আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সমৃদ্ধির পথে চীন বন্ধু চায় ভারতকে



সমৃদ্ধির পথে চীন বন্ধু চায় ভারতকে গণ সাধারণতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠার ৬০তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। চীনের অগ্রগতির সঙ্গেই ভারত-চীন সম্পর্কেরও বিকাশ ঘটছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে মূল্যবান মনে করে চীন। লিখেছেন ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাঙ ইয়ান । গণসাধারণতন্ত্রী চীনের ৬০ বছর হলো এই অক্টোবরে।

ষাট বছর আগের ১লা অক্টোবর চীনের জনগণের জীবনে ঐতিহাসিক মোড় ঘোরার দিন ছিলো। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গভীর পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। এই ৬০বছরে দেশের মধ্যে ও বাইরে চীন বহু প্রতিকূলতা অতিক্রম করেছে অথচ বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটিয়েছে। চীনের সার্বিক জাতীয় শক্তি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে, জনগণের জীবনমান দৃশ্যতই পালটে গেছে, চীনের আন্তর্জাতিক প্রভাব ও মর্যাদা যে মাত্রায় পৌঁছেছে তা আধুনিক চীনের ইতিহাসে কখনও দেখা যায়নি। অর্থনৈতিক সাফল্য নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া গিয়েছিল বিধ্বস্ত অর্থনীতি, পশ্চাদপদ শিল্পভিত্তি।

৬০ বছরের অবিরাম প্রচেষ্টায়, বিশেষত সংস্কার পর্ব শুরু হবার পর চীন দ্রুত এবং ধারাবাহিক অর্থনৈতিক বিকাশের সাক্ষী। এক সময় চীন ছিলো কৃষি অর্থনীতি। ধীরে ধীরে এখন সার্বিক ও ভারসাম্যের অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে চীনের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জি ডি পি) ছিলো ২১৬৫০ কোটি ডলার; ২০০৮-এ তা দাঁড়িয়েছে ৪লক্ষ ৪০ হাজার কোটি ডলার। বার্ষিক গড় বৃদ্ধি ৯.৮% হারে।

চীন আজ পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। মাথাপিছু জি ডি পি’র পরিমাণ ২০০৮-এ পৌঁছেছে ২৭৭০ ডলারে। বৈদেশিক বাণিজ্যে চীন বিশ্ব তৃতীয়। ২০০৮-এ বিশ্ব বাণিজ্যের বৃদ্ধির ৯%-ই চীনের। চীনেরই বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি।

শিল্পপণ্য, কৃষিপণ্য, পরিষেবা তিন ক্ষেত্রেই চীন আজ অন্যতম প্রধান উৎপাদক। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশের চাহিদা চীন একাই পূরণ করছে। বিশ্বজোড়া অর্থনৈতিক সঙ্কটের প্রভাব চীনে বেশ ভালোভাবেই পড়েছে, এতদসত্ত্বেও চীন স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে এবং চলতি বছরে ৮% বৃদ্ধির হার রক্ষা করতে পারবে। জাতীয় ঐক্য ৫৬ জাতিগোষ্ঠীর চীন রাজনীতি,অর্থনীতি, শিক্ষা,সংস্কৃতি,ধর্ম সব বিষয়েই সব জনগোষ্ঠীর সমান বিকাশের নীতি নিয়ে চলে। মোট জনসংখ্যার ৮শতাংশ জনগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘু।

চীনের বৃহৎ পরিবারে তারা ঐক্য, সমসুযোগ, অভিন্ন সমৃদ্ধির অংশীদার। জনগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘুদের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের কাঠামোর মাধ্যমে তাদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত। এইসব অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিকাশ জাতীয় গড়কে ছাড়িয়ে গেছে। ১৯৯৭-তে হঙকঙ, ১৯৯৯-তে ম্যাকাও মাতৃভূমিতে ফিরে আসায় চীনের মানুষের শতাব্দীব্যাপী স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে। তাইওয়ান প্রণালীর দুধারের মধ্য সম্পর্কের উন্নতি ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ে।

