আজ বিকেলে ড্যানিয়েল ক্রেইগ ফোন করেছিলেন। হ্যাঁ, ড্যানিয়েল ক্রেইগ শুনলে যার নাম মনে আসে আপনার, সেই ড্যানিয়েল ক্রেইগ-ই। 'ক্যাসিনো রয়্যাল' থেকে যিনি জেমস বন্ড-এর রোল করছেন। আগেও তাকে 'রোড টু পারডিশন' বা 'লারা ক্রফট' সিরিজে দেখা গেছে , কিন্তু জেমস বন্ড সিরিজ-ই তাকে পরিচিত করে তুলেছে। ২১ নম্বর বন্ড মুভি থেকে তিনি আছেন।
এখন চলছে ২৩ নম্বর (স্কাইফল) এর কাজ। এর শুটিং চলছে এখন টার্কিতে। সদ্য রিলিজ করা মিলেনিয়াম সিরিজের হলিউডি ভার্শনের প্রথম মুভির (দ্যা গার্ল উইথ দ্যা গোল্ডেন ট্যাট্টু, ২০১১) সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই 'স্কাইফল'-এর কাজ। ক্রেইগ এখন মহাব্যস্ত। তাই তার সাথে ইচ্ছে করেই ইদানীং যোগাযোগ করছিলাম না।
আপনারা যারা ভ্রূ কুঁচকাচ্ছেন, তাদের বলি, ড্যান কিন্তু আমার অনেক দিনের বন্ধু। কী করে আলাপ হলো, সে প্রসঙ্গ তোলা থাক। বন্ধুতে বন্ধুতে আলাপ হওয়া, ই-মেইল চালাচালি করা, ফোন করা, ভিডিও চ্যাট করা স্বাভাবিক নয় কি? তাহলে ভ্রূ সোজা করে ফেলুন।
অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এলে ইদানীং ভয়ে থাকি। চাঁদাবাজ, কিডন্যাপার-দের থেকেও এখন বেশি ভয়ের পুলিশ-কালো পুলিশ-জলপাই পুলিশ-গোয়েন্দা পুলিশ! রক্ষক তো আগে থেকেই ভক্ষক ছিল, সেই ইয়াসমিনের সময় থেকে, ইদানীং আক্ষরিক অর্থেই ভক্ষক হয়েছে এরা।
আগে লাশ পাওয়া যেত, জামালউদ্দিনের তো কঙ্কাল। এখন হাড্ডি-মাংস সমেত উধাও!
যাই হোক, আপনারা বিরক্ত হচ্ছেন বুঝছি। মায়ের কাছে মামাবাড়ির গল্প বলাটা ঠিকও হচ্ছে না। ড্যানিয়েল ক্রেইগ আর আমার কথোপকথনটাই তবে বলে ফেলি।
আমি : (ভয়ে ভয়ে) হ্যালো।
কে বলছেন?
ওপাশ থেকে : হেই ডুড! দিস ইজ ড্যান।
আমি : (ভয়ে ভয়ে) হু ইজ ড্যান?
ওপাশ থেকে : ওহ ডুড! ইউ আর সো...। দিজ ইজ ড্যান, ড্যানিয়েল ক্রেইগ।
আমি : (স্বস্তির শ্বাস ফেলে) ওহ ড্যান! কেমন আছো? কোথায় তুমি?
ড্যান : আঙ্কারা-তে। কিন্তু আমাকে ড্যান বলে ডেকো না।
জেমস বলো। মাই নেইম ইজ জেমস, জেমস বন্ড। মেথড অ্যাক্টিং করছি। চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যাওয়া। নমস্য মারলন ব্রান্ডোর তরিকা।
শুটিং শেষ হওয়া অবধি আমি জেমস বন্ড, ০০7, এমআই-সিক্স (MI-6) এজেন্ট। হার একসেলেন্সি কুইন আর ব্রিটেনের সেবা করাটাই আমার ধ্যানজ্ঞান।
আমি : ওকে জেমস। জীবনযাত্রাও তবে বন্ডীয় ধারায় চলছে? সুন্দরী রমনী? অ্যাস্টন মার্টিন? সেভিল রো স্যুট? গ্যাজেটস? বন্ড উইথ দ্যা বেস্ট কি?
