বাংলা আমার দেশ ৬ই এপ্রিল, শনিবার ঢাকার শাপলা চত্বরে কিছু সংখ্যাক কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক এবং তাদের অধীনস্থ হাজার হাজার ‘অপারগ’ মাদ্রাসা-ছাত্ররা তথাকথিত ‘নাস্তিকদের’ বিরুদ্ধে একটি সমাবেশ করেন। সমাবেশের মূল বিষয় ছিল, কে বা কারা তাদের নিজেদের ব্লগে কয়েক বছর আগে মহানবী বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-এর প্রতি কটাক্ষ করে অপমানজনক কথাবার্তা লিখেছিল এদেরকে আইন পাশ করে শাস্তি দিতে হবে। হুজুরদের এই দাবী এ পর্যন্ত এসে থেমে থাকে নি। বরং পরবর্তী ধাপে এরা ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে তাদের মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত দাবী করেছেন। আর এর প্রমাণ হিসেবে কয়েকবার কয়েকজন হুজুর ‘মাম্ বাদ্দালা দিনাহু ফাকতুলুহু’ (অর্থাৎ, যে তার ধর্ম পরিবর্তন করেছে তাকে হত্যা কর)Ñএই বিতর্কিত হাদীসটি উদ্ধৃত করেন।
কোরআনভক্ত ও ইসলামপ্রেমী হিসেবে স্বভাবতই মহান আল্লাহ্ ও তাঁর সবচেয়ে প্রিয় রসূল (স.)-এর প্রতি কটাক্ষ শুনলে যে কোন মুসলমানের মনেই কষ্ট লাগে আর মনের ভেতর রক্তক্ষরণ হয়। কিন্তু তাই বলে কোরআন বিরোধী দাবী-দাওয়া আদায় করে কি মহানবী (স.)-এর সম্মান প্রতিষ্ঠা করা যায়? আজ পর্যন্ত মহানবী (স.) ও অন্য সকল নবীর (আ.) যে সম্মান জগতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা কি জাগতিক কোন আইনের কারণে, নাকি এই অতুলনীয় সম্মান আল্লাহ্ কর্তৃক প্রদত্ত? যাঁর সম্মান স্বয়ং আল্লাহ্ প্রতিষ্ঠা করেছেন কারও মুখের কথায় কি তাঁর সম্মান ভেস্তে যেতে পারে? পিতামাতার প্রতি আমাদের যে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ তা কি কোন সংসদে পাশ করা আইনের কারণে?
টিভির পর্দায় সমাবেশটি দেখছিলাম। দেখলাম, তিন চারজন আলেম পর পর স্টেজ থেকে প্রথমে ব্লগারদেরকে নাস্তিক আখ্যা দিলেন। এরপর তাদেরকে ‘মুরতাদ’ আখ্যা দিয়ে তাদের মৃত্যুদন্ড দাবি করলেন। দাবির স্বপক্ষে কোরআনের কোন আয়াত উপস্থাপন না করে, আল্লাহ্র কোন বিধান না শুনিয়ে সরাসরি হাদীসের আশ্রয় গ্রহণ করলেন তারা।
ভাবতেও অবাক লাগে, নিজেকে নিজে ধর্মত্যাগী (বা মুরতাদ) ঘোষণা না করা পর্যন্ত অন্যের ঘোষণায় কেউ ‘মুরতাদ’ হয় কীভাবে? আল্লাহ্কে অস¦ীকার করলে একজন নাস্তিক সাব্যস্ত হয়Ñএকথা সত্য, কিন্তু এর জন্য কি আল-কোরআনে কোন জাগতিক শাস্তি নির্ধারিত আছে? আবার প্রশ্ন দাঁড়ায়, ধর্মজগতের সুপ্রীম কোর্ট আল্লাহ্র বাণী আল-কোরআন থেকে কোন উদ্ধৃতি না দিয়ে এরা একটি বিতর্কিত হাদীসের আশ্রয় নিলেন কেন? এরা কি তাহলে কোরআনের মাঝে তাদের কল্পিত বিধানের সমর্থনে কোন দলিল বা শিক্ষা খুঁজে পান নি?
