https://www.facebook.com/blogger.sadril ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ৮ম সেমিস্টারে এসে আমাদের একজন supervisor শিক্ষকের তত্বাবধানে থেকে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমি আমার গবেষোনার বিষয় নির্বাচন করি bangle blog community and the emergence of electronic democracy: A study on the bloggers of somewhereinblog.
electronic democracy বলতে বোঝানো হচ্ছে এমন এক পদ্ধতিতে যেখানে প্রযুক্তি ব্যাবহার করে একটি রাষ্ট্রের সাধারণ জনগন গণতান্ত্রিক চর্চার( যেমন বাক-স্বাধীনতা,মুক্ত আলোচনা,সামাজিক আন্দোলন) প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে থাকে। আমি আমার গবেষণায় সামহোয়্যার ইন ব্লগ-কে একটি কেস হিসেবে ব্যাবহার করে সেখান থেকে রেসপনডেন্ট নিয়ে বাংলা ব্লগ কমিউনিটির সাথে electronic democracy-এর সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছি।
গবেষোণার তত্বীয় কাঠামো হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে জার্মান সমাজতাত্বিক হ্যাবারমাস-এর পাবলিক পরিসরের (public sphere ) ধারণাকে। পাবলিক পরসর হলো ব্যাক্তির সামাজিক জীবনের তথ্যগত ও ধ্যান-ধারণাগত যোগাযোগের একটি যোক্তিক এবং মুক্ত এলাকা।
হ্যাবারমাসের মতে সপ্তদশ এবং অস্টাদশ শতাব্দীতে বুর্জুয়াদের উত্থানের সময় সমাজের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবস্থা বিশ্লেষনের জন্য প্রিন্ট মিডিয়া তথা সংবাদপত্র ও জার্নালের আবির্ভাবের মধ্যে দিয়ে পাবলিক পরিসরের উতপত্তি। কিন্তু বর্তমান পূজীবাদি সমাজে অত্যাধিক বাণিজ্যকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ায় প্রিন্ট কিংবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া উভয়েই পাবলিক পরিসরের অবস্থান থেকে সরে এসেছ হয়ে উঠেছে বুর্জুয়া পাবলিক পরিসর। মুক্ত মত প্রকাশে সর্বোচ্চ সুবিধা থাকায় আমরা ইন্টারনেটকে এখন বলতে পারি পাবলিক পরিসর। ব্লগ হলো সেই পরিসরের একটি অংশ।
আমার এই গবেষণাটি একটি quantative study. এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক স্যার ২০১১ সালে ব্লগ নিয়ে প্রথম গবেষনা নিবন্ধ প্রকাশ করেন এই লিঙ্কে যান ।
উল্লেক্ষ্য স্যারের জরিপে অংশগ্রহন করেছিলেন ৯০ জন ব্লগার যেখানে ৭৩ জন ছিলেন সামহোয়্যারইনের।
