বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...
একশত আশি প্রকারের গাছ-গাছরা, জড়ি-বটি, ছাল-বাকল, আমলকি-হরতকি, মধু-সিনামোন, জস-রস দিয়ে তৈরি দেশীয় হেকিমের আশ্চার্য মলম। বাঁশবাড়িয়ার বিপিন বিহারী বসু বসে বসে বাতক ব্যাধী বানিয়ে যখন ওই হেকিমের কাছে গেলেন, তখন প্রথম ওই আশ্চর্য মলমের খোঁজ মিললো। সেই থেকে হাটে-মাঠে-ঘাটে সবখানে ওই আশ্চার্য মলমের কদর বাড়তে থাকে। জনশ্রুতি রয়েছে যে, ওই মলম একবার লাগালে সেই ব্যক্তির জীবনে আর কোনো ধরনের রোগ বালাই হবার সুযোগ নেই। সম্প্রতি ওই দেশীয় হেকিম আরেকটি অতি আশ্চার্য মলম আবিস্কার করেছেন।
এটার নাম আশ্চার্য নির্বাচনী মলম। এই মলম যে লাগাবে সে নির্বাচন করার জন্য উৎসাহিত হবে। সবচেয়ে মজার জিনিস হল, এই মলম লাগালে নাকি তার শুধু জনগণের সেবা করার ইচ্ছা জাগে। মন থেকে সকল কুরীপুর তাড়না দূর হয়। মানুষের সম্পদ হরনের লোভ দূর হয়।
দুর্নীতি করার লোভ দূর হয়। কালোবাজারি করার ইচ্ছা দূর হয়। হরতাল ডাকার বাসনা দূর হয়। গাড়িতে আগুন লাগানোর আকাঙ্খা দূর হয়। ককটেল ছোড়ার কামনা দূর হয়।
জালিয়াতী করার ইচ্ছা রহিত হয়। খুন-গুম করার বদমতলব তিরোহিত হয়। অবৈধ সম্পদ নিজের দখলে রাখার প্রচেষ্টা বিলুপ্ত হয়। জগতের সকল প্রাণীকে সুখি করার প্রবল ইচ্ছা হৃদয়ে জাগ্রত হয়। আর মানুষের সেবা করার জন্য অন্তরের অন্তস্থল শতভাগ পুলকিত হয়।
আমাদের ইকতারুলের দাদী স্বপ্নে এই মলমের আরো অনেক আশ্চার্য গুনের কথা শুনিয়াছেন। কিন্তু বয়সের ভারে তিনি স্বপ্নের সকল কথা মনে রাখতে পারেননি। তিনি শুধু একটা কথা মনে রাখতে পেরেছেন যে, দেশের সকল রাজনীতিবিদদের নাকি অতি সত্বর এই নির্বাচনী মলম লাগানো উচিত। যারা এই মলম না লাগিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে, ভবিষ্যতে তাদের সামনে নাকি মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। এই মলমের যারা বিরুদ্ধাচারণ করবে তাদের নাকি কণ্ঠ হারাতে পারে, চোখের জ্যোতি কমতে পারে, কাছের মানুষকে চিনতে অসুবিধা হতে পারে, আর অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
এই মলমের যারা পক্ষে থাকবে, তাদের নাকি উত্তরোত্তর মঙ্ঘল হবার, ইচ্ছা পূরণ হবার আর জীবনের সকল সাধ-ইচ্ছা পূরণ হবার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ।
কিন্তু ইকতারুলের দাদী এই স্বপ্ন বলার পর থেকেই নাকি দেশীয় সেই হেকিমকে পাকরাও করার জন্য সর্বত্র নানা ধরনের গুজন শোনা যাচ্ছে। প্রথমত কেউ জানে ওই হেকিম সাহেব কোথায় থাকেন। দ্বিতীয়ত ওই হেকিম সাহেব নাকি নিরাপত্তাহীনতার কথা ভেবে এখন গা ঢাকা দিয়েছেন। তৃতীয়ত বাঁশবাড়িয়ার বিপিন বিহারী বসু নাকি রামুতে বৌদ্ধ পল্লী ও পাবনার সাঁথিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার পর নিরাপত্তহীনতার কারণে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেছেন।
অনেকে বলছেন, তিনি হয়তো গয়া বা কাশি চলে গেছেন। একমাত্র বিপিন বিহারী বসু ওই দেশীয় হেকিমকে চেনেন বলে, হয়তো তার এই নিরুদ্দেশ যাত্রা। এখন ওই হেকিমমে খুঁজে না পাওয়া গেলে দেশের নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা নাকি দূর করা সম্ভব নয়।
টেলিভিশনে একদল বুদ্ধিজীবী রাত জেগে ওই হেকিমকে কিভাবে খুঁজে পাওয়া যায়, সে বিষয়ে নানান ফর্মূলা, সূত্র দিচ্ছেন। সরকারের পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগ ওই হেকিমকে খুঁজছেন।
নির্বাচন কমিশন ওই হেকিমকে সন্ধান করে দিতে পারলে নগদ পাঁচলাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। কেউ বলছেন ওই হেকিমকে সরকারের লোকজন লুকিয়ে রেখেছেন। কেউ বলছেন, ওই হেকিমকে বিরোধীদলীয় লোকজন নির্বাচনে না আসার জন্যই গুম করেছেন। কেউ বলছেন, ওই হেকিমের সঙ্গে এরশাদ সাহেব একবার হেলিকপ্টারে চড়েছিলেন। অবশ্য তখন তিনি নির্বাচনী দাওয়ার জন্য ওই হেকিমের কাছে যাননি।