হ্যাঁ, বিষয়টি ঠিক তাই। ‘হিফাজতের’ পক্ষ থেকে যদিও ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ইসলাম রক্ষার নামে ‘মুরতাদ্দের’ মৃত্যুদন্ড দাবি করা হয়েছে, তথাপি পবিত্র কোরআনে নাস্তিক-মুরতাদ্দের জন্য এহেন কোন জাগতিক শাস্তির বিধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। পবিত্র কোরআনে যখন যেখানে ধর্মত্যাগ বা ‘ইরতিদাদের’ উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায় সেগুলোতে ঘুণাক্ষরেও জাগতিক কোন শাস্তির বিধান খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন সূরা বাকারা ১০৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন: ...‘এবং যে কেউ ঈমানের পরিবর্তে কুফরী গ্রহণ করে নিশ্চিতভাবে সে সরল পথ হারায়। ’ ঈমান আনার পর ধর্মত্যাগ করে কুফুরী মতবাদ গ্রহণ করার নাম ‘ইরতিদাদ’ বা ধর্মত্যাগ।
এই আয়াতে ঠিক সেই অপরাধের কথাই বলা হয়েছে, কিন্তু এসত্ত্বেও কোন জাগতিক শাস্তির বিধান এখানে রাখা হয় নি।
একইভাবে সূরা নিসার ১৩৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘যারা ঈমান আনে ও পরে কুফরী করে এবং আবার ঈমান আনে, আবার কুফরী করে, অতঃপর তাদের কুফরী-প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ্ তাদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথে পরিচালিত করবেন না। ’ লক্ষ্য করুন, এ আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা প্রথমে একদল মানুষের ঈমান আনার পর কুফুরী অবলম্বন করার কথা বলেছেন অর্থাৎ তাদের ধর্মত্যাগ করে কাফের হয়ে যাবার কথা বলছেন, এরপর বলছেন, ‘সুম্মা আমানূ সুম্মা কাফারূ’... অর্থাৎ, ‘তারা আবার ঈমান আনে, আবার কুফুরী করে’। মুরতাদের শাস্তি যদি মৃত্যুদন্ডই ধার্য হয়ে থাকে তাহলে প্রথমবার মুরতাদ্ হবার সঙ্গে সঙ্গে এদের মরে যাবার কথা। কিন্তু না, এরা জীবিত ছিল যার কারণে এরা পুনরায় ঈমান আনার সৌভাগ্য পেয়েছিল।
পরবর্তীতে এরা আবার কুফুরী করেছে। স্পষ্ট বুঝা গেল, মুরতাদের জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান নেই। এরপর আল্লাহ্ বলছেন, তিনি এদেরকে কিছুতেই ক্ষমা করবেন না এবং এদেরকে হেদায়াতের কোন পথও দেখাবেন না। অতএব এদেরকে জগতের কারও হাতে তুলে দেয়া হয় নি বরং আল্লাহ্ এদের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নিজের হাতে রেখেছেন।
সূরা মায়েদার ৫৪ নম্বর আয়াতটিও দেখুন।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, ‘হে মোমেনগণ! তোমাদের মধ্যে কেঊ দীন হতে ফিরে গেলে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এমন এক স¤প্রদায় আনবেন যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন যারা তাকে ভালবাসবে, তারা মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে, তারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না; এটি আল্লাহ্র অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন এবং আল্লাহ্ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ’ এখানে আল্লাহ্ তায়ালা পরিস্কারভাবে বলছেন, মুসলমানদের মাঝ থেকে কেউ মুরতাদ হয়ে গেলে মুসলমানদের কোন ক্ষতি হবে না। বরং একজনের বিনিময়ে আল্লাহ্ নুতন একটি ঈমানদার সমাজ ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসবেন। কিন্তু এখানেও তিনি মুরতাদ্কে কোন শাস্তি দেয়ার কথা বলেন নি।
