আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জিয়াউর রহমানের আমলে-"সমুদ্রজয়ের" শুরু

১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে। আগে কেউ এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বলে সরকারি মহল থেকে যা প্রচার করা হচ্ছে তা আগামী নির্বাচনে ভোট পাওয়ার প্রপাগান্ডার অংশ হতে পারে, ইতিহাসের অংশ হতে পারে না। ১৯৭৭ সালের ২৩ মে থেকে ১৫ জুলাই নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সমুদ্র আইনবিষয়ক সম্মেলন হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে অ্যাডভোকেট জেনারেল ও পরে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার রিপোর্টে উল্লেখ আছে, 'বাংলাদেশ তখনই সমুদ্র আইনে ন্যায়পরায়ণতার সংশোধনী আনে।

ওই সম্মেলনে ১৯৭৭ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশের প্রস্তাবের ওপর ২৮টি দেশ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। সৌদি আরব, ইরান, বাহরাইন, তুরস্ক, সিরিয়া, বেলজিয়াম, রোমানিয়া, সোমালিয়া, মরক্কো, কাতার, সেনেগাল, আলজেরিয়া, ইয়েমেন, যুগোস্লাভিয়া, ফিলিপাইন, পাকিস্তানসহ ৫০টি দেশ বাংলাদেশের প্রস্তাব সমর্থন করে বলে ব্যারিস্টার মোস্তফা কামাল তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন। ভারত দুটি আপত্তি তোলে। মিয়ানমার হ্যাঁ-না কিছুই বলেনি। মোস্তফা কামাল আরও উল্লেখ করেন যে, জাতিসংঘের দ্বিতীয় কমিটির ওই অধিবেশনের চেয়ারম্যান ভেনেজুয়েলীয় আইনজীবী ও কূটনীতিক আন্দ্রেজ আগিয়রে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য ঝামেলা পাকাতে পণ করেছেন।

খসড়া আইনটি যখন প্রকাশ পেল তখন দেখা গেল তাতে বাংলাদেশের সংশোধনীটি নেই। ' তবে ১৯৮২ সালের আইনে ন্যায়পরায়ণতার বিধান টিকে যায়। এখনকার সমুদ্রজয়ের গল্প তারই ফল। বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট মিজানুর রহমান খান তার সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, '১৯৮২ সালের যে আইনটির অধীনে আমরা রায় পেলাম, সেটি তৈরির পর্বে বাংলাদেশ তাতে ন্যায়পরায়ণতা নীতি সংযোজনে ব্রতী হয়। কারণ সমদূরত্ব পদ্ধতিতে বাংলাদেশ সাগরে 'তালাবদ্ধ' হয়ে পড়ে।

তাই জিয়াউর রহমান সরকার সমুদ্রে তালা খোলার কূটনীতিতে যথার্থই মনোনিবেশ করেছিল। ' খালেদা জিয়ার সরকারের আমলেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০০২ সালের ৯ ডিসেম্বর বেগম জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মহিসোপানের দাবি ২০০৪ সালের মধ্যে জাতিসংঘে পেশ করার সঠিক একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নইলে স্থলভাগের দুই-তৃতীয়াংশের সমান সমুদ্রসীমা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে এ কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে ড. খন্দকার মোশাররফকে আহ্বায়ক করে তিনি ১৫ সদস্যের একটি কমিটিও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই কমিটি কোনো কাজই করেনি।

সেটা ছিল একটা অথর্ব ও ব্যর্থ কমিটি। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সে কাজটি করেছে। কাজেই মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণ বিরোধ নিষ্পত্তিতে বর্তমান সরকারের ভূমিকা ও কৃতিত্ব ছোট করে দেখা নেহাতই হীনম্মন্যতা। 'আমার বধূয়া আনবাড়ি যায় আমারই আঙ্গিনা দিয়া'_ এমতাবস্থায় মন খারাপ হতেই পারে। তবে এর সমুদয় কৃতিত্ব যারা ব্যক্তিবিশেষ বা দলবিশেষকে দিয়ে দিতে চাইছেন তারা ঠিক কাজ করছেন না।