মূল গবেষণা শুরু করার পূর্বে ফর্মে আমার করা সব প্রশ্ন সকলে বুঝতে পারছে কি না, তা যাচাই করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট ব্লগারদের মাঝে গুগল ডকে প্রস্তুত করা একটি questionnaire ফর্ম-এর লিঙ্ক বিলিয়ে প্রি-টেস্ট করে নেই। সেখান থেকে যাচাই বাছাই করে ফাইনাল ফর্ম তৈরি করি (এটি পাওয়া যাবে এই লিঙ্কে )। ইমেইলের মাধ্যমে সামহোয়্যারইন কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এই বছরের ২৫শে জানুয়ারী এবং ২৪শে ফেব্রুয়ারী দুইটি পোস্ট দিয়ে সামহোয়্যারইন এর ব্লগারদের গবেষনা জরিপে অংশগ্রহনের আমন্ত্রন জানাই। পাই।
প্রথমটি থেকে ৮৩টি এবং দ্বীতিয় পোস্ট থেকে ১৮টি সাড়া আসার পর আমি পর্যালোচনা করে দেখি কেউ হয়তো একাধিকবার ফর্ম সাবমিট করেছিলেন, কেউ আবার ২-৩টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েই সাবমিট করে দিয়েছেন। এসব সহ আরো কিছু কারণে আমি ১০১ জন থেকে ৮ জনের রেসপন্স বাতিল করি। এরপর আমি আমার পরিচিত ব্লগারদের মধ্যে ফর্মের লিঙ্কটি প্রেরণ করি। সেখান থেকে সাড়া আসে আরো ৭ জনের। মোট ১০০ জনের সাড়া নেবার পর গবেষনার কাজ শেষ করে আমি এই বছরের মার্চে মনোগ্রাফটি ডিপার্টমেন্টে জমা দেই।
সেই গবেষনার মূল ফলাফলসমূহ এখন সামুর ব্লগারদের সামনে উপস্থাপন করছি।
১. ‘আপনি কোথায় থেকে ব্লগিং করেন’ এমন প্রশ্নের উত্তরে
৬০ জন জানিয়েছেন তারা ঢাকায় থেকে ব্লগিং করেন, ২০ জন অবস্থান করছেন ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলায়, প্রবাসী ব্লগার আছেন ১৪ জন। ভুল উত্তর দিয়েছেন ২ জন, ৪ জন উত্তরহীন ছিলেন।
এখানে লক্ষনীয় যে ঢাকায় ব্লগারের সংখ্যা বেশী। এর কারণ হতে পারে ইন্টারনেট এখনো দেশব্যাপী সার্বজনীনতা পায় নি।
সুতরাং ব্লগার মাধ্যমে আমরা যে মত প্রকাশে মানুষের গণতান্ত্রিক সুযোগের কথা বলছি তা অনেকাংশেই ঢাকা কেন্দ্রিক।
২. ব্লগারদের বয়স এর ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছেঃ
১৬-২০ বয়সের গ্রুপে আছে ১২ জন, ২১-২৫ এর ভেতরে আছেন সর্বোচ্চ ৪৯ জন,২৬-৩০ এর ভেতরে ১৮ জন ৩১-৩৫এর ভেতরে ১২ জন, ৩৫ বা এর বেশী ৪ জন এবং উত্তরহীন ছিলেন ৫ জন।
মাত্র ১০০ জন উত্তরদাতা থেকে সামহোয়্যারইনের ব্লগারদের বয়স সম্পর্কে যে কোন উপসঙ্ঘারে আসা কথীন। কিন্তু আমার গবেষনার ফলাফল মিলে যাচ্ছে Alexa.com এর হিসেবের সাথে। Alexa.com-এর মতে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়স্ক ব্লগারদের সংখ্যা সামহোয়্যারইনে বেশি।
আমার গবেষনাতেও ২০ থেকে ২৫ বছর ব্যস্ক উত্তরদাতাদের সংখ্যা বেশী। সে হিসেবে আমরা ব্লতে পারি ব্লগিং-এর মাধ্যমে মত প্রকাশের সুযোগে কোন বয়সের বাধা না থাকলেও তরুণেরাই এই সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যাবহার করছে।
৩. গবেষনায় অংশগ্রহনকারীদের ভেতরে পুরুষ ৮৭ জন,নারী ছিলেন ১২ জন, ১ জন উক্ত প্রশ্নের উত্তর দেন নি।
