স্বাগতম ছুটিতে দেশে এসে আমি যখন “ঢাকায় আমি” সিরিজটি লিখছিলাম তখনই মনে পড়লো ব্যাচেলর লাইফে বন্ধুদের নিয়ে দেখা ১৯৯৩ সালের হলিউডের Falling Down মুভিটির কথা। তখন দশ রিয়াল রেন্টে ভিডিও ক্যাসেট এনে দেখতাম। কিন্তু এই ছবিটি এতোই মুগ্ধ করেছিল যে ওটা আর তখন ফেরতই দিইনি।
এবার ঢাকার এসে দেশের হাল দেখে মনে হলো, সত্যিই আমরা আমেরিকা থেকে ২০বছর পেছনে। কারন তখনকার লসএঞ্জেলস শহরের যেই ছবিটি পরিচালক Joel Schumacher নায়ক Michael Douglas কে দিয়ে করিয়েছিলেন,মনে হচ্ছিল আমি মোজাম হক যেন এতোবছর পর ঢাকাতে এসে সেই পরিস্থিতিতেই পরেছি।
বিশ্বাস হচ্ছেনা ? তাহলে ছবির কাহিনীটা একটু শুনুন—
নায়ক উইলিয়াম( Douglas) মাস খানেক হলো প্রতিরক্ষা ডিপার্টমেন্ট থেকে চাকুরীতে অবসরে গেছেন। দাম্পত্য জীবনও তার সুখকর নয়। আমেরিকার স্বাভাবিক ঘটনার মতোই স্বামী-স্ত্রীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। একমাত্র মেয়েটির আজ জন্মদিন। সে থাকে মায়ের সঙ্গে,উইলিয়াম চাচ্ছে মেয়েকে নিয়ে জন্মদিন পালন করবে কিন্তু মা চাননা ঊইলিয়াম মেয়ের অজুহাতে তার বাড়ীতে আসুক।
ছবির প্রথমেই দেখা যায় নায়ক উইলিয়াম লসএঞ্জেলসের রাস্তায় গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছে,রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম,অসহ্য গরমে গাড়ীর এসিও ঠিকমতো কাজ করছেনা। জানালার গ্লাস নিচে নামাতেই রাস্তার প্রচন্ড শোরগোল,মাছির ভনভনানি আর জ্যামে তার গাড়ীটি দীর্ঘ সময় আটকে থাকা ইত্যাদি সব মিলিয়ে তাকে উত্তেজিত করে তুলে। সে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেনা। পেছনের গাড়ীর ড্রাইভারদের ডাকাডাকি উপেক্ষা করেই সে নিজের গাড়ীটি রাস্তার মাঝে ফেলেই চলে যায়।
হেটে একটু এগিয়ে যেতেই একটা কয়েন বুথ (টেলিফোন) দেখতে পায়।
কিন্তু তার হাতে মেয়েকে ফোন করার মতো পর্যাপ্ত কয়েন নেই যে জন্মদিনের উইশ করবে। তাই পাশের একটা দোকানে গিয়ে ভাংতি চায়। কিন্তু কোরিয়ান দোকানদার বলেন কিছু খরিদ না করলে ভাংতি দেবেনা। সে দোকানের ভেতর ঘুড়ে ফিরে দেখে প্রায় সব কিছুর দামই একটু বেশি। উত্তেজিত উইলিয়াম দোকানীকে দাম বেশী কেন জিজ্ঞেস করে।
কোরিয়ান তর্কের এক পর্যায়ে নিচে রাখা বেসবল ব্যাট উঁচিয়ে তাকে বেরিয়ে যেতে বলে। কিন্তু উইলিয়াম সেটা কেড়ে নিয়ে দোকানের বেশ কিছু জিনিষ ভেঙ্গে জিজ্ঞেস করে সেগুলোর প্রকৃত দাম কত। দোকানী এবার ঠিক ঠিক দাম বলতে থাকে। সে তখন বলতে শুরু করে এইসব বিদেশিরা আমেরিকার সাহায্য নিয়ে তাদের নিজেদের দেশ চালায় অথচ এখানে এসে তারাই আমেরিকানদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। (ব্যক্তিগত ভাবে এই অংশটা আমার মোটেই ভাল লাগেনি!)এরপর ব্যাটটা হাতে নিয়েই সে দোকান থেকে বেড়িয়ে যায়।
তার হাতে ছিল একটা ব্রীফকেস। একাকী তাকে দেখে ছিনতাইকারীরা ওর পিছু নেয়। নায়ক Douglas কাছাকাছি একটা নির্জন মাঠ দেখে ভেতরে ঢুকে বিশ্রাম নেয়ার জন্য বসে পড়ে। তখন ছিনতাইকারী এসে তাকে ব্রীফকেসটা দিয়ে দিতে বলে। তার হাতেও ছিল ব্যাট একপর্যায়ে তাদের দস্তাদস্তি শুরু হয় এবং ব্যাটের আঘাতে ছিনতাইকারীরা দৌড়ে পালায়।
