বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কষে ধমক দিয়ে গেলেন বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার নেতা হিলারী ক্লিন্টন। আশা করা যায়,হাসিনাকে আর এরকম উপহার দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক পুলসেরাতের দিকেই তার মুখও নাক বরাবর হয়ে গেছে ধরে নেয়া যায়। এখন তিনিই বুঝবেন, কিসে তার অগ্রাধিকার!
বাংলাদেশ পরাধীন কিনা জানতে চাইলে শেখ মুজিবের মেয়ে হাঁ উত্তর দিলে মার্কিণ নেতা খাড়া প্রশ্ন করেন তাহলে বিদেশী ১৫০ স্পেশাল ফোর্স গণভবন সহ রাজধানীতে কিভাবে আছে? তিনি আরো বলেন, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে এই বিদেশী সাধা পোষাকে থাকাবাহিনীর লোকরাই ইলিয়াস আলীকে গুম ও হত্যা করেছে এবং গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম কে হত্যা করেছে। স্বাধীন রাষ্ট্র স্বাধীন ভাবে চালানোর উপর জোর দিয়ে তিনি ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ হতে স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ সরকার পরিচালনার জন্য স্পষ্ট তাগিদ দিয়ে যান।
বিশ্লেষকরা হিলারী ক্লিন্টনের এই তাগিদকে আদেশ বলে বর্ননা করছেন।
মার্কিণ বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমানে ৫মে ৪টা ৪০ মিনিটে হিলারী ঢাকায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আসেন। বিমান থামার পর নিরাপত্তার বিবেচনায় এই বিমানে বসেই তিনি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিণ নেতা রবার্ট ও ব্লেইক এবং হিলারীর অগ্রবাহিনীর সাথে দীর্ঘ আলাপ শেষ করেন। প্রায়ই ১ ঘন্টা শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মার্কিণ নেতাকে রিসিভ করার সুযোগ পান। তারপর হতেই ২০ঘন্টার ব্যাস্ত সফর শুরু করেন হিলারী।
৬মে সকাল বেলা ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে হিলারীর দীর্ঘ বৈঠক হয় এবং তার আগে স্যার ফজলে আবেদের সাথে ঐ বাসায় কথা বার্তা সেরে নেন। কলকাতা রওয়ানা হবার আগে অতীব গুরুত্ব এই আলাপ আলোচনা শেষ করেন মার্কিণ নেত্রী।
বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার বাসায় দীর্ঘ আলাপ করে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালু রাখা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আর্থিক দূর্নীতি উতসাহিত করা চলছে বলে একমত পোষণ করেন হিলারী রোধাম ক্লিন্টন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন করার প্রশ্নে শেখ হাসিনা আদালতের আদেশের অজুহাত তুলে ধরলে হিলারী আদালতের আদেশের একাংশ নিয়ে জোর না দিয়ে আদেশটি সামনে তুলে ধরে এ সম্পর্কিত পুরো রায়ের লাইন গুলো উল্লেখ করে বলেন নির্বাচন হতে হবে সবার গ্রহণযোগ্য। সাবধান এক তরফা নির্বাচন কেহ গ্রহণ করবেনা।
ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারের লক্ষ্যে সরকারের আন্তরিক চেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া জবাবে তিনি বলেন স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেই এই গুমের অনুসন্ধান করুন। তিনি ইলিয়াস আলীর শিশু কণ্যার লিখিত আবেদন গ্রহণ করেন।
এদিকে বুশ জুনিয়ারের শাসনামলে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী খালেদার সাথে আমেরিকার সই করা পার্টনারশীপ ডায়ালগ রিনিঊ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে হিলারী এবং বাংলাদেশের পক্ষে দিপু মণি এতে সই করেন। উভয় সরকারের নতুন কোন চুক্তি হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনাকে এই অনুষ্ঠানে ক্যামেরায় তাদের সাথে একটা হাসির পোজ দিয়ে ছবিতে থাকতে দেখা যায় পত্র-পত্রিকায়।
