আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাঙ্কার বিধ্বংসী বোমা(Bunker Buster Bombs)।

প্রবাসী ইরানের সাথে আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। অর্থনৈতিক এবং বানিজ্য নিষেধাজ্ঞা, কুটনৈতিক চাপ,ইত্যাদি শান্তিপুর্ন উপায় গুলো শেষ হওয়ার পথে। সর্বশেষ ইরান থেকে তেল কেনা দেশগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা। এমন এক সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে সামরিক প্রস্তুতি চলছে আমেরিকার ,ইজরায়েলের এবং পশ্চিমা দেশগুলোর। ইরানের পারমানবিক স্থাপনা গুলোর উপর সম্ভাব্য হামলার জন্য নিখুত এবং আরো শক্তিশালী বোমার উদ্ভাবন চলছে ।

ইতিহাস- গুরুত্বপুর্ন স্থাপনা গুলোকে শত্রুর বিমান আক্রমন থেকে রক্ষা করতে সেগুলো তৈরী করা হয় পাহাড়ের পাথরের নীচে, পুরু কংক্রিটের দেওয়ালের আড়ালে বা ভু গর্ভে । এই শক্ত বাধা ভেদ করে মুল স্থাপনায় আঘাত করার জন্যই তৈরী করা হচ্ছে বাংকার ভেদকারী বোমা বা Bunker Buster Bombs। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কালীন সময় ১৯৪২/৪৩ এ জার্মানী বেলজিয়ামের দুর্গ ভেদ করার জন্য প্রথম ব্যবহার করে কামানের গোলা Röchling shells । একই সময়ে বৃটিশরা তৈরী করে ৫ টন ওজনের Tallboy এবং দশ টন ওজনের ভুমিকম্প বোমা বা "Earthquake" bombs. ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে আমেরিকার বিমান বাহিনী ব্যবহার করে "Disney Bombs। কোরিয়ান যুদ্ধের সময় আমেরিকা মাটির নীচের কমান্ড সেন্টার ধ্বংশ করার জন্য দূর নিয়ন্ত্রিত ১২ , ০০০ পাউন্ড ওজনের বোমা “ টার্জন” ( Tarzon)।

১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় আমেরিকা মাটির নীচের স্থাপনা ধ্বংশ করতে সাফল্যজনক ভাবে ব্যবহার করে ২ টন ওজনের লেসার গাইডেড বোমা GBU-28 ( "Guided Bomb Unit-28 )-১। Guided Bomb Unit GBU-28 এর পর এসেছে GBU- 35 আর এতে সর্বশেষ সংযোজন হল GBU-57। GBU-57 সিরিজের নতুন বোমা GBU 57 A/B গুলোকে বলা হচ্ছে Super Bunker Buster Bombs বা Massive Ordnance Penetrator ( MOP)। ২০ ফুটের ও বেশী লম্বা এই বোমাগুলোর ওজন ৩০হাজার পাউন্ড। গ্লোবাল পজিশানিং সিস্টেম বা GPS নিয়ন্ত্রিত এই বোমাগুলো বিস্ফোরিত হয় ২০০ ফুট মাটি ভেদ করে যাওয়ার পর।

ধারনা করা হয় যে ইরান বা উত্তর কোরিয়ার মাটির নীচের পারমানবিক স্থাপনা গুলোতে আঘাত হানতে সক্ষম এই বোমা গুলো। পেন্টাগন ইতিমধ্যেই ১০ টি এই ধরনের বোমা তাদের বিমান বাহিনীতে সংযোজিত করেছে। এই বোমা গুলো এত বড়, যে শুধুমাত্র বি-৫২( B-52) বা বি-২এ ( B2a Stealth) বোমারু বিমান তা বহন করতে সক্ষম। ইতিপুর্বে উদ্ভাবিত BLU-109 (Bomb Live Unit) এর চেয়ে ১০ গুন বিধ্বংশী ক্ষমতার অধিকারী এবং মাদার অফ অল বম্ব বা MOAB এর এক তৃতীয়াংশ ওজনের। সাফল্যজনকভাবে পরীক্ষার পর প্রতিটি বোমারু বিমানকে এই ধরনের দুটো বোমা( GBU-57A/B MOP bombs )ব্যবহারের উপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে।

২০১২ সালে পেন্টাগন আরো বেশী ভেদ করার ক্ষমতার অধিকারী বোমা তৈরীর জন্য ৮২ মিলিয়ন ডলারের অনুরোধ জানিয়েছে। আরো বেশী ভেদ করার বোমা এবং তা বহন করার উপযোগী বিমান উদ্ভাবন করা হচ্ছে যাদের নামকরন করা হয়েছে Next Generation Penetrator (NGP) এবং Next-Generation Bomber । GBU এর পাশাপাশি অনান্য বড় আকারের প্রচলিত বোমাগুলো হল  BLU-82 Daisy Cutter bomb  Father of All Bombs (FOAB)  GBU-43/B Massive Ordnance Air Blast bomb (MOAB)  Grand Slam bomb  T-12 Cloudmaker  Tallboy bomb উপসংহার- ইরান বা উত্তর কোরিয়ার উপর হামলা হবে কিনা তা অনিশ্চিত। কিন্তু থেমে নেই নিত্য নতুন অস্ত্রের উদ্ভাবন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর স্নায়ুযুদ্ধ বা Cold War হয়ত কিছুটা স্তিমিত।

অস্ত্র প্রতিযোগিতা কিন্তু থেমে নেই। অস্ত্র উৎপাদনকারীদের ব্যবসাও চলছে সমানে। আর এই অস্ত্রের বড় ক্রেতা কিন্তু আমাদের অঞ্চলের দেশগুলোই। সুত্র-১)wikipedia.org/wiki/Bunker_buster ২) Click This Link ৩) https://www.fbo.gov/index ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।