আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! একটু আগেই বাস থেকে নেমে পড়লাম । ঈশিতার পেছন পেছন । একটু অবশ্য হাটতে হবে । হোক !
ঈশিতা আমার সামনে সামনে হাটছিল । একবারও পিছন ফিরেও তাকাচ্ছে না ।
এমন একটা ভাব যেন আমাকে ও একদমই চেনে না । পিছন থেকে ওকে ডাক দিলাম ।
মনে ভয় ছিল ও হয়তো শুনেও না শোনার ভান করে চলে যাবে । দাড়াবে না । কিন্তু না ।
দাড়াল ও । আমি আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম । কারনটা আজ জিজ্ঞেস করতে হবে ।
ঈশিতা বোধহয় আমার উপর কোন কারনে রাগ করেছে । আমাকে কেমন জানি এড়িয়ে চলছে ।
অবশ্য ওর সাথে আমার খুব যে খুব অন্তরঙ্গ তা কিন্তু নয় । একই অফিসে চাকরি করার সুবাদে ওর সাথে আমার পরিচয় । টুকটাক কথাবার্তা একসাথে আসা যাওয়া করা এই । কিন্তু কদিন থেকে লক্ষ্য করছি সেই টুকুও ও বন্ধ করে দিয়েছে ।
এই জিনিসটা আমাকে খানিকটা কষ্ট দিচ্ছে ।
ঈশিতা কে আমি বেশ পছন্দ করি । দেখতে সুন্দর কথাবার্তাও সুন্দর । ওর সব কিছুই ভাল । পছন্দ হওয়ার মতই মেয়ে ও । কিন্তু সবসময় ও আমার সাথে খানিকটা দুরুত্ব রেখেই চলত ।
শুধু আমার সাথে না । সবার সাথেই । কারো সাথে খুব বেশি গভীর ভাবে মিশত না ও ।
আর কদিন থেকে যেন আরো চুপচাপ হয়ে গেছে । আমার সাথে কথা বলছে না একদমই ।
কারন টা কি ? আমার কোন আচরনে কি ও কষ্ট পেল ? বুঝতে পারছি না কিছুতেই । যাই হোক আজ জিজ্ঞেস করবো ।
আমরা মোটামুটি একই জায়গায় থাকি । এক স্টপেজ আগে পিছে । আগে আসার সময় আমরা প্রায়ইএকসাথে ফিরতাম অফিস থেকে ।
পাশাপাশি বাসেয় সিটে অথবা সিএনজিতে । ওর সাথে টুকটাক কথা বলা চলত ।
কি চমৎকার সময় কাটতো তখন !
একদিন অফিস থেকে আসার পথে বাস নষ্ট হয়ে গেল । সবাই বাস থেকে নেমে যখন অন্য বাসের জন্য ওয়েট করছে তখন ঈশিতা বলল
-আসুন রিক্সা নেই ।
আমি এই কথাটা শোনার জন্যই যেন অপেক্ষা করছিলাম ।
জীবনের সব থেকে সুন্দর রিক্সা ভ্রমন ছিল সেটা ।
এভাবেই দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল সুন্দর ভাবে । কিন্তু কি হল ঠিক বুঝলাম না !
ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম ।
-হাই ।
ঈশিতা কোন উত্তর দিল না ।
আমি আবার বললাম
-অফিস কেমন ছিল আজ ?
-আপনি কি এই কথা বলার জন্য আমাকে ডাকলেন ?
-না মানে !
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কথাটা কিভাবে তুলবো ।
-অপু সাহেব সারাদিন অফিস করে আমি বেশ ক্লান্ত । আমি এখন বাসায় যাবো ।
ওর গলায় কেমন জানি একটা কাঠিন্য ছিল । আমার সাথে কথা বলতে সে রাজি না ।
-আচ্ছা আপনি কি কোন কারনে আমার উপর রাগ করেছেন ?
সরাসরি জিজ্ঞেস করেই ফেললাম ।
-আপনার কেন মনে হচ্ছে যে আমি আপনার উপর রাগ করেছি ?
-না মানে আপনি .....
কি যে বলবো বুঝতে পারলাম না ।
-দেখুন অপু সাহেব রাগ বা অভিমান কেবল কাছের মানুষ গুলোর উপর করা যায় । আপনি আমার এমন কোন কাছের মানুষ না যে আপনার উপর আমি রাগ করবো !