সুসমন্বিত দেশ গঠনের কাজে চীন জাতীয় ঐক্য রক্ষায় এগিয়ে যাবেই। সামাজিক প্রগতি চীনের অর্থনীতির দ্রুত বিকাশের ফলে চীনের জনগণের জীবনধারণের মানের প্রভূত উন্নতি ঘটেছে। ১৯৭৮-এ শহরের বাসিন্দাদের ব্যয়যোগ্য বার্ষিক মাথাপিছু আয় ছিলো ৩৪৩.৪ ইউয়ান; ২০০৮-এ হয়েছে ১৫,০০০ ইউয়ান। গ্রামের বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে ১৩৩.৬ ইউয়ান থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭৬১ ইউয়ান। ১৯৪৯-র আগে চীনের জনগণের গড় আয়ু ছিলো ৩৫ বছর, এখন ৭৩।

গত তিরিশ বছরে দারিদ্র্যরেখার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ২৫কোটি থেকে দেড় কোটিতে নেমে এসেছে। চীনের সাধারণ পরিবারে এখন অটোমোবাইল, ক্রমশ বেশি বেশি মানুষ থাকছেন নিজের বাড়িতে। ২০০৮-এ ৬০ কোটি মানুষ মোবাইল ফোনের গ্রাহক। গড়ে চীনের পরিবারের জীবনমানের পরিবর্তনের একটি উদাহরণ হলো ‘চার বড় জিনিসের’ সংজ্ঞার বদল ঘটেছে। ১৯৭০-র দশকেও চার বড় জিনিস বলতো বোঝানো হতো বাইসাইকেল, সেলাই মেশিন, রেডিও, ঘড়ি।

এখন বোঝানো হয় এয়ার কন্ডিশনার, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, গাড়ি অথবা বাড়ি। দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে চীন পরিণত হয়েছে স্বচ্ছল সমাজে। চীন দৃঢ়তার সঙ্গে এগোচ্ছে ২০২০ –তে সমস্ত দিক থেকে মোটামুটি সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের লক্ষ্যের দিকে। বিজ্ঞান- প্রযুক্তির উন্নতি গত ৬০ বছরে চীনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নজিরবিহীন উন্নতি হয়েছে। এক সময়ে ঘোড়ার খুড়ের নাল পর্যন্ত বিদেশ থেকে কিনতে হতো।

এখন চীন হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘বিশ্বের কারখানা’; গাড়ি, দ্রুতগামী ট্রেন, বিমান সবই তৈরি করছে। ১৯৭০-এ প্রথম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ হয়েছিল। তারপর থেকে চীন একের পর এক উপগ্রহ ও মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেচে, তার মধ্যে তিনটিতে মহাকাশচারীরাও ছিলেন। তাঁরা মহাকাশে হেঁটে চীনের পদচিহ্ন রেখে এসৃছেন। চীনের প্রথম চাঁদের লক্ষ্যে পাঠানো ‘চাঙ ই-১’ সফল হয়েছে।

চীন বানিয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম বাঁধ থ্রি জর্জেস ড্যাম, পৃথিবীর উচ্চতম রেলপথ চিঙহাই-তিব্বত রেলওয়ে, সমুদ্রের ওপরে দীর্ঘতম সেতু হাঙঝোউ বে ব্রিজ। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সরকার শিক্ষা ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে প্রচুর পরমাণ বিনিয়োগ করেছে। লক্ষ্য হলো চীন যেন ২০২০-তে উদ্ভাবনী শক্তিতে অনেক এগিয়ে যায়। চীনকে এক সময়ে বলা হতো ‘এশিয়ার রুগ্‌ণ মানব’। ২০০৮-এ ওলিম্পিকের সময়ে চীন প্রমাণ করেছে সে আজ আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে।