একইভাবে, পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ২১৭ নম্বর আয়াতে, সূরা আলে ইমরানের ৯০ এবং ১৪৪ নম্বর আয়াতে, সূরা নিসার ১৩৭ নম্বর আয়াতে এবং সূরা মায়েদার ৯২ নম্বর আয়াতেও ধর্মত্যাগের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু কোন একটি স্থলেও মুরতাদকে মৃত্যুদন্ড দেয়ার কথা ঘুণাক্ষরেও উল্লেখ করা হয় নি।
আসুন এবার দেখা যাক, মহানবী (স.) নিজে এ বিষয়ে কী আমল করেছেন? কেননা কোরআন শরীফ তিনিই সবচেয়ে বেশী বুঝতেন। আমাদের জন্য কিয়ামত পর্যন্ত তিনিই আদর্শ। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (স.)-এর জীবদ্দশায় তাঁর সামনে যতজন অভাগা মুরতাদ্ হয়েছেন তাদের কাউকে রসূলুল্লাহ্ (স.) মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন নি। এক আরব বেদ্ঈুন মদীনায় এসে মুসলমান হবার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। সে এটিকে ইসলাম গ্রহণের কুফল বলে মনে করে এবং প্রকাশ্যে ইসলাম ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে মহানবী (স.)-এর চোখের সামনে মদীনা শরীফ থেকে বেরিয়ে যায়।
রসূলুল্লাহ্ (স.) তাকে যেতে বাঁধা দেন নি অথবা তাকে হত্যাযোগ্য অপরাধীও সাব্যস্ত করেন নি। (বুখারী কিতাবুল হাজ্জ, বাব-আল্ মাদীনাতু তানফীল খুবুস)।
হুদায়বিয়ার সন্ধির কথা সমস্ত হুজুর খুব ভাল জানেন। মক্কার কাফেরদের সাথে বিশ্বনবী (স.) নিজে এই চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। মক্কার কুরায়শরা ছিল কাফের আর মদীনায় হিজরতকারী ও সেখানকার আনসাররা ছিলেন মুসলমান।
হুদায়বিয়ার সন্ধির ৩ নম্বর শর্তে লেখা আছে, ‘যদি কেউ তার অভিভাবকের অনুমতি ব্যতিরেকে হযরত মুহাম্মদ (স.) এর নিকট মদীনায় চলে যায়, তাহলে তাকে তার অভিভাবকের নিকট ফেরত পাঠাতে হবে। তবে কোনও মুসলিম কুরায়শদের নিকট চলে গেলে তাকে ফেরত দেয়া হবে না। ’ (ইসলামীক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’, ২০শ খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৯৯, এপ্রিল ১৯৯৬ সনে মুদ্রিত)। অর্থাৎ, একজন মুসলমান যদি ইসলাম ত্যাগ করে কাফের কুরায়শদের আশ্রয়ে চলে যেতে চায় এতে কোন বাঁধা নেই। সে নির্বিঘেœ সেখানে যেতে পারে।
প্রমাণ হয়ে গেল, মহানবী (স.) মুর্তিমান কোরআন হিসেবে নিছক ধর্মত্যাগের জন্য কোন জাগতিক শাস্তি প্রদান করেন নি।
আবদুল্লাহ্ বিন সাদ বিন আবি সারাহ্ নামক এক সাহাবী কোরআনের ওহী সংরক্ষণের কাজে লিপিকারের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি কেবল মুরতাদই হন নি বরং মদীনা ছেড়ে মক্কায় গিয়ে সশস্ত্র আগ্রাসীদের দলে যোগ দেন। মক্কা বিজয়ের দিন তাকে অন্য সাতজন অপরাধীর মত সাধারণ ক্ষমার আওতা বহিঃর্ভূত রাখা হয়। পরবর্তীতে এই অপরাধী হজরত উসমানের (রা.) কাছে আশ্রয় নেয়।
তার অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়ার কারণে এবং হজরত উসমানের সুপারিশে মহানবী (স.) তাকে ক্ষমা করে দেন। কেবল তাই নয়, পরবর্তীতে এই ‘সাবেক মুরতাদ’ খলীফার পক্ষ থেকে মিশর দেশে গভর্ণরের দায়িত্বও পালন করেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত সীরাতুন নবী-ইবনে হিশাম ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠা ৬৪, ৬৫) মুরতাদের জন্য মৃত্যুদন্ড যদি আল্লাহ্্র পক্ষ থেকে নির্ধারিত বিধান হত সেক্ষেত্রে আল্লাহ্র নবী কখনো এদেরকে ক্ষমা করতে পারতেন না।
