যেমন কর্ম তেমন ফল।
আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হক ঐতিয্যবাহী সরকারি বাঙলা কলেজের প্রায় চার বিঘা জমি নিজ কোম্পানি মায়িশা গ্রুপের নামে দখলে নিয়েছেন। ব্যক্তিমালিকানাধীন কিছু জমির সঙ্গে কলেজের জমি মিশিয়ে ইতোমধ্যে মায়িশা গ্রুপের সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, কলেজের অধ্যক্ষ, কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এ দখলে সহযোগীতা করছেন। এ ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় শিক্ষকদের একটি গ্রুপ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন।
কলেজের অধ্যক্ষ সরাসরি দখলের সহযোগীতা করায় শিক্ষার্থীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছে। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, কলেজ কর্তৃপক্ষ নাকি বলছেন কলেজের জমি বেদখল হচ্ছেনা।
সর্বশেষ জরিপ (মহানগর জরিপ ১৯৯৭) অনুযায়ী বাঙলা কলেজের মূল ভবনের পেছনের জমির দাগ নম্বর ৫০৮। এ দাগে কলেজের জমি রয়েছে চার একর ৮১ শতাংশ। এটি নন্দারবাগ মৌজা।
এর পাশের ৫০৭ নম্বর দাগের জমি ব্যক্তিমালিকানাধীন, এই জমিতে বর্তমান মায়িশা গ্রুপের সাইনবোর্ড ঝুলছে। ৫১৩ ও ৫১৪ নম্বর দাগের জমি ভাষা আন্দোলনের অগ্রসেনানী ও বাঙলা কলেজের প্রতিষ্ঠতা প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের ছেলে-মেয়েদের নামে রয়েছে। প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত ওই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৬ সালে কলেজটি সরকারি হয়।
জানা যায়, সম্প্রতি সরকারী বাঙলা কলেজের অরক্ষিত জায়গা কলেজের নিয়ন্ত্রণে আনতে সীমানা প্রাচীর করতে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
সুযোগ বুঝে স্থানীয় এমপি প্রাচীর নির্মাণ কাজে হস্তক্ষেপ করেছেন। ৫০৭ দাগকে তিনি ৫০৮ দাগের মধ্যে গুলিয়ে ফেলেছেন। কলেজের ৫০৮ দাগের প্রায় চার বিঘা জমি তিনি দখলে নিয়েছেন। এ জমি ছেড়ে তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষকে সীমানা প্রাচীর করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ সেই মোতাবেক কাজ করছেন।
সাধারণ কেউ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তাদেরকে পুরাতন রেকর্ড দেখিয়ে বিভ্রান্ত করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এসব ব্যাপারে বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ এস এম মকফুর হোসেন বলেন,
রেকর্ডে কি আছে না আছে এটা আমি পরিষ্কার ভাবে জানিনা। যদি কেউ কলেজের জমি জোর করে দখলে নেন, আজ না হলেও একদিন তা পুনরুদ্ধার হবেই হবে। ক্ষমতায় চিরদিন কেউ থাকেনা। তবে তিনি দখলের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেন।
সম্প্রতি কলেজের পুরো সীমানা এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা হয়। কলেজের পেছনে মিরপুর রোডস্থ নাভানা সিএনজি ষ্টেশন সংলগ্ন কলেজের জায়গায় এমপি আসলাম তার কোম্পানি মায়িশা গ্রুপের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দিয়েছেন। অপর দিকে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের ছেলে-মেয়েদের জায়গায় কলেজ কর্তৃপক্ষের নামে বাঙলা কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। ৫০৮ দাগের কলেজের জায়গায় বিশালাকার জমি বাদ দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য পিলার স্থাপন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অল্প সময়ের মধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে।
দ্রুত গতিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ চলছে। আর এ সীমানা প্রাচীর এভাবে তৈরি হয়ে গেলে ঐতিহ্যবাহী এ কলেজটি তার মূল্যবান সম্পদ আর কখনো ফিরে পাবেনা বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্তে কলেজে একটি পরিবহন দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন এমপি আসলাম। এছাড়াও কলেজের আধুনিকায়নসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করারও অঙ্গীকার করেছেন তিনি। বিভিন্ন বিষয়ে উন্নয়নে আলোচনা-পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিব হোসেন মিরন বলেন, আসলাম ভাই কলেজের জায়গা দখল করেনি। তার নিজের জায়গায় তিনি কোম্পানির সাইন বোর্ড স্থাপন করেছেন। কলেজের শিক্ষকরা মিলে ওই জায়গা দখল বুঝিয়ে দিচ্ছেন আসলমাম ভাইকে। মিরন নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে বলেন, কোন ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুখ মিরাজ বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের বলেছেন কলেজের জমি হাতছাড়া হচ্ছেনা।
কলেজ তার নার্য্য জমির মধ্য দিয়ে সীমানা প্রাচীর করছে। যদি কোনোভাবে প্রমাণ মিলে কলেজের জায়গা কাউকে গোপন আতাত করে দখলে দেওয়া হচ্ছে, তাহলে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে দখলদারকে হটানো হবে।
সীমানা প্রাচীন নির্ধারণী কমিটির সদস্য হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্বপন কুমার পাল এ প্রসঙ্গে বলেন, কলেজের সীমানা কোনটি হবে, এ বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পিলার বসানোর কাজ শুরু হয়েছে অল্প কিছু দিন হলো। কোন কারণে কলেজের জমি বাদ দিয়ে সীমানা প্রাচীর গড়া হলে তা ভেঙ্গে নতুন করে সীমানা পিলার করা হবে বলেও জানান তিনি।
এসব বিষয় নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনাকালে স্বউদ্যোগী হয়ে এ প্রতিবেদককে ফোন করেন স্থানীয় এমপি আসলামুল হক। তিনি বলেন, বাঙলা কলেজের বিরুদ্ধে লোকের জমি দখলের অনেক অভিযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসককে বলেছি, নতুন করে মাপজোক করে ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা বের করে দিতে। তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করি, এ কলেজটি আমার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত। আমি কলেজের সর্বাঙ্গিন কল্যাণ কামনা করি।
কলেজের কোন অনিষ্ট হোক কখনোই চাইনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।