বিএনপি নেতারা এ ব্যাপারে গত কদিনে যেসব নেতিবাচক কথাবার্তা বলেছেন, খালেদা জিয়ার উচিত সেসব কথায় কর্ণপাত না করে প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে শুরু হওয়া কাজটি বর্তমান সরকার সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেওয়া। ব্যারিস্টার মোস্তফা কামাল (সাবেক প্রধান বিচারপতি) এখনো বেঁচে আছেন। তার এই-সংক্রান্ত রিপোর্টটি সংগ্রহ করা কঠিন কিছু নয়। বিএনপি নেতাদের উচিত সে রিপোর্টটি 'অধ্যয়ন' করা এবং তার আলোকে 'সমুদ্রজয়' কাহিনীর ইনসাইড স্টোরিটা দেশবাসীকে অবহিত করা। বাস্তবতা হচ্ছে, ইটলসের রায়ে বাংলাদেশ লাভবান হয়েছে।

ইটলসে মিয়ানমারের এজেন্ট অ্যাটর্নি জেনারেল ড. তুন শিন গত ২২ মার্চ মিয়ানমারের জাতীয় সংসদে দেওয়া বিবৃতিতে তা স্বীকার করেছেন। তিনি তাতে বলেছেন, 'আদালত বাংলাদেশের উপকূলের ভৌগোলিক অবতলতা বিবেচনায় নিয়েছেন। তারা মিয়ানমার বা বাংলাদেশের দাবি করা সমুদ্র সীমারেখার কোনোটাই গ্রহণ করেনি। ড. শিন তথ্য দেন যে, বাংলাদেশ বেশি সমুদ্র এলাকা পেয়েছে। তার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ৬৯ হাজার ৭১৭ বর্গকিলোমিটার দাবি করেছিল।

ইটলসের সিদ্ধান্তের সীমারেখা অনুযায়ী তারা পেয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গকিলোমিটার_ যা ৪১ হাজার ৯১৪ বর্গকিলোমিটার বেশি' (নিউ লাইট অব মিয়ানমার, ২৩.০৩.২০১২)। কাজেই বাংলাদেশ কম পেয়েছে বলে ড. মোশাররফের অভিযোগটি তথ্যনির্ভর নয়। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চিহ্নিতকরণ বিরোধ নিষ্পত্তিতে শেখ হাসিনার বর্তমান সরকারের আমলে অর্জিত সাফল্য সমগ্র জাতিকে আনন্দে উদ্বেল করেছে। কিন্তু একে 'সমুদ্রজয়' হিসেবে প্রচার করে যেভাবে ক্ষমতাসীনরা উল্লাস করছেন তা থেকে কেউ এমন প্রশ্ন করতে পারেন যে, এই তো কিছুদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে ভারত ও বাংলাদেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা ও সমঝোতা অনুযায়ী এতদিন ভারতের দখলে থাকা কিছু ভূমি দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ পেয়েছে_ তাকে কি বাংলাদেশের ভারতীয় ভূখণ্ড জয় বলা হবে নাকি ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি বলা হবে? নিশ্চয়ই সীমান্ত বিরোধের নিষ্পত্তিই বলা হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়েও তাই হয়েছে।

যে অর্জন বাংলাদেশের সামনে সমুদ্র তলদেশের খনিজসম্পদ আহরণে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে 'সমুদ্রজয়ের' অতিকথনে তাকে বিবর্ণ করার কি প্রয়োজন? সুএ:http://www.bangladesh-pratidin.com/?view=details&type=gold&data=University&pub_no=701&cat_id=2&menu_id=8&news_type_id=1&index=0 কাজী সিরাজ লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট ই-মেইল . ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.