হরতালে হরতালে জীবন অতিষ্ঠ। কবে হরতালের হাত থেকে মানুষ মুক্তি পাবে তা দয়াময় প্রভুই জানেন। জীবনের শেষদিকে হরতালের যে কত বিকৃত রূপ দেখলাম। ৬ এপ্রিল সরকার সমর্থিত এক অভিনব হরতালের সঙ্গে পরিচিত হলাম। আল্লাহতায়ালা সব মানুষকেই একটা স্বাভাবিক বিচার-বিবেচনা দেন।
কিন্তু সরকারি লোকদের সেই সাধারণ বিবেচনাও নেই। ৬ তারিখ হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ঠেকাতে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের সন্ধ্যা থেকে পরদিন সন্ধ্যা ২৪ ঘণ্টার হরতাল এর আগে কখনো জগৎ দেখেনি। রাতে শুরু হয়ে দিনে শেষ_ এ এক অভিনব হরতাল। দিনরাত হরতালে আমরা পরিচিত ছিলাম। এবার রাতদিন হরতালের সঙ্গে পরিচিত হলাম।
গতকাল, আজ এবং আগামীকাল হরতাল। শুধু মাঝে ৭ তারিখ এ সপ্তাহে হরতালের বাইরে ছিল। এভাবে আর যাই হোক দেশ চলে না, দেশের মানুষেরও চলে না_ অর্থনীতি শক্ত পায়ে দাঁড়াবে না। কথায় কথায় হরতাল, হাটে-ঘাটে হরতাল। গণজাগরণ মঞ্চের তথাকথিত নেতা ইমরান এইচ সরকার অহিংস আন্দোলনের কথা বলে লাঠিসোঁটা নিয়ে দৌড়াচ্ছেন।
পোক্ত হওয়ার আগেই হরতাল দিয়েছেন, পোক্ত হলে কি যে করবেন তা আল্লাহই মালুম। তার গুরু নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, শাহরিয়ার কবির এবং মুনতাসীর মামুনদের কায়কারবার দেখলে মনে হয় তারাই যেন দেশের সবকিছুর ঠিকা নিয়েছেন। হেফাজতে ইসলাম ৬ তারিখ লংমার্চ ডেকেছিল যার জন্য সব গাড়িঘোড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৫০-৬০-৭০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে লোকজন ঢাকায় আসে। সুশৃঙ্খল সমাবেশ করে দাবি উত্থাপন করে আবার সুশৃঙ্খলভাবে বাড়ি ফিরে যায়।
আসতে-যেতে তাদের বাধা না দিলে এমন কি হতো? ৩০ লাখ, ৪০ লাখ অথবা ৫০ লাখ লোক হতো। তাদের মতামত শুনবেন না, তাহলে এটা কিসের গণতন্ত্র? কোন গণতন্ত্রে আছে অন্যের কর্মকাণ্ডকে বাধা দিতে এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ করার কথা? হেফাজতে ইসলামও অন্যদের মতো হরতাল না দিলেই ভালো করতেন। হিংসায় হিংসা বাড়ায়। হিংসা কোনো দিন শান্তি আনে না। শান্তির জন্য কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব ও দক্ষতার প্রয়োজন।
দৃঢ়তাহীন কোনো নেতৃত্ব হয় না। আজকাল আমাদের সততা, দৃঢ়তার বড় অভাব। যোগ্যতা-দক্ষতা তো নেই বললেই চলে। চিলে কান নিল শুনেই কানে হাত না দিয়েই অনেকে চিলের পিছু ছোটে। এ ছোটার শেষ কোথায় জানি না।
কিন্তু এভাবে ছুটলে সীমাহীন দুর্বিপাকে পড়তে হবে। আগে রাজনীতি ছিল জনকল্যাণে। এখন রাজনীতির অনেকটাই ব্যক্তি-গোষ্ঠী স্বার্থনির্ভর হয়ে পড়েছে। ৫ তারিখ হরতালে কি জাতীয় স্বার্থ বা কল্যাণ ছিল? সেই হরতালকে সরকার ভালো বলেছে, সমর্থন করেছে। একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের ৮ তারিখের হরতালকে খারাপ বলেছে।
বিএনপির হরতাল তো আরও খারাপ। একই জিনিস একজনে করলে ভালো আরেকজনে করলে খারাপ_ হিসাব মেলে না। আদতে সব হরতালই খারাপ। গণজাগরণ মঞ্চ হরতাল ডেকেছিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ ঠেকাতে। হেফাজতে ইসলাম হরতাল ডেকেছিল তাদের বাধা দেওয়ায়।