সামহোয়্যারইনে উল্লেখযোগ্য নারী ব্লগার থাকলেও এ ব্যাপারে আমার সাথে সহব্লগাররা একমত হবেন যে পুরুষের অনুপাতে নারীদের ব্লগিং-এ অংশগ্রহনের প্রবণতা কম। আসলে আমাদের এই ভার্চুয়াল জগতটাও কিন্তু মূল সমাজের প্রতিচ্ছবি।
তাই মূল সমাজে প্রবাহমান নারী পুরুষের অসমতা ছিটকে চলে আসতে পারে এই ভার্চিউয়াল জগতে। হ্যাবারমাসের মতে নারীরা সমাজের ইনটিমেট পরিসরে বন্দী থাকে তাই পাবলিক পরিসরে অংশগ্রহনের প্রবণতা তাদের ভেতর কম থাকে। সহজ ভাষায় বলা যায়, সমাজে নারীদের মতামত আমলে নেয়ার প্রবণতা কম থাকায় মত প্রকাশে নারীদের আগ্রহটাও কম দেখা যায়।
৪. চাকুরীজীবি থেকে শুরু করে শিক্ষক, ফ্রিল্যান্সার, ব্যাবসায়ী বিভিন্ন পেশার ব্লগাররা গবেষণায় অংশ নিয়েছেন। তবে সবোর্চ্চ ৫৪ জন ছিলেন ছাত্র।
আমরা আগেই জেনেছি ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সঈদের সামহয়্যারইনে অংশগ্রহনের প্রবণতা বেশি। সেই কারনে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবিদের ভেতরে ছাত্রদের অংশগ্রহন এগিয়ে।
৫. কতদিন ধরে সামহোয়্যারইনে ব্লগিং করছেন এমন প্রশ্নে দেখা গিয়েছে,
১ বছরের কম সময় ধরে সামহোয়্যারইনে আছেন ৩৬ জন,১ বছর বা এর বেশী সময় আছেন ১৭ জন,২ বছর বা এর বেশী সময় আছেন ১৩ জন,৩ বছর বা এর বেশী সময় আছেন ১৫ জন,৪ বছরবা এর বেশী সময় আছেন ১২ জন, উত্তরহীন ছিলেন ৭ জন।
৬. সামহোয়্যারইনে উত্তরদাতাদের পোস্টসংখ্যা জানতে চাওয়ায় দেখা গিয়েছে
১ থেকে ৫০ এর ভেতর পোস্ট দিয়েছেন ৫৯ জন
৫১ থেকে ১০০এর ভেতর পোস্ট দিয়েছেন = ১৬ জন
১০০-এর বেশী =এর ভেতর পোস্ট দিয়েছেন ১৫ জন
উত্তর নেই ৯ জনের।
৭. উত্তরদাতাদের মডারেশন স্ট্যাটাস যাচাইয়ে দেখা গিয়েছে,
সেফ ছিলেন ৯১ জন
জেনারেল ৬ জন এবং
ওয়াচ ৩ জন
৮. ব্লগে উত্তরদাতাদের কার্যক্রম কিরূপ জানতে চাওয়ায় তারা জানিয়েছেন,
নিয়মিত লেখা ও পড়া হয় এমন আছেন ৩৭ জন,নিয়মিত লেখা হয় কিন্তু পড়া হয় না ৩ জনের,নিয়মিত পড়া হয় কিন্তু লেখা হয় না ৫৫ জনের,লেখা বা পড়া কোনটাই হয় না ৫ জনের
এখানে ৫ ও ৬ এ দেখা যাচ্ছে যে উত্তরদাতাদের মধ্যে বেশীরভাগের ব্লগিং-এর অভিজ্ঞতা এক বছরের কম এবং তাদের বেশীরভাগেরই সামহোয়্যারইনে পোস্ট সংখ্যা ৫০-এর কম।
কিন্তু ৭ থেকে দেখা যায় অংশগ্রহণকারীদের ভেতর ৯১ অনই সেফ ব্লগার এবং ৯২ জনই ব্লগ লেখা বা পড়া অথবা উভয় দিক থেকে কোন না কোনভাবে ব্লগে নিয়মিত। সেক্ষেত্রে বলা যায় অভিজ্ঞ ব্লগারদের গবেষনায় অংশগ্রহন তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও গবেষনার অংশগ্রহনকারীদের বেশীরভাগকেই অনভিজ্ঞ বলার কোন কারণ নেই। সুতরাং তাদের উত্তরসমূহ সচেতনভাবে আমলে নেয়া যেতে পারে।