তিনি গেছিলেন সন্তান লাভের আশায়। কেউ বলছেন, ওই হেকিম সারা দেশের মসজিদে মসজিদে ঘুরে বেড়ান। কেউ বলছেন ওই হেকিম সারা দেশের মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়ান। কেউ বলছেন, ওই হেকিমকে গির্জায় প্যাগোডায়ও দেখা গেছে। কেউ বলছেন, ওই হেকিম মাঝে মাঝে লালনের আকড়ায়ও যেতেন।
কেউ বলছেন ওই হেকিম সুন্দরবনে লুকিয়ে থাকেন। কেউ বলছেন ওই হেকিম পাবর্ত চট্টগ্রামের গহীন অরণ্যে লুকিয়ে থাকেন। কেউ বলছেন ওই হেকিম শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জঙ্গলে লুকিয়ে আছেন।
এখন ওই হেকিমকে খুঁজে পাওয়া না গেলে বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন কিভাবে হবে, তা আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না। কারণ, সবাই চায় আগে ওই হেকিমকে খুঁজে বের করা হোক।
তারপর সবাই তার কাছ থেকে নির্বাচনী আশ্চার্য মলম কিনবেন। তারপর একটি শান্তির নির্বাচন হবে। আর তারপর বাংলাদেশ থেকে সকল কলহ-বিবাদ, খুন-গুম, দুর্নীতি-লুটপাট, কালোবাজারি-চাঁদাবাজি, সম্পত্তি দখল, ভেজাল মিশ্রণ, সকল হানাহানি-রক্তপাত চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। সো, আগে ওই হেকিমকে খুঁজে বের না করা পর্যন্ত দেশের অশান্তি কিছুতেই দূর হবে না। দেশের সকল গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা ওই হেকিমের নানা ধরনের কল্পিত চেহারার বর্ণনা দিচ্ছেন।
যাতে দেশের জনসাধারণের ওই হেকিমকে খুঁজে পেতে সুবিধা হয়।
টুয়েন্টি ফোর নামে একটি প্রাইভেট এফএম রেডিও ওই হেকিমের নানা ধরণের বাণী প্রচার করছে সারাক্ষণ। এখন ওই হেকিমকে খুঁজে পেলেই বাংলাদেশের সকল অশান্তি দূর হবে। ঢাকার মার্কিন দূতাবাস আভাস দিয়েছে, আগে বিপিন বিহারী বসুকে খুঁজে বের করা হোক। তাহলে ওই হেকিমকে পেতে কোনো সমস্যা হবে না।
ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস বলছে, তারা শতভাগ নিশ্চিত বিপিন বিহারী বসু নামে কেউ ভারত সীমান্ত অতিক্রম করেনি। হেকিমকে না খুঁজে মার্কিনিরা একটি চক্রান্ত করার পায়তারা করছে। হেকিম বা বিপিন বিহারী বসু এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন ইস্যু। আমাদের সেখানে নাক গলানোর কোনো ইচ্ছে নেই। তবে আমরা বাংলাদেশকে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
ঢাকার চীন দূতাবাস বলছে, যদি ওই হেকিম অবৈধ ভিসা নিয়ে চীনের কোথাও লুকিয়ে থাকেন, তাহলে চীন এ ব্যাপারে তাকে খুঁজে দিতে যথাযথ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। ঢাকার সৌদি দূতাবাস বলছে, অনেক হেকিম কবিরাজ তো হজ্বের সময় আরব ভ্রমণ করেন। আপনাদের আরেকটু অপেক্ষা করা প্রয়োজন। হয়তো হজ্ব করে হেকিম সাহেব শীঘ্রই দেশে ফিরবেন। তখন আর সমস্যা থাকবে না।
তবে বাংলাদেশ চাইলে আমরা সকল বাংলাদেশী হাজীদের একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে পারি।
হেকিমকে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত দেশে শান্তি আসবে না। নির্বাচনী উৎসবও শুরু হবে না। আর হেকিমের ওই আশ্চার্য নির্বাচনী মলম না লাগাতে পারলে, যে কোনো উপায়ে করা কোনো নির্বাচন দেশের শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে না বলে কোনো কোনো জাতীয় দৈনিক সম্পাদকীয় মন্তব্য করছে। এখন আমরা ওই হেকিমের যতো দ্রুত সাক্ষাত পাবো ততো দ্রুতই বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দিকে রওনা দিতে পারবে।
ভাই, আপনারা ওই হেকিমকে সবাই একটু মন দিয়ে খোঁজেন। নইলে আর শান্তি নাই...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।