২০১০-এ সাংহাইয়ে হবে ওয়ার্ল্ড এক্সপো; চীন, ভারত-সহ অন্যান্য দেশগুলি আজকের দুনিয়ার নতুন প্রযুক্তি দেখানোর দারুণ সুযোগ পাবে সেখানে। শান্তির স্বাধীন বিদেশনীতি চীন শান্তির স্বাধীন বিদেশনীতি নিয়ে চলছে। সমস্ত দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও পরস্পরের পক্ষে উপকারী সহযোগিতার বিকাশ ঘটাতে চীন দায়বদ্ধ। এই সম্পর্কের ভিত্তি হলো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পঞ্চশীল নীতি। বর্তমানে চীনের সঙ্গে ১৭১ দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে।

রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চীন আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীতে ক্রমাগত বর্ধিত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। চীন আপেক, সাংহাই সহযোগিতা সংগঠন, আসিয়ান+৩, জি-২০’র মতো সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ও সক্রিয় সদস্য। বিভিন্ন অঞ্চলের দেশগুলির সঙ্গে চীন বিভিন্ন মঞ্চের মাধ্যমে সক্রিয় সহযোগিতার সম্পর্কে গড়ে তুলেছে, যেমন চীন-আফ্রিকা ফোরাম, চীন-আরব সহযোগিতা ফোরাম, চীন-লাতিন আমেরিকা ফোরাম। ৩০টিরও বেশি দেশ ও আঞ্চলিক সংগঠনের সঙ্গে চীন স্ট্র্যাটেজিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে। এর মধ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারতের মতো দেশও আছে।

আবহাওয়া পরিবর্তন, আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থার সংস্কার, পরমাণু প্রসাররোধ, সন্ত্রাসবাদ-বিরোধিতা ইত্যাদির মতো বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে চীন। শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথ অবিচলভাবে অনুসরণ করবে চীন। স্থায়ী শান্তি ও অভিন্ন সমৃদ্ধির এক বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে চীন আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে কাজ করে যাবে। চীন-ভারত সম্পর্ক গত ৬০বছর চীন-ভারত সম্পর্ক বিপুল পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। নিকট প্রতিবেশী হিসেবে ২হাজার বছরের দীর্ঘ ইতিহাসের অধিকাংশ সময়ে চীন ও ভারতের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিলো।

বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিময়, পারস্পরিক প্রভাব ও অনুপ্রেরণা ছিলো এই সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনতার সংগ্রামে উভয়েই পরস্পরকে সমর্থন করেছে। ১৯৫০-র দশকে চীন ও ভারত বিখ্যাত পঞ্চশীল নীতি তৈরি করে যা আজও আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত নির্দেশক নীতি। দু’দেশের জনগণের হৃদয়ে গভীরভাবে প্রোথিত রয়েছে ‘হিন্দি-চীনী ভাই ভাই’ পর্ব। ১৯৮৮সালে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী চীন সফরে যাওয়ার পরে ভারত-চীন সম্পর্ক গতি পেতে শুরু করে।

একবিংশ শতাব্দীতে ঢুকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দ্রুত বিকশিত হতে থাকে। ২০০৩ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী চীন সফর করেন এবং দু’দেশ দীর্ঘমেয়াদী গঠনমূলক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়। ২০০৫ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবাওয়ের ভারত সফরের সময়ে দু’দেশ শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য স্ট্র্যাটেজিক ও সহযোগিতার অংশীদারিত্বের সমঝোতা গড়ে তোলে। ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি হু জিনতাও ভারত সফরে আসেন, তখন ভারত ও চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসারে ‘দশ দফা কর্মসূচী’ তৈরি করে। ২০০৮-র জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং চীন সফরে যান।

