আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুটকিতে মেশানো হচ্ছে কীটনাশক । তাইলে আমার শুটকি ভরতা খাওয়ার কি হইব,কইতারি না

বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলের শুঁটকির দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খাবারের সঙ্গে একটু শুটকি না হলে যেন বাঙালির রসনা বিলাস পরিপূর্ণ হয় না। কিন্তু অনেকের কাছে লোভনীয় এ খাদ্যটি এখন আর নিরাপদ নয়। কারণ শুঁটকিতে ব্যবহার করা হচ্ছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক ও কীটনাশক। সুন্দরবন উপকূলের বিভিন্ন চরে এখন শুটকি উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে।

সুন্দরবনের সাগর উপকূলীয় এলাকার দুবলার চরসহ আশপাশের চরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রোদে শুকিয়ে চলছে শুটকি উৎপাদনের কাজ। প্রতি বছর শীতের শুরু থেকে রোদে মাছ শুকানোর কাজ শুরু হয়। যা চলে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত। শুটকি মহালগুলোতে এখন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ এ কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে শুটকি তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত মৎস্যজীবিরা জানান, সুন্দরবনের গহিণে সমুদ্র উপকূলীয় বিভিন্ন চরাঞ্চলে জেলেরা সাগর ও নদী থেকে ভোল কোড়াল, রূপসা, বাইন, ছুরি, লইটকা, পোয়া, ফাঁসা, তপসী, বৈরাগী, ফাইলসা, মধু ফাইলসা, সামুদ্রিক পুঁটি, চ্যালা, রিঠা, রামটেংরা, রূপচাঁদা, ছোটচান্দা, চান্দাকাটা, ছোট ও বড় চিংড়ি, ইলিশ, সোনাপাতা, বগ্নি, লক্কা, হাঙ্গর, শাপলাপাতা, চাপলী, খটক, শংকর, ম্যাদ, ধলসা (গাবের আঁটি), চেউয়া, চউক্ষা, মোচন, গাগড়া, কাঁচকি, তুলারডাডি, কাউয়া (কংকন), ভাটা, মোচন, ল্যাপা, সাইট্টাসহ আরো অনেক নাম না জানা মাছ শিকার করে প্রাকৃৃতিক উপায়ে শুঁটকিতে রূপান্তরিত করে।

দেশে-বিদেশে এ শুটকির রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দুবলার চরের শুঁটকি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম লাল জানান, শুঁটকি তৈরিতে এলাকার জেলেদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা। এমনকি সঠিকভাবে শুঁটকি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নেই কোনো হিমাগার এবং গুদামজাতকরণ ব্যবস্থাও। ফলে কিছুদিন মজুদ রাখার পরই গুণগত মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় জেলেরা পানির দরে শুঁটকি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। এ কারণে প্রতি বছরই তারা লোকসানের মুখে পড়ে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শুটকি মহালগুলোতে শুকাতে দেয়া কাঁচা মাছের গায়ে সাদা সাদা দানা। কাঁচা বা পঁচা মাছের স্বাভাবিক গন্ধও তাতে নেই। আশপাশে নেই কোনো মশা-মাছি। পরে জানা গেল, মাছের গায়ের সাদা দানাগুলো হলো কীটনাশক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শ্রমিক জানান, শুটকিতে যাতে পোকা না ধরে এবং রং যাতে কালচে না হয় সে জন্য তারা কীটনাশক ব্যবহার করেন।

জানা যায়, নিষিদ্ধ নগজ, ডিডিটি পাউডার ছাড়াও বাসুডিন, ফরমালিন, ডায়াজিননসহ নানা ধরনের বিষ ও কীটনাশক শুটকিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে অনেকের কাছে লোভনীয় এ খাদ্যটি এখন আর নিরাপদ নয়। এ ব্যাপারে মংলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’র চিকিৎসক ডা. তরুন কান্তি দাস জানান, বিষ ও কীটনাশক দেয়া শুটকি খেলে ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ পেটের নানা পীড়া হতে পারে। এতে যকৃৎ ও কিডনি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নানা ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

এ ছাড়া নারী-পুরুষ উভয়েই প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন। গর্ভবতী নারী বিষযুক্ত শুটকি খেলে তার সন্তান শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী অথবা বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে দুবলার চর জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ইনচার্জ ফরেষ্ট রেঞ্জার রফিকুল হক জানান, সুন্দরবনে উৎপাদিত শুটকিতে যাতে বিষ ও কীটনাশক ব্যবহার করা না হয় সে জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে শুটকি প্রক্রিয়া করণ শ্রমিক ও মৎস্যজীবিদের সচেতন করার লক্ষ্যে বন বিভাগ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।