ড্যান (বন্ড): চলছে। তবে কী জানো, তাজমহল দেখতে সুন্দর, তবে থাকতে নয়।
এক জিনিশ আর কতো ভালো লাগে। ঐ যে তোমাদের বাংলায় বলে না, লেবু বেশি কঁচলালে তিতা লাগে! আর কতো রমনীসঙ্গ! (দীর্ঘশ্বাস)
আমি : সে কী! ললনা-তে বন্ডের অরুচি! ফাইজার কোম্পানীর নীল ট্যাবলেট লাগবে বুঝি?
বন্ড : আরে না না। কী যে বলো! ফিল্ম তো ফ্লপ করবে তবে। বাদ দাও। শোনো, জেমস বন্ডের একটা মুভির প্লট বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক হবার চান্স আছে।
প্রোডিউসার ইঙ্গিত দিলো। এটা জানানোর জন্যই তোমাকে ফোন করলাম।
আমি : (বিষম খেয়ে) কেন? কেন? এত জায়গা থাকতে বাংলাদেশ কেন?
বন্ড : আরে ঠেকাটা তো আমাদেরই। জেমস বন্ডের শত্রুর অভাব পরেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই।
ওসামা বেঁচে থাকলেও ইসলামোফোবিয়া দিয়ে মার্কেট ধরা যেত। এখন বন্ডের হয়েছে শত্রুর অভাব। শত্রু না থাকলে জেমস বন্ড কার সাথে লড়বে? পরের সিনেমাগুলোর কী হবে?
আমি : তা বাংলাদেশে শত্রু পাবে কই তোমরা?
বন্ড : হুম। উই আর লুকিং ফর শত্রুজ দেয়ার। মিয়ানমারের সাথে তোমরা কী যেন বিজয় করলে? নিজেদেরই জায়গায় আইল দিয়ে বললে বিশাল এক জয়! এই নিয়ে সম্বর্ধনা-টনা করলে দেখলাম।
আমি : (লাজুক স্বরে) হ্যাঁ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটু প্রচার পেতে ভালোবাসেন। ওনার একটু হীনমন্মতা আছে চেহারা নিয়ে। ওনার চিরশত্রুকে আবার সবাই সুন্দরীতর বলে কিনা! জানোই তো, মেয়েরা এসব ব্যাপারে একটু সেন্সিটিভ-ই হয়।
বন্ড : তা আর বলতে! আমার এক গার্লফ্রেন্ড...যাক গে, যা বলছিলাম, তা বে অফ বেঙ্গলে তেল তুলবে তো আমাদের কর্পোরেশনগুলোই।
তোমাদের বাপেক্স তো আর না, কমিশন-টমিশন লেনদেন তো হয়েইছে। এবার তেল তুলবে কনাকো-ফিলিপস, বাগড়া দেবে চায়না। সিআইএ, এমআই-সিক্স, র একসাথে কাজ করবে চায়নার জনগণের মুক্তির জন্য। নেতৃত্ব দেবে বন্ড, দ্যা জেমস বন্ড!
আমি : পারবে কী? কিছুদিন আগে অ্যামেরিকান সেনা দেশে আছে শুনেই বামদলগুলো যা চেঁচামেচি করলো। এমআই-সিক্সকে আসতে দেবে?
বন্ড : ফাক দোজ ব্লাডি রেডস।
ওদের কিছু চামড়া-বাঁধানো 'দ্যা ক্যাপিটাল' উপহার দেবো, বগল বাজাবে। আর ইকোনমিস্ট-এ র-য়ের টাকার কথা জানিনা ভেবেছো? র এলে স্বার্বভৌমত্ব টিকে থাকে আর আমরা এলে তোমাদের সতীপনা উথলে ওঠে?
