আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেট্রোপলিটন গল্প গুচ্ছ ও কিছু কথা। (ফ্রি গল্পঃ মেধাবী দর্শন)

বাস্তবতার ভার্শন ২.৭.১২ এ আছি। নিয়মিত আপডেট হচ্ছি। কিছু কথা বলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি সময়ের দাবীতে। মেট্রোপলিটন গল্প গুচ্ছ আমার জানামতে বাংলাদেশের সাহিত্য জগতে প্রথম কোন বই, যেখানে কেবলই নবীন গল্পকারদের হরেক ধাঁচের গল্প নিয়ে সাজানো একটি বই। যার জন্ম হুমায়ূন স্যারের মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে, আহসান হাবীব স্যারের নিঃস্বার্থ সহায়তায়।

একথা সত্যি যে এই বইটি প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে বা সমকালীন সময়ে নবীন গল্পকারদের একত্রিত করা গেছে এক মলাটের ভেতরে। কিন্তু সেগুলোর সাথে মেট্রোপলিটনের মতো কোন বইতেই একদম নতুন, একদম অপরিচিত কোন গল্পকারদের নিয়ে কোন বই প্রকাশিত হয়নি। আর তাছাড়া সবথেকে বড় পার্থক্যটা হল অতীতের কোন সংকলন বইতে কোন নির্দিষ্ট টপিককে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে ভিন্ন লেখকের লেখা নিয়ে। যেমন রম্য সংকলন, হরর সংকলন, কবিতা সংকলন, সায়েন্স ফিকশন সংকলন, গোয়েন্দা বা রহস্য গল্প সংকলন ইত্যাদি ইত্যাদি। আর সেখানেও দেখা গেছে পত্রিকা/ম্যাগজিনের নিয়মিত ফিচার লেখকদের দৌরাত্য।

কিন্তু নবীন গল্পকাররাও যে গল্পকার, তারাও যে ভালো কিছু লিখতে পারেন, এটাকে প্রায়ই ভুলে যেতে চান কিছু প্রকাশকেরা। আর এই একটা কারণেই নবীন গল্পকারদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই, বাংলাদেশের সাহিত্যে নতুন মুখ খুঁজে বের করার জন্যই আমার এই উদ্যোগ। যেহেতু মেট্রোপলিটন গল্প গুচ্ছ বাংলাদেশে একদমই নতুন ধারার একটি বই, সেহেতু এই বইটির নাম অনেকের কাছেই অজানা। আর তাছাড়া লেখক/সম্পাদক হিসেবে আমার তেমন কোন পরিচিত নেই বলেও এই বইটি আমাদের পরিচিতি কয়েকজন ছাড়া আর কারোর কাছেই পরিচিত না। কিন্তু অজানা হলেও সত্যি যে এই বইয়ের মতো এখন পর্যন্ত অন্য কোন বই এখনো প্রকাশিত হয়নি।

কিছু কিছু নবীন লেখক এই বইয়ের প্লাটফর্মের উপর ভিত্তি করেই নিজেদের দিক থেকে নবীন গল্পকারদের নিয়ে সংকলন বইয়ের কাজ হাতে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। আমি তাঁদেরকে আন্তরিক সুবিধা জানাই। আমার পরিশ্রম সার্থক এখানেই যে, এভাবে আস্তে আস্তে নবীনদের সুযোগ হয়ে উঠছে। নবীন গল্পকারদের মাঝে এবং পাঠকদের মাঝে আস্তে আস্তে মেট্রোপলিটনের গল্প গুচ্ছ বইটির পেছনের ধ্যান ধারণা সম্পর্কে আগ্রহ জন্মাচ্ছে। বইটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অসংখ্য বাধার মুখে পড়লেও বইটি যে শেষ পর্যন্ত পাঠক পরিচিত পেয়েছে তাতেই আমার পরিশ্রম সার্থক।

