সত্যবাদী বয়স সাড়ে একত্রিশ হলেও আমার মাঝে একটা বাচ্চা বাচ্চা ভাব রয়ে গিয়েছে। সেটা আমার চেহারার কারনে আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। আমার বউ যার পর নাই দুঃখিত একটি ‘‘বাচ্চা জামাই” পেয়ে। আমার বৈষয়িক জ্ঞান শূন্যের কোঠায় বলা যায়। খুব টানাটানি করে মাস পার করছি, আবার হুট করে কিনে ফেলছি দেড়শ লিচু অথবা খেতে চলে যাচ্ছি দামি রেস্টুরেন্টে।
১০ বছর চাকরী শেষে আমার জমানো অর্থের পরিমান অতীব নগণ্য। যেখানে আমার সমতুল্যরা চায়না থেকে আম্রিকা দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে, সেখানে আমার অগ্রগতি দেশের গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বউ বাচ্চাকে ঠিক ঠাক মত কাপড় কিনে দিতে পারিনা। মোটামুটি ভাবে একজন বার্থ মধ্যবয়স্ক মানুষ যেভাবে নিজেকে বর্ণনা করবে, আমার বর্ণনাগুলো একিই রকম শোনাবে। মজার বেপার হচ্ছে এই ব্যাপার গুলো আমার খুব একটা গায়ে লাগে না।
আমার বন্ধুর বউ পর্যন্ত আমাকে ‘বাচ্চা’ সার্টিফিকেট দিয়ে গিয়েছে।
তাহলে বাচ্চা বয়সে কি ছিলাম?
ছোট ছিলাম যখন, তখন বিশাল চিন্তাবিদ ছিলাম। আশপাশের সবকিছু আমাকে অসম্ভব মুগ্ধ করত। আমার সব কর্মকাণ্ড ছিল ভাসাভাসা। কোনকিছুর গভীরে কখনও যেতাম না।
অনেক বই পরতাম, আর নিজস্ব একটা ফ্যান্টাসির জগতে থাকতাম। বন্ধু ছিল হাতেগোনা কয়েকজন। পড়াশোনা করতাম আব্বুর মাইর এড়ানোর জন্য। বড় হয়ে আমি কিছুই হতে চাইনি, মানে ভবঘুরে হতে চেয়েছি বলা যায়। আমার অগোছালো স্বভাব আর অন্নমনস্কতার জন্য অনেকরকম টিটকারি শুনতে হত।
তাদের জন্য আমার আপাত জিনিয়াস উত্তর ছিল, আমি কি রোবট নাকি; যা ঠিক, শুধু তাই করবো? সৃষ্টিকর্তা মনে হয় মুচকি হাসছিলেন তখন।
কৈশোর পেরিয়ে এমন একজায়গায় জয়েন করলাম, যা ঠিক, শুধু তাই না করলে জীবন টাই টিকিয়ে রাখা দায়! একজন বৈমানিক নিজের ভুল থেকে শেখার সুযোগ খুব একটা পায়না! আমার জন্য একরকম কারাদণ্ড বলা যায়। প্রতিনিয়ত নিয়মের বেড়াজালে আটকে একরকম রোবটই হয়ে গেলাম বলা যায়। মানবিক অনুভূতিগুলো একসময় বৈষয়িক দিকে মোড় নিতে শুরু করল। নিজেকে উজাড় করে ভালবেসে একজনকে খাঁচায় পুড়ে ফেললাম।
খাঁচা, সংসার একটা খাঁচা বই তো কিছু নয়। মায়ার বন্ধন, কিছু বুঝে উঠবার আগেই অক্টোপাসের মত পেঁচিয়ে ধরবে জীবন টাকে। ছোটবেলা থেকে যা যা হতে চেয়েছি, তাই তাই না হয়ে বেঁচে আছি, শুধু নিজে নয়, আরেকজনকে সহ। এটাকেই তবে বোধ হয় বড় হয়ে ওঠা বলে?
বাচ্চা বাচ্চা বিশেষণটা তাই আমার মনে একটা মুক্তির অনুভূতি জাগায়। তাহলে হয়ত এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি।
জীবনের একটা সময় হয়ত আমি ভবঘুরে হয়ে কাঁটাতে পারব। আপাতত............................................................খাঁচাই সই!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।