৯. ব্লগিং শুরু করার পূর্বে অন্য কোথাও লেখার অভিজ্ঞতা ছিলো কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ৩২ জন বলছেন তাদের অভিজ্ঞতা ছিলো কিন্তু ৬৫ জন বলছেন ছিলো না। উত্তর দেন নি ৩ জন।
ফাহমিদুল হক স্যারের গবেষনায় ৬১% উত্তরদাতা জানিয়েছিলেন ব্লগিং-এর পূর্বে তাদের লেখার অভিজ্ঞতা। এর উপরে ভিত্তি করে স্যার বলেছিলেন লেখকেরাই ব্লগার হচ্ছেন। কিন্তু ৩ বছর পর আমার গবেষোনার ফলাফল থেকে আমি বলতে পারি ব্লগ থেকে বরং লেখক তৈরি হচ্ছে
১০. ব্লগে আপনার পোস্টসমূহের মধ্যে কোন ধরণের পোস্টের আধিক্য বেশী এমন প্রশ্নে ব্লগারদের উত্তরের মাঝে ব্যাপক বিচিত্রতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে সর্বোচ্চ ১৯% বলেছেন কবিতা। ১৪% বলেছেন দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা, ১১% বলেছেন তথ্যমূলক পোস্ট, রম্য বলেছেন ৯%, আর গল্প বলেছেন ৮%।
আদর্শগত চিন্তা-ভাবনা বলেছেন ৮%, বাকী ২৩% ভিন্নভাবে উত্তর দিয়েছেন অন্যান্য অপশনে, ধারণে নেই বলেছেন ৩%, ভুল উত্তর দিয়েছেন ৫% (এ প্রশ্নটি অনেকেই বুঝতে পারেন নি)।
ফাহমিদুল হক স্যারের গবেষনায় দেখা গিয়েছিলো ব্লগিং করার কারণ হিসেবে সর্বোচ্চ ৩৭.৮% উত্তরদাতা বলেছিলেন সাহিত্যচর্চা। আমি যদি আমার উক্ত প্রশ্নে কবিতা+গল্প+রম্য-এ তিনটিকে সাহিত্য হিসেবে ধরে নেই তখন দেখা যাবে সর্বোচ্চ ৩৬% ব্লগারের পোস্ট সাহিত্য চর্চার সাথে সংশ্লিষ্ট হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে ব্লগিং-এর উদ্দ্যেশ্য হিসেবে সাধারণত সিটিজেন জার্নালিজমের কথা বলা হলেও সামহোয়্যারইনে সাহিত্যচর্চার দিকেই ব্লগারদের আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
১১. সামহোয়্যারইনে আমরা প্রচুর এ্যানোনিমাস এবং ছদ্দনামের ব্লগার দেখতে পাই।
‘ব্লগে নিজের নাম ও পেশা প্রকাশ করেছেন কিনা’ এমন প্রশ্নে ৪১% জানিয়েছেন তারা দুটোই প্রকাশ করেছেন, ১৪% বলছেন তারা নাম প্রকাশ করেছেন কিন্তু পেশা প্রকাশ করে নাই।
১২. মডারেশনের উপরে আস্থা কতটুকু এমন প্রশ্নে ৫৯% বলেছেন মোটামুটি, ২৩% বলেছেন কোন আস্থা নেই, ৯% জানিয়েছেন মডারেশন নিয়ে কোন ধারণা নেই, ৮ জন ১০০% আস্থা প্রকাশ করেছেন, ১ জন উত্তর দেয় নি।
১৩. মডারেশন কিরকম হওয়া উচিত এমন প্রশ্নে ২৩% কঠোর মডারেশনের পক্ষে, ৭% নমনীয় মডারেশনের পক্ষে, ৪% বলেছেন কোন মডারেশনের দরকার নেই, ৩% বলেছেন তাদের কোন্দ ধারণা নেই, উত্তর দেন নি ৫%। সর্বোচ্চ ৫৮% জানিয়েছেন পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে মডারেশন হওয়া উচিত।
১৪. ব্লগের নিয়ম-নীতি সম্পর্কে কতটুকু জানেন এমন প্রশ্নে ৪৫% জানিয়েছেন তারা সকল নিয়ম জেনে ব্লগিং করেন, ৪( বলেছেন কিছু নিয়ম জানেন কিছু জানেন না, ৫% জানিয়েছেন কোন নিয়মই তাদের জানা নেই।