এ কথা অনিস্বীকার্য, কোন কোন হাদীসে সাহাবীদের পক্ষ থেকে ‘মুরতাদ’ হত্যা বিষয়টির উল্লেখ পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় এ কথা বলা যায়, ধর্মত্যাগের কারণে কাউকে শাস্তি দেয়া হয়নি বরং সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহের কারণে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল।
ইয়েমেনে হযরত মা’য বিন জাবালকে যখন গভর্ণর নিযুক্ত করা হয় তখন এধরণের এক সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহী মুরতাদ্দের হত্যার উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। হযরত মহানবী (স.)-এর মুত্যুর পর, ইয়ামামার মুসায়লামা কায্যাব যে রসূলুল্লাহ্ (স.)-র যুগেই নবী হবার মিথ্যা দাবী করেছিল এবং রসূলুল্লাহ্র (স.)-এর মাধ্যমেই ‘কায্যাব’ (বা চরম মিথ্যুক) নামে আখ্যায়িত হয়েছিল- তার নেতৃত্বে এক বিশাল বাহিনী মদিনার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এছাড়া আরও অনেক গোত্র ইসলাম পরিত্যাগ করে মদীনা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে আক্রমন করার প্রস্তুতি নেয়। এই সশস্ত্র বিদ্রোহ দমনের অংশ হিসেবেই ‘মুরতাদ’ হত্যার বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ হযরত আবু বকরের যুগে দেখতে পাওয়া যায়। ধর্মত্যাগের অপরাধে নয় বরং সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহের কারণেই তাদেরকে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়েছিল।
যে কোন সত্য অনুসন্ধানী হজরত আবু বকর (রা.)-এর যুগের ইতিহাসটি তলিয়ে দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। তা না হলে কোরআন পরিবেশিত শিক্ষা, মহানবী (স.) প্রতিষ্ঠিত আদর্শ এবং যুগ-খলীফার পক্ষ থেকে গৃহীত ব্যবস্থার মাঝে স্পষ্ট দ্বন্দ¦ ও বিরোধ সাব্যস্ত হবে, যা সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব। আজও যদি কোন দল বা গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠিত কোন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে ইসলামের শিক্ষানুযায়ী তারাও হত্যাযোগ্য অপরাধী।
এখন বিতর্কিত হাদীসটির বিষয়ে সংক্ষিপ্ত কথা বলে শেষ করতে হয়। ৬ই এপ্রিলের সমাবেশে তিনজন আলেম পর পর মুরতাদের শাস্তি দাবী করে যে হাদীসটি উপস্থাপন করেন সেটি ছিল: মাম্ বাদ্দালা দীনাহু ফাক্তুলুহু.।
অর্থাৎ যে-ই নিজ ধর্ম ত্যাগ করবে তাকে তোমরা হত্যা কর। রাজনৈতিক মাওলানারা এটি তাদের মোক্ষম খড়গ হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু তাদের জন্য দুঃসংবাদ, বুখারীসহ অন্য চারটি উল্লেখযোগ্য হাদীস গ্রন্থে এটি সংকলিত হওয়া সত্ত্বেও কোরআনের শিক্ষা পরিপন্থি হবার কারণে হাদীসটি আক্ষরিক অর্থে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, এই রসূল নিজ পক্ষ থেকে কোন মনগড়া কথা বলেন না যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর প্রতি ওহী করা না হয় (সূরা নাজম-৩,৪)। অর্থাৎ পবিত্র কোরআন যে উৎস থেকে অবতীর্ণ হয়েছে সেই একই উৎস থেকে ওহী লাভ করে মহানবী (সা.) আমাদেরকে ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান দান করেছেন।
অতএব কোরআনের সাথে রসূলুল্লাহ (স.)-প্রদত্ত শিক্ষার কোন বিরোধ থাকতেই পারে না। যেক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মুরতাদ-নাস্তিকদের জাগতিক কোন শাস্তির বিধান দেন নি সেক্ষেত্রে এমন শিক্ষা রসূলুল্লাহ। (সা.)-এর প্রতি কিভাবে আরোপ করা যেতে পারে?
বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ মুহাররার আল ওয়াজীয-এর প্রণেতা ইবনুল আতিয়া আল করুতবী মুরতাদ্দের বিষয়ে নবীজী (স.)-র সমগ্র জীবনের অবস্থান বর্ণনা করে বলেছেন, মহানবী (স.) মুরতাদ বা কোন জিন্দিককে হত্যা করেছেন বলে কোন প্রমাণ কিতাবে নেই’... (ইসলামীক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘সীরাত বিশ্বকোষ’ঃ ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৫৭, জুন ২০০৩ সনে মুদ্রিত)।
আলোচ্য হাদীসের বর্ণনাকারীদের অর্থাৎ সনদের মাঝে ‘ইকরামা’ নামক একজন তাবেঈ আছেন। তিনি আবু জাহলের পুত্র ইকরামা নন বরং হজরত ইবনে আব্বাসের মুক্ত কৃতদাস এবং তাঁর এককালের দূর্বল ছাত্র।
কিন্তু এই ইকরামা তার উত্তরসূরীর কাছ থেকে শেখা বা শোনা বিষয় বর্ণনা করার ক্ষেত্রেও অবিশ্বস্ততার পরিচয় দিয়েছেন। একবার হজরত ইবনে আব্বাসের (রা.) ছেলে আলী তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের প্রতি মিথ্যারোপের কারণে তাকে প্রকাশ্যে শাস্তিও দিয়েছিলেন। ( ) তিনি ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রা.)-র কেবল বিরুদ্ধাচরণই করেন নি বরং তিনি খারিজী মতবাদের সক্রিয় সদস্য ও প্রচারক ছিলেন অর্থাৎ হযরত আলী (রা.)-এর প্রকাশ্য শত্রু ছিলেন। অনেক হাদীস বিশারদ তার খারিজী বা অধার্মিক মতবাদ পোষণ করার জন্য তার বরাতে বর্ণিত হাদীসকে নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বস্ত বলে গন্য করতেন না। (ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’ঃ ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা-৬৬৯ জুন ২০০৬ সনে মুদ্রিত)।
হযরত মালেক বিন আনাস (রহ.) যিনি প্রাথমিক যুগের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাদীসের সংকলন ‘মুয়াত্তা’র সংকলক- তিনিও এ ব্যক্তি অর্থাৎ ইকরামার সূত্রে কোন হাদীস গ্রহণ করতে বারণ করতেন। (দেখুন-বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার প্রকাশিত ড. মোহাম্মদ আব্দুল মাবুদ রচিত ‘তাবেঈদের জীবন কথা’ঃ পৃষ্ঠা ৯৮। )
অতএব ইকরামার মত একজন খারেজী, অবিশ্বস্ত ও অনির্ভরযোগ্য রাবী (বা বর্ণনাকরী)-র সূত্রে বর্ণিত কোন হাদীসের উপর ভিত্তি করে মৃত্যুদন্ডের মত গুরুতর শাস্তির বিষয়টি মোটেও বিবেচ্য নয়।
অতএব কোরআন বর্ণিত স্পষ্ট শিক্ষা পরিপন্থি হওয়ায় এবং বর্ণনাকরীদের মাঝে একজন রাবী (অর্থাৎ ইকরামা) সত্য খলীফা হযরত আলী (রা.)-এর প্রকাশ্য শত্র“ হওয়ায় এ হাদীসটি মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অতএব হেফাজতের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হাদীসটি বিতর্কিত, এর বর্ণনাকারীদের সূত্র সন্দেহযুক্ত, মোটের উপর হাদীসটি সর্বদিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ।
তাই কোরআনের মত সুপ্রীম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানোর কোন সুযোগ নেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।