আমি ব্যক্তিগতভাবে ভরসা পাচ্ছি বইটির দ্বিতীয় সংখ্যা বের করবার জন্য। বইটির শেষে ভূমিকাতে লিখেছিলাম, এই বইয়ের প্রথম সংখ্যার সফলতার পর আমরা বইটির দ্বিতীয় সংখ্যার কাজে হাত দিবো। আমরা ইতিমধ্যেই অনেক পাঠকের সাড়া পেয়েছি, গল্পকাররাও তো নিয়মিত গল্প পাঠাচ্ছেনই আমাদের কাছে। বইটির সকল পাঠকদের, গল্পকারদের কাছে আমার পক্ষ থেকে শেষ বসন্তের উষ্ণ শুভেচ্ছা রইলো। শুভেচ্ছা স্বরূপ ব্লগের বন্ধুদের মেট্রোপলিটন গল্প গুচ্ছে আমার লেখা গল্পটি পড়বার সুযোগ করে দিচ্ছি।

আশা করি সবার ভালোই লাগবে। বইটির রকমারি লিঙ্কঃ http://www.rokomari.com/book/56747 *** এই গল্পটি লেখা হয়েছিল ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। কোন পাঠক বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটের সাথে মিল পেলে কেউ দায়ী নয়। কেননা বইয়ের ভূমিকাতেই দেওয়া আছেঃ স্থান, কাল, প্রবাহ ঠিক থাকলেও এই বইয়ের সবগুলো গল্পের সব চরিত্রই কাল্পনিক। কারোর কল্পনার সাথে বাস্তব কিংবা বাস্তবের সাথে কল্পনার কিংবা দুইটাই এই বইয়ের কোন গল্পের কোন অংশ মিলে গেলে শুধু লেখক-লেখিকা, সম্পাদক, প্রকাশক, টাইপিস্ট ও প্রুফ রীডার কেন, দুনিয়ার কেউই দায়ী নয়।

মেধাবী দর্শন সার্জিল খান -স্যার রিক্সা তো আর আগাইবো না। কথা শুনেই মেজাজ খিচড়ে গেল। -রিক্সা আর আগাবে না মানে? আমি উত্তর দিতে না দিতেই রিক্সাওয়ালা আবার বলে উঠলো। -মামা সামনে দেহেন। এই মাত্রই বলল স্যার, আবার এখনই বলছে মামা।

নয়টার মাঝে শ্যামলী পঙ্গু হাসপাতালে পৌছতে না পারলে অপারেশনের আগে বাবাকে আর দেখা যাবে না। “জাকির কোথায় তুই, আর কতক্ষণ লাগবে?” এইসব হাবিজাবি দিয়ে ভরা মেসেজ আর কলের পর কল একাধারে আসছে তো আসছেই। যেন আমেরিকা ইরাকের উপরে বোমা হামলা শুরু করেছে। মোবাইলের ঘড়িতে আটটা এগারো। এখন মাত্র কাটাবন সিগন্যালে।

রাস্তার দুই ধারে অনেক পুলিশের টহল দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার আয়েশ করে হাসি হাসি মুখে সিগারেটও টানছে। যেন বিয়ে বাড়িতে এইমাত্র একটা জম্পেশ খানা সেরে এসেছে। পুলিশগুলো আজকাল আবার হঠাতই যেখানে সেখানে টহল বসিয়ে দেয়। দেশের মন্ত্রী মিনিস্টাররা ঢাকার উন্নয়নের জন্য এখন ব্যস্ত।

সেই উন্নয়নে আমরা উন্নীত জনজীবনে। এদের টহল দেখলেই মনে হয় আমরা দরজার এপাশ ওপাশ দুইপাশেই অতিব নিরাপত্তার ভেতর আছি। পাশে কয়েকজন পুলিশ আবার নেতাগোছের দু’একজন লোকদের সাথে কথা-বার্তা বলছে। মাঝে মাঝে খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে মাথা নাড়ছে। রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে হেঁটেই রওনা দিলাম।

পুরো রাস্তাই ঈদের ছুটির মত ফাঁকা। তবে ঈদের ছুটিতে রাস্তার দুই ধারে মানুষে গিজগিজ করে না, কিন্তু আজকে করছে। কিছুদূর যাবার পর দেখি কোথা থেকে একদল ছেলে একটা প্রাইভেট কারের দিকে তেড়ে এসে ভাংচুর শুরু করলো। অবস্থা বেগতিক দেখে একটা ফার্মেসীর ভিতরে গিয়ে শেল্টার নিলাম। ঘড়িতে এখন বাজে আটটা তেইশ।

