই যেন খুকিরূপে তার সামনে এসেছে।

অর্ণবের ধারনা প্রেম-ভালোবাসা শুধুই পবিত্র একটি কাজ। তাই সে চায় না এই পবিত্রটি জিনিসটি অপবিত্র হয়ে যাক। সে প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় খুকির সাথে দেখা করে। এভাবে কেটে যায় দুই বছর। খুকি এখন অনেক বড় হয়েছে।

অর্ণব স্বপ্ন দেখে খুকিকে নিয়ে সুখের সংসার গড়বে। সে তার বাবা-মাকে খুকির কথা বলে। বাবা-মাও রাজি খুকিকে বৌমা করার জন্য। এরই মধ্যে হঠাৎ করে অর্ণব খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। সে ধীরে ধীরে খুকিকে ভুলে যেতে থাকে।

অপরদিকে খুকি বুঝতে পারে না কেন এমন হচ্ছে সবকিছু। একদিন গভীর রাতে খুকির ফোন আসল অর্ণবের মোবাইলে। ফোনটা ধরে অর্ণব অনাকাঙ্খিত কিছু কথা বলল খুকির উদ্দেশ্যে। খুকিকে চরম অপমানও করল। এমনকি খুকিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করতে দ্বিধা বোধ করল না।

খুকি আশা করে নি কখনো তার প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে অর্ণব এভাবে কথা বলবে। খুকির সহজ-সরল মন সহ্য করতে পারে নি এসবকথা। ফলে সেদিন সূর্য উঠার আগে সে ফিরে গেল তার শেষ গনত্মব্যে। অর্ণবের কাছে যখন খবরটি আসে তখন সে নেশাগ্রস্ত ছিল। যখন তার ঘোর কাটে তখন সে বিশ্বাস করতে পারলো না তার প্রেম এভাবে মরে যাবে।

সে জানলও না তার কতগুলো কথাই তার ভালোবাসাকে এভাবে কেড়ে নিল। সে সম্বলহীন মানুষের মতো ঘরের মধ্যে ছটফট করতে লাগলো। কি করবে সে তা বুঝার মতো মনটাও আজ তার নষ্ট হয়ে গেছে। সে তার আলিশান খাটে শুয়ে থাকাবস্থায় হঠাৎ চোখ পড়ল ওয়ালমেটটার দিকে। খুকির হাতে করা একটি দৃষ্টিনন্দন ওয়ালমেট।

যেটা তৈরী হয়েছে কতগুলো দারুচিনি দ্বারা। আসলে দারুচিনির অদ্ভুত ঘ্রানটা খুকির খুব প্রিয় ছিল। তাইতো প্রাণপুরুষকে উপহার হিসেবে এটা দিয়েছিলো যেন নিজের থাকার ঘরে সবসময় দারুচিনির ঘ্রাণ পায়। এ ঘ্রানটা যে অনেক পবিত্র। ৩. আজ ২৫ সেপ্টেম্বর অর্ণবের বিয়ে বিন্দুর সাথে।

সেদিনের সেই স্বপ্ন আজ পূরন হচ্ছে অর্ণবের। আজ নিজ হাতে দারুচিনির ঘ্রান মাখিয়ে দিবে বিন্দুর গায়ে। যেন বিন্দুর মাঝে খুঁজে পায় তার খুকিকে। সুমুর করা সেই ফোনটাই আজ নতুন করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে অর্ণবকে। খুকিকে ফিরিয়ে এনেছে সে নতুন রূপে।

স্বপ্নে দেখা খুকির পরামর্শে আজ সম্পূর্ণ সুস্থ সে। আজ অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করছে অর্ণবের মাঝে। কেন যেন মনে হচ্ছে প্রকৃতির সবাই আজ উৎফুল্ল। নিজ ঘরে বিন্দুকে উঠিয়ে এনে যখন ফুলের মালা পড়িয়ে দিতে হাত বাড়ালো তখন নাকে একটা পরিচিত ঘ্রাণ এসে বিঁধল। দেয়ালে ঝুলানো ওয়ালমেটটা আজ এতই খুশি যে তার গায়ের ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিলো সবার মাঝে অকৃত্রিম ভালোবাসায়।

খুকির দারুচিনি ঘ্রাণ আজ ছড়িয়ে পড়ল পুব হতে পশ্চিমে। সবাই তখন সমস্বরে গেয়ে উঠল, অর্ণব-খুকির শুভ বিবাহ সফল হোক। সবাইকে আমার ব্ল্যাকহোল দুনিয়ায় স্বাগতম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।