আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যশোরে গতিহারা ভৈরব

যেমন কর্ম তেমন ফল। হযরত আলী। ১৯৫৮ সাল থেকে ভৈরব নদের পাড়ে বসবাস করছেন। যশোর শহরের পশ্চিম বারান্দীপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন নদের পাড়েই তার বাড়ী। তিনি নদীর যৌবন থেকে বর্তমান সময়ের সাক্ষী।

ষাটের দশকে নদীতে জোয়ার ভাটা হতো। বড় বড় মালবাহী ট্রলারে মালামাল আনা নেওয়া করত। জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। নৌকাবাইচ খেলা হতো। অর্ধযুগের ব্যবধানে ক্ষরস্রোত প্রবাহমান নদটি এখন দখল-দূষণে গতিহারা।

কচুরিপানা ও শৈবাল প্রকৃতির জলজ উদ্ভিদে বদ্ধজলাশয়ে পরিণত হয়েছে। নদটি স্বাভাবিক স্রোত রুদ্ধ হয়ে মজে গেছে। যশোর এম এম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক লাইলী আশরাফী এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এমনিতেই যশোরে নদ-নদী কম। স্বাভাবিক অবস্থায়ই তাপমাত্রা বেশি থাকে। ভৈরবকে যশোর শহরের প্রাণ বলা হয়ে থাকে।

শহরকে বাস যোগ্য রাখতে নদটিকে বাঁচিয়ে রাখা দরকার। এজন্য এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যশোরের নদী বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক অধ্যাপক আফসার আলী বলেন, নদটি গতিহারা হয়ে পড়ায় শহরে নানা রকম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। মশা, মাছির উপদ্রবে তীরবর্তী এলাকার মানুষ ম্যালেরিয়াসহ নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। নদটি প্রবাহ না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

আগে শহর পাশ্ববর্তী বিল ও খালের মাধ্যমে শহরের পয়ঃ নিষ্কাশন হলেও এখন একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভৈরব। যে কোন মূল্যে নদটিকে বাঁচানো দরকার। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদে পানি বলতে যা, তা হচ্ছে মানুষের পয়োবর্জ্য ও ময়লা আর্বজনা। দু’ধারে প্রভাবশালীরা দখল করে বাড়ি ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। ৯০ দশকে যেখানে নদীর প্রশস্ততা ছিলো ৪০০ ফুট, এখন সে সব জায়গার প্রশস্ততা ১২০ ফুট থেকে ১০০ ফুটে নেমে এসেছে।

২০০১ সালে জেলা প্রশাসন নদীর প্রশস্ত নির্ধারণ করে দেয় ১২০ ফুট। সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি পুতে দেয়। দখলদাররা এসব পিলার উঠিয়ে নদীর দিকে সরিয়ে নিচ্ছে। দখল করে নিচ্ছে সীমানার ভেতরের জায়গাও। যশোর পাল বাড়ির মোড় থেকে-রাজার হাট পর্যন্ত নদের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে শতাধিক পুকুর বানিয়েছে প্রভাব শালীরা।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নদীর উপর যে সব ব্রিজ করা হয়েছে তার অধিকাংশই তিন চতুথাংশ নদী ভরাট করে। যশোর এলাকাতেই নদের উপর এ রকম ৪০টি ব্রিজ রয়েছে। রাজার হাটে একটি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে ৩০ ফুট প্রশস্তের এবং কঁচুয়াতে নদের উপর যে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে তার প্রশস্ততা মাত্র ১০ ফুট। পরিবেশবিদদের অভিযোগ সরকারই নদটিকে গলাটিপে হত্যা করছে। জেলা প্রশাসনের এসব দখল মুক্ত করার দায়িত্ব থাকলেও তারা এ ব্যাপারে কোন কর্ণপাত করছেনা।

নদীর জমি বিভিন্ন ভাবে ব্যক্তিমালিকানায় দিয়ে দিচ্ছে। ভৈরব নদ গতিহারা হয়ে পড়ায় যশোর অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, মত্স্য উত্পাদন ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দেখা দিচ্ছে সুপেয় পানির অভাব। গঙ্গার শাখা নদী জলাঙ্গী মেহেরপুরে এসে ভৈরব নাম ধারণ করে যশোরের মাঝ দিয়ে খুলনায় রুপসা নাম ধারণ করেছে। ভৈরব নদ যশোর শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে নওয়া পাড়া এলাকায় প্রবাহমাণ রয়েছে।

ওই অঞ্চলে নদীর প্রশস্ততা সাড়ে ৪শ ফুট। গভীরতা ৭০ থেকে ৭৫ ফুট। সার্বিক বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক নূরুল আমিন বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে সকল দখল মুক্ত করা হবে। নদ খননের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চলতি অর্থ বছরেই খনন কাজ শুরু হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।