মুহূর্তের মাঝেই আশেপাশের দোকানগুলোতে সাটার নামানোর ঝপঝপ শব্দ ভেসে আসতে লাগলো, পাশ দিয়ে হৈ-হুল্লোড় শব্দ। হরতাল না, তারপরেও ভাংচুরের কারণ শুনবার জন্য দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম -ভাই কি হয়েছে? বিরস মুখে এক পলক তাকালো। জবাব দিবে কি দিবে না যেনো বুঝতে পারছে না। একসময় বিরক্ত মুখে বলেই ফেললো, -ঢাকা কলেজের সামনে কে যেনো মরছে। -কিভাবে মরছে? -এগুলান যেমনে মরে সেমনেই মরছে।

-কে মারা গেছে? এবার দোকানদার চোখমুখ কুঁচকে এমন ভাব করল যেন, আমি গ্রামের থেকে না জানি কোন ‘ক্ষ্যাত’ এসেছি, ঢাকা শহরের হালচাল কিছুই জানি না। চোখ মুখ কুঁচকে বলল, -ভাই আপনে ত মহা ঝামেলাবাজ লোক আছেন। এত জিগান ক্যান? রাস্তাঘাটে কি চলাফেরা করেন না? জানেন না এগুলানের কোন নামধাম নাই? জাগায় খায় জাগায় মরে, এক বাসের তলে পড়ছে, আর ধুপধাপ কইরা সবগুলান ম্যাজিকের লাহান আয়া হাজির হইছে, যেন ব্যাডায় প্ল্যানিং কইরাই চাক্কার তলে পড়ছে। প্রত্যেক দোকানদাররাই কম-বেশি দর্শন জ্ঞানে পটু থাকে। দোকানকে ঘিরে এলাকাবাসীদের সুগভীর জীবনবোধ ভিত্তিক আলোচনা আর চোখের সামনের বিশাল কাহিনীই এদের দার্শনিক বানিয়ে ফেলে।

এদেরকে বেশি ঘাটাতে নেই। এমন সময়েই একটা স্লোগান মিছিল বের হলো। মিছিলটা খুব বড় না। গোটা ষাট-সত্তুর জনের মতন একটা মিছিল। সামনের সারিতে প্রায় ত্রিশোর্ধ বয়সের কয়েকটা লোক শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে স্লোগান দিচ্ছে, “জ্বালাও পোড়াও ছড়িয়ে দাও!” পেছন থেকে ইয়ো টাইপের কতগুলো ছেলে সাইড স্লোগান দিচ্ছে, “মেধাবীরা কেজি দরে জন্মায় না” এমন সময় মিছিল থেকে একটা ছেলে দৌড়ে বেড়িয়ে এসে যে ফার্মেসীটার ভেতর ছিলাম, সেদিকে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে দোকানদারকে বললো, -মামা! সালাম ভাই আর পিন্টু ভাইয়ের চুক্তি কইর্যা পেট খারাপ হইছে জলদি চারটা ফ্লাজিল আর দুইটা নিওটেক দাও।

দোকানদার বেশ আনন্দিত মুখে ছেলেটাকে ফ্লাজিল আর নিওটেক দিতে দিতে বললো, -ও! -আর কইয়ো না মামা, এমনেই এহন এই ঝামেলা, তারমাঝে একজনের পাতলা কাম লড়বার চড়বার পারে না, একজনের হাত ধইর্যা হাটে, মাঝে মাঝে পকেটে দেহি দুইটাকা হাতে নিয়া আশপাশের পাবলিক টয়লেটের দিকে নজর রাহে, আরেকজনে হুদা বোমব্রাষ্টিং করতেছে, পিছে থাইকা যে কি কষ্ট এইডা বুঝবো কেমনে। এই বলেই দোকানের আর সব ওষুধের দিকে চোখ বুলাতে লাগলো, একটা বিশেষ পোশাকের দিকে তার চোখ আটকে গেলো। পোশাকটার গায়ের প্যাকেটের লেখাটার আক্ষরিক বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায় “সবুজ ভালোবাসা। ” কাঁধ খোলা একটা পুরুষ উলটো দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের পলক না ফেলেই আজাদ অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকলো পোশাকটির দিকে।

ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছিলো, কাছে আসার পর চিনতে পারলাম মোহাম্মদপুরের খালার বাসার পাশের বাড়ির ছেলে আজাদ। আমাকে দেখতে পায়নি বোধহয়। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, -আজাদ, কেমন আছো? হঠাত চমকে উঠলো। আঞ্চলিক ভাষায় যারা কথা বলে, হঠাত পরিচিত বয়স্কদের দেখলে বিনয়ের কারণে তাদের ভাষার মাঝে শুদ্ধতা আর আঞ্চলিক ভাষার মিশ্রণ ঘটে যায়। -জ্বি ভাইয়া স্লামালিকুম।

ভালো আছি। আপনি? -টেনশনে আছি। কেন কি হইছে ভাই? -আব্বা বাস থেকে নামতে গিয়ে পা ভেঙ্গে ফেলছিলো। প্লাস্টার করানো হয়েছিলো। হাড্ডি জোড়া লাগে নাই।

এত বয়সে হাড্ডি জোড়া লাগারও কথা না। আজকে আবার অপারেশনের ডেট পড়েছে সকাল নয়টায়। এখন তো পৌনে নয়টা বাজে। শুনলাম সামনে নাকি রাস্তা বন্ধ, কে নাকি কারে চাপা দিছে। এখন কিভাবে অপারেশনের আগে পৌছাই? -চিন্তা কইরেন না, আমি আপনাকে একটা গাড়িতে তুইলে দিবো।

এই মিছিল আমরাই করতেছি। -ভাংচুর করে লাভটা কি? অবাক আজাদ আমার দিকে তাকিয়ে প্রায় রাগত স্বরে বলতে লাগলো, -আরে ভাই কি বলেন? ক্লাসের মেধাবী একটা ছেলে মারা গেলো? আর আপনি বলছেন ভাংচুর করবো না! আপনি জানেন ওর বুয়েটে চান্স পাওয়ার কথা। -তাই নাকি? ও কিভাবে মারা গেছে? -রাস্তা পার হইতে গিয়া বাস চাপা দিছে। জাতি হিসেবে আবার আমরা খুব উপদেশ প্রিয়। তাই নিজে না মানলেও বড়ভাই সুলভ একটা ফ্রি উপদেশ দিতে দিতে বললাম, -তা রাস্তা ঠিক মতন পার হলেও তো পারতো, হুট করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলে গেলে তো এমন হবেই।

আমার কথায় আজাদ কিছুটা আহত হল মনে হয়। উপদেশের পাশাপাশি আমাদের মাঝে আরো একটা স্বভাব খুব প্রিয়, অজুহাত। তাই অজুহাত দিয়েই সে বললো, -আরে ভাই কি কন, হেদায়েত ভাই রাস্তার ঐ পার থেকে ডাকতেছিলো, হেদায়েত ভাইরে আবার আমরা খুব মান্য করি, হ্যার কথা টাইম মতন না হুনলে হ্যায় আবার চেইত্যা যায়, তাই রাস্তা পার হইয়া হ্যার কাছে তাড়াতাড়ি যাউনের সময়ই এক এবিসি ছুপার ছার্ভিছ বাস লাগায় দিছে। এই বলেই সে ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে একটা গালি দিলো, যার মাধ্যমে সেই ড্রাইভারের বোনের সাথে আজাদের একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেলো। এটুকু বলার পর থেমে আবার বললো, -এই রুটে একটাও গাড়ি চালাইতে দিমু না।

ড্রাইভারদের উদ্দেশ্যে তাদের বিষদ প্ল্যানিং না শুনবার জন্য প্রসঙ্গ এড়াতে আমি বললাম, -ও তোমাদের সাথেই পড়তো নাকি? -আরে ভাইয়া কি বললাম, সেইরাম বেরেণী ছিলো, আমাদের সাথে সামনের বার এইচেছছি দিবো। এছএছছিতে জিপিএ থ্রি পাইছিলো। কমার্ছ ব্যাকগ্রাউন্ড, বুঝেনই তো। কমার্ছের পোলাপানরে ছ্যারেরা ছাগল বইলাও গোনায় ধরে না। আস্ত খাডাশ একেকখান।

