অভাবে আছি রে ভাই ।
দুষ্প্রাপ্য খনিজের দখল নিয়ে জেমস ক্যামেরনের ‘অবতার’ ছবিতে ‘ভিনগ্রহী’দের সঙ্গে যুদ্ধে মেতেছিল মানুষ। এবার বাস্তবেও অনেকটা সে রকমই কাজে মেতেছেন পৃথিবীর বাসিন্দারা। আর সেই কাজে এবারও সঙ্গী জেমস ক্যামেরন। গল্পের যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল মানুষ।
কিন্তু বাস্তবে খনিজের দখল নিতে বদ্ধ পরিকর তারা। আর তা-ই গুগলের প্রধান সচিব ল্যারি পেজ এবং চেয়ারম্যান এরিক স্মিটকে সঙ্গী করে ‘বিশেষ’ খনিজ ভাণ্ডার গড়ার পরিকল্পনা করছেন ক্যামেরনরা। পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো অসংখ্য গ্রহাণু থেকে খনিজ সংগ্রহ করে ২০২০ সালের মধ্যে মহাকাশে একটি ভাণ্ডার গড়ে তুলতে আটঘাঁট বাঁধতেও শুরু করে দিয়েছেন তারা।
কিন্তু ঘুরেফিরে সকলের মনে প্রশ্ন একটাই-কী করে সম্ভব?
সম্ভব। অন্তত সে রকমই দাবি ক্যামেরনদের।
মূলত রোবটচালিত মহাকাশযানের মাধ্যমেই গ্রহাণুদের পাথুরে জমি থেকে জ্বালানি এবং প্ল্যাটিনাম বা সোনার মতো খনিজ সম্পদ খুঁজে আনা হবে। কিন্তু এ-হেন ‘মহাজাগতিক পরিকল্পনায়’ বাধাও অনেক। যেমন, বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, পুরো প্রকল্পটির জন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থ। নাসার হিসাব মতে, এই ধরনের এক একটি অভিযানেরই খরচ পড়ে যেতে পারে প্রায় ২৬০ কোটি ডলার।
খরচের বহরের থেকেও পরিকল্পনাটি বাস্তবে কতটা সম্ভব, তা নিয়েই যেন প্রশ্ন বেশি।
এই বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যার বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রু চেঙ্গ বললেন, “এক দশকের মধ্যে মহাকাশে খনিজ ভাণ্ডার তৈরি করা কার্যত অবিশ্বাস্য ভাবনা। ” এই প্রকল্প নিয়ে পার্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জে মলোশ রসিকতা করে বলেন, “এটি অত্যন্ত খরচসাপেক্ষ একটা পরিকল্পনা। শুধু ধনী দেশগুলিই এই ধরনের খেলা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে পারে। ”
তবে কোনো কিছুই আপাতত থামাতে পারছে না ক্যামেরনদের। গ্রহাণুদের ওপর নজরদারি বাড়াতে আগামী দু’বছরের মধ্যেই বসতে চলেছে এক গুচ্ছ টেলিস্কোপ।
কেউ বলছেন, পৃথিবীর কক্ষপথের কাছাকাছি যেসব গ্রহাণু ঘুরে বেড়াবে, তাদেরই ব্যবহার করতে হবে এই কাজে। কারও মতে, খুঁজে পাওয়া খনিজগুলোকে পৃথিবীতেই নিয়ে এসে তার পর তাকে জ্বালানিতে পরিণত করাই বাঞ্ছনীয়। তবে পুরো ব্যাপারটিই যে বছর দশেকের মধ্যে ঘটবে সে ব্যাপারে কার্যত নিশ্চিত ক্যামেরনরা।
তাদের মতে, ব্যবসায়িক দিক থেকেও লাভের সুযোগ তৈরি করে দেবে মহাকাশের এই খনিজ ভাণ্ডার। যা এই প্রকল্পের আরো একটি ইতিবাচক ব্যবহার হতে পারে।
বর্তমানে মহাকাশযানগুলির পিছনে জ্বালানির জন্য খরচ হয়ে যায় প্রচুর। সেটা কমাতে গ্রহাণু থেকে পানি সংগ্রহ করে তাকে মহাকাশেই খুব সহজে অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেনে ভাঙা যেতে পারে। যা ব্যবহার করা যাবে মহাকাশযানের জ্বালানি হিসেবে। অর্থাৎ মহাকাশেই তৈরি হবে মহাকাশযানের জ্বালানি। বাঁচবে খরচ।
অন্তত সে রকম সম্ভাবনার কথা এখনই উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।
তবে, প্রকল্পটি যে প্রাথমিকভাবে সময় এবং খরচসাপেক্ষ, তা স্বীকার করছেন প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত এরিক অ্যান্ডারসন। কিন্তু সঙ্গে এ কথাও জানাচ্ছেন তারা, ইতিহাসে যত বড় ধরনের আবিষ্কার হয়েছে, তা মূলত রসদের খোঁজেই। মশলার খোঁজে ইউরোপ এসেছিল ভারতে। আমেরিকা ছুটেছিল পশ্চিমে তেল, কাঠ আর সোনার সন্ধানে।
এ বারের দৌড়টা নিজেদের গ্রহেরই গণ্ডি ছাড়িয়ে অসীম মহাশূন্যে। সূত্র: ওয়েবসাইট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।