আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেখে আসলাম বাংলাদেশি চলচ্চিত্র 'দ্যা স্পীড' - (চলচ্চিত্র রিভিউ)

ব্যাকরণের সব রীতিনীতি মেনে সাহিত্য রচনা করতে গেলে তবে তা একটা ভালো ব্যাকরণের বই হয়ে যাবে। —— তন্য শব্দগুচ্ছ আজকে ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মলের স্টার সিনেপ্লেক্সে গিয়েছিলাম বাংলাদেশী চলচ্চিত্র 'দ্যা স্পীড' দেখতে। পুরো ছবি দেখে আমার যা উপলব্ধি হয়েছে তা হচ্ছে, বাংলা অ্যাকশন মুভি হিসেবে এক কথায় অসাধারন হয়েছে। হলিউড, বলিউডের সাথে তুলনা করতে গেলে ভিন্ন কথা, কিন্তু বাংলাদেশী সিনেমার জগতে এত ভাল অ্যাকশন ছবি এর আগে কখনো দেখি নাই। যথেষ্ট ভাল হয়েছে আগের চেয়ে।

অন্তত, যে প্রত্যাশা নিয়ে গিয়েছিলাম তার অনেকখানিই পূর্ণ হয়েছে। কাহিনী বেশ ভাল। অনন্তের আগের ২টা ছবিতে যে খাপছাড়া ভাব ছিল, এটাতে সেরকম নাই। এটার কাহিনী, মেকিং, গান, দৃশ্যায়ন, অভিনয় সবকিছু অনেক ভাল হয়েছে। এই ছবিতে অনন্ত আগের ২টা ছবির তুলনায় বেশ জড়তামুক্ত এবং প্রাণবন্ত ভাবে অভিনয় করেছে।

যদিও পুরোপুরি জড়তামুক্ত হয় নাই, তারপরও তার আগের ছবি 'দ্যা সার্চ' এবং 'হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ' এর তুলনায় অনেকখানি ভাল হয়েছে। সত্যি বলতে কি 'দ্যা সার্চ' দেখে আমি মর্মাহত হয়েছিলাম। 'হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ' দেখে আরো বেশি মর্মাহত হয়েছিলাম। এবারও একটু সংশয় ছিল। তবে দেখার পর মনে হচ্ছে যে টাকাটা জলে যায় নাই।

বরং পুরো মুভিটা বেশ উপভোগ করেছি। 'দ্যা সার্চ' এর মত অত ‘অপ্রয়োজনীয় ইংরেজি’র ব্যাবহার হয় নাই সংলাপ গুলোতে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিদেশী অভিনেতা অভিনেত্রীরাও বাংলায় সংলাপ দিয়েছেন। ইটালীর নিনো এই ছবিতে বেশ অনেক জায়গায় বাংলায় সংলাপ দিয়েছেন। ছবির নামটা বাংলায় দিলে মনে হয় আরো ভাল হতো।

কয়েকটা জায়গা বাদ দিলে অনন্ত’র অভিনয় আগের চেয়ে ভাল হয়েছে। আরো ভাল করতে পারলে ভাল হতো। তবে নতুন হিসেবে এটুকু ছাড় দিতে আমি রাজী আছি কারন পুরো ছবিটা ভাল হয়েছে। বুঝতে হবে এটা এই নায়কের ৩য় ছবি। শাহরুখ খানও ৫টা ছবি ফ্লপ দিয়ে তারপর জনপ্রিয় হয়েছে।

আর বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের অভিনয় শেখার কোন প্রতিষ্ঠান নেই বললেই চলে। তবে এই নায়কের ভাল কিছু উপহার দেওয়ার যে ইচ্ছা আছে সেটা বোঝা যায় তার প্রযোজিত ছবির আধুনিকায়ন দেখে। অভিনয়টা এখন পুরোপুরি আয়ত্ত করতে পারলেই পরিপূর্ণতা পাবে। লেগে থাকলে এবং উন্নতি করার চেষ্টা করলে ভাল হবেই। হলিউডের অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনিগার কে দেখে মানুষ এক সময় হাসত।