Douglas রাস্তার পাশেই আরেকটা ফোন বুথ দেখে তার মেয়েকে ফোন করে। কিন্তু সেখানে আবার সেই ছিনতাইকারীরা গাড়ীতে করে অস্ত্র নিয়ে ফিরে আসে। তারা গাড়ী থেকেই গুলি চালাতে থাকে কিন্তু অতি উত্তেজনায় ছিনতাইকারিদের গাড়ী এক্সিডেন্ট হয়। আর এইফাকে নায়ক Douglas একটি ব্যাগে ওদেরই অস্ত্রগুলি ভরে নিয়ে পুলিশ আসার আগেই হাটা দেন।
এরপর সে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানে ঢুকে সকালের নাস্তার অর্ডার দেন।
কিন্তু সেলসম্যান তাকে লাঞ্চ নিতে বলেন কারন তিন মিনিট আগে লাঞ্চ আওয়ার শুরু হয়ে গিয়েছে। সে রেগে গিয়ে সেই ব্যাগটা নিচে রাখে,কিন্তু চাপে পড়ে গুলি বেড়িয়ে যায়। সেখানকার সবাই তখন ভয় পেয়ে যায়। সে বলে শান্ত হউন আমি ছিনতাইকারি নই। কিন্তু দেখুন এরা কি করছে!এই বলে এড দেয়া ছবিতে বড় বার্গার আর বাস্তবে চিমসা ছোট্ট আকারের বার্গার দেখিয়ে বক্তব্য রাখে।
এবং সেখান থেকেও এক পর্যায়ে বেরিয়ে যায়।
রাস্তায় বেড়িয়েই আবার ভিক্ষুকের পাল্লায় পড়ে। নাছোরবান্দা ভিক্ষুককে তার হাতের ব্রীফকেসটা দিয়ে একটা জুতার দোকানে গিয়ে ঢুকে। সেখানে তখন টিভিতে ব্রেকিং নিউজে তারই ঘটনাগুলি অর্থাৎ ছিনতাইকারিদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ এবং ফাস্টফুড দোকানের ঘটনাগুলি চলছিল। দোকানদার তাকে চিনতে পারে।
তাই তাকে গোপনে অস্ত্র বিক্রির কথা বলে। কিন্তু Douglas নিজেকে একজন ভাল মানুষ হিসেবে সেই দোকানীকে বলেন। কিন্তু সে তখন চাপ দেয় এগুলো না কিনলে পুলিশে ধরিয়ে দিবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক ঘটনার পর সেই দোকানিকেও সে খুন করে এবং সেখানকার অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।
এরপর সামনে এগুতেই রাস্তা মেরামতকারী লোকের দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হোন।
রাস্তা মেরামতের কর্মীটি বন্ধ রাস্তার সাইনবোর্ড দেখিয়ে সেদিকে না যাওয়ার জন্য বলে। Douglas রেগে গিয়ে বলতে লাগলো ঢিলেঢালা ভাবে দিনের পর দিন কাজ করে আমাদের যাতায়তে অসুবিদা করছো,সরকার তার বাজেট ঠিক রাখার কারনে এই অহেতুক কাজ গুলি করিয়ে নিচ্ছে। এই বলে ব্যাগ থেকে একটি রকেট লাঞ্চার বের করে। কিন্তু গুলি চালাতে পারেনা। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক টোকাই তাকে শিখিয়ে দেয় কিভাবে গুলি চালাতে হয়।
সেই টোকাই নাকি গুলি চালানো, টিভির মুভি থেকে শিখেছে। নায়ক উইলিয়াম( Michael Douglas) রকেট লাঞ্চার চালিয়ে দিতেই গোটা টানেল/রাস্তা গুড়িয়ে যায়।
এই রকম উত্তেজনাকর মজার ঘটনা নিয়ে তৈরী ছবিটা দেখবেন আর ভাববেন আপনি কি বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে নায়ক Michael Douglas এর মতো নিজেকে মনে করছেন না?
IMDb rating 7.6/10
ডাউনলোড লিঙ্ক
এখানে হিট করুন
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।