আমার মনটা একটু খারাপই হল । এতো কঠিন করে না বললেও তো চলত ।
-আশা করি আপনি আপনার জবাব পেয়েছেন ।
ঈশিতা আর দাড়াল না । আমি দাড়িয়ে রইলাম ।
ওর কথায় স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে আমার উপর ও রেগে আছে । কিন্তু আমি এমন কি করলাম ? কিছুই মনে পড়ছে না ।
মনটা খারাপ নিয়েই বাসায় ফিরলাম । রাতে বিছানায় শুয়েও কেন জানি ঘুম এল না । কেবলই ঈশিতার কথা মনে হতে লাগল । আর মনে হয় ওর সাথে রিক্সায় চড়া হবে না । মাঝে মাঝে যে বাসে ও আমার পাশে এসে বসত টুকটাক কথা বলত সেটা বোধহয় আর হবে না ।
আসলে মেয়েগুলো এতো জটিল কেন হয় ? এদের বোঝা বড় মুশকিল । কি করেছি সোজাসুজি বললেই হয় !
ঈশিতা আসলেই যেন কেমন ! অফিসের সবার সাথেই ও দুরুত্ব রেখে চলে । তবুও সবার থেকে আমার সাথে একটু আধটু কথা বলত । তাও বোধহয় বন্ধ ।
ওর আচরন বোঝা আসলেই আমার কর্ম নয় ।
তিনচার দিন আগে আমাদের একটা প্রোগ্রাম ছিল । অফিসের কাছেই । বস বলল সবাই রিক্সা নিয়ে রওনা হয়ে যান । দেখি সবাই শেয়ার করে যাচ্ছে । আমার মনে সেদিন কার কথা মনে পড়ল ।
আশা করলাম ও হয়তো আমার সাথেই যেতে চাইবে । অনেকক্ষন অপেক্ষা করলাম কিন্তু ঈশিতা এল না । এমন কি একবার নিজে গিয়ে জিজ্ঞেসও করলাম ।
-যাবেন না ?
-এই তো যাবো ।
একবার তো বলতে পারতো আমার জন্য একটু দাড়ান ।
একসাথে যাই । কিন্তু হায় !
তবুও দাড়িয়ে ছিলাম । কিন্তু বেশিক্ষন দাড়িয়ে থাকা গেল না ।
ইরিন এসে বলল
-কি ব্যাপার অপু ভাই এখনও যান নি ? যাক ভালই হল । চলুন আপনার সাথে যাওয়া যাক ।
ইরিন মেয়েটা কি স্বাভাবিক ভাবেই বলল !
ঈশিতাও তো বলতে পারতো । ইরিনের সাথেই গেলাম । ঈশিতার সাথে আর রিক্সায় ওঠা হল না । বোধহয় আর কোন দিন হবেও না ।
পরদিন অফিস গেলাম মন খারাপ নিয়েই ।
আগে কোন না কোন অজুহাতে ঈশিতার ডেস্কে যেতাম দুএক বার । আজ আর গেলাম না । যদিও কাজে মন বসছিল না তবুও মুখ বুজে কাজই করতে লাগলাম ।
আমি কাজ করছিলাম ঠিক এমন সময় ঈশিতা ফোন দিল ।
-ব্যস্ত ?
প্রথমে ভেবেছিলাম রাগ দেখাবো কিন্তু পারলাম না ।
বললাম
-এইতো কাজ করছি আর কি ? তেমন ব্যস্ত না ।
-একটু ছতলায় আসবেন ?
আমি খানিকটা অবাক হলাম । কালকের ঈশিতা আর আজকের ঈশিতা কেমন ভিন্ন মনে হল ।
-আচ্ছা আসছি ।
আমাদের এই বিল্ডিংটায় প্রায় ১0/১২ অফিস ।
আর ছতলায় হল ক্যান্টিন । সব অফিসের এই একটা কমন ক্যান্টিন । তাই মোটামুটি ভিড় থাকে সব সময় । তবে তুলনা মুলক ভাবে এই সময়টাতে কম থাকে লোকজন । অফিসের পিক আওয়ার তো !
ঈশিতাকে দেখলাম একদম কোনার একটা টেবিলে বসে আছে মাথা নিচু করে ।
আমি সামনে গিয়ে বসতেই মাথা তুলে তাকাল ।
ঈশিতার দিকে তাকিয়ে কেমন অবাক হলাম । ওর চোখ দুটো কেমন জানি ফোলাফোলা । বোধহয় কেঁদে কোন কারনে ।
-আমি বললাম কি হয়েছে ?