আমি : আহা ওরা তো একাত্তরে...
বন্ড : (রাগত স্বরে) থামো তো! তোমরা আর কয়দিন পরে তলিয়ে যাবে। যেটুকু থাকবে তাও বালি। এখন কনাকো-ফিলিপস-কে তেল তুলতে দাও। সমুদ্রের পানি আরও বেড়ে যাবে, কানাডা তো কিওটো থেকে বেরিয়ে গেছে।
আস্তে-ধীরে আমরাও যাবে। সমুদ্র আরও গভীর হোলে তেল তুলতে আরও খরচ হবে। তেল-টেল যা পাবার তুলে নিয়ে ওরা বিদায় হোক, তোমাদেরও কারও কারও বিএমডব্লিউ-হামার হোক আমরাও চায়নাকে শত্রু ধরে কয়েকটা সিনেমা নামিয়ে ফেলি।
আমি : তাহলে তো তুমি আগামী কয়েক বছর খুব-ই ব্যস্ত থাকবে!
বন্ড : (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) হ্যাঁ, কিন্তু দুঃখ কি জানো, সম্মান পেলাম কই? বিশ্বশান্তি রক্ষায় এতো কিছু করলাম, আমাকে না হোক, জেমস বন্ড চরিত্রটাকে সন্মান জানাতেও তো একটা শান্তি পুরষ্কার-টুরষ্কার দেয়া উচিত।
আমি : হুম।
তুমি কতো যুদ্ধ থামিয়েছো, তোমাকে তো একেবারে নোবেল শান্তি পুরষ্কার দেওয়া উচিত। অথচ দেখো, কোন যুদ্ধ না থামিয়েই গরীবের রক্তচোষা আমাদের দেশের ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পেলেন! আবার কী আশ্চর্য কয়েক লাখ মানুষ পুড়িয়েও হিটলার নাকি একবার শর্টলিস্টে ছিলেন! আর বন্ড কিনা...! তবে হ্যাঁ, আমাদের এক বড় মাপের নেতার কথামতো চললে শান্তিতে নোবেল-ও পেতে পারো।
বন্ড : (সাগ্রহে) কী সেটা?
আমি : আমাদের এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় যদি চিজ স্যান্ডউইচ সহযোগে হোয়াইট ওয়াইন খাওয়া যায়, তবে শান্তিতে নোবেল জয় অসম্ভব নয়। তুমি তো ভদকা মার্টিনি খাও। শেকেন, নট স্টিয়ার্ড।
এখন থেকে হোয়াইট ওয়াইন খাবে আর খিদে পেলেই চিজ স্যান্ডউইচ। আর দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে তো তোমার দেখা হয়ই।
বন্ড : ওয়েট। আচ্ছা তোমাদের নেতা শেখ মুজিব...
আমি : বি সিরিয়াস, ডুড! হি ইজ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির জনক স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। 'হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি' অভিধা দিয়েছে আবার তোমাদেরই বিবিসি।
বন্ড : ওরে বাবা। এতো কুইন এলিজাবেথের চেয়েও বড় নাম! তো উনি তো জুলিও কুরি পিস প্রাইজ পেয়েছিলেন। উনি কী খেতেন?
আমি : (রেগে গিয়ে) ডুড, দিস ইজ বাংলাদেশ! এখানে ব্লগে-ফেসবুকে হাইকোর্ট নাক গলায়, কিন্তু মামলার পাহাড় জমে থাকে! এখানে ডিজিএফআই ফোনে আড়ি পাতে, কিন্তু বিডিআর মিউটিনির কোন ক্লু পায় না! তোমার সাথে কথা বলাটা আমার জন্য ঠু মাচ রিস্কি হয়ে যাচ্ছে! রাখছি এখন।
বিকালটাকেই মাটি করে দিল!
(উর্বর মস্তিষ্কধারীদের জন্য : সংলাপগুলো কাল্পনিক)
রাজশাহী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।