তার চেহারা, বডি, অভিনয় কোন কিছুই ভাল ছিল না এক সময়। কিন্তু সেই তিনিই লেগে থেকে হয়েছেন খ্যাতিমান বডিবিল্ডার, জনপ্রিয় নায়ক এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের গভর্নর। গান গুলো এক কথায় অসাধারন হয়েছে। প্রতিটা গানের সুর খুব সুন্দর হয়েছে। গানের দৃশ্যায়ন গুলোও চমৎকার।

সিনেমাটোগ্রাফি যথেষ্ট উন্নত এবং কোন কোন ক্ষেত্রে হলিউড, বলিউডের মত। “এসো না...এসো না এতোটা কাছে” গানটির নৃত্যের ছন্দ খুবই ভাল হয়েছে। আসলে সবকটা গানই সুন্দর। প্রতিটা গান আপনার ভালো লাগতে বাধ্য। গান গুলোর সুর ভালো হওয়া সত্ত্বেও Dolby Digital সাউন্ডের যে একটা রিনিঝিনি এবং বিভিন্ন স্পিকার থেকে শব্দ আসার যে একটা ছন্দ মাদকতা থাকে তা অনুভব করলাম না।

হয়ত এটা Dolby Digital সাউন্ড বানানো হয় না, অথবা বাংলাদেশের সিনেমা হল গুলোতে চালানোর উপযোগী করার জন্য অন্য ফরম্যাটে নিতে যেয়ে কোয়ালিটি কমে গেছে, অথবা সিনেমা হলকে ১০০% ডিজিটাল ফরম্যাটে দেওয়া হয় নাই, অথবা আমি বুঝতে পারি নাই। যাহোক, এত সুন্দর গান গুলোর ১০০% Dolby Digital 6.1 channel সাউন্ড ইফেক্ট বের হলে অনেক বেশি উপভোগ্য হতো। এই ছবিতে অনন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান এবং বাংলাদেশকে ইতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন যা একটি ভাল দিক। একটি জায়গায় শিশুশিল্পী দীঘি তার চাচুকে (অনন্ত) জিজ্ঞাসা করে দেশের বাইরে হানিমুনে যাবে কি না। এর উত্তরে অনন্ত বলেন আমাদের দেশেই তো অনেক ভাল ভাল জায়গা আছে যেমন কক্সবাজার, সুন্দরবন...ইত্যাদি।

কয়েকটা জায়গায় মনে হলো সরকারকে একটু হালকার উপর দিয়ে ঝাপসা তেল দেওয়া হয়েছে। এটা হয়ত সেন্সর বোর্ডের জটিলতা এড়াতে করা হয়েছে। আমাদের দেশে ভাল কিছু তৈরি হলেও তো আবার আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অনেক সময় আটকে যায়। এর আগে, অনন্তর আগের ছবিটা ১ বছর আটকে রেখেছিল সেন্সর বোর্ড কারন সেখানে নায়ক আলমগীর একটি নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। তার কস্টিউম ছিল পাকিস্তানি শেরওয়ানির ওপর ড্রেসের সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন রঙের কোট।

এই কোট আমাদের দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিহিত মুজিব কোট নামেই বিশেষ পরিচিত। তবে শেখ মুজিব সাধারণত সাদা রঙের পাঞ্জাবির ওপর কালো রঙের কোট পরিধান করতেন। কিন্তু ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছিল কয়েক রঙের কোট। বাংলাদেশের কোন চলচ্চিত্রই পূর্ণ ওয়াইড স্ক্রীন হয় না। এই ছবিটা ওয়াইড স্ক্রীন হলেও স্টার সিনেপ্লেক্সের পর্দার পূরো প্রশস্ততা দখল করতে পারে নাই।

