আমরা হেরে যাইনি। এশিয়া কাপ না জিতলেও তোমরা আমাদের হৃদয় জয় করেছ। আমরা গর্বিত ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা হয়। এবার তিনি থানার ভেতরে ছাত্রনেতাকে ঝুলিয়ে পিটিয়েছেন। রোববার বিএনপির ডাকা হরতাল চলাকালে খুলনা সদর থানায় এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ওসির এ ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ডের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদকর্মীদের সঙ্গেও তিনি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। পরে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অপকর্মের ঘটনা ধামাচাপা দিতে।
শুধু তাই নয়; ওসি কামরুজ্জামানের অতি উৎসাহে হরতাল চলাকালে বেপরোয়া হয়ে ওঠে পুলিশের অন্য সদস্যরাও। সকাল থেকেই নগরীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তায় নামতে না দেওয়া, দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা, ফুটপাত থেকে নারী কর্মীদের পোশাক ছিড়ে লাঞ্ছিত করে গ্রেফতারসহ মারমুখী ভূমিকায় ছিল পুলিশ।
এসময় ১৭ জনকে আটকও করা হয়।
হরতালের সময় কাফনের কাপড় পরে বিএনপি মিছিল বের করে। এসময় ওসি কামরুজ্জামান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুর কাফনের কাপড় খুলে নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্র জানায়, নগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা এসএম ইমদাদুল হকের ছেলে সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহামুদুল হক টিটো রোববার সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে পিটিআই মোড়ে আসেন।
এসময় টিটো ও সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের ছাত্র ফেরদাউসুর রহমান মুন্নাকে সদর থানা পুলিশ আটক করে।
থানায় নিয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় তলায় ছাদের হুকের সঙ্গে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে টিটোকে অমানুষিক নির্যাতন করেন ওসি কামরুজ্জামান। এসময় মুন্নাকেও চোখ বেঁধে মারপিট করা হয়।
ঘটনার সময় থানায় উপস্থিত সংবাদকর্মীরা জানান, নির্যাতনের ফলে টিটো কয়েকবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তার চিৎকারে সাংবাদিকরা সেখানে জড়ো হলে ওসি তাদের ধমক দিয়ে বের করে দেন। সংবাদ কর্মীদের দায়িত্ব পালনে বাধা দেন।
ওই নির্যাতনের ছবি সাংবাদিকরা তুললে তিনি তা প্রকাশ না করার জন্য থানার একাধিক এসআইকে বিষয়টি ম্যানেজের দায়িত্ব দেন। কিন্তু ঘটনার কিছু সময় পরই ওসির ওই জঘন্য কর্মকাণ্ডের ছবি ও প্রতিবেদন ‘অ্যাকশন, ওসি স্টাইল’ শিরোনামে বাংলানিউজে প্রকাশ হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই সারাবিশ্বের মানুষ এ অমানবিক আচরণের বিষয়টি দেখতে পায়।
এ ব্যাপারে ওসি এসএম কামরুজ্জামান নিজের পক্ষে সাফাই গেয়ে বাংলানিউজকে জানান, থানার মধ্যে ঝুলিয়ে কোনো ছাত্রকে নির্যাতন করা হয়নি। ঘটনার ছবি আছে মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘ছবি থাকতে পারে।
তবে আমি এ ঘটনা ঘটাইনি’।
পরে তিনি একাধিক সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ছবি ও ফুটেজ যাতে কোনো মিডিয়ায় না আসে সে ব্যাপারে তদবির করেন।
এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সফিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনা শুনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘থানার ভেতরে কোনো ব্যক্তিকে ঝুলিয়ে পেটানোর এখতিয়ার পুলিশের নেই। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে বিভাগীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ দিদারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘থানায় আটক করে মাহামুদুল হক টিটোকে ওসি যে নির্যাতন করেছেন, তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।
তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায় বিচারের দাবি জানান। ’
এই সেই ওসি
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ১২ এপ্রিল খুলনা মহানগরীর নিরালা এলাকার ১০ বছরের শিশু বেলালকে রড চুরির অভিযোগে থানায় বৈদ্যুতিক শক দেন ওসি কামরুজ্জামান। এতে শিশুটি অজ্ঞান হয়ে যায়।
কামরুজ্জামানের পৈশাচিক আচরণের খবর সারাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তাবয়ন সংস্থার মহাসচিব সিগমা হুদা ওসির বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন।
ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে এসআই মনিরুজ্জামানকে খুলনার অপর একটি থানায় বদলি করা হলেও খুঁটির জোরে এখনও সদর থানায় বহাল তবিয়নে আছেন ওসি কামরুজ্জামান। তার খুঁটির জোর কোথায় সেটি নিয়েই নগরীতে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১২
প্রতিবেদন: মাহবুবুর রহমান
সম্পাদনা: রোকনুল ইসলাম কাফী, নিউজরুম এডিটর ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।