ইন্টার্ণ লাইফের শেষের শুরু তখন। সার্জারী এবং মেডিসিন সফলতার সাথে শেষ করে গাঈনীর প্রথম দিন। পকেট খরচ চালানোর জন্য ইন্টার্নীর পাশাপাশি একটা হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার পদে 'কামলা খাটি'। ..কলেজে(মেডিকেল কলেজ) নাইট এবং মর্নিং ডিউটি করে বিকালে আমার ডিউটি পড়ছে ঐ হাসপাতালে । স্বভাবতই খুব ক্লান্ত।
ঘড়িতে ৯টা বাজার অপেক্ষায় বসে আছি। ৯টা বাজার ঠিক ৫ মিনিট আগে একটা গাঈনীর রোগী আসলো। আমিতো খুশি,যাক এই রোগী আমাকে রিসিভ করতে হবেনা। কিন্তু খুশী হলে কি হবে, আমার সাথে সেদিন ডিউটিতে ছিলেন কলেজের হার্টথ্রব শিরীন আপু। আপুকে যখন বললাম-'আপু আপনে রিসিভ করেন এটা' তখন আপু চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকালেন আমার দিকে।
আমি বললাম 'আপু, ফিমেল পেশেন্ট তো। ' আপু বললেন- 'তুই জীবনে শুনছোছ,গাঈনীতে মেল(পুরুষ) পেশেন্ট ভর্তি হইছে??' আমি বললাম-'না মানে,গাঈনীর রোগীদের সাথে আমি একটু আনইজি। হিস্টিরী টেক করতে অস্বস্তি ফিল করি। ' আপু তার মেল কিলিং হাসি দিয়ে বললো-'চান্দু, এই কথা কইলে এ জীবনে তুমি লগ বুকে সাইন পাবা না। সো, কোন কথা না বলে সোজা পেসেন্ট রিসিভ কইরা আয়, ম্যাডামের সাথে না হয় আমিই কথা বলবোনে।
' কোন কথায় কাজ হবে না বুঝতে পেরে সুবোধ বালকের মতো পেসেন্ট রিসিভ করতে গেলাম( আপুকে আবার আমি না বলতে পারিনা) ।
কেবিনে গিয়ে দেখি আমাদের হাসপাতালের খালা বিছানায় শুয়ে আছে। বয়স ৪৮ এর মতো। তো বিপি-স্টেথো নিয়ে বেশ ভাব নিয়ে কেবিনে ঢুকলাম। খালাকে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনার সমস্যা কি? উনি আমার কথার কোন উত্তর দিলেন না।
খালা মনে হয় কোন ফিমেল ডাক্তার আশা করতেছিলেন। বুঝলাম উনিও আমার মতোই অস্বস্তি ফিল করতেছেন। কিন্তু কি আর করা,শিরীন আপুর কাছে ফিরে যাওয়া আর নিজের প্রেস্টিজ নিজেই পাংচার করা একই কথা। ইতিমধ্যে অন্যান্য খালা,আয়া আর নার্সরা মিলে আমার পেছনে ছোটখাটো একটা জটলা সৃষ্টি করছে,উদ্দেশ্য আমি চলে যাওয়া মাত্রই খালার কুশলাদি জিজ্ঞাসা। এরপর খালাকে জিজ্ঞাসা করলাম- আপনি যেই ম্যাডামকে দেখিয়েছেন উনার কোন প্রেসক্রিপশন আছে আপনার কাছে? এবার উনি একটা কাগজ বাড়িয়ে দেন।
ওখানে লেখা চিফ কম্প্লেইন- প্রায় ৬ মাস ধরে মাসিক বন্ধ এবং লোয়ার অ্যাবডোমিনাল ডিস্টেনশন(তলপেট ফুলে যাওয়া-সোজা বাংলা ভাষায়। ) প্রেসক্রিপশন দেখে তো মেজাজ খারাপ। মনে মনে বলতেছি এইসব মানুষের জন্যই দেশের জনসংখ্যার আজ এই অবস্থা। এই বুড়া বয়সে কেউ বাচ্চা নেয়। অসহ্য, পুরাই ফাউল।
যাইহোক চোখে মুখে বিরক্তির ভাব প্রকাশ না করে, বিপি দেখে প্রশ্ন করলাম-'মা(খালা থেকে মা) বাচ্চার নাড়াচাড়া টের পান??' এরপর খালা যা বললো তা শুনে আমার কপালে প্রথমে বিন্দু বিন্দু ঘাম, ঘামের দরুন চশমা ঝাপসা হয়ে আসা,ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে ব্যাপক হাসির শব্দ শোনা এবং সর্বোপরি আমার মনে হতে লাগলো পন্ডস্ ভ্যানিসিং ক্রিম মাইখা ভ্যানিস হয়ে যাইতে পারতাম ওখান থেকে। :S খালার উত্তর ছিলো- বাবা, এইডা বাচ্চা না- টিউমার, টিউমার। :S
ঘটনার পর গাঈনী প্লেসমেন্ট শেষ না করে ঐ হাসপাতালের ত্রিসিমানায় যাই নাই আর। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।