আমি নিজের মাঝে খুজে পেতে চাই আমার আমাকে। যেতে চাই বহুদূর। গত ১২ এপ্রিল গুজরাটের একটি আদালত দাঙ্গাসংক্রান্ত এক মামলায় ১৮ জনকে যাবজ্জীবন ও ৭ জনকে ৭ বছরের কারাদ- প্রদান করেছে। ২০০২ সালের ১ এপ্রিল সংঘটিত গুজরাট দাঙ্গার সময় আনন্দ জেলার ওডি গ্রামে ৯ জন নারী ও ৯ জন শিশুসহ ৩৩ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করার দায়ে ওই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলার রায়ে ২৩ জনকে বেকসুর খালাশ প্রদান করেন আদালত।
গোধড়া দাঙ্গার পরে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনায় গঠিত স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) কর্তৃক তদন্তকৃত ৯টি মামলার মধ্যে এই মামলাটি অন্যতম। গুজরাট দাঙ্গার ওপর প্রদান করা তৃতীয় রায় এটি। এই মামলাটিকে 'রেয়ারেস্ট অফ রেয়ার কেইস' উল্লেখ করে রাষ্ট্রপক্ষে এসআইটি আসামিদের মৃত্যুদ- দাবি করেছিল। কিন্তু বিশেষ আদালতের বিচারক পি বি সিং এই মামলাটিকে 'রেয়ারেস্ট অফ রেয়ার কেইস' হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানান এবং সে অনুসারে রায় প্রদান করেন। 'রেয়ারেস্ট অব রেয়ার কেইস' কী? ভারতের ফৌজদারি আইনে এর তাৎপর্যই বা কতটা? ফৌজদারি অপরাধের শাস্তি হিসেবে 'মৃত্যুদ-' বিলোপে বিশ্বজুড়ে এক আন্দোলন শুরু হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ পৃথিবীর বহু মানবাধিকার সংস্থা দেশে দেশে মৃত্যুদ- আইন বিলোপের সপক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে। অনেক দেশ তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মৃত্যুদ- বিলোপও করেছে। ভারতের বিচারব্যবস্থায় মৃত্যুদ- বিলোপ করা হয়নি। এমনকি ২০০৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে উপস্থাপিত মৃত্যুদ- বিলোপ সংক্রান্ত রেজুলেশনের বিরুদ্ধেও দেশটি অবস্থান নেয়। স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে প্রাণদ-ের হার যে হারে বেড়ে চলছিল, তাতে মৃত্যুদ- হ্রাস করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
এরই প্রেক্ষিতে ১৯৮৩ সালের পর মৃত্যুদ- প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিশেষত 'বচ্চন সিং মামলা'র রায়ে ভারতে মৃত্যুদ- প্রদানের ক্ষমতাটি কেবল 'রেয়ারেস্ট অফ রেয়ার কেইসের' মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়। এই নীতির মূল কথা হলো, কোনো অপরাধীকে মৃত্যুদ-ের সাজা দিতে হলে আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে, তার মামলাটির প্রকৃতি অত্যন্ত বিরল ও চরম ঘৃণ্য পর্যায়ের। মৃত্যুদ- বিলোপের পথে এটা একটা অগ্রগতি। পরবর্তীতে মাচ্চি সিং মামলায় 'রেয়ারেস্ট অব রেয়ার কেইস' বিষয়টিকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়।
ভারতের বিভিন্ন আদালত কর্তৃক প্রদত্ত রায়ে নরহত্যা, দলবদ্ধ ডাকাতি, শিশু অথবা উন্মাদ ব্যক্তিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়া, কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইন্ধন জোগানো, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে বিদ্রোহ উসকে দেয়া, পুলিশি বর্বরতা ইত্যাদিকে 'রেয়ারেস্ট অফ রেয়ার' ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধের পরিমাণগত দিক বিবেচনা না করে গুণগত দিক বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। অপরাধবিজ্ঞানের বর্তমান নীতি অনুসারে, দ-প্রদানের উদ্দেশ্য হিসেবে অপরাধীর দমন নয় বরং সংশোধনই শ্রেয়। সুতরাং, অপরাধীকে তখনই মৃত্যুদ- প্রদান করা যেতে পারে, যখন তার অপরাধটি সংশোধনের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া ১৯৬৬ সালে প্রণীত 'ইন্টারন্যাশনাল কভিনেন্ট ফর সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস'-এর (আইসিসিপিআর) ৬ নং অনুচ্ছেদে মৃত্যুদ-কে বিলোপ করতে বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, যেসব রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে মৃত্যুদ- বিলোপ করেনি, তারা যেন সীমিত কিছু ঘৃণ্যতম অপরাধের জন্য এই শাস্তি প্রদান করে। এই বিধান 'রেয়ারেস্ট অফ রেয়ার' মামলার নীতির সাথে বেশ সামঞ্জস্যশীল। ভারতীয় আদালতে এই নীতির প্রয়োগের ফলে দেশটিতে মৃত্যুদ-ের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে এবং ন্যায়বিচার আগের চেয়ে বেশি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।