হিলারী ক্লিন্টন তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা সম্পর্কিত বাংলাদেশের দাবীকে যৌক্তিক বলে দৃঢ়মত পোষণ করেন। বাংলাদেশ হতে কলকাতায় গিয়ে তিনি এবার চোট নেবেন পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যাণার্জীর উপর। মার্কিণ ডলার কে বাঁশ পাতার মতো উড়ানো হয়েছিলো মমতাকে গত নির্বাচনে জেতাতে। কিন্তু মমতা গোপনে উল্টো চলার ফলে বাংলাদেশকে পানিতে ঠকানো এবং সীমান্তে বিএসএফ এর মাধ্যমে বাংলাদেশী খুন করার “র”-এর নিরন্তর তৎপরতাকে সমর্থন করে অঞ্চল জুড়ে অশান্তি উগলে দিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন মমতা ব্যানার্জী।
মিস ব্যানার্জী রহস্যজনক কারণে সি পি আই (এম) এর সাথে মিলে এক ভয়ানক খেলায় মেতেছেন। যাতে আমেরিকার প্রশ্ন করার পরিস্থিতি তৈরী গেছে। যদিও আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস অথবা সামর্থ্য এদের কারো সামান্যও নেই। নিশ্চিত বলা যায়,এখানে আমেরিকার পরিকল্পনা ই কার্যকর হতে বাধ্য। যা হোক,এই অঞ্চলে অশান্তি বা সন্ত্রস্থ জীবন আমেরিকান নীতির পরিপন্থী।
পুরাতন ধারার কম্যুনিস্ট এবং অন্যান্য বাম ঘেঁষা রাজনীতিকরা বাংলাদেশ ও তার পাশে ভারতের অনুন্নত এই বিশাল অঞ্চল জুড়ে এখন মার্কিণ অংশগ্রহণকে প্রকারান্তরে নিরুৎসাহিত করছে। এই গোপন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে “র” এর নির্দেশনায় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতাদের বাদ দিয়েছিলো মন্ত্রীসভা গঠনে এবং বিগত সংসদ নির্বাচনে। তিনি সঙ্গে নিয়েছিলেন কিছু পরিত্যক্ত বামদের। হাসিনা অর্থ এবং ক্ষমতার লোভে সেই গোয়েন্দা সংস্থার ছক অনুযায়ী তখন হতে এ পর্যন্ত চলে আসছেন। প্রতারণা করেছেন বাংলাদেশ এবং আমেরিকার সাথে।
হিলারী ক্লিন্টন তারপর পৌঁছবেন দিল্লী। আমেরিকার এই মিত্র দিল্লীর সরকারকে স্পষ্ট ই বলে দেবেন নতুন গজানো তোমাদের এই দাঁত দিয়ে বাংলাদেশ চিবানো আর নয়। পুরোপুরি বন্ধ করো। আমাদের কাছে তোমাদের অপকর্মের সব খুতিয়ান আছে। আর বাড়াবেনা।
পিছে হটে এসো। স্বাধীন রাষ্ট্রকে নিজের মতো চলতে দাও। “র” এর তৎপরতা বাংলাদেশ হতে গুটিয়ে নিতে তিনি দিল্লীকে কড়াকড়ি বলে যাবেন।
হিলারী বাংলাদেশ,কলকাতা এবং দিল্লীতে মার্কিণ পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করছেন। দক্ষিণ এশিয়াই এই মার্কিণ মনোযোগের এই নমুনা যেনো সংশ্লিষ্টরা সবাই অনুসরণ করে তা মার্কিণ পররাষ্ট্র দফতর পরিষ্কার দেখতে চায় বলে ভাবে বুঝা যায়।
যাতে মার্কিণ অবস্থানের কোন ব্যাতিক্রম হবেনা বলে পর্যবেক্ষকরা দাবী করছেন। আমেরিকার সাথে দিল্লীর ব্যাবসা থাকা আর আমেরিকার সমৃদ্ধির পথে বাধার দেয়াল খাড়া করার উদ্যত দেখানো এক নয়। সোভিয়েট সমাজতান্ত্রিক ইউনিয়ন ভেঙ্গে খান খান হয়েছে আমেরিকার সাথে স্নায়ূ যুদ্ধের পরিণতিতে। ইউরোপের পরিণতির কথা ভারতের মুখস্থ আছে। চীনের সাথে আমেরিকার মিত্রতা এবং ভাগাভাগি করে নিজেদেরকে আরো সমৃদ্ধ করবে নতুন শক্তি চীন এবং বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ এক্ষত্রে নিজের শত্রুর হাত নিজের গলায় বেঁধে রাখবে কি ধ্বংস হয়ে যেতে?
ম্যাডাম হিলারীর এই সফরের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে এই প্রবন্ধের বিষয় আলোচনায় এনে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়,বাংলাদেশে অল্প সময়ের মধ্যেই একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। যাতে সাধারণ নাগরিকগণ তাদের বন্ধ হয়ে যাওয়া নিশ্বাস আবার টানবেন এবং স্বপ্নের বাস্তবতা স্পর্শ করবেন।
(আবু জাফর মাহমুদঃ সম্পাদক,এশিয়ান টাইমস,নিউইয়র্ক ৬ মে ২০১২) facebook ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।