আসছে আগস্ট, আসছে আমাদের ম্যাডামের জন্মদিন। কিন্তু তার জন্মদিন নিয়ে আজ সবাই নিশ্চিত, এটা ভূয়া জন্মদিন। দেশের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রী, অথচ কী নির্লজ্জভাবে মিথ্যা জন্মদিন পালন করেন ভাবতেই ঘৃণার উদ্রেগ হয়। নাকি ডারউইনের মতো জন্মদিনও বিবর্তনবাদেরূপ নিয়েছে।
১- বিবর্তনবাদের বাংলাদেশ-মডেলে সবচেয়ে বেশী ফায়দা নিয়েছে বিএনপি’র চেয়ার-পার্সন আপোষহীন দেশনেত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখটি।
তার জন্মতারিখ আসলে কোনটি? তার জন্মদাতা জনাব ইসকান্দার মিয়ার ভাষ্যমতে তার কনিষ্ঠা কন্যা বেগম খালেদা খানম ওরফে পুতুলের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৫ সালের ৫ই সেপ্টেম্বার, যেদিন ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছিল ঠিক সেদিন (পাঠক মনে রাখবেন, মহামানব বা মহামানবীদের জন্ম সাধারনত বিশেষ দিনে হয়। চেরাগ আলী ছগিরালিদের মতো সবদিনে হয় না। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে ধরাধামে শান্তি আসল যেদিন, সেদিনটি নিঃসন্দেহে ম্যাডাম জিয়া নামক মহামানবীর জন্মগ্রহনের সবচেয়ে উপযুক্ত দিন)। কে কবে জন্ম নিয়েছে, তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত স্বাক্ষী হচ্ছে বাপ-মা। সুতরাং ম্যাডামের প্রথম জন্মতারিখ যে সেপ্টেম্বার মাসে তাতে কেউ সন্দেহ পোষণ করবেন না আশা করি, যদিও রাজনৈতিক বিবর্তনের ফলে এই তারিখটি যে কোন সময় পরিবর্তনের হক্ রাখে।
২- এর পরের দৃশ্যটি ১৯৫৪ সালের, যেদিন তার পিতৃদেব তাকে দিনাজপুর সরকারী বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেনীতে ভর্তি করান। ম্যাডামের বয়েস তখন মাত্র নয় বছর, নাক দিয়ে সিনকি ঝরা বয়স। সেখানেও সিকান্দার মিয়া মেয়ের জন্ম তারিখ লিপিবদ্ধ করান ৫ই সেপ্টেম্বার, তবে জন্মসালটা এক বছর কমিয়ে ১৯৪৬ সালে নিয়ে আসেন। আমাদের সমাজে এ এক প্রচলিত প্র্যাক্টিস, আমরা সবাই স্কুলের কাগজপত্রে বয়েস দু’এক বছর কমিয়ে দেই। লক্ষ্য করুন, এই পর্বে বিবর্তনের হার খুব বেশী নয়, নয় বছরে মাত্র এক বছর।
তবে জন্মের মাসটিতে বিবর্তনের কোন ছোয়া লাগেনি, সেপ্টেম্বারের ৫ তারিখেই স্থির আছে সেটি।
৩- পরবর্তী পর্ব ১৯৭৮ সালের ১লা এপ্রিল, ম্যাডামের বয়েস তখন তিরিশের উপরে। জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা খানম ঐদিন নিজের স্বাক্ষরে পাশপোর্টের আবেদন করেন। উক্ত আবেদনপত্রেও তিনি তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করেন সেপ্টেম্বার, ১৯৪৬। লক্ষনীয়, এখন পর্য্যন্ত তার জন্মতারিখটি খুব বেশী বিবর্তনের শিকার হয়নি।
কারণ সে সময় তিনি ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ, রাজনৈতিক বিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা ছিল না বললেই চলে।
৪- ১৯৯০ সালে এরশাদকে হটিয়ে আপোষহীন খেতাব অর্জন করেন ম্যাডাম এবং সেই খেতাবের লেজ ধরে একানব্বুইতে বাংলাদেশের সিংহাসনে আরোহন করেন। আর তখন থেকেই শুরু হয় বিবর্তনের নবতর পর্য্যায়, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যাকে বলা যায় বিবর্তনের উল্লম্ফন পর্ব (ইনফ্লেমেটরি ষ্টেজ)। সরকারী প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার জন্মমাস এক মাস পিছিয়ে আনা হয়, সেপ্টেম্বার থেকে আগষ্টে। এই পর্য্যায়ে তার জন্মতারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৯শে আগষ্ট, ১৯৪৫।
এর কিছুদিন পর আরেকটি ঘোষণার মাধ্যমে তার জন্মতারিখ আরও ৪দিন পিছিয়ে এনে ১৫ই আগষ্ট ধার্য্য করা হয়। তবে ৯৬ সাল পর্য্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এই বার্থডে’ পালনের কালচার শুরু করা হয়নি। ছিয়ানব্বুইতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেয়ে পনেরই আগষ্টকে রাষ্ট্রীয় শোকদিবস ঘোষণা করার পর থেকে নেত্রীর ‘জনমদিন’ পালনের কালচার শুরু করে বিএনপি। সেই থেকে আজ পর্য্যন্ত তাঁর জন্মদিন আর বিবর্তিত হয়নি, বাকশালীরা কাঙালি ভোজন আর দোয়া-দরুদ পরে শোক পালন করে, জাতীয়তাবাদীরা হাসিমুখে কেক কেটে উল্লাস প্রকাশ করে।
ট্র্যাজেডি হলো- যে শোকাবহ ঘটনাকে ব্যঙ্গ করতে জন্মতারিখের এই বিবর্তন, পরিমাপের দিক থেকে তা কারবালার ঘটনাকেও হার মানায়।
কারবালাতে আর যাই হোক ছয় বছরের নিস্পাপ শিশু কিংবা নয় মাসের গর্ভবতী নারীকে বেয়োনেট চার্জ করে হত্যা করা হয়নি। একাত্তরে ম্যাডাম পাকিস্তানি মেজর জামশেদের বাসায় গৃহবন্দী ছিলেন, জিয়ার ভাষায় “আন্ডার ইউর কাষ্টডি”। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিয়া তাকে গ্রহণ করতে চাননি। শেখ মুজিবের উদার হস্তক্ষেপের ফলেই ম্যাডামের সংসার টিকে যায় তখন। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে ১৫ই আগষ্ট সত্যিই ম্যাডামের জন্মদিন, তবুও পিতৃতুল্য একজন লোকের পরিবারের এমন শোকাবহ ঘটনাটিকে সম্মান জানিয়ে তিনি কি নিজের জন্মদিন পালন থেকে বিরত থাকতে পারতেন না? অবশ্যই পারতেন এবং রাজনৈতিকভাবে সেটাই হতো শোভনীয় কাজ।
কিন্তু বিএনপি নামক দলটির নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক শোভনতার দৃষ্টান্ত রাখবে তা বোধহয় একেবারেই অসম্ভব একটি আশা; বরং উল্টো কাজটি করবে ধরেই নেয়া যায়। নইলে দেখুন না, যে মেজর জামশেদ নয় মাস তাকে বাসায় আটকে রাখলো- চুরানব্বুই সালে তিনি মারা গেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ম্যাডাম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ভেঙে শোকবানী পাঠালেন! আর যে লোকটির হস্তক্ষেপে তার সংসার টিকে গেলো- তার মৃত্যুদিনে তিনি হাসিমুখে কেক কেটে জন্মদিন পালন করেন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।