১ জন প্রশ্নে উত্তর দেয় নাই।
১৫. নিয়ম নীতি ভঙ্গের কারণে কখনো শাস্তি পেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে ২৫% জানিয়েছেন তারা শাস্তি পেয়েছেন ৭৪% জানিয়েছেন তারা কখনো শাস্তি পান নি, একজন ওয়াচ ব্লগার থাক্য তার জন্য এই প্রশ্ন প্রযোজ্য ছিলো না।
১২ থেকে ১৫-এর মাধ্যমে বোঝা যায়, মডারেশন এবং নিয়ম-নীতি পরিচালনার মাধ্যমে ব্লগের মাধ্যমে মতামত ব্যক্তকরণকে যৌক্তিক করে তোলার প্রচেষ্টা চলছে। এ থেকে পাবলিক পরিসরের অংশ হিসেবে ব্লগ কমিউনিটির যতার্থতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৬. তথ্যের ব্লগ-কে সংবাদপত্র থেকে এগিয়ে রাখবেন কি না এমন প্রশ্নে ৩৪% জানিয়েছেন তারা ব্লগকে এগিয়ে রাখবেন, ২০% বলেছেন সংবাদপত্র বরং ব্লগের চেয়ে এগিয়ে, ৪২% উত্তরদাতা ব্লগের সাথে সংবাদপত্রের তুলনা করতে আগ্রহী নয়।
এ থেকে বলা যায়, বেশীরভাগ উত্তরদাতা ব্লগকে একটি বিকল্প মিডিয়া হিসেবে দেখতেই পছন্দ করে।
১৭. ব্লগ থেকে কখনো মানবিক সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ৫৮% জানিয়েছেন তারা সাড়া দিয়েছেন, ৩৯% বলছেন দেন নাই। এই প্রশ্নে উত্তরহীন ছিলেন ৩%।
১৮. ব্লগ থেকে আয়জিত প্রতিবাদ সভায় কখনো স্বশরীরে হাজির থেকেছেন কিনা এমন প্রশ্নে ৭৭% বলেছেন তারা হাজির হন নাই, ২৩% বলেছেন হাজির হয়েছিলেন।
১৯. কোন কমেন্ট বা পোস্টে কখনো অন্য ব্লগার দ্বারা ব্যাক্তগত আক্রমনের শিকার হয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নে ৩৬% বলেছেন তারা আক্রমনের শিকার হয়েছেন, ৬৪% বলছেন হন নাই।
২০. সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার প্রতিবাদ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ইভটিজিং বিরোধী প্রতিবাদ-ব্লগে চলমান এই তিনটি ইস্যুর মধ্যে কোনটির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করা হয়েছে- এই প্রশ্নে ৫৬% বলছেন তারা তিনটি ইস্যুতেই সমর্থন প্রকাশ করেছেন, ২২% বলছেন সমর্থন থাকলেও তা কখনো প্রকাশ করা হয় নি। সরব ব্লগারের পাশাপাশি কিছু মৌন ব্লগারের উপস্থিতিও এখানে দেখা যাচ্ছে।
২১. ফেসবুকে অপরিচিত ব্লগারদের সাথে যোগাযোগ রাখেন কিনা এমন প্রশ্নে দেখা যাচ্ছে ৪৫% যোগাযোগ রাখেন এবং ৫০% যোগাযোগ রাখেন না। ৫% এ প্রশ্নে উত্তর দেয় নাই।
২২. নিজের এবং অন্যান্য ব্লগারদের লেখা ফেসবুকে শেয়ার দেয়া হয় কিনা এমন প্রশ্নে ৫১% বলেছেন তারা নিজেদের এবং অন্যন্যা ব্লগারদের পোস্ত ফেসবুকে শেয়ার করে থাকেন, ২০% কেবল অন্যদেরটা শেয়ার করেন, ২০% ফেসবুকে কারো পোস্টই শেয়ার করে না, ৬% বলেছেন তারা শুধু নিজেদেরটাই শেয়ার করেন।