আজ এবং কাল হরতাল বিএনপির সিনিয়র নেতাদের জামিন না দেওয়ার জন্য। এখানে সাধারণ মানুষের স্বার্থ কোথায়, দেশের স্বার্থ কোথায়? ভেবে কোনো কূলকিনারা পাই না। দেশ গোল্লায় যাক তাতে কারও মাথাব্যথা নেই। সব ব্যথা নিজেদের নিয়ে। আর সরকারও একখান দেখানোর মতো জিনিস।
খুনি মামলায় জামিন হয়, ডাকাতি মামলায় জামিন হয়, জাতীয় পর্যায়ের নেতাদের জামিন না দিয়ে অযথাই এক অশান্তি সৃষ্টি করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিন হরতালে তিন হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। মিষ্টি লাউ, কুমড়া, ডাঁটার কারবারি তার যদি সব নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কত ক্ষতি হয়? যে কৃষক ধারদেনা করে সবজি ফলায়, সব নষ্ট হলে তার কত ক্ষতি হয়? কেউ নেই এসব দেখার। একে-অপরের ফাঁসি চায়, কেউ কাউকে বাঁচতে দিতে চায় না। শান্তিতে, সৌহার্দ্যে থাকতে দিতে চায় না।
৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে যখন তারুণ্য ছুটে আসে তখন অনেকেই উৎসাহিত হয়েছিল। কিন্তু অল্প দিনে দলকানা নষ্ট-ভ্রষ্টরা সেই অমিত সম্ভাবনাকে গলাটিপে মেরে ফেলেছে। গত ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ এবং মহাসমাবেশে মানুষের মধ্যে একটা আশা জেগেছে। হেফাজতে ইসলাম বলেছে, তাদের উদ্দেশ্য রাজনীতি নয়, তাদের উদ্দেশ্য দেশকে পাহারা দেওয়া। মুসলিম উম্মাহর সজাগ পাহারাদার হলে মানুষ অনেক বেশি স্বস্তিবোধ করবে।
যে যাই বলুন, শুধু বাহ্যিক কোনো টানে নয় আল্লাহর প্রেমে, নবী প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই এত মানুষ এসেছিলেন। আল্লাহর নবী প্রেমিকদের ঘাড়ে আপনা আপনি আল্লাহর সৃষ্টি সারা মাখলুকাতের হেফাজতের দায়ভার এসে গেছে। একজন হিন্দু, একজন বৌদ্ধ, একজন খ্রিস্টান যদি অস্বস্তিতে থাকে, ভয় পায় তাহলে সেটা হবে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। আল্লাহর প্রেমিকরা রাসূলের প্রেমিকরা সদাসর্বদা আল্লাহর সব সৃষ্টির হেফাজতকারী, একটা পিঁপড়ারও ধ্বংসকারী হতে পারে না।
দেশে একের পর এক অশান্তি চলেছে।
মন্দিরের পর মন্দির ভাঙচুর হচ্ছে। কিছু হলেই চালিয়ে দেয়া হয় ওটা জামায়াত-শিবিরের কাজ। আমার নিজেরও কিছু কিছু অমন মনে হতো। কারণ ইতোমধ্যেই তারা অনেক খারাপ কাজ করেছে। কিন্তু গত ৪ এপ্রিল ফলদার কালীমন্দির পুড়ে ছারখার করে দেওয়ার ঘটনায় জামায়াতের কাজ মনে করার কোনো পথ খোলা নেই।
কারণ শত শত লোক প্রকাশ্যে আওয়ামী গুণ্ডাপাণ্ডাদের নাম বলেছে। অথচ মন্দিরে আগুন লাগার ঘণ্টাখানিক পর এক মুক্তিযোদ্ধার ঘুমন্ত ছেলেকে পুলিশ চালান করেছে। কারণ সে বিএনপির সমর্থক। এটা তো পাগলেও বোঝে মন্দিরে আগুন দিয়ে সেখানেই কেউ ঘুমায় না। কিন্তু জনাব মখা আলমগীরের পুলিশ বোঝে না।
এই কিছু দিন আগে বগুড়ায় যুবলীগের এক নেতা শহীদ মিনার ভেঙেছিল। হাতেনাতে ধরা পড়ায় সঙ্গে সঙ্গে সে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ল। মানে পাগল। মন্দির কিংবা শহীদ মিনার ভাঙতে গিয়ে আওয়ামীরা ধরা পড়লে পাগল আর ধরা না পড়লে জামায়াত-শিবির। মারাত্দক সব কলাকৌশল।
এসব বুঝতে সাধারণ মানুষের এখন আর খুব কষ্ট হয় না। সরকার নিজেই যদি অশান্তি সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চায় তাহলে সেটা রোধ করা সত্যিই মুশকিল। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে গোপনে মন্দির ভেঙে সরকারের লাভ কি। লাভ ভারতের সহানুভূতি। তবে আমার বিশ্বাস ভারত অত কাঁচা খেলোয়াড় না, তারা সবই বোঝে।
