ভারতীয়রা নিজেদেরকে পরাশক্তি ভাবতে পছন্দ করেন!!! আর তাদের এমন দশা দেখে নিজেরাই হতাশ, তাদেরই সেনাপ্রধানের চিঠি পড়ুন-সেনাবাহিনীর ট্যাংকের গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিমান প্রতিরক্ষা সেকেলে হয়ে পড়েছে। জটিল অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে পদাতিক বাহিনী। ফলে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। ’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে লেখা এক চিঠিতে এমনসব গুরুতর অভিযোগ করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান বিজয় কুমার (ভিকে) সিং।
গত ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রীকে লেখা ওই চিঠি ফাঁস হয়েছে গণমাধ্যমে। স্বভাবতই সেনাপ্রধানের ওই চিঠিতে পরাশক্তি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ভারতের সামরিক বাহিনীর প্রেস্টিজ পাংকচার হয়ে গেছে। এ নিয়ে ভারতে সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সরকার পড়েছে চরম বিব্রতকর অবস্থায়। সংসদ ও সংসদের বাইরে বিরোধী দলগুলো সরকারকে তুলাধোনা করছে।
ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এই বেহাল অবস্থার তথ্য এমন সময় প্রকাশ হলো, যখন দেশটির প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাও ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে রয়েছেন। চীনের প্রেসিডেন্টের ভারতে থাকাকালে এই বিতর্ক নয়াদিল্লির কাছে একেবারেই অনভিপ্রেত। সেনাপ্রধানের ওই চিঠি নিয়ে ভারতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বোঝানো হচ্ছে, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রকাশ্যে বিতর্ক হওয়া উচিত নয়। কিন্তু বিরোধীরা মনমোহন সরকারের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রকৃত হাল কী, তা নিয়েও সরকারের ব্যাখ্যা চাইছেন তারা। সংসদ অধিবেশনে ক্ষুব্ধ সংসদ সদস্যরা প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে ওই চিঠি ফাঁস হলো তা তদন্ত করে ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। আরজেডি, সমাজবাদী পার্টি, বিজেপির মতো আঞ্চলিক দলের নেতারা দাবি তুলেছেন, অবিলম্বে সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করা হোক। কারণ তিনিই এ চিঠি ফাঁস করেছেন বলে তাদের অভিযোগ। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল ভারতে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, সেনাপ্রধানকে বরখাস্ত করা হতে পারে।
ডেইলি নিউজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস (ডিএনএ) পত্রিকায় ফাঁস হওয়া ওই চিঠিতে সেনাপ্রধান লিখেছেন, ‘যুদ্ধের প্রধান অস্ত্র যেমন মেকানাইজড ফোর্সেস, আর্টিলারি, এয়ার ডিফেন্স, ইনফ্যান্ট্রি এবং স্পেশাল ফোর্সের পাশাপাশি ইঞ্জিনিয়ার ও সিগন্যালের অবস্থাও শোচনীয়। ’ তিনি লিখেছেন, ‘শত্রুর ট্যাংককে পরাজিত করার জন্য সেনাবাহিনীর পুরো ট্যাংক বহরেরই জটিল গোলাবারুদ নেই। বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ৯৭ শতাংশই মান্ধাতা আমলের। পদাতিক বাহিনীর রাতে যুদ্ধ করার সামর্থ্য নেই। এলিট স্পেশাল ফোর্সের অতিপ্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্রের অভাব ভয়াবহ।
জটিল সার্ভেইল্যান্স বা পর্যবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব বড়ই প্রকট। ’
অনেকের সন্দেহ, ইউপিএ সরকারকে ঘায়েল করতে সেনাপ্রধান নিজেই ওই চিঠিটি ফাঁস করে দিয়েছেন। বয়স নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পর কয়েক মাস ধরেই সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছে ভিকে সিংয়ের। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত সপ্তাহে গণমাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে সেনাপ্রধান বলেছেন, নিম্নমানের ৬০০ গাড়ি (টাটা ট্রাক) কেনার জন্য এক সাবেক সেনা অফিসারই তাকে ১৪ কোটি টাকা ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন।
সেনাপ্রধানের দাবি, বিষয়টি তিনি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ. কে. অ্যান্টনিকে জানিয়েছিলেন।
শুধু তা-ই নয়, বর্তমানে সেনাবাহিনীতে ওই নিম্নমানের ৭ হাজার গাড়ি চলছে এবং অনেক বেশি টাকা দিয়ে সেগুলো কেনা হয়েছিল বলেও এক সাক্ষাত্কারে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান। ইউরোপে একটি টাটা ট্রাকের দাম ৪০-৫০ লাখ রুপি; কিন্তু ভারত সরকার প্রায় দ্বিগুণ দামে এই ট্রাক কিনেছে। তার বক্তব্য, ঘুষ দিতে চেয়ে ওই ব্যক্তি তাকে বলেছিলেন, ‘আপনার আগেও অনেকে টাকা নিয়েছেন, আপনার পরেও সবাই নেবেন। টাকা নিতে আপনার অসুবিধা কোথায়?’ এ অভিযোগ নিয়েও ইউপিএ সরকার বিপাকে পড়েছে। এ অভিযোগ ঘিরে সংসদের দুই কক্ষেই বিরোধীরা ছিলেন সরকারের সমালোচনায় মুখর।
এর ফলে দফায় দফায় অধিবেশন মুলতবি হয়েছে।