২১ ও ২২ দেখাচ্ছে ব্লগের পোস্ট শুধু ব্লগেই আবদ্ধ থাকছে না। ফেসবুকে শেয়ারের মাধ্যমে তা যুক্ত হচ্ছে আরো মানুষের সাথে। ব্লগ কমিুনিটি এবং ফেসবুক যুক্তভাবে ব্লগের পোস্টসমূহকে পাবলিক পরিসরে জায়গা করে দিচ্ছে।
তাহলে আমরা বলতে পারি বাংলা ব্লগ কমিউনিটি একটি গণতান্ত্রিক পাবলিক পরিসরের অংশ যেখানে ব্লগাররা যেকোন রাজচনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে যৌক্তিকভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছে এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে ভার্চুয়াল কমিউনিটিকে ক্রমেই শক্তিশালী করে নিচ্ছে।
উল্লেক্ষ্য আমি শাহবাগ আন্দোলনের আগেই আমি গবেষোনার কাজ শুরু করি বলে শাহবাগ আন্দোলন এবং এর সাথে সম্পর্কিত ব্লগের প্রেক্ষাপট কোন কিছুই আমার গবেষনায় যুক্ত করতে পারি নাই।
শাহবাগ আন্দোলনের পর থেকে ব্লগ কমিউনিটির অবস্থার অনেক পরিবর্তন আসে। আমরা দেখতে পাই যে ব্লগ এবং ইন্টারনেট ব্যাবহারের বিষয়টি দেশব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে নাই বরং অত্যাধিক ঢাকাকেন্দ্রিক এবং তরুণদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে। যার কারণে এসব বিষয়ে প্রপাগান্ডা ছড়ানোটাও কারো কারো পক্ষে সহজ হয়ে যায়। তাহলে কি আমরা ব্লগ কমিউনীটির সাথে সংশ্লিষ্ট যে electronic democracy-এর কথা বলছি তা রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের সাথে এখনো মিলিত হতে পারে নাই?তাছাড়া অধিক সংখ্যক ব্লগার এখন ফেসবুকের দিকে ঝুকছে আর ইদানিং বাণিজ্যকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়ায় ফেসবুকও পাবলিক পরিসর থেকে সরে বুর্জুয়া পাবলিক পরিসরে পরিণত হবার ঝুকিতে আছে। ইদানিং ইন্টারনেটের উপর নিয়ন্ত্রন নিবার চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে।
তাহলে কি ইন্টারনেটও জায়গা হারাবে পাবলিক পরিসর থেকে? এ রকম আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আরো উচ্চতর গবেষণার দরকার রয়েছে।
এট ছিলো জীবনে প্রথম কোন গবেষনা। তাই এখানে প্রচুর ভুল ত্রুটি হয়েছে, নানা অংশে গবেষনার কাজ সীমাবদ্ধ থেকে গিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে (হতে পারে মাস্টার্সের থিসিসে) আরো প্রস্তুত হয়ে এ বিষয় নিয়ে সামুর পাশাপাশি অন্যান্য ব্লগগুলো যুক্ত করে গবেষনা করার ইচ্ছা আছে। আশা করি এ বারের মতো সামনেও ব্লগাররা আমাকে সাহায্য করবেন।
সামহোয়্যারিন সামহোয়্যারইন কতৃপক্ষেকে ধন্যবাদ জরিপের অনুমতি দেবার জন্য। বেশ কিছু ব্লগার আমাকে নানা তথ্য দিয়ে আমাকে সাহায্য করেছেন,তাদেরকে জানাই কৃ্তজ্ঞতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।