চীন ও ভারতের মধ্যে ‘একবিংশ শতাব্দীর জন্য দৃষ্টিভঙ্গি’ স্বাক্ষরিত হবার ফলে দু’দেশ চীন-ভারত স্ট্র্যাটেজিক সহযোগিতার অগ্রগতির মাধ্যমে স্থায়ী শান্তি ও অভিন্ন সমৃদ্ধির সমন্বয়ের বিশ্ব গঠনের চেষ্টা চালানোর অঙ্গীকার করে। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ওলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। সম্প্রতি চীনের স্টেট কাউন্সিলর দাই বিঙগুয়ো ভারতে আসেন। সীমান্ত প্রশ্নে বিশেষ প্রতিনিধিদের বৈঠকের ১৩তম রাউন্ডে তিনি ও ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম কে নারায়ণন আলোচনা করেছেন। ভবিষ্যতে উচ্চ পর্যায়ের আরো আলোচনার প্রত্যাশা করছে দু’দেশই।

চীনের রাষ্ট্রপতি ভারতের রাষ্ট্রপতিকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সাংসদ ও রাজনৈতিক দলগুলির যোগাযোগ ও মতবিনিময় অব্যাহত থাকবে। চীন ও ভারত হলো দুই সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতা দু’দেশের পক্ষেই লাভজনক হয়েছে। ২০০৩ থেকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বার্ষিক ৩০% হারে বাড়ছে।

২০০৮ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৫১৭০কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রা হলো ২০১০-এ ৬০০০কোটি ডলার। ২০০৮-এ ভারত থেকে চীনে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে ২৯কোটি ৫০ লক্ষ ডলার; চীন থেকে ভারতে এসেছে ৯কোটি ৭লক্ষ ডলার বিনিয়োগ। আজ শতাধিক ভারতীয় কোম্পানি এবং চীনের ৬০টির বেশি কোম্পানি উভয় দেশে প্রজেক্ট অফিস বা সহযোগী সংস্থা খুলেছে। দু’দেশের মানুষের উপকারে লেগেছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা।

অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিনিময় ও সহযোগিতা দ্রুত বাড়ছে। ২০০৭-এ চীনে এবং ২০০৮-এ ভারতে দু’দেশ সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী যৌথ প্রশিক্ষণ নিয়েছে। পাশাপাশি দু’দেশের সামরিক বাহিনী যৌথ বিনিময় করেছে। ২০০৮-এর ডিসেম্বরে ভারতে এসেছিলেন চীনের নৌ-প্রধান উ শেঙলি, এ-বছর ভারতের নৌ-প্রধান সুরেশ মেহতা এবং ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ চীনের নৌ বাহিনীর ৬০তম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। সাংস্কৃতিক ও পর্যটন ক্ষেত্রে বিনিময় দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।

বছরে ৫লক্ষ লোক এখন যাতায়াত করছেন। ২০০৭ থেকে ১০০ সদস্যের যুব প্রতিনিধি একে অপরের দেশে সফর করছেন। চলবে ২০১১ পর্যন্ত। সামনের বছর পালিত হবে ‘ভারত উৎসব’ ও ‘চীন উৎসব’। একই সঙ্গে উৎসাহব্যঞ্জক হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিনিময় বাড়ছে।

তার মধ্যে কৃষি, জৈব-প্রযুক্তি, রসায়ন, ওষুধ, ইলেকট্রনিক আছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারত ও চীনের অনেক কিছুরই মিল আছে। বাণিজ্য, আবহাওয়া পরিবর্তন, পরিবেশ, শক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা, বিশ্ব আর্থিক সঙ্কট, সন্ত্রাসবাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দু’দেশ ঘনিষ্ঠ আলোচনা, সমন্বয় করে চলে। উন্নয়নশীল দেশগুলির অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার কাজে এবং ন্যায্য, যুক্তিসঙ্গত, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক কাঠামো গড়ে তোলার কাজে দু’দেশই দায়বদ্ধ। জি-২০’র শীর্ষ বৈঠকে চীন ও ভারত একসঙ্গে ভূমিকা পালন করেছে এবং ইতিবাচক ফলাফলে পৌঁছোতে সাহায্য করেছে।

