বাংলাদেশের ইতিহাস অনুসারে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির নাম বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকারের সদস্যরা শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। যদিও তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ছিলেন না। শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলামের নাম ঘোষণা করে অস্থায়ী সরকার। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান।
দায়িত্বগ্রহণের দু'দিনের মাথায় ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার গঠন করেন তিনি। শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। এই বিবেচনায় শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপরি হলেও তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন।
কিন্তু এর বিপরীতে ১৯৭৮ সালের ৩০ মে গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। গণভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘটনা ওই বারই প্রথম ঘটেছিল।
এই বিবেচনায় বিএনপি বলছে জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের ভোটে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি। বিএনপি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিবেচনা থেকেই জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করে তারেক-খালেদা জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়েছেন বলে সমালোচনা করেছেন অনেকেই। কিন্তু যে যুক্তি থেকে বিএনপি এই দাবি করছে তা সামনে আনছেন না কেউই।
কারণ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মত সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ।
নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সংসদে চতুর্থ সংশোধনী বিল পাশ হয়। নির্বাচনে বিজয়ী এই বৈধ সরকারের সদস্যরা শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করে। দেশে জারি করা হয় জরুরী অবস্থা।
নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অনুমোদনের মাধ্যমে সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ নামের রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। সংক্ষেপে যার নাম দেওয়া হয়, বাকশাল। বাকশাল থেকে প্রত্যন্ত জনসাধারণ, কৃষক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদেই আসীন ছিলেন।
বাংলাদেশের ইতিহাস বলে, জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সপ্তম রাষ্ট্রপতি। তার আগে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আরো ছয় ব্যক্তি। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির নাম শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিকালীন অস্থায়ী সরকান গঠনের দিন ১১ এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
১০ই এপ্রিল ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেই হিসেবে তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পাকিস্তানের কারাগার থেকে দেশে ফিরে এসে অন্তবর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিনের মধ্যে ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি শাসন পদ্ধতি ভেঙ্গে দেন শেখ মুজিবুর রহমান। সংসদীয় শাসনকাঠামো প্রবর্তন করে নতুন মন্ত্রীপরিষদ গঠন করেন তিনি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার জন্য নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের নিয়েই নতুন রাষ্ট্রের প্রথম সংসদ গঠন করেন তিনি।
নতুন এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ মুজিবুর রহমান। আগেই বলেছি যদিও স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম গণতান্ত্রিক সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভ করে সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন শেখ মুজিবুর রহমান।
বাকশাল গঠন ও শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন রাষ্ট্রপতি ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন আবু সাঈদ চৌধুরী ও মোহাম্মদ উল্লাহ।
আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগের পর তিনি জেনেভায় বাংলাদেশের বিশেষ দূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আবু সাঈদের পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পান মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে খুন হন শেখ মুজিবর রহমান।
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেন মোশতাক আহমেদ। এই পদে তিনি মাত্র ৮৩ দিন আসীন ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর সেনাবিদ্রোহের দ্বারা অপসারিত হন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের আলোচিত-সমালোচিত চরিত্র মোশতাক আহমেদ।
মোশতাক আহমেদের অপসারণের পর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ও ৬ নভেম্বর এর সামরিক অভ্যুত্থানের পর বিচাপতি সায়েমকে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৭৬ সালের ২৯ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন তিনি। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল দুর্বল স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতির পদ ছাড়েন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম প্রধান বিচারপতি।
এর পরেই বাংলাদেশের ক্ষমতা দৃশ্যপটে আবির্ভাব ঘটে জিয়াউর রহমানের। আবু সাদাত সায়েমের পদত্যাগের পর ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন জিয়া। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়া দেশে আবার গণতন্ত্রায়ণের উদ্যোগ নেন।
তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র চালুর সিদ্ধান্ত নেন। ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের। নির্বাচনে হ্যাঁ-না ভোটের আয়োজন করেন তিনি। জিয়াউর রহমান মে মাসে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা এবং আস্থা যাচাইয়ের জন্য ৩০শে মে গণভোট আয়োজন করেন। ‘হাঁ-না’ সূচক ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভ করেন তিনি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত জনগণের ভোটের দ্বারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন জিয়াউর রহমান। খুন হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বেই ছিলেন।
জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ঘোষণার পিছনে আরো একটি বিষয় কাজ করতে পারে বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যে। বিএনপির নেতৃত্বের মনে শঙ্কা থাকতে পারে, ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারির মত বর্তমানে নির্বাচিত দশম সংসদের সদস্যরা সংবিধান পরিবর্তন করে শেখ হাসিনাকে আজীবনের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করতে পারে। আর বর্তমানের এই সংসদ যদি তেমন কোন কিছু করে তবে তা মেনে নেবে না বিএনপি।
বিএনপির নেতৃত্ব জিয়া জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দাবি করার মাধ্যমে সরকারকে সেই বার্তাই দিতে চেয়েছে। (সংগ্রহ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।