জীবনের নতুন বাঁক। গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে দুই ছাত্র নিহত হন। শিবিরের দাবি অনুযায়ী নিহত দুই ছাত্রই তাদের সংগঠনের নেতাকর্মী। নিহত দুই ছাত্র যে দলেরই হোক না কেন, যে মতাদর্শেরই হোক না কেন এমন মৃত্যু আসলে কারও কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে যদি লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় এর চেয়ে মর্মন্তুদ ঘটনা আর কী হতে পারে! এ ঘটনার পর ৩৮ দিন বন্ধ ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
এরপর ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয় ১৮ মার্চ। এর আগে ১৬ মার্চ খুলে দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল। আবাসিক হল খোলার দিনই সৃষ্টি হয় আরেক সমস্যা। ওইদিনই শাহ আমানত হলে ওঠাকে কেন্দ্র করে বিবদমান দুই ছাত্র সংগঠন মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সংঘর্ষের উপক্রম হলে কর্তৃপক্ষ এক পর্যায়ে হল সিলগালা করে দেয়।
পরে আমানত হল বন্ধ রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খোলা কিন্তু আবাসিক হল বন্ধ_ এ ঘটনাও বোধহয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম! শাহ আমানত হল বন্ধ থাকায় এ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বন্ধু-বান্ধবের মেসে এক রকম উদ্বাস্তু হয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে এ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের।
এদিকে শাহ আমানত হলের ঘটনার পরপরই শিবির অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রায় ১০ দিন হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় এক প্রকার অচল হয়ে রয়েছে।
যদিও শিবিরের ধর্মঘট ডাকা সত্ত্বেও শাটল ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো বিভাগে ক্লাসও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক অবস্থা এখনও ফিরে আসেনি। এখনও অনেকের ভেতর কাজ করছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা।
এদিকে শিবির নানা উপায়ে তাদের ধর্মঘটকে সফল করার চেষ্টা করছে। কখনও কখনও তারা অনুষদগুলোতে তালা মেরে দিচ্ছে। ঝটিকা মিছিল করছে। শাটল ট্রেন যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করছে। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিবিরের এ ধরনের কার্যক্রম ব্যর্থ করে দিতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রায় বিশ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন এখন অনিশ্চয়তার মুখে। অনেক বিভাগে পরীক্ষা শুরু হয়েছে কিংবা হবে হবে এমন মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সেশনজটে খাবি খাচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সামনে বিসিএস কিংবা আরও অনেক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। সে পরীক্ষা ভালো করে দিতে পারবে কি-না এমন চিন্তায় শিক্ষার্থীদের ঘুম হারাম হওয়ার জোগাড়।
এ অবস্থা কি অনন্ত সময় ধরে চলতে থাকবে? এ অবস্থা উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কি কিছুই করার নেই? পুলিশ দিয়ে ভরে ফেললেই কি ক্যাম্পাসে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে? এখন এ প্রশ্নগুলোই সবার মুখে মুখে।
এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমস্যা আবর্তিত হয়েছে মূলত শাহ আমানত হলকে কেন্দ্র করে। দুটি ছাত্র সংগঠনই তাদের দখলে রাখতে চায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় এ আবাসিক হলটি। এটা তো কোনো ন্যায্য দাবি হতে পারে না। যারা হলের বৈধ ছাত্র তারাই হলে থাকার অধিকার রাখে, এটা স্বতঃসিদ্ধ।
কিন্তু ঘুণে ধরা অসুস্থ ছাত্র রাজনীতি কেন যেন এ স্বতঃসিদ্ধ বিষয়টিকে অশুদ্ধ করে দিতে চাইছে।
শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের জন্য ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরি। শুধু শিক্ষার্থী নয়, ক্যাম্পাসের একজন চায়ের দোকানদার থেকে শুরু করে উপাচার্য_ সবার কার্যক্রম ঠিকমতো চলার জন্য ক্যাম্পাস স্বাভাবিক থাকা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে প্রথমেই প্রয়োজন বিবদমান ছাত্র সংগঠনগুলোর যুদ্ধংদেহী মনোভাব পরিহার করা। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সব ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বসে একটা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
যদিও এত বড় একটা ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ মাত্র ৩৮ দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিতে পেরেছে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরও যদি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না করা যায় তবে সে প্রশংসা মিলিয়ে যেতেও সময় লাগে না। তাই কর্তৃপক্ষের উচিত হবে এখন শেষ গেরোটুকু অর্থাৎ শাহ আমানত হল খুলে দেওয়া। তবেই হয়তো ক্যাম্পাস ফিরে পাবে তার আগের রূপ। এটা মনে রাখা জরুরি, শিক্ষার্থীরাই হচ্ছে ক্যাম্পাসের প্রাণ।
আর প্রাণ বাদ দিয়ে শরীর কখনোই চলতে পারে না। ক্যাম্পাসে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হলে কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।