ভালো থাকতে চাই..। যা কিছু ভালো সেদিকে সবাইকে আহবান.। মুঠোফোনে তখনও ব্রেকিং নিউজ এর ক্ষুদে বার্তা এসে পৌছায় নাই। কিছুক্ষনের মধ্যে মাগরিবের আযান দেবে। লন্ড্রিতে কাপড়গুলো দিয়ে মসজিদের পথে পা চালাচ্ছি।
রাস্তায় বেশ কয়েকটা ছেলে হৈ-হুল্লোড় করে ক্রিকেট খেলছে। হঠাৎ পাশের একটা বাসার গেট থেকে ‘হরতাল’, ‘হরতাল’ বলে চিল্লাতে চিল্লাতে বের হল একটা ছেলে।
খেলা ফেলে সবাই খুব বিরক্তমুখে ছেলেটার দিকে তাকায়। হরতাল তো শেষ। এই ব্যাটা আবার চিল্লায় ক্যান !!
ছেলেটা চিৎকার থামিয়ে বলল, আরে ! আগামিকাল আবার হরতাল দিসে।
আমিও একটু থমকে দাঁড়িয়ে কান খাঁড়া করলাম। যারা রাস্তায় খেলছিল তারা খেলা থামিয়ে হৈ হৈ করে উঠল। কারন কালও তাদের স্কুল যেতে হবে না। কি মজা !!
হঠাৎ ছুটির মজাটা একটু অন্যরকম। ছাত্র-ছাত্রী মাত্রই সেটার স্বাদ অনুধাবন করতে পারে।
সেটা স্কুল হোক কিম্বা ভার্সিটি। হোক সে ছুটিটা হরতালের জন্য কিম্বা হোক সেটা ‘অটো’
স্কুলে যখন পড়েছি তখন আমিও এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিলাম না। আমাদের মফস্বলের স্কুলে তখন হরতালের জন্য কিন্তু আগেভাগে ছুটি দেয়া হত না। আমরা যথারীতি স্কুলে যেতাম। হয়ত দুয়েকটা ক্লাসও হত।
হঠাৎ স্কুলপ্রাচিরের বাইরে কিছু হট্টগোল কিম্বা মিছিলের শব্দ শোনা যেত। স্কুলের ভিতরও নেতা-গোতা কয়েকজন ঢুকে যেত। ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে সবাইকে ক্লাস থেকে বের হবার জন্য বলত। আর আমরা হঠাৎ মুক্তির আনন্দে হুড়মুড় করে যে যেদিক পারি ছুটতাম। যতদূর মনে পড়ে ভাংচুর-টাংচুর এর কথা তখন শুনিনি।
ছাত্রজীবন শেষ করেছি বেশ কয়েকবছর। হরতাল এখন আর নেই মজার উপসংগ। ছাত্রজীবনে ক্লাস ফাঁকিতে যে মুক্তির স্বাদ সেটা এখন নাই। এখন সেটা হয়েছে মরণ ফাঁদ। এখন চিন্তা, কেমনে অফিস যাই।
হঠাৎ একদিন হরতাল হলে হয়ত , একটু ছুটি পাওয়া হয়। বাসায় একটু বিশ্রাম, একটু আয়েশি ঘুম। ভালই লাগে। অবশ্য ছুটি তখনই কাটানো যায় যখন অফিসের কাজগুলো আয়ত্তের মধ্যে থাকে।
কিন্তু এই লাগাতার হরতাল।
সাথে জ্বালাও- পোড়াও। কেউবা জীবন্ত দগ্ধ আবার কাউকে তাড়া করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া। কি হচ্ছে এসব!! কালকে আবার হরতাল, খবরটা শোনার পর থেকেই একটা টেনশন শুরু হয়ে গেল। কালকে অফিস যাব কিভাবে। কে দেবে নিরাপত্তা।
কোথাও কি আদৌ নিরাপত্তা আছে? যেখানে বড় বড় রাঘববোয়ালরা হাওয়া হয়ে যায়, আর আমরা তো চুনোপুঁটি।
যারা ক্ষমতায় থাকে তাদের কাছে হরতালের চেয়ে খারাপ কিছু নাই। আবার যারা বিরোধীদল তাদের কাছে হরতালই দেশ-জাতিকে রক্ষার একমাত্র পন্থা। ক্ষমতার পালাবদলে এই কথাগুলো একইভাবে উচ্চারিত হয়, শুধু বদলে বা উল্টে যায় উচ্চারনস্থল। আর সাধারন মানুষ, আমরা আমজনতা আটকে থাকি একই ফাঁদে, একই গ্যাঁড়াকলে।
এই ফাঁদ থেকে মুক্তির উপায় সহসা দেখছি না।
ইতিমধ্যে মুঠোফোনে হরতালের ব্রেকিং নিউজ এর ক্ষুদে বার্তা পৌছে গেছে। অস্থির লাগছে। মাথার মধ্যে একটা ব্যপার ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা হল ওয়ার্ম হোল ।
সামনে একটা ওয়ার্ম হোল পাইলে বেশ হত। ওয়ার্ম হোল এর ভিতর দিয়া দিতাম ছুট...তারপর যা হবার হত...।
ওয়ার্ম হোল ব্যপারটা হল , দুটি ভিন্ন ভিন্ন স্থান এবং সময়কে একটা ফুটো দিয়ে জুড়ে দেওয়া যায়। সেই ফুটো দিয়ে বের হয়ে অন্য একটি জায়গায় অন্য একটি সময়ে বের হয়ে যাওয়া যায়। অন্য কোনও গ্যালাক্সিতে, অন্য কোনও শতাব্দীতে ।
যেখানে থাকবে না এরকম হানাহানি, গ্যাঞ্জাম, ফ্যাসাদ। দেশটাকে আর দেশের ভাল মানুষগুলো নিয়ে চলে যেতাম সেই আজানা রাজ্যে। ব্যপারটা কাল্পনিক হলেও আমি চাই সত্যি হোক। মনেপ্রাণে চাই।
আমরা যখন বেশি বিপদ-আপদে পড়ি, তখন বলি, ধরণী দ্বিধা হও...।
ধরণী দ্বিধা হলেই যেন আমরা তার ভিতর টুক্কুস করে ঢুকে পরব, আর সব ঝামেলা খাল্লাস। সেরকম ই ব্যপারটা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।