হয়ত বাংলাদেশের অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহের পর্দার প্রশস্ততার কথা বিবেবচনা করেই পূর্ণাঙ্গ ওয়াইড স্ক্রীন করা হয় না। ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ ওয়াইড স্ক্রীন আশা করবো। ছোটখাট কিছু ভুলত্রুটি বাদ দিলে মুভিটা ভালই হয়েছে। যারা অ্যাকশন মুভি পছন্দ করেন না তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা অ্যাকশন মুভি পছন্দ করেন তাদের কাছে মুভিটা ভাল লাগবে।

অনন্ত’র আগের চেয়ে ভাল করাকে স্বাগত এবং ধন্যবাদ জানাই। আশা করি পরবর্তীতে আরো ভালো করবে। কিছু কিছু লোক আছে যারা বাংলা সিনেমার নাম শুনলেই ছি ছি করে। তারা ভাবে বিদেশী জিনিস মানেই ভাল আর বাংলাদেশী জিনিস মানেই খারাপ। তাদেরকে বলব, ভুল ধরলে কত কিছুই তো ধরা যায়।

খোদ হলিউড ব্লক বাস্টার মুভিতেও ভুল ধরা যায়। ম্যাট্রিক্স ছবির উড়ে উড়ে মাইর দেওয়াকে নকল বলা যায়, কারন ঐ ধরনের অ্যাকশন অনেক আগে থেকেই চাইনীজ মার্শাল আর্ট ছবিতে ব্যবহৃত হত যাকে তারা 'চী' পাওয়ার বলে। মনে রাখবেন, এটা আমাদের দেশেরই সিনেমা। পাকিস্তান বা ভারতের না। আমাদের সিনেমা ভাল করলে সেটা তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদেরই।

মুভিটা যে যথেষ্ট ভাল হয়েছে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অন্তত কেউ একজন তো গাটের পয়সা খরচ করে গতানুগতিক বাংলা সিনেমা থেকে ভালো কিছু বানানোর চেষ্টা করছে। এটাই বা কম কি? এই ভাল করার প্রচেষ্টাকে আমরা স্বাগত এবং অভিনন্দন জানাই! এভাবে এগিয়ে যেতে থাকলে ২-৩ বছরের মধ্যেই ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশনে যাওয়ার মত হয়ে যাবে বাংলাদেশী সিনেমা... The Speed চলচ্চিত্রটি ১১মে ২০১২ বাংলাদেশের ২৪টি ও মালেশিয়ার ৭টি হলে মুক্তি পেয়েছে। এর ট্রেইলার দেখতে এই লিঙ্কে যানঃ Click This Link এক নজরে ‘দ্যা স্পীড’: ছবির নাম: ‘দ্যা স্পীড’। অভিনয় শিল্পী: অনন্ত (নায়ক), পারভিন (নায়িকা-মালেয়শিয়া), নানা (রাশিয়ান), মাইক বোস (আফ্রিকা), আটন (মালেয়শিয়া) দীঘি ও নায়ক আলমগীর।

প্রযোজক: এম.এ. জলিল অনন্ত। পরিচালক: সোহানুর রহমান সোহান। কাহিনী ও সংলাপ: অনন্য মামুন। সম্পাদনা: একরামুল হক। ক্যামেরা: আসাদুজ্জামান মজনু ও আকাশ ( চেন্নাই)।

ফাইট: আরমান, চুন্নু ও উইলিয়াম ( মালেয়শিয়া)। সংগীত: হাবিব, হৃদয় খান, ফুয়াদ ও শওকত আলী ইমন। সংগীত শিল্পী: হাবিব, ন্যান্সি, কণা, হৃদয় খান। পরিবেশনায়: মনসুন ফিল্মস্ ছবিটির পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজ করা হয়েছে চেন্নাইয়ের প্রাসাদ ল্যাবে। (সংগৃহীত) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.