আমরা অনেকেই জানি, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ এবং অনেক আগেই দেশটি বিশ্বের অন্যতম 'সমৃদ্ধ দেশ' হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারত। কী নেই আমাদের দেশে? আমাদের সবুজ মাঠে সোনা ফলে। মাটির নিচে মূল্যবান গ্যাস ও বেতল সম্পদে ভরপুর। সাগরে নানান জাতের মাছের প্রাচুর্য। আমাদের সোনার ছেলেরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশে পাঠায়।
জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বুদ্ধি চর্চায় বিশ্বের নানান স্থান থেকে স্বীকৃতি ছিনিয়ে আনতেও আমাদের তরুণ-তরুণীরা পিছিয়ে নেই। বুড়োরাও কিন্তু সে হিসেবে বাড়ন্ত। আমাদের দেশের সোনার ছেলেরা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে। এমন নজির বিশ্বে আর কোথায়ও নেই। এ দেশের মানুষ অস্ত্র ধরে দেশ স্বাধীন করেছে।
গত ৪১ বছরে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে আসন করে নিয়েছে। মাথাপিছু স্বল্প আয়ের বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ হয়েও কীভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যায় সেটা প্রমাণ করেছে। মানব উন্নয়ন সূচকেও অধিকাংশ দক্ষিণ এশীয় দেশকে পেছনে ফেলে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় সেটা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। ৪১ বছর সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশ ২৩ বছর অতিক্রম করছে সংসদীয় গণতন্ত্রের অধীনে। বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা জলজাহাজ তৈরি করে বিদেশে রপ্তানির মতো দুঃসাহসিক কাজও করতে পেরেছে।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ভারতের অমর্ত্য সেনও গত ২০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বেশি সম্পদশালী হয়েছে। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় অর্ধেকের কম হওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ সামাজিক সূচকে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ...। বাংলাদেশ বর্তমানে মাতৃ মৃত্যুর হার কমার ক্ষেত্রেও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আমাদের জনগোষ্ঠী এখন আগের চেয়ে গড়ে বেশিদিন বাঁচে।
আর সে কারণে সরকারি চাকরিতে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৯ বছর করা হয়েছে। ইউএনডিপির 'মানব উন্নয়ন সূচক' অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল এখন ৬৮ বছর ৯ মাস, যা ১৯৯০ সালে ছিল ৫৫ বছর ২ মাস। বাংলাদেশ সত্তরের দশকে পুরোপুরি সাহায্যনির্ভর দেশ ছিল। এটা আশির দশকে আরো বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক সাহায্য জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ।
অথচ রপ্তানি আয় বেড়ে হয়েছে ১৮ এবং রেমিটেন্স প্রায় ৯ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশ এগোচ্ছে। মাত্র ৪ মাস আগে গত ১ ডিসেম্বর দুর্নীতি বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা ও জরিপে নিয়োজিত সংস্থা 'ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল' ২০১১ সালের যে দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ করেছে তাতে ০ থেকে ১০-এর স্কেলে ২ দশমিক ৭ পেয়ে বাংলাদেশ ১৮৩টি দেশের মধ্যে ১২০তম স্থান পেয়েছে। তালিকার নিম্নক্রম অনুযায়ী এটি ত্রয়োদশ স্থান। পূর্ববর্তী বছরে এই অবস্থান ছিল স্বাদশ।
বর্তমানে বাংলাদেশের স্কোর ৩-এর চেয়ে কম। অনেকে বিশ্বাস করেন, খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশের পক্ষে ৫-এর ঊর্ধ্বে স্কোর অর্জন করতে পারাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।
১৯৭৯-৮০ সময়ে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল গড়ে মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের ১০ বছর জিডিপি বেড়েছে ৫ শতাংশ হারে। পরবর্তীতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছাড়িয়ে গেছে ৬ শতাংশ।
সর্বশেষ প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। স্বাধীনতার পরের বছর (১৯৭২) দেশের অর্থনীতি ছিল ৯৮৫ কোটি টাকার। এখন সেটা উন্নীত হয়েছে ৭ লাখ ৮৭ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায়। স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থবছরে (১৯৭২-৭৩) বাংলাদেশে রাজস্ব আয় হয়েছিল মাত্র ২৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, আর রাজস্ব ব্যয় ছিল ২১৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আর এখন তা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৮ হাজার ৩৮৫ টাকা এবং ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
আরেকটু গভীরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেই আমাদের সম্ভাবনাময় দেশের অগ্রগতির অবস্থা আঁচ করা যায়। ১৯৭২ সালে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৬৭১ টাকাথ এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ২৩৬ টাকা। আর ডলারের হিসেবে ৫ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জাতীয় আয় যেখানে ছিল ৪৭৬ ডলার এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫৫ ডলারে। অর্থাৎ সব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াতে পারে 'উদীয়মান অর্থনীতির দেশ' হিসেবে। ঘোচাতে পারে 'স্বল্পোন্নত দেশ' বা 'এলডিসি' নামের কলঙ্ক।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডাবিস্নউটিও) মহাপরিচালক প্যাসকেল লামিও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কাক্সিক্ষত সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য এখন শুধু সামান্য দু'একটি পদক্ষেপ গ্রহণই বাকি আছে আমাদের। সম্প্রতি মায়ানমারের সাথে আমাদের সমুদ্র জয়ের ব্যাপারটি বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট অর্জন।
আমরা অপেক্ষা করছি ভারতের সাথে রায়ের ব্যাপারেও। সেই সাথে সমুদ্রের নীচে থাকা অপার সম্পদও বাংলাদেশকে এনে দিবে সমৃদ্ধির বাংলাদেশ, এই আশাবাদ রাখি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।