আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এ খাচা ভাংবো আমি কেমন করে !!!

যালিম হয়ে বেচে থাকার চেয়ে মযলুম হয়ে মরাও উত্তম প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, অন্যায় অবিচার দেখে দেখে সব কিছু পাশ কাটিয়ে চলছি । আমার ছেলেটাও এই দেখে দেখে বড় হচ্ছে । ছেলেটা সবেমাত্র পড়া শিখেছে । যাই পায় তাই বানান করে জোরে জোরে পড়ে । সকালবেলা চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিত পত্রিকা পড়া আমার নিয়মিত অভ্যেস ।

কয়েকটা পত্রিকা রাখি । বাচ্চারা যা দেখে তাই অনুকরন করার চেষ্টা করে । সেও একটা পত্রিকা হাত বাড়িয়ে নেয় । জোরে জোরে পড়ে । ছেলে পড়া শুরু করলে আমি কিছুটা বিব্রত হই।

কয়েকটা শব্দ আমার কানে কাটার মত বিধে - ধর্ষন, খুন ,রাহাজানী, ঘুষ, দূর্নীতি, গুম । বাচ্চাটা নুতন নুতন শব্দ দেখে প্রশ্ন করে- বাবা এটা মানে কি, ওটা মানে কি । আমি কাশি দেই, অপ্রস্তুত হয়ে যাই । বাচ্চার মা সামাল দেয় - মানে কিছু না বাবা, পরে জানতে পারবে , এখন তুমি রুমে যাও, বই নিয়ে বসো । আমার স্ত্রীও পত্রিকা হাতে নেয়, আমরা দীর্ঘ সময় আলাপ করি ।

এটা ঠিক হচ্ছে না, ওটা ঠিক হচ্ছেনা । সরকারের এই পলিসি ভাল না, ওই পলিসি ভাল না । আমি পজিটিভ মানুষ, সরকারের সব কিছুকেই সমর্থন করি । আচমকা আমার স্ত্রী প্রশ্ন করে বসে -আচ্ছা, এবারকারের তুমি একটা ভাল পলিসির কথা বলতে পারবে? বুকে হাত দিয়ে বলো । আমি কিছু বলতে পারি না ।

আমার স্ত্রী প্রশ্ন করে আচ্ছা- আমাদের সন্তানটা কি সুস্থ পরিবেশ পাচ্ছে বেড়ে উঠার? তার জন্যে কি আমরা সুন্দর একটা বাংলাদেশ রেখে যেতে পারবো ? আমি একটু শক্ত হয়ে বলি - পারতেই হবে । পরিবর্তন আনতেই হবে । দরকার হলে বিপ্লব হবে । আমার বাচ্চার বেড়ে উঠার পথে প্রতিবন্ধক যারা, যারা তাকে গলাটিপে মেরে ফেলতে চায় , তাদের হাত থেকে মুক্তি চাই । সরকারী চাকুরী করি ।

আমি অফিসে যাই আধা ঘন্টা লেট করে । গিয়ে দেখি কেরানী এটেন্ডেন্স এর রেজিষ্টার খাতায় আমার হয়ে সাইন করেই রেখেছে । চেয়ারে বসি, পিয়ন কে দিয়ে পান আনাই । তারপর মুখে পান দিয়ে আয়েশ করে চিবুতে থাকি । কয়েকটা ফাইল দেখি ।

কলিগ এসে বসে আমার টেবিলের বিপরীত পার্শ্বে রাখা চেয়ারে । তারপর শুরু হয় রাজা উজীর মারা । ডিপার্টমেন্টের পলিসির সমালোচোনা, বসের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা , এবং আস্তে আস্তে দেশ নিয়ে গভীর চিন্তিত হয়ে পড়ি আমরা । অন্যায়, অবিচার, দূর্নীতি নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমরা দেশের জন্য কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখি, বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি । আমার বাচ্চাকে স্কুল থেকে আনার সময় হয়ে যায় ।

অফিসের গাড়ি নিয়েই বাচ্চাকে বাসায় রেখে আসি, বাসা অফিসের কাছেই । একেবারে গোসল করে, লাঞ্চটাও সেরে আসি । দুপুর দুইটার পর আবার কিছু ফাইলপত্র দেখি । কিছুক্ষন পর কেউ না কেউ আসে টেবিলে । ফাইল দেখার সাথে সাথে গল্প করি।

সেই সাথে চলে চা, সিগারেট । চা টা অবশ্যই অফিসের পিয়ন দিয়ে যায় । এভাবে পৌনে চারটা বেজে যায় । আমি অফিসে থেকে বেরিয়ে আসি । আবার বাসায় যাই।

বাসায় ফিরে ক্লান্ত । আবার সন্ধ্যেবেলা লনে ইজিচেয়ারে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে স্বপ্ন দেখি । পরিবর্তনের স্বপ্ন, নুতন দিনের স্বপ্ন, বিপ্লবের স্বপ্ন । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।