খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... রাজনীতির ধরন পাল্টে গেছে। সহনশীল রাজনীতির চর্চা হয়না বললেই চলে। আমাদের দুটি বড় দলের পালাক্রমে ক্ষমতা আসার যাওয়ার নিশ্চিন্ত প্রক্রিয়ায় জনকল্যান শব্দটির অপমৃত্যু ঘটছে। ক্রমাগত রাজনৈতিক টান পুড়ানে দেশের ক্লান্তি কাল যেন আর কাটছেনা। রাজনীতি এখন উচ্ছিষ্ট উৎপাদনে ব্যস্ত।
কারা এমপি হবে কারা মন্ত্রী হবে তা বিবেচিত হচ্ছে ব্যক্তি বিশেষের ইচ্ছা অনিচ্ছায়। ঘুষ র্দুনীতি নির্নয়ে রাজনৈতিক মাপ কাঠির বড়ো প্রয়োজন। প্রত্যেকটি সরকারই তার পুর্বতন সরকারের দুর্নীতি নিয়ে এমন চিত্র হাজির করে যা গা শিহরে উঠে। রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষকরে বৃহদ দলগুলো রাজনীতির আদলে ক্ষমতার বৃত্তে পাঁচটি বছরের জন্য গোটা দেশকে জিম্মি করে । আসলে কতোটা গুনগত পরিবর্তন হয়েছে আমাদের রাজনীতিতে? ১/১১ পট পরিবর্তনে রাজনৈতিকদের মাঝে যে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্যনীয় ছিল তা কেন জানি অংকুরে বিনষ্ট হয়ে গেছে।
কমিটম্যান্ট থেকে রাজনীতিবিদদের বের হয়ে যাওয়ার কি এমন কারন থাকতে পারে? ক্ষমতার যন্ত্রে যারা বসেন আর যারা বিরোধি মঞ্চে তাদের অসংলগ্ন আচরন রাজনীতিতে দেউলিয়াত্ব সৃষ্টি করছে। বিচারবর্হিভূত হত্যা, খুন, ধর্ষন, রাহজানি এসবতো আমাদের দেশে নিত্যদিনের কৈফিয়ত। তার উপর শুরু হয়ে রাজনীতিতে ঘুম কেড়ে নেয়া গুম গুম খেলা। আসলে কারো বিনাশ কাউকে কিছু দিতে পারেনা, কেবল প্রাশ্চিত্তের একটা প্লাটফর্ম ছাড়া। গুম শব্দটির উৎপত্তিই হচ্ছে অসামাজিক বেআইনি কর্ম সম্পাদনের জন্য।
একটা মানুষ এমনি এমনি নিখোঁজ হয়না বা হয়ে যেতে পারেনা। তার পিছনে সুকৌশল চক্রের হাত প্রসারিত থাকে। আর রাষ্ট্রের দায়িত্বই হচ্ছে বিনষ্টকারীদের ষড়যন্ত্র থেকে জানমালের হেফাজত রাখা। রাষ্ট্র শব্দটির পরিধি ও পরিমাপের আয়তন ব্যাপক ও বিস্তৃত। রাষ্ট্রের চোখ কেউ ফাঁকি দিতে পারেনা।
আর রাষ্ট্র যারা পরিচালনা করেন তারাই হচ্ছেন রাষ্ট্রের কর্ন নাসিকা ও চক্ষু। তারা সব শুনতে পান, সব দেখতে পান সবকিছুর গন্ধ নেন। যদি তাদের সদিচ্ছা থাকে তাহলে মুহুর্তেই অনেক পরিবর্তন সম্ভব। আমরা সাধারন নাগরিক ব্যর্থ হতে পারি। রাজনীতির কুট কৌশলে ক্ষমতার পরিবর্তনের হিসেব নিকেষ বদলাতে পারে কিন্তু তাতে রাষ্ট্রের খুব একটা কিছু আসে যায়না।
কারন রাষ্ট্র তার প্রণীত পদ্ধতিতে চলমান। আমরা ব্যর্থ হতে পারি কিন্তু দেশের রাজনীতি ব্যর্থ হলে পরিণাম যে কতো ভয়াবহ হতে পারে তার কিছুটা নমুনা ১/১১ তে আমরা টের পেয়েছি। স্বাধীন গণতন্ত্রকামি এ দেশে মতের ভিন্নতা আছে থাকবেই কিন্তু তাতে যদি কোন পক্ষ অন্য পক্ষকে দুর্বল করার লক্ষে গুম অপহরনের রাজনীতির চর্চা করে তাহলে একটা সময় পুরো রাজনীতিই কিন্তু অপহরিত হয়ে যাবে। বিরোধিদলের একজন নেতাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। তাকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে ।
সরকার বলছে এটা বিএনপির সাজানো। বিএনপি বলছে সুরঞ্জিত বাবুর কেলেংকারীর মনোযোগ সরানোই সরকারের উদ্দেশ্য বলে এই গুমের নাটক সাজানো হয়েছে। সিলেটে এনিয়ে সহিংসতার খবর মিডিয়াতে দৃশ্যমান। টানা তিনদিনের হরতালে দেশ কি পেলো? দেশের বারোটা বাজলেও রাজনৈতিক শক্তির প্রকাশ্য মহড়া জাতি ক্লান্ত দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছে। সিলেটে হরতাল চলাকালে পিকেটাররা কর্তব্যরত এক পুলিশের পোষাক খুলে নিয়েছে।
