লিবিয়ায স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক।
দিন কয়েক আগের কথা বিশেষ এক প্রয়োজনে বাংলাদেশের এক ক্ষমতাধর মন্ত্রীর বাসায় গিয়েছিলাম। না সাংবাদিক পরিচয়ে নয় বরং সাধারনের পোশাক ও পরিচয়ে। যদিও পরিচয় দেবার মত এত বড় সাংবাদিক এখনও হইনি। তারপরেও এ পেশাটিকে সন্মান করি বলেই পরিচয় দিয়ে সুযোগ নেয়াটা বরাবরই আমার পছন্দ নয়।
যাই হোক ,মন্ত্রীর বাসায় গেলেও কোন ফেলনা রেফারেন্স নিয়ে যে যাইনি এটা সত্যি। তার ঘরের আত্মীয়ের সঙ্গেই আমার যাওয়া। আত্মীয় বললেন মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে বাসায় কথা বলতে হলে দর্শনার্থীকে নিয়ে অন্তত সকাল ৮টার মধ্যে পৌঁছতে হবে। যেভাবে বলা ; কাকডাকা ভোরে উঠে সিএনজি নিয়ে হাজির হলাম মন্ত্রীর বাসায়। এই উঠবেন উঠবেন করে আমাদের ৪ ঘন্টা বসিয়ে রেখে তিনি বেলা বারোটায় ঘুম থেকে উঠলেন যদিও সেদিন শুক্রবার ছিলনা।
সারাদিন কাজের অনেক ধকল যায় কিনা তাই সবাইকে বসিয়ে রেখে তার এই কুম্ভকর্ণের ঘুম। অবশ্য এটাও সত্যি আমাদের দেশের অধিকাংশ মন্ত্রীই মনে করেন তাদের কাছে যারা যান তাদের আর কোন কাজকর্ম নেই যেন যতক্ষন ইচ্ছা বসিয়ে রাখা যায় । যাই হোক দেখলাম আমাদের মত অনেকেই এসেছেন তাদের প্রয়োজনে । হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চমকানোর মত দেখলাম মন্ত্রী বের হয়েছেন তার সুসজ্জিত কক্ষ থেকে সঙ্গে মুঠোফোনে অবিরাম কথা বলে যাচ্ছেন। যার সঙ্গে গেলাম সে আমাকে টেনে নিয়ে গেল এবং সমস্যা বলতে শুরু করল আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আর ভাবছি কাকে আমি সমস্যার কথা বলব তিনি তো সেই থেকে ফোনটা কানের কাছে ধরে আছেন।
মন্ত্রীপতœী বললেন এভাবেই মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে হবে,তুমি তোমার সমস্যার কথাটা বলে ফেল। যদিও তিনি আমার চেয়ে বয়সে অনেক বড় এবং অপরিচিত। আমি এর মধ্যেই আমার সমস্যা বলছি আর মন্ত্রী সাহেব নাস্তা করছেন কখনো ফোনে কথা বলছেন আবার কখনোবা মন্ত্রীর স্ত্রী তাকে অন্য একজনের সমস্যার কথা বলছেন। বলা যায় হযবরল অবস্থা আর কি। উন্নত বিশ্বের কোন নাগরিক যদি এই দৃশ্যটা দেখে ফেলেন তবে ভাববেন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদরা কত মহান সাধারন জনগনের আর্জি শুনতে গিয়ে খাবারটা পর্যন্ত তারা খেতে পারেন না।
মিনিট খানেক আমার কথা শুনে জানতে চাইলেন আমি এখন আপনার জন্য কী করতে পারি? আমি তো ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা ; ৪ ঘন্টাব্যাপী যার জন্য নাস্তা না করে অপেক্ষা করছি তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন তার করনীয় কী। তার এ কথাটা শুনেই আমি বুঝে গেলাম যার এত সমস্যা তিনি কী করে আামার সমস্যার সমাধান করবেন ! ভগ্ন হৃদয়ে ফিরে এলাম আর ভাবলাম একেই বোধ হয় বলে ক্ষমতা। মানে বাংলাদেশের ক্ষমতা আর কী। হয়ত: পেশাগত পরিচয়টি পেলে তিনি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলতেন না। ফিরে এসে ভাবলাম আর যাই হোক কোন ধরনের সাহায্য পেতে তার কাছে আর নয়।
তবে বাংলাদেশে এর উল্টো চিত্রও যে নেই তা নয়। আমাদের দেশের এমন একজন এমপি আছেন যিনি প্রতিদিনের একটা নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখেন তার নির্বাচনী এলাকার মানুষদের জন্য। বিদেশ ফেরত এই এমপি এবারই প্রথমবারের মত জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলেন। তবে এখানে একটা শর্ত আছে প্রমানের জন্য ওই এমপির কাছে আপনার ভোটার আইডি কার্ডটি নিয়ে যেতে হবে যে সত্যিই আপনি তার নির্বাচনী এলাকার ভোটার কিনা। এটা অবশ্য মন্দ নয় কারন, আমাদের দেশের সকল এমপি যদি বিদেশ ফেরত এই এমপির মত নিজ নিজ এলাকার লোকদের সমস্যা শুনে সমাধান করেন তবেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।
কিন্তু আমরা যে ভালোর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করি না সেটাই বড় বিষয়। তবে শুধু শুনে নয় বরং নিজ চোখে দেখার জন্য সেদিন গেলাম ঐ এমপির ব্যক্তিগত অফিসে যে সত্যিই তিনি তার এলাকার কথা ভাবেন কিনা আর সুপ্ত ইচ্ছা তো রযেছেই যে সুযোগ পেলে তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগটাও হাতছাড়া করব না। এক সহকর্মীকে নিয়ে কথামত পৌঁছে গেলাম ঐ এমপির অফিসে যদিও তিনি তখনও আসেননি। কিন্তু অফিসে পা দিয়েই বুঝলাম না যা শুনেছি তার সঙ্গে বাস্তবের মিল তো রয়েছে এবং একটু বেশিই বলতে হবে কারণ, ঐ অফিসের প্রতিটি কক্ষে লোকে গিজগিজ করছে। সবাই অধীর নয়নে অপেক্ষা করছে তাদের সেই জনপ্রতিনিধির জন্য যাকে প্রত্যক্ষ ভোটে তারা নির্বাচিত করেছেন।
ভাবতে ভালই লাগছিল তবে শংকাও হচ্ছিল এই ভেবে যে তিনি সদ্য বিদেশ থেকে এসেছেন বলে সেখানকার কালচারটা কিছুটা হলেও আমাদের জন্য বয়ে নিয়ে এসেছেন কিন্তু কয়েকদিন পরে তিনিও আমাদের অন্য নেতাদের মত গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাবেন না তো !!
আফরিন জাহান
গণমাধ্যমকর্মী
শব্দ : ৬৩৮
ফোন : ০১৭১১-৯৩২৮৭২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।