সেনাপ্রধানের এ অভিযোগে ভারতের রাজনৈতিক শিবিরে দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সবাই একমত, সমাজের বাকি ক্ষেত্রের মতো সামরিক বাহিনীতেও প্রবলভাবে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেনাপ্রধানের বক্তব্যে তা আরও স্পষ্ট হলো। ভিকে সিং সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাত্কারে নিজেই স্বীকার করেছেন, সেনাবাহিনীর রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। এ ক্যান্সার সারাতে বড় ধরনের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন।
ঘুষের প্রসঙ্গ টেনে বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি প্রশ্ন তুলেছেন, সেনাপ্রধান ব্যবস্থা নিতে না চাইলেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ. কে. অ্যান্টনি নিজে কেন এগোতে চাইলেন না। একইসঙ্গে দুর্নীতি সম্পর্কে অ্যান্টনি অতিরিক্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় সামরিক বাহিনীর প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনা বা আধুনিকীকরণের কাজে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না বলেও কটাক্ষ করেছেন জেটলি।
তার জন্মসাল ১৯৫০ না ১৯৫১, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াইয়ে জড়িয়েছিলেন সেনাপ্রধান। শেষ পর্যন্ত ১৯৫০ সালই তার জন্মসাল বলে মেনে নিতে বাধ্য হন তিনি। সুপ্রিমকোর্ট এ নিয়ে বিতর্ক তৈরির জন্য তাকে ভর্ত্সনাই করেছিল।
সরকারি রেকর্ডের চেয়ে তার বয়স এক বছর কম বলে সেনাপ্রধান যে দাবি করেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তা ধোপে টেকেনি। ৩১ মে তাকে অবসর নিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, সেনাপ্রধানের এভাবে মুখ খোলার পেছনে দুটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। মনমোহন সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলা এবং সেনাবাহিনীর মধ্যেই তার বিরোধী অফিসারদের দিকে আঙুল তোলা। যার মধ্যে তার পূর্বসূরিরাও রয়েছেন।
কে তাকে ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন, তা নিয়ে অবশ্য সেনাপ্রধান মুখ খোলেননি। তবে সবাই নিশ্চিত যে, সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তেজেন্দ্র সিংয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এই তেজেন্দ্র আবার সাবেক সেনাপ্রধান দীপক কাপুরের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। সরকারি নথিতে তার জন্মসাল ভুল থেকে যাওয়ার জন্য কাপুরকেই দায়ী করেন ভিকে সিং। যে সাবেক সেনাকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষের প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেই অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তেজেন্দ্র সিংও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে দিল্লি হাইকোর্টে মানহানির মামলা করেছেন।
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ে দুর্নীতি তদন্তে সিবিআই তদন্ত চাইলেন ভিকে সিং : আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম জানান, আবার নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন ভারতের সেনাপ্রধান ভিকে সিং। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার তৃণমূল সংসদ সদস্য অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক চিঠিকে ঘিরে এবার এক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানালেন জেনারেল ভিকে সিং।
একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০১১ সালের মে মাসে তৃণমূল সংসদ সদস্য অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সেনা কর্মকর্তা দলবীর সিং সুহাগের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে চিঠি দেন সেনাপ্রধান ভিকে সিংকে। সেই চিঠি গতকাল সিবিআইর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন সেনাপ্রধান ভিকে সিং। সেনাপ্রধানকে পাঠানো চিঠিতে তৃণমূল সংসদ সদস্য অভিযোগ করেন, সেনাবাহিনীর নাইট ভিশন ডিভাইস, কমিউনিকেশন সিস্টেম, অস্ত্র, প্যারাসুট প্রভৃতি কেনা নিয়ে দুর্নীতি হয়।
আর এই দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল কর্নেল দলবীর সিং সুহাগ। বর্তমানে ডিমাপুরে কর্মরত রয়েছেন তিনি। গোটা ঘটনার যাবতীয় তথ্য সেনাপ্রধানকে পাঠানো ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ. কে. অ্যান্টনিকে চিঠি দিয়েছেন বলে দাবি করেন অম্বিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাত্কারে তৃণমূল সংসদ সদস্য জানান, ‘বিশ্বস্ত সূত্রে আমি এ খবর পেয়েছিলাম। আমি চাইছিলাম গোটা ঘটনার সিবিআই তদন্ত হোক।
এর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। ’ পাশাপাশি এদিন তিনি বলেন, সেনাপ্রধান একজন সত্ মানুষ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।