রাজধানিসহ সারাদেশে লাগাতার হরতাল পালন করা হয়েছে। হরতালের প্রথম পুর্ব রাতে একজন নিরিহ বাস ড্রাইভারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। অনেকগুলো গাড়ি পুড়ানো হয়েছে। সিলেটের বিশ্বনাথে ইলিয়াস আলীর জন্মভিটে দু‘জন নিহত হয়েছে। সব মিলে গুম হয়ে যাওয়া নেতার মুক্তির দাবিতে ৪ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
এসব দেখে আমরা এখন আর কষ্ট পাইনা। গত দেড়যুগ ধরেইতো এসব দেখে আসছি। এখন অনেকটা গা সয়া হয়ে গেছে। কেবল আপষোষ সেই মানুষটির জন্য গুম হওয়া রাজনৈতিকের গুমের পিছনে যার হাত নেই। যে কিনা রাজনীতির ভালোমন্দ নিয়ে কিছু বুঝেইনা।
যার কাছে একমাত্র আরাধ্য হচ্ছে গাড়ি চালিয়ে নিত্যদিনের রোজগারে বউ বেটি বাচ্চা কাচ্চাদের সাথে সপ্তাহ্নে ভালো সময় কাটানোর। অতচ নির্দোষ মানুষটিকে পুড়িয়ে মারা হলো হরতালের নামে। তার কৈফিয়ত আমরা কার কাছ থেকে নেবো? নাকি রাজনীতির এ কলংক আগামিতে আবার ভোট ভিক্ষায় ভিন্নমাত্রা যোগ করবে? কতো বুলি আওড়ান আমাদের মহান রাজনৈতিকরা, তার যদি কিয়দংশও সত্যি হতো তাহলে এদেশটা মালেশিয়া কিংবা সিঙ্গাপুর হয়ে যেত। কি নেই এ দেশে, মানুষ রৌদ্রে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করে। ঘাম জড়ানো পয়সা মোটি মোটি করে যোগ হচ্ছে শিক্ষা সংস্কৃতিতে।
কেবল রাজনীতিতে হলুদ ব্যাধির আক্রমন। ঠিক এ জায়গাটাতে যদি আমরা রিকভার করতে পারতাম তাহলে পদ্মা সেতু করার জন্য অন্যদের কাছে হাত পাততে হতোনা। দেখেন আমরা কতোটা র্দুভাগা জাতি, আগে শুনতাম উমুক নেতা তমুক নেতা ঘুষ খেয়ে র্দুনীতি করে বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছে। আর এখন চাক্ষুষ ধরা খাচ্ছে। এপিএসের গাড়িতে লাখ লাখ টাকা।
এর আগের আমলে মাগুর ছড়া গ্যাস ফিল্ডের র্দুঘটনা ধামাপাচা দেওয়ার জন্য একজন প্রতিমন্ত্রীকে গাড়ি উপটৌকন হিসেবে দেয়া হয়েছিল। আর তাতেই তিনি সন্তুষ্ট হয়ে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে চেয়েছেন। এ লোকগুলোই কিন্তু ঘুরে ফিরে মন্ত্রী হন । আর এটা হলো জাতীয় র্দুভাগ্য। কে মন্ত্রী হলো কে আমলা হলো তাতে আমাদের নুন্যতম আগ্রহ নেই।
আমরাতো স্বাভাবিক জীবন চাই আর এ স্বাভাবিক জীবনটা আমাদের অধিকার। আমরা রাষ্ট্রের কাছে কেন স্বাভাবিকতার গ্যারান্টি পাবোনা? আজকে রাজনীতির কালো থাবায় দংশিত হচ্ছে জাতি। গাড়ি পুড়ছে রাস্তায়, মানুষ পুড়ছে আর আমরা নাকে মুখে রোমাল চেপে বাড়ি যেতে পারলেই শান্তি পাচ্ছি। তাহলে এই রাজনীতির জন্য আমাদেরকে ভোট দিতে হয়। প্রতীকে শ্লোগান দিতে হয়।
মৃত ব্যক্তিদের নাম নিতে নিতে আমাদের মুখে ফেনা আসে। অতচ আমাদের বোধদয়ের বড় অভাব। তবে কি আমরা আরেকটি ১/১১ জন্য অপেক্ষা করবো। নাকি সুশীল ভাবনা থেকে আবার আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সংসদে পাঠাবো! সরকার ভালোনা, বিরোধিদল ভালোনা, সংসদ ভালোনা, ইত্যাদি কিছু মুখস্ত কথা শুনতে শুনতে আমাদের ঘেন্না জমেছে। বিরোধি দল সংসদে যায়না কিন্তু সদস্যপদ ধরে রাখে।
গাড়ি ভাড়া, ঘর ভাড়া, বেতন ভাতা নেয়ার সময় তাদের বিবেক কাজ করেনা। এইতো আমাদের সংসদ! গত দেড় যুগের গনতান্ত্রিক সংসদ!
হাসান কামরুল: কলামিষ্ট।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।