চাঁপাইনবাবগঞ্জে জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুই সদস্য সানোয়ার হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেনের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে রোববার রাত ১০টায় স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি প্রেসনোট ধরিয়ে দিয়েছেন পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমান। তবে ওই প্রেসনোটে গ্রেপ্তার হওয়া দুইজনের জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা একেবারে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যদিও ওই দিন সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক ও সহকারী পুলিশ সুপার শাকিলুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, গ্রেপ্তার দুইজনই জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তারা নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের জের ধরে সংগঠনের অঘোষিত প্রধান রুহুল আমীন ওরফে সালমানকে হত্যা করেছে। পুলিশ সুপারের স্বাক্ষরিত প্রেসনোটে আরো বলা হয়- গত ২৭ এপ্রিল নাচোলের খলসি এলাকায় একতি মস্তকবিহীন লাশ পাওয়া যায়।
ওই ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা দায়ের করে;মামলার সূত্র ধরে পুলিশ জাহাঙ্গীর ও সানোয়ারকে গ্রেপ্তার করে। তাদের কথা মতো ঘটনাস্থল থেকে ৮/৯ কিলোমিটার দূরে মহানন্দা নদীর তীর থেকে বিচ্ছিন্ন মস্তকটি উদ্ধার করা হয়। প্রেসনোটে নিহত ওই ব্যক্তির পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে সালমান। তার বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। এই প্রেসনোট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের আগের বক্তব্য প্রসঙ্গে কেএম আরিফুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, তিনি তখনই বলেছিলেন বিষয়টি তদন্তাধীন।
পরে পুলিশ সুপার বিস্তারিত জানাবেন। তবে প্রাথমিকভাবে জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন। রোববার রাতেই সানোয়ার ও জাহাঙ্গীরকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারিক হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের কাছে তারা জবানবন্দি দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক সালমানের স্ত্রী ও সানোয়ারের বোন সাইমা আমীন ও সানোয়ারের স্ত্রী রহিমা বেগমকে রোববার রাতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার সঙ্গে জেএমবির সংশ্লিষ্টতা এড়িয়ে যাওয়া হলেও সানোয়ার তিন বছর থেকে জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে স্বীকার করেন। আদালত থেকে জবানবন্দি দিয়ে বেরিয়ে প্রিজনভ্যানে ওঠার সময় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা স্বীকার করেন। এ সময় সহকারী পুলিশ সুপার শাকিলুজ্জামানও উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সানোয়ারের গ্রামের লোকজন জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জেএমবিবিরোধী অভিযানের সময় সানোয়ার পলাতক ছিলেন। ওই সময় তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তার ছোটভাই রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সোমবার সানোয়ারের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার স্ত্রী রহিমা বেগম, পিতা এরশাদ আলী এবং বোন নিহত সালমানের স্ত্রী সাইমা আমীনের সঙ্গে। তারা জানান, ঘটনার দিন অর্থাৎ গত বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা কোচ ধরার উদ্দেশে সানোয়ারের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বের হন সালমান। ওইদিন গভীর রাতে বাড়ি ফেরেন সানোয়ার। সাইমা আমীন বলেন, শুক্রবার সকালে সালমানের মস্তকবিহীন লাশের পকেট থেকে যে টিকিট পাওয়া যায় তাতে যাত্রার তারিখ ছিল ২৮ এপ্রিল এবং সেটা তিনজনের ছিল বলে জানতে পেরেছেন। তিনি জানান, সালমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে সাত মাস আগে।
নবীন ল্যাবরেটরি (ইউনানী), ঢাকার বিক্রয় প্রতিনিধি নবীন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার ছোট ভাই সানোয়ারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। নবীনই তার বিয়ের ঘটক। বিয়ের সময় নবীন, সালমানের বন্ধু নওগাঁর মাসুদ ও রফিক ছাড়া সালমানের কোনো আত্মীয় উপস্থিত ছিলেন না। সালমানের কাছে জানতে পারেন তার পিতার নাম আজগর আলী, বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বাহিনীতে চাকরি করেন এবং মা নাসিমা সুলতানা ঢাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
সালমান লেখাপড়া করেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। সাইমা আমীন আরো বলেন, তিনি কিছুতেই ভাবতে পারছেন না যে তার ভাই তার স্বামীর হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত। আর কেনইবা তাকে হত্যা করল। কিন্তু সে (ভাই) পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। সে নিজে সালমানকে জবাই না কারলেও সেখানে উপস্থিত ছিল।
গ্রেপ্তারকৃত জাহাঙ্গীর ছাড়াও হত্যকা-ের সঙ্গে সামশুল, শামীম ও গোমস্তাপুরের চকপুস্তম গ্রামের সাইফুলও জড়িত বলে জেনেছেন। সাইমা জানান, বিয়ের পর তিনি কখনো শ্বশুরবাড়ি বা ঢাকায় তার শাশুড়ির কাছে জাননি। তবে বিয়ের পর তার শ্বশুর একবার এখানে এসেছেন। কিছুদিন আগে নবীনের সঙ্গে তার স্বামীর একবার কথা কাটাকাটি হয়েছিল বলে শুনেছেন। বিয়ের পর সালমান এখানে ৮/১০ বার এসেছেন।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত সানোয়ারের পিতা এরশাদ আলী কেঁদে কেঁদে বলেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। এসবের সঙ্গে (জেএমবি) জড়িত হতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তাকে পাত্তা দেয়নি কখনো। অসুস্থ মানুষ কী আর করবেন। তার মেয়ের জামাইকে সানোয়ারই নিয়ে মেরে ফেলেছে।
[link|View this link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।