যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ বাজারসুবিধা (জিএসপি) স্থগিত হওয়ায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মানুষকে সরকার দায়ী করেছে। তবে কারখানার শ্রমমান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ তার বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাবে। বাংলাদেশ আশা করে, মার্কিন প্রশাসন খুব শিগগির বাংলাদেশের জিএসপি ফিরিয়ে দেবে।
গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জিএসপি স্থগিতের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়।
এদিকে, বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিটিই সরকারের অবস্থান।
তবে জিএসপি স্থগিতের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে জানাবে। ওই চিঠি পাওয়ার পর সরকার পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি স্থগিতের বিষয়ে দুর্ভাগ্যজনক অবস্থাটি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই দেশেরই কিছু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যাপারে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ তার বাণিজ্য অংশীদারের সিদ্ধান্তের প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল রয়েছে।
তবে এ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কেননা, এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ দুই দেশের বিকাশমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে নতুন করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন, নারীর ক্ষমতায়ন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও সামাজিক ন্যায়বিচার—এই মূলনীতিগুলোর ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের অংশীদারি রয়েছে।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ, তৃণমূল পর্যায়ের নাগরিকদের ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনের সুরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন, বৈশ্বিক শান্তি—সর্বোপরি ব্যবসায়িক সম্পর্কের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপনসহ নানা ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাপকতর অংশীদারি রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ যখন কারখানার নিরাপত্তা উন্নীতকরণ ও শ্রমিকদের সুরক্ষায় কার্যকর ও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেই মুহূর্তে জিএসপি স্থগিত হওয়া, বাংলাদেশের শ্রমিকদের কাছে কোনো কিছুই এর চেয়ে বড় আঘাত হতে পারে না।
২০০৬ সালের শ্রম আইন সংশোধন, শ্রমমানের উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট সময়ের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে সরকার-মালিকপক্ষ-শ্রমিকদের সমন্বয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি এবং পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ পদক্ষেপগুলোই পরিস্থিতির উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা প্রমাণ করে। বাংলাদেশ সরকার আশা করে, মার্কিন প্রশাসন খুব শিগগির বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেবে। কারণ, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার শর্ত অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশগুলো উন্নত বিশ্বের দেশের কাছে অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধাদি ভোগ করে থাকে। তৈরি পোশাক কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সমন্বিতভাবে তার সব বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে কাজ করে যাবে।
বাংলাদেশ আশা করে, এ প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও ক্রেতারা তাঁদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত অংশীদারদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাবেন এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যকে আরও সম্প্রসারিত করতে ভূমিকা রাখবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।