প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ গতকাল ছিল মুক্তিযোদ্ধা,সাবেক সেনা প্রধান, 'স্বৈরশাসক' এবং প্রায় চার বছরের জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান,বীর উত্তমের মৃত্যু বার্ষিকী। এদিন তাকে একটি ব্যর্থ ক্যু এর মধ্য দিয়ে হত্যা করার মাধ্যমে '৭৫ পরবর্তী খুনোখুনির আপাত অবসান ঘটে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে প্রায় ১৮ বছর চাকরী করার পর ৭১এ তিনি দেশে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন;সেক্টর কমান্ডার ছিলেন এবং লক্ষ্যনীয় যে, তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় জেড ফোর্স নামের আলাদা বাহিনি গঠন করেন। যার ফলশ্রুতিতে তৎকালীন সময়ে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তাজ উদ্দিন আহমেদের হস্তক্ষেপে এস ফোর্স ও ক ফোর্স গঠন করে পরিস্তিতি সামাল দেয়া হয়।
নতুবা কে বলতে পারে ঐ একগুঁয়েমি সিদ্দান্তের কারণে জাতিকে কি চরম মূল্যই না দিতে হত, যদি একজন তাজ উদ্দিন না থাকতেন।
মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধু শফিউল্লাহ কে সেনাপ্রধান বানালে তা মেনে নিতে পারেন নি তিনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে 'প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ' মদদ দিয়ে হয়তোবা তার প্রতিশোধই নিয়েছিলেন।
৭৫ এর নভেম্বরে নাট্যমঞ্চে পুনরায় আবির্ভাব ঘটে তাঁর। কর্নেল তাহের তাঁর সিপাহি জনতাকে নিয়ে ৭ নভেম্বর তাঁকে মুক্ত করেন, যা সিপাহি জনতার বিপ্লব নামে পরিচিত।
কিন্তু ক্ষমতার লোভে তাঁর ত্রাতা কর্নেল তাহেরকে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে ফাসি দিয়ে, তিনি তাঁর কণ্টকাকীর্ণ পথ একেবারে মসৃণ করে ফেলেন। তিনি শুধু তাহেরকে ঝুলিয়েই ক্ষান্ত দেন নি, কথিত ক্যু'র অভিযোগে একে একে ফাসি দিতে থাকেন হাজার হাজার সেনাবাহিনিকে(তাঁর এতই রক্তের পিপাসা!)
তারপর তিনি ক্ষমতায় এসে খাল কেটে, আর ফসলের মাঠে গিয়ে মানুষের মন জয় করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনা অতটা সহজ ছিল না বলে আস্তে আস্তে সবক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে থাকেন।
পরিশেষে আরেকটি ক্যুর মাধ্যমে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে নির্মমভাবে নিহত হলে, বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে একটি অত্যন্ত রহস্যজনক চরিত্রের সমাপ্তি ঘটে।
আমি উপরে তাঁর জীবন নিয়ে কিয়ত আলোকপাত করেছি মাত্র। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে 'দেয়াল' পড়ে দেখতে পারেন।
এখন আমার পোস্টের মুল জায়গায় আসি,
শুরুতেই কিছু প্রশ্নঃ
# বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়ার মুল্যায়ন কেমন?
#তিনি আদৌ স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন?
#তিনি কী স্বৈরচারী ছিলেন না?
#তাঁর জীবনের সবচে' বড় ভুল কিংবা ব্যর্থতা কী?
এই প্রশ্নগুলো আমাকে সবসময় নাড়া দেয়। তবে ইদানিং কয়েকটি প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি হাইকোর্টের পুর্নাঙ্গ রায়ে জিয়াকে কর্নেল তাহেরের খুনি হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে, এবং তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
ফখরুদ্দীনের আমলে আরেকটি রায়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে রায় দেয়া হয়েছে। তার মানে হল, এখন জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা স্পষ্টত আদালত অবমাননা।
কিন্তু হাস্যকর বিষয় হল, প্রত্যহ বিএনপির নেতা এবং মিডিয়া তাঁকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে বেড়াচ্ছে, সেদিকে আদালতের একটুও দৃষ্টি পড়ে না।
আবারো প্রথম প্রশ্নে ফিরে যাওয়া যাক, বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়া যতটুকু মুক্তিযুদ্ধে অবদানের কারণে স্মরিত হবেন তার চেয়ে অনেকগুন বেশি স্মৃত হবেন একজন অবৈধ,অসাংবিধানিক,স্বৈরাচারী,এবং খুনি হিসেবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।