বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... বাংলাদেশের সীমানা শেষ। এরপর ভারতের ভূখন্ড কিন্তু ভারতের ভিতরেই আবার এক চিলতে বাংলাদেশ। অদ্ভুদ রহস্য মাখা সেই সাথে রোমাঞ্চকর একটি ভুখন্ডের নাম তিন বিঘা করিডোর। কেন রোমাঞ্চকর সেটা বলি, যদিও আমি বোঝাতে সক্ষম হবো কি না জানি না কারন ওখানে যাওয়ার আগে আমাকেও তিনবিঘা করিডোর সম্পর্কে কেউ বোঝাতে পারে নি।
লালমনিরহাট জেলার একেবারে শেষ উপজেলা পাটগ্রাম।
এই পাটগ্রামের সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম দহগ্রাম। কিন্তু সেই ইউনিয়ন পাটগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন, লালমনিরহাট থেকে এমনকি বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। সেটা একটা ছিটমহল, ইউনিয়ন। দহগ্রামের সাথে বাংলাদেশের ভু-খন্ডের কোন যোগসুত্র নেই। দহগ্রাম ইউনিয়ন ছিল একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত।
বাংলাদেশের মুল ভূ-খন্ড থেকে ভারতের ভিতরে ৫ কিলমিটার দুরত্বে অবস্থিত দহগ্রাম। এই দুরত্বের মাঝে দুরত্বকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত সরকার। এর মাঝবরাবর একটা মহাসড়ক তৈরী নিয়ে গেছে ভারত। সেই মহাসড়ক দিয়ে ভারতীয় বিএসএফের তত্বাবধানে একটি প্যাসেজ চালু করা হয়। এই প্যাসেজটিই তিনবিঘা করিডোর যা দহগ্রামের সাথে যোগসুত্র তৈরি করেছে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাগের সময় সীমান্ত এলাকা গুলো যাতে সুষ্ঠুভাবে বণ্টিত হয় এজন্য গঠিত হয়েছিল Radcliffe Commission। বৃটিশদের ডিভাইড এন্ড রুল নীতির সার্থক প্রয়োগ করে Radcliffe Commission সীমান্ত এলাকাগুলোকে এমনভাবে ভাগাভাগি করেছিল যাতে প্রতিবেশি দু'দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ বিরাজ করে, যার দৃষ্টান্ত ছিটমহলগুলো। তন্মধ্যে লালমনিরহাট জেলাধীন পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ছিটমহল দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ব্যাপকভাবে পরিচিত। এ ছিটমহলের সাথে তৎকালীন পাকিস্তানের মূল ভূখন্ডের যোগাযোগের জন্য একটি ‘প্যাসেজ ডোর’ এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, যা বর্তমানে ‘তিন বিঘা করিডোর’ নামে পরিচিত।
পাকিস্তান আমল পেরিয়ে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত তিন বিঘা হস্তান্তর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অনেক বৈঠক এবং চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহল পাটগ্রাম উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন ‘দহগ্রাম ইউনিয়ন’ হিসেবে পরিগণিত হয় এবং ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্ট এখানে ইউনিয়ন পরিষদের শুভ উদ্বোধন ঘটে।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুন ইজারার মাধ্যমে উক্ত তিন বিঘা বাংলাদেশকে প্রদান করা হয়। তবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১ ঘন্টা পর পর করিডোর দিয়ে বাংলাদেশীদের যাতায়াতের সুযোগ দেয়া হয়। অতঃপর করিডোর দিন-রাত খোলা রাখার জন্য দাবী উত্থাপিত হলে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ এপ্রিল থেকে তা সকাল ৬-৩০ মিনিট হতে সন্ধ্যা ৬-৩০ মিনিট পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থা করা হয়।
এরপর ৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ খ্রি. তারিখে ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হাসিনা-মনমোহন বৈঠকে স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশীদের যাতায়াতের জন্য তিনবিঘা করিডোর বর্তমানে ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা হচ্ছে।
আর এই ছিটমহলটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছিটমহল।
পত্রিকা লিংক- তিনবিঘা করিডোর: রোমাঞ্চমাখা ভূখন্ডের নাম ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।