আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেমস বন্ডের ৫০ বছর

বুকের ভেতর বহু দূরের পথ... পঞ্চাশ বছর আগে 'ডক্টর নো' চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে রূপালি পর্দায় যে ব্রিটিশ গুপ্তচরের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আজ পাঁচ দশক পেরিয়েও সে চিরতরুণ এবং ঠিক আগের মতোই দুর্ধর্ষ। আজও কোটি কোটি দর্শকের হৃদয়ে অক্ষয় এই তরুণ, নারীর আজন্ম আরাধনার পুরুষ। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্সের সেরা গুপ্তচর বন্ড, জেমস বন্ড। বন্ড মানে ক্ষুরধার বুদ্ধিমত্তা, অন্তর্ভেদী দৃষ্টি, অসামান্য রসবোধ এবং শত্রুকে ঘায়েল করতে দুর্দান্ত আত্মরক্ষার কৌশল। প্রয়োজনে মানুষ খুন করতে যার বুক এতটুকু কাঁপে না, সেই মানুষটারই রূপবতী নারীর সান্নিধ্য পেলে প্রেমে মজতে একটুও সময় লাগে না।

হোক না সে রমণী নিজ দফতরের মিস মানিপেনিই, হোক সে প্রতিপক্ষ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কোনো সুদর্শনা। এমনকি শত্রু শিবিরের কোনো নারীও বন্ডের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে না। বন্ড সবাইকে তার জাদুতে আচ্ছন্ন করে, কাছে টানে কিন্তু কোনো বাঁধনে জড়ায় না। তাই জটিল সব রহস্যের জাল ভেদ করা এই গোয়েন্দা নিজেই এক অমীমাংসিত রহস্য। ব্রিটিশ লেখক ইয়ান ফ্লেমিংয়ের সাড়া জাগানো গোয়েন্দা চরিত্র এই জেমস বন্ড।

উপন্যাসে বন্ডকে দেখানো হয় রয়্যাল নেভির একজন কমান্ডার হিসেবে, পরে যাকে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের গোয়েন্দা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের নাম পরিবর্তন করে এমআই৬ রাখা হয়, যার মানে অন হার ম্যাজেস্টিস সিক্রেট সার্ভিস। জেমস বন্ডের কোড হচ্ছে ০০৭। ০০ কোড শুধু তাদেরই দেওয়া হয় যারা প্রয়োজনে হত্যা করার লাইসেন্সপ্রাপ্ত। ফ্লেমিং জেমস বন্ডকে নিয়ে ফেঁদেছেন ১২টি উপন্যাস আর দুটি ছোটগল্পের সংকলন।

ফ্লেমিংয়ের মৃত্যুর পর জেমস বন্ড চরিত্রটিকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য বই, চলচ্চিত্র, কমিকস, ভিডিও গেমস ইত্যাদি । গত পঞ্চাশ বছরে সময়ের সঙ্গে পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই বদলে গেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন আর নেই, তাই বদলে গেছে শত্রুও। প্রযুক্তি অভাবনীয় উন্নতিতে বন্ডের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ 'কিউ' বন্ড ও বন্ডের দর্শকদের দিচ্ছেন নতুন চমক যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অদ্ভুত-অকল্পনীয় সব গাড়ি। বন্ড সিরিজে ‌'এম' ছদ্মনামের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে বন্ডের বস যার অধীনে অক্লান্ত ভাবে সে কাজ করে চলেছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ।

অনেকটা অবিভাবকের মত এই 'এম' রূপালী পর্দায় কখনো পুরুষ কখনো নারী হিসেবে ধরা দিয়েছে। কিন্তু বন্ডের কোনো পরিবর্তন নেই। বন্ড কখনও পুরনো হয় না। বন্ড চরিত্রে রপদানকারীরা বুড়িয়ে যাওয়ায় গত পাঁচ দশকে বেশ কয়েকবার অভিনেতা বদলে হলেও পরিচিত বন্ডকে দেখতেই বারবার দর্শকরা ভিড় জমান প্রেক্ষাগৃহে। অভিনেতাদের বয়স বাড়ে কিন্তু বন্ড যে চিরসবুজ! বন্ড সিরিজের প্রথম ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আট বছর আগে প্রথম টিভি সিরিয়াল তৈরি হয়।

'ক্যাসিনো রয়েল' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সেই টিভি সিরিয়ালে জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয় করেন ব্যারি নেলসন। তখন চরিত্রের নাম ছিল জিমি বন্ড। তবে সিরিয়ালটি তেমন জনপ্রিয় হয়নি। তাই শুরুতে চলচ্চিত্রে জেমস বন্ডের সাফল্য নিয়ে ঘোর সন্দেহ ছিল। হলিউডে বোদ্ধারা ভেবেছিলেন, ব্রিটিশ এই চরিত্র গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

অভিনেতা খোঁজার কাজও সহজ হয়নি। তবে শন কনারি যেভাবে বন্ডকে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল। দুর্দান্ত সব অ্যাকশনের পাশাপাশি তার অনবদ্য রসিকতা সবার মনে ধরেছিল। শন কনারির তীব্র পুরুষালি কণ্ঠে সেই পরিচয় প্রদান 'মাই নেম ইজ বন্ড, জেমস বন্ড' আজও বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা সংলাপ। ব্যারি নেলসন (১৬ এপ্রিল ১৯১৭– ৭ এপ্রিল ২০০৭) এখন পর্যন্ত জেমস বন্ড সিরিজের ২২টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে।

এর মধ্যে শন কনারি ৬টি [ড. নো, ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ, গোল্ডফিঙ্গার, থান্ডারবল, ইউ অনলি লিভ টোয়াইজ, ডায়মন্ডস আর ফরএভার], জর্জ ল্যাজেনবি ১টি [অন হার ম্যাজেস্টিস সিক্রেট সার্ভিস], রজার মুর ৭টি [লিভ অ্যান্ড লেট ডাই, দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান, দ্য স্পাই হু লাভড মি, মুনরেকার, ফর ইউর আইজ অনলি, অক্টোপুসি, অ্যা ভিউ টু কিল], টিমোথি ডালটন ২টি [দ্য লিভিং ডেলাইটস, লাইসেন্স টু কিল, পিয়ার্স ব্রসনান ৪টি [গোল্ডেন আই, টুমরো নেভার ডাইজ, দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ, ডাই অ্যানাদার ডে] আর ড্যানিয়েল ক্রেগ ২টিতে [ক্যাসিনো রয়্যাল, কোয়ান্টাম অব সোলেস] বন্ড চরিত্রে রূপদান করেছেন। এ বছর মুক্তি পাবে সিরিজের ২৩তম ছবি 'স্কাইফল'। এতে তৃতীয়বারের মতো বন্ডের ভূমিকায় দেখা যাবে ক্রেগকে। জেমস বন্ডের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সবকটি ছবির ব্লুরে ডিস্ক বাজারে আসছে- ___________________________________________________ (১৯ জানুয়ারি ২০১২ দৈনিক সমকালের সাপ্তাহিক বিনোদন পাতা নন্দনে প্রকাশিত)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।