বাংলা আমার দেশ
সরকারের মধ্যে দল হারিয়ে গেছে। তৃণমূলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য থাকলেও বিভিন্ন দিবস ও উৎসব পালনকেন্দ্রিক কিছু আয়োজন ছাড়া বছরজুড়ে তেমন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছিল না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। সাংগঠনিক সফর, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন, সদস্য সংগ্রহ অভিযান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা ও সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তৃণমূলে জানিয়ে দেওয়াসহ বেশকিছু কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও সেসব কর্মসূচির শেষ ভালো হয়নি।
এদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নানা ঘটনা-অঘটনার মধ্য দিয়ে ২০১০ সালের শেষে এসে সরকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। তবে বারবার ঘোষণা দিয়েও সরকার পতনের আন্দোলন তারা তেমন জমাতে পারেনি।
সরকারের কৌশলী পদক্ষেপে দলটির একের পর আন্দোলনের ইস্যু বুমেরাং হয়ে যাচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছাড়া, সাকা চৌধুরী গ্রেপ্তার, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গণহারে মামলা, নাটোরে বাবু হত্যাসহ চৌধুরী আলম নিখোঁজ, সিরাজগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে অর্ধডজন মানুষের মৃত্যু, উপনির্বাচনে দলের সহসভাপতি মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহম্মেদের পরাজয় ইত্যাদি ইস্যুর পালেও ঠিকমতো হাওয়া লাগাতে পারেননি নেতা-কর্মীরা।
দলের মূল্যায়ন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, "সরকারে এসে দল দুর্বল হয়ে গেছে। দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি যেটুকু করার দরকার তা প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 'টিম ওয়ার্ক' ও সমন্বয়ের অভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে না।
"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'আশা করি, আগামী বছর হবে শান্তিপূর্ণ ও সংঘাতহীন। সরকার বিরোধী দলের ওপর তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দেশে বজায় থাকবে। ' তিনি বলেন, 'আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমাদের নেত্রী সরকারকে সময় দিতে চান। তাই আন্দোলন ততটা তীব্র ছিল না।
'
আ. লীগের ব্যর্থতার পাল্লা ভারী
আওয়ামী লীগে উপদেষ্টা পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর নিয়মিত বৈঠক হয়েছে। ওই সব বৈঠকে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির বিভিন্ন কৌশল ও দলীয় নেতা-কর্মীদের করণীয়ও নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে জেলা প্রচার, প্রকাশনা ও তথ্য গবেষণা সম্পাদকদের নিয়ে ঢাকায় দুই দিনব্যাপী রাজনৈতিক কর্মশালা করেছে। সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযান কার্যক্রম শুরু হয়েও থেমে আছে। মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করতে পারেনি।
জেলা নেতাদের সঙ্গে সভানেত্রীর একটি বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ কর্মপরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি।
তবে গেল বছর সব ধরনের মামলা থেকে মুক্ত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল জরুরি অবস্থার সরকারের সময় পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতিসহ ১৫টি রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলায় জামিনে মুক্তি নিয়ে তিনি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচন করেন।
২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠিত হয়। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা কিছু মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় বাতিল করা হয়। বাদীরাও কয়েকটি মামলা প্রত্যাহার করে নেন। গত বছরের জুনে তিনি মামলামুক্ত হন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে দেশব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে ও সরকারের সফলতা তৃণমূলে পেঁৗছে দিতে কার্যনির্বাহী সংসদের সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। ২০১০-এর শুরুতে সহযোগী সংগঠনগুলো জাতীয় কাউন্সিল এবং নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর বছরের জুনের মধ্যে সহযোগী সংগঠনের কাউন্সিল ও কমিটি করার কাজ শুরু করে। জুনে বলা হয়_অক্টোবরের মধ্যে কাউন্সিল শেষ হবে।
তা আর হয়নি। সহযোগী সংগঠনগুলো মূল দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর এর দায় চাপায়। গত বছর শরিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিকভাবে তৎপর ছিল না আওয়ামী লীগ। ১৪ দলের সঙ্গে গত বছর সর্বমোট পাঁচটি সভা হলেও মহাজোটগতভাবে একটি বৈঠকও হয়নি আওয়ামী লীগের সঙ্গে। অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরোধিতার কারণে অনেক জায়গায় শরিকরা দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিতে পারেনি।
বিএনপির ছিল সংকটের বছর
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে হেরে যাওয়ার পর থেকেই বিএনপি নানামুখী সংকটে পড়েছে। গত এক বছরে সে সংকট থেকে খুব একটা বেরিয়ে আসতে পারেনি তারা। আদালতের রায়ে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত ১৩ নভেম্বর ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া।
নানাভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন চাঙ্গা করতে বছরব্যাপী সমাবেশ, মিছিল-মিটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিল দলটি।
গেল বছরে ঢাকাসহ পাঁচটি বিভাগীয় শহরে মহাসমাবেশ করে। ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে প্রথম সমাবেশ হয়। এ কর্মসূচি ১৯ মে ঢাকায় শেষ হয় মহাসমাবেশের মাধ্যমে।
২০১০ সালে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনকালে বিএনপির শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয় এবং গ্রেপ্তার হন সহস্রাধিক নেতা-কর্মী। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে অর্ধশত মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে মির্জা আব্বাস, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জয়নুল আবদিন ফারুক, আমানউল্লাহ আমানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। এ ছাড়া মির্জা আব্বাস ও শমসের মবিন চৌধুরীকে গত ২৭ জুনের হরতাল চলাকালে গাড়ি পোড়ানো মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। ২০১০ সালে তিনটি অর্ধদিবস ও তিনটি পূর্ণদিবস হরতাল পালন করে বিএনপি। নাজমুল হুদা বহিষ্কার এবং মান্নান ভূঁইয়া ও মীর শওকতের মৃত্যু ছিল বিএনপি জন্য অন্যতম ঘটনা।
গত ২১ নভেম্বর বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বক্তব্য দেওয়ার কারণে দলের স্থায়ী কমিটির মতামতের ভিত্তিতেই তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। অন্যদিকে বিএনপির বহিষ্কৃত মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও দীর্ঘদিন অনুপস্থিত বিএনপির সহসভাপতি লে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী মারা যান। ৬৪ কার্যদিবস বর্জনের পর খালেদার নেতৃত্বে সংসদে যোগ ও জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করায় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে বিএনপি। বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া বছর শেষ করেন চীন সফর দিয়ে।
খালেদা জিয়ার বাড়ি, সাকা চৌধুরীর গ্রেপ্তার, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট, নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানিসহ নানা ইস্যুতে বিএনপি আন্দোলন করেছে, হরতাল করেছে। শরিক জামায়াতের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্ব কিছুটা কমিয়েও এনেছে। বছর শেষে এসে ২০১১ সালকে আন্দোলনের বছর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এভাবেই বিএনপি এখন সরকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।