“আপনার জন্য মাত্র একটি পথ খোলা: হয় বিশ্বজুড়ে আপনার সব সম্পদ আমরা জব্দ করব অথবা আমাদের কথামত কোনো এক সন্তানের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। ”
কাতারের রাজা বা আমির এ বিষয়ে কিছু বলতে চাইলে আমেরিকার ওই বিশেষ দূত তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে: “এ ব্যাপারে দরকষাকষির বা মধ্যস্থতার কোনো কর্তৃত্ব আমাকে দেয়া হয়নি, আমি এসেছি কেবলই আমাদের (আমেরিকার) সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে”।
এভাবে মার্কিন মনিব প্রতিনিধির একটি মাত্র বাক্য বা কথা শুনেই সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে কাতারের আমির বা রাজা শেইখ হামাদ বিন খলিফা আস সানিকে।
সম্প্রতি লেবাননের দৈনিক আসসাফির এইসব তথ্য ফাঁস করেছে।
কূটনৈতিক সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে দৈনিকটি জানিয়েছে, কাতারের রাজা শেইখ হামাদ বিন খলিফা আস সানি স্বাস্থ্যগত অজুহাত দেখিয়ে নিজের ছেলের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো বলে প্রচার করা হলেও আসলে মার্কিন সরকারের নির্দেশেই তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে।
আর পদচ্যুত করার নির্দেশ নিয়ে-আসা ওই মার্কিন দূত ছিলো একজন আধা-সামরিক ব্যক্তিত্ব ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র একজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, শেইখ হামাদ ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নানা তৎপরতা সম্পর্কে আমেরিকার বিভিন্ন নজরদারি যন্ত্রের দেয়া তথ্য পর্যালোচনা করেই হোয়াইট হাউজ তাকে পদচ্যূত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
শেইখ হামাদ নিজেও মার্কিন মনিবের ইঙ্গিতে বিদেশ সফররত নিজের বাবাকে ক্ষমতাচ্যূত করে কাতারের আমির হয়েছিলো। কিছু দিন আগেও পারিবারিক অবকাশ যাপন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য গ্রিসের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ কিনেছিলো কাতারের ক্ষমতা-হারানো রাজা শেইখ হামাদ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শেইখ হামাদ সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সহায়তা দেয়াসহ আরব ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
লিবিয়ার গাদ্দাফি বিরোধীদেরও ব্যাপক সহায়তা দিয়েছিল কাতার। ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করা সত্ত্বেও মার্কিন সরকার হামাদকে ক্ষমতাচ্যূত করল।
দৈনিক আসসাফির জানিয়েছে, হামাদ ও তার প্রধানমন্ত্রী অনেক ক্ষেত্রেই মার্কিন সরকারের বেঁধে দেয়া কিছু সীমারেখা লঙ্ঘন করেছিলো। এইসব সীমারেখার মধ্যে সিরিয়া পরিস্থিতি, কয়েকটি কথিত ইসলামী সংস্থার প্রতি কাতারের রাজার সাহায্য এবং কয়েকটি উগ্র গ্রুপের কাছে কাতারের অর্থ আর অস্ত্র সহায়তার বিষয়ও রয়েছে।
মার্কিন সরকার কাতারের রাজা হামাদকে পদচ্যুত করার ঘটনায় আরো যেসব নির্দেশ বা শর্ত মেনে চলতে বলেছে সেসবের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেইখ হামাদ বিন জাসিমকে বিদায় করা এবং মার্কিন সরকারের নির্দেশিত স্থানগুলো ছাড়া বিশ্বের অন্য সব স্থানে কাতারের পুঁজি বিনিয়োগগুলো স্থগিত রাখা।
মার্কিন ওই দূত কাতার সরকারের কাছে ওবামা সরকারের এই বার্তাও পৌঁছে দেয় যে, “কাতারের বিভিন্ন বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত কেবল ওয়াশিংটনেই নেয়া হবে এবং তা করা হবে ওয়াশিংটনের মাধ্যমেই”।
কাতারের রাজা শেইখ হামাদ বিন খলিফা গৃহবন্দী রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সে চলতি (জুন) মাসের শেষের দিকে অথবা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে যুবরাজ তামিমের কাছে ক্ষমতা ছাড়বে বলে কথা রয়েছে। ৩৩ বছর বয়স্ক তামিম কাতারের রাজার দ্বিতীয় স্ত্রী মোজাহ বিনতে আলমাসনাদের দ্বিতীয় পুত্র।
সম্প্রতি রয়টার্স জানিয়েছে, হয় তামিমকে প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী করা হবে অথবা রাজা পদত্যাগ করলে উপপ্রধানমন্ত্রী আহমাদ মাহমুদকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে।
ব্রিটেনের ডেইলি টেলিগ্রাফ সম্প্রতি জানিয়েছে, যুবরাজ তামিমের সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুডের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। কাতারের প্রতিরক্ষা ও সামরিক বিষয়ের প্রধান হওয়ার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি তার ক্ষমতা বেড়ে গেছে বলে টেলিগ্রাফ উল্লেখ করেছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।