এইখানে খারান আমি আইতেছি। কথা শুনে আমারই আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। আমার কোচিং সেন্টারের শ’য়ে শ’য়ে স্টুডেন্ট গোল্ডেন এ+ পায়, অনেকেই অ্যাডমিশন টেস্টের রেসাল্টের পর দুমড়-মুচড়ে যায় বুয়েট, ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়াতে, আর সেখানে বুয়েটে যে কেউ জিপিএ থ্রি নিয়েও পড়তে পারে জানা ছিলো না। তার মাঝে আবার কমার্স। কে জানে, বুয়েটে কবে থেকে কমার্স চালু করেছে? দেশের মেধার যে অবস্থা, ভার্সিটি কমিটি কমার্স ডিপার্টমেন্ট চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেও নিতে পারে।

হঠাতই আজাদ ফার্মেসীর বাইরে গিয়ে একটা খালি সিএনজিকে হাত উঁচু করে ইশারা করে ডেকে দাঁড়া করালো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে সিএনজিতে উঠতে বললো। সাথে সাথে আমার দৃষ্টিভঙ্গি পালটে গেল। কোঁচকানো কপাল সোজা হয়ে গেল, মুখের বিস্তার বেরে গেল। আরেকটু হলে হয়ত দাঁতটাও বের হয়ে যেত।

নিজেকে কোনমতে সামলে ভাবলাম, যাক মানুষের প্রতি দরদ আছে এর। গলায় ঔদার্য ঢেলে বললাম, -আচ্ছা আজাদ আসি, আব্বার জন্য দোয়া কোরো। -ভাই, আমার দোস্তর জইন্যেও দোয়া কইরেন। হেভি পোলা আছিলো। আমাগোর ডিজিটাল লীগে বড় ভরসা আছিলো।

মনে হয় এইডা এনালগ দলের পোলাপানের চিপাবাজি। সইহ্য করতে না পাইরা চামে সরাইয়া দিছে। আপনে টেনশন লইয়েন না, সিএনজি ভাড়া পুরাই পকেডে পুরছি। ত্রিশ টাকা ধরায় দিয়েন। এই বলেই সে সিএনজি ওয়ালার গালে ঠাশ করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

আর জোরে জোরে বলতে লাগলো, -নাম কি? -ভিসি সরকার। -ঐ ব্যাটা পুরা নাম ক! -ভিরু চন্দ্র সরকার। -যাউক গা, শোন ডাইনে বাইয়ে তাকাইবি না। সুজা চইলা যাবি। সিএনজিওয়ালার দিকে তাকালাম।

দেখে মনে হয় বয়স তিরিশের উপরে বয়স, আজাদ তাকে থাপ্পড় মারলো কেন কে জানে? হয়তোবা বারবার মনে করিয়ে দেবার জন্য, আমরা শুধু এই রোডেই না, পুরো ঢাকা শহর জুড়েই আছি, যেখানেই যাও না কেন, তেড়িবেড়ি করলে আবারো থাপ্পড় খেতে হবে। তবে থাপ্পড় খাওয়ার পরেও তার মুখ হাসি হাসি, যেনো থাপ্পড়টা তার হক! এক থাপ্পড়ে সে খুশি নয়, আরো চাই। আজাদ এবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার বললো, -ভাই আসি তাইলে, আমার জইন্যেও দোয়া কইরেন, কলেজের স্যারেরা মেধা তালিকায় আমারেও রাখছে। -বাহ বেশ ভালো তো। মনে মনে বললাম, দেশ আজাদ করার জন্য এইরকম কয়েকটা আজাদকেই দরকার।

বুকের মধ্যে এদের জন্য কেমন যেনো গর্ব গর্ব লাগছিল। মনে হচ্ছিল এমন গঠনমূলক আন্দলনে আমার যোগ দেওয়া উচিৎ। আগে বাবার অপারেশনটা হোক তারপর আমিও রাস্তায় নামবো, এমন চিন্তা করতে করতেই সিএনজি তে উঠলাম। ভিসি মিয়া ফাঁকা রাস্তা পেয়ে সিএনজি চালাচ্ছে। তার মাঝে আবার গালে আছে আজাদ মিয়ার আজাদী দোয়া, পায় কে তাঁকে।

মেইন রোড ছেড়ে সে চিপা গলি দিয়ে শর্টকাট ধরে এগিয়ে চলেছে। রাজপথ ধরে চলে সে হয়তো বা বুয়েটে আর কোন কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ডের মেধাবী ছাত্রকে অ্যাডমিশন দিতে চাচ্ছে না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.