ও কোন কথা ধা বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল ।
-আরে বলতে হবে তো কি হয়েছে । তা না হলে বুঝবো কিভাবে ?
অনেকক্ষন পর ঈশিতা বলল
-আই এম সরি !
-সরি ? কেন ?
-কালকে আমি আপনার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছি ।
এই বলে ঈশিতা আবারও মাথা নিচু করলো । খারাপ ব্যবহার তো করেছে । কিন্তু এই কথা তো আর মুখে ওর বলা যায় না ।
আমি বললাম
-না ঠিক আছে সমস্যা নাই ।
-না ঠিক নাই ।
আমি অবাক হয়ে দেখলাম ঈশিতার চোখ দিয়ে পানি পরছে । আশ্চর্য পানি পরছে কেন ?
-আপনি কাঁদছেন কেন ? প্লিজ কাঁদবেন না । আমি কিছু মনে করি নি ।
সত্যি বলছি কিছু মনে করি নি ।
ঈশিতা বলল
-আসলে আমি খুব রেগে ছিলাম আপনার উপর । এই জন্য খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি । কিন্তু বাসায় গিয়ে এতো খারাপ লাগছিল । সারা রাত আমি ঘুমাতে পারি নি ।
ঈশিতার বেশ সময় লাগল শান্ত হতে । আমি ওকে সামলে নেওয়ার সময় দিলাম । পুরোপুরি শান্ত হলে আমি ওকে বললাম
-একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ?
-করুন ।
-আপনি আমার উপর কেন রাগ করেছেন বলেন তো ?
ঈশিতা কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল । আমি আবার বললাম
-আপনি রাগ করেছেন বুঝতে পারছিলাম কিন্তু কারনটা কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না ।
একটু চুপ করে থেকে ঈশিতা বলল
-আপনি সেদিন ইরিনের সাথে রিক্সায় কেন উঠলেন ?
-মানে ?
কি বলছে এই মেয়ে ! আমি ইরিনেয় সাথে রিক্সায় উঠলে ও কেন রাগ করবে ?
কেন রাগ করবে ? আমি ঈশিতার দিকে তাকিয়ে থাকলাম ।
আচ্ছা ! এইবার বুঝলাম । ইরিনের সাথে রিক্সায় উঠলে ঈশিতা কেন রাগ করবে আমি বুঝতে পারলাম ।
আসলেই এই মেয়েদের মন বোঝা কত কঠিন ! ঈশিতার আচরন এমন ছিল আমি কোন দিন ভাবতেই পারি নি ও এমনটা চাইবে । আমি বললাম
-আমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিল ।
তখন নিশ্চই আপনার বলা উচিৎ ছিল ।
ঈশিতা এবারও কোন কথা বলল না । কেবল আমার দিকে তাকিয়ে থাকল ।
-এই টুকু বললেই কিন্তু হয়ে যেত ! হটাৎ ঈশিতা বলল
-আপনাকে ইরিনের সাথে দেখে এতো রাগ হল । মনে হল .... মনে হল ...
-কি মনে হল ?
-জানি না কি মনে হল ! আপনি আর কখনও ইরিনের সাথে রিক্সায় উঠবেন না ।
কোন দিন না ।
আমি হেসে উঠলাম । বললাম
-তো কার সাথে উঠবো ? আপনার সাথে ?
আমি হাসতেই থাকি ।
-হাসছেন কেন ?
-তোমার ছেলেমানষী দেখে হাসছি ।
-কি ছেলেমানুষী করলাম ?
-কাল তুমি কি বলেছিলে মনে আছে ?
-কি ?
-বলেছিল কাছে মানুষের উপরই কেবল রাগ অভিমান করা যায় ।
আমি আজকে একটা কথা বলি ! তুমি যেমন করে আমাকে রিক্সায় উঠতে মানা করলে .... কেবল আপন মানুষ গুলোই ওভাবে বলতে পারে । এখন বল তুমি কি আমার কাছের মানুষ ?
ঈশিতা কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইল । আমি হাসি মুখে বললাম
-চুপ করে থেকো না । বল ।
ঈশিতা চুপ করে থাকল ।
কেবল এক ভাবে আমার দিকে তাকিয় থেকল ।
কি আশ্চার্য এই মেয়ে গুলো । মেয়েগুলো মুখে এক কথা আর চোখ বলছে আর এক কথা । একটু মুখ ফুটে বললে কি হয় ? এমন কি ক্ষতি হয় ?
এখানে আছে গল্পটা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।