তাই তারা বিচার-বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন। কষ্টিপাথরে তারা আসল-নকল পরীক্ষা করতে জানেন।
(এটুকু শুধুই ইমরান এইচ সরকারের জন্য)
মানুষের বয়স হলে বোধহয় জ্ঞান দেওয়ার ইচ্ছা করে। যে বাতিকটা আমার কোনো দিনই ছিল না। কারণ শিক্ষকের বেতের বাড়ি খেতে খেতে ঝাঁজরা পিঠে বড় হয়েছি।
জ্ঞান-বুদ্ধি নিজেরই নেই, অন্যকে কী দেব? তাই কোনো জ্ঞান নয়, অভিজ্ঞতা দিতে চাই। দেশে বর্তমান এই অশান্তির প্রথম এবং প্রধান কারণ বর্তমান সরকারের আরও শতবর্ষ ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা। আর মানুষ চান বা না চান, সমর্থন করুন বা না করুন, সম্ভব হলে আগামীকালই প্রধান বিরোধী দলের ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা। আর প্রধান বিরোধী দল যাতে ক্ষমতায় না যেতে পারে, বর্তমানেরা যাতে সব সময় বর্তমান থাকে সে জন্য গায়ের জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের মাধ্যমে বর্তমান অশান্তির সূচনা। মহাজোট সরকার এর আগেও ছিল।
কিন্তু তখন তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। বগলতলে নিয়ে খালেদা জিয়াবিরোধী আন্দোলন করেছে। এবার প্রাথমিক পর্যায়ে রাজনৈতিক কলাকৌশল হিসেবে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল শুরু করেছিল। ধীরে ধীরে নানা জটিলতার কারণে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সৃষ্টি। যে গণজাগরণ মঞ্চে জননেত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছুটে যাওয়ার জন্য নাকি ছটফট করেছেন।
ঘরে বসে নিজেই মোমবাতি জ্বেলেছেন। সেই প্রধানমন্ত্রী বর্তমান মহাজাগরণের মহান নেতা ইমরান এইচ সরকারের স্মারকলিপি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে হাতে গ্রহণ করেননি। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধুর পদতলে যখন এক লাখ চার হাজার অস্ত্র বিছিয়ে দিয়েছিলাম, তখন সমগ্র বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এক লাখ অস্ত্র ছিল না। স্বাধীনতার পরপর সেনাবাহিনী ছিল ১২-১৩ হাজার, বিডিআর ছয়-সাত হাজার, পুলিশ ১০-১২ হাজার। তার অর্ধেক পাকিস্তানের দালাল রাজাকারের বংশধর যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি।
যাদের পাছায় চাবুক মেরে কারাগারে স্থান দেওয়া উচিত ছিল, তাদের সবাইকে নিয়ে ছিল অমন সংখ্যা। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে কী হতো জানি না, তার মৃত্যুর কারণে বহু অবহেলা সইতে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতে থাকতে দু-চারবার আমার স্ত্রীকেও বলেছেন, 'বজে র মন মেজাজ ভালো আছে তো? ওর সঙ্গে কথা বলা যাবে তো?' ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাবা আবদুল কাদের মিয়া। তাই তিনি কখনো আমাকে কাদের বলে ডাকতেন না। ঘনিষ্ঠতা হওয়ার পর সব সময়ই বজ বলেই ডাকেন।
যে বজে র জন্য তিনি রান্না করে বসে থাকতেন, সেই বজ সম্পর্কে তার বর্তমান ভাবনা একটু খেয়াল করবেন। জনাব ইমরান এইচ সরকার আপনি তখন বেশ ছোট ছিলেন। '৯১-এর নির্বাচনের পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার অতিরিক্ত চার সিট ছেড়ে দিলে আমরা জননেত্রীর সঙ্গে রংপুরে উপনির্বাচনে গিয়েছিলাম। নেত্রী ছিলেন পাঁচ দিন, আমি ছিলাম পনের দিন।
বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নিচে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন একই সোজা উপরে।
বিরোধী দলের নেত্রীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খাবার আমন্ত্রণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, 'বজ নির্বাচনী প্রচারে আছে। ওর আসতে রাত হবে, আমি ওকে ছাড়া খাব না। ' জনাব ইমরান এইচ সরকার, কথাটা পরখ করতে চাইলে বেগম খালেদা জিয়াও জীবিত আর তার ওই সময়ের ব্যক্তিগত সহকারী আলহাজ মোসাদ্দেক আলী ফালুও জীবিত। জিজ্ঞাসা করে নিতে পারেন।
আপনাদের গণজাগরণ মঞ্চ না হলে এবং সেখান থেকে কতিপয় ব্লগার আল্লাহ রাসূল সম্পর্কে অসম্মানজনক কথাবার্তা না বললে বা লিখলে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ হতো না। যে যাই বলেন, বিবেকবান বুদ্ধিমান কেউ হলে লংমার্চ ঠেকানোর কোনো পদক্ষেপ নিতেন না। ১৪ তারিখে শাহবাগের সামনে মহাজমায়েত দিয়েছেন। ১৪ তারিখ পহেলা বৈশাখ। কানার ভাই অন্ধও জানে শাহবাগের আশপাশের সব এলাকা ওইদিন মানুষের ঢল নামে।
কারও বাড়িতে আগুন লাগলে সেই আলোতে পথচলার মতো যা করতে চান তা বুঝতে কারও অসুবিধা হয় না। পহেলা বৈশাখের পরও বেঁচে থাকতে হবে। তারপরও লোক সমাগম করতে হবে। হৃদয়ের টান, আত্দার তাগিদ না থাকলে এমন কিছু হয় না। মঞ্চে দাঁড়িয়ে আপনি যেভাবে কথা বলেন, আপনি তো আর দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু না, ভালো করে কান পেতে শুনবেন বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠের মধুর আওয়াজ, রেকর্ড করে শুনবেন আপনারটাও।
অনেকটা প্রথমদিকের জেনারেল জিয়াউর রহমানের বক্তৃতার সঙ্গে মিল আছে। যা আপনারা করেছেন ভাবীকালে জবাব দিতে পারবেন না। সময় থাকতে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন। জানি না হরতালের এই অভিশাপ থেকে আমরা কবে মুক্ত হবো। তবে এ থেকে আমাদের মুক্ত হতেই হবে।
'ধর্মপ্রাণ মুসলমান নিজের সন্তানের চেয়ে আল্লাহ-রাসূলকে বেশি ভালোবাসেন'
হেফাজতে ইসলামের কিছু দাবির সঙ্গে অনেকের দ্বিমত থাকতে পারে। তবে দাবিগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে তাদের স্প্রিটটা দেখতে হবে। কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা বড় অন্যায়। অতি আধুনিকতার নামে কিছু ব্লগার সেটা করায় হেফাজতে ইসলাম প্রতিবাদ করেছে। আমরা তাদের মূল সুরের সঙ্গে একাত্দতা ঘোষণা করেছি।
কিন্তু প্রত্যেকটি পয়েন্টে আলোচনা হয়নি। আলোচনা হলে বোঝা যাবে কতটুকু তাদের সঙ্গে একমত আছি। গত রবিবার চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের টকশো 'মুক্তবাক' অনুষ্ঠানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদ এ কথা বলেন। মাহমুদুর রহমান মান্নার উপস্থাপনায় তিনি বলেন, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার প্রতিক্রিয়া ভয়াবহভাবে আসতে পারে। ধর্মপ্রাণ মুসলমান অনেক ক্ষেত্রে নিজের সন্তানের চেয়ে আল্লাহ-রাসূলকে বেশি ভালোবাসেন।