আসিয়ান শীর্ষ বৈঠক, এ আর এফ, চীন-ভারত-রাশিয়া ত্রিপাক্ষিক আলোচনা, ব্রিক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামে চীন ও ভারত সমন্বয় ও সহযোগিতা বজায় রেখেই চলছে। চীন সার্কের পর্যবেক্ষক হয়েছে। আমাদের সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর আরো সুযোগ রয়েছে। আমরা সচেতন যে সীমান্ত প্রশ্নের এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। সীমান্ত প্রশ্নে বিশেষ প্রতিনিধির কাঠামো গড়ে তোলা গেছে এবং আলোচনার মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত, যুক্তিসঙ্গত, উভয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে এই প্রশ্নের সমাধানে উভয়েই অঙ্গীকারবদ্ধ।

চূড়ান্ত নিষ্পত্তি সাপেক্ষে উভয় দেশই সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একমত। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পথে সীমান্ত সমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, তা উভয়েই নিশ্চিত করার ব্যাপারেও দায়বদ্ধ। বাণিজ্যের প্রশ্নে উভয় দেশেরই প্রচুর সম্ভাবনা রয়ে গেছে। আমাদের বাণিজ্যের বৈচিত্র্যকরণ ঘটানো, প্রসারিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন পণ্যের দিকে যেতে হবে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পণ্যের মিশ্রণ ও বাণিজ্য ভারসাম্যের দিকে যেতে হবে যাতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ধারাবাহিক বিকাশ ঘটতে পারে।

রাশিয়ার ইয়েক্যাটারিনবার্গে তাঁদের সাম্প্রতিক বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রপতি হু জিনতাও বলেছেন, ভারত চীনের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। চীন দৃঢ় ও দ্বিধাহীন ভাবে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক, প্রতিবেশীসুলভ সহযোগিতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন ভারত চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে এবং অতীতে অর্জিত অগ্রগতির ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। চীন ও ভারত উভয়ের উন্নয়নের জন্য পৃথিবীতে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। উভয় নেতার এই দুরদর্শী ও ইতিবাচক চিন্তার ভিত্তিতে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে ভারত-চীন সম্পর্কের আরও অগ্রগতি ঘটবে।

যতক্ষণ পারস্পরিক আস্থাকে ক্রমশ বাড়িয়ে যেতে পারবো, অর্থনৈতিক সংমিশ্রণকে প্রসারিত করতে পারবো, সংবেদনশীল প্রশ্নগুলিকে যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারবো ততক্ষণ আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বাস্থ্যকর ও স্থিতিশীল বিকাশকে নিশ্চিত করতে পারবো। ৬০ বছরে চীনের সাফল্য সত্ত্বেও আমরা উপলব্ধি করি পৃথিবীর বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হিসেবে সমৃদ্ধির সমাজ গঠনের পথে আমাদের আরো অনেক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হবে। চীনের বৈশিষ্ট্য অনুসারে সমাজতন্ত্র গঠনের পথে আমরা দৃঢ় থাকবো, সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি অনুসরণ করে চলবো, শান্তির স্বাধীন বিদেশনীতিকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরবো, বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নকে সাহায্য করবো। একই সঙ্গে চীন-ভারত সম্পর্ক আরো গভীর করার নীতি অব্যাহত থাকবে। সামনের বছর চীন ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৬০ বছর পালিত হবে।

উভয়ের সহযোগিতা ও দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হতে থাকবে। দুই প্রাচীন সভ্যতা ভারত ও চীন বিশ্বকে অনেক কিছু দিয়েছে। বিশ্বের শান্তি ও উন্নয়নে নতুন অবদান রাখতে আমরা উভয় দেশই সক্ষম হবো।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।