দাউদ হায়দারের একটা কবিতার কিছু বাক্য বিন্যাস ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করায় বঙ্গবন্ধু তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। একইভাবে তসলিমা নাসরিনকেও দেশ ছাড়তে হয়েছে। সালমান রুশদীকে ভারত থেকে চলে যেতে হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও হেফাজতে ইসলামের মতো অরাজনৈতিক সংগঠন এত বড় সমাবেশ করেছে। আমি মনে করি এটাই সবচেয়ে বড় সমাবেশ।
এ ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলাম সফল হয়েছে আর সরকারের নির্বুদ্ধিতা ও হটকারিতার কারণে রাজনৈতিক ইতিহাসে তাদের একটা বিরাট ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছে। এক দর্শক হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এই জাপা নেতা বলেন, সংগঠনটি সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিলের কথা বলেছে। সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস তো মধ্যযুগে নয়, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলেই সনি্নবেশিত হয়েছিল। আর কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন না করা তো আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনুফেস্টোতেই ছিল। হেফাজতে ইসলাম ধর্মের অবমাননাকারীদের মৃত্যুদণ্ডের কথা বলেছে।
এটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ ও মেলামেশা বন্ধের কথা বলেছে। এ ব্যাপারে তো কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। মোমবাতি প্রজ্বলন বন্ধের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের সব দাবি নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। মূলত কোরআন-সুন্নাহ, ইসলাম ধর্ম, মহানবীর বিরুদ্ধে কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদের যে অবস্থান সেই মূল সুরের সঙ্গে আমরা একাত্দতা ঘোষণা করেছি।
নারীনীতি ও শিক্ষানীতি বাতিল, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করার দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাজী জাফর বলেন, তারা ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিলের কথা বলেছেন। আর নারীনীতি বাতিল তারা একটা বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে বলছেন। এ সম্পর্কে কারও দ্বিমত থাকতেই পারে। এমন সময় নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ বন্ধ বলতে শ্রমজীবী নারীদের ঘরে ফিরিয়ে আনা কিনা সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শাহবাগে অসংখ্য তরুণ-তরুণী দিবানিশি একসঙ্গে থাকছে। এটা যে কোনো অভিভাবক পছন্দ নাও করতে পারে।
সঞ্চালক পাল্টা প্রশ্ন করেন আপনি কি বলতে চাচ্ছেন তারা লিভ টুগেদার করছে? জবাবে কাজী জাফর আহমদ বলেন, এ নিয়ে আমি বিতর্কে যেতে চাইনি। শাহবাগ স্কয়ারে তারা দিবানিশি একসঙ্গে সময় কাটাচ্ছে। এগুলো নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই মুসলমানদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে। অবাধ বিচরণ বলতে হয়তো এটাই বুঝাচ্ছে। তা না হলে গার্মেন্ট শ্রমিকরা বাসে, লঞ্চে একসঙ্গে যাচ্ছে, এ নিয়ে তো কোনো প্রশ্ন উঠেনি।
তিনি বলেন, নারীনীতির ব্যাপারে কোরআনে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে। এ ব্যাপারে কিছু করতে হলে জাতীয় ঐক্য ও সমঝোতার ভিত্তিতে করতে হবে। জোর করে কিছু করা যাবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।