মানবিক দায় ও বোধহীন শিক্ষা মানুষকে প্রশিক্ষিত কুকুরে পরিণত করে....আইস্ট্যাইন। [img|http://media.somewhereinblog.net/images/thumbs/nanabhai_1332623773_1-Jved___U_tube___SaKiL___2.jpg
বাংলাদেশি গবেষকের পুত্র জাভেদ করিম ছোটবেলা থেকে আবিষ্কারের নেশায় মত্ত। বিশ্বব্যাপী সবচে জনপ্রিয় সাইট ইউটিউবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জাভেদ। তার প্রতিষ্ঠিত ইউটিউব পা দিয়েছে ৭ম বছরে। জাভেদের বাবা নাইমুল ইসলাম বাংলাদেশি গবেষক।
১৯৯২ সালে স্বপরিবারে পাড়ি জমান আমেরিকায় । ১৯৭৯ সালে পূর্ব জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন জাভেদ। জার্মানিতেই বেড়ে ওঠেন। তবে আমেরিকাতে শিক্ষা জীবন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক পাস করেন তিনি।
ইউটিউব তৈরির ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য তারও আগের।
২০০৪ সাল। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছেন জাভেদ করিম। ছাত্রাবস্থায়ই যোগ দিলেন অনলাইন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান পেপালে। চাকরিটা একবারে মন্দ ছিল না।
তবু লেখাপড়ার ফাঁকে শুরু করা চাকরিটা উদ্ভাবনী মনের তৃষ্ণা কিছুতেই মেটাতে পারছিল না। খুঁজছিলেন বিকল্প পথ। কিভাবে নতুন কিছু করা যায়। পেপালে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী চাঁদ হার্লি এবং স্টিভ চেনের সাথেও মাঝে মাঝে শেয়ার করতেন তার মনের কথা। স্টিভও কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র।
আর হার্লি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাইন বিভাগে পড়াশোনা করছে। হার্লি আর স্টিভও চাচ্ছেন নতুন কিছু করতে। সবার মনেই একই ভাবনা। ঠেকায় কে! সবাই ভাবতে লাগলেন কি করা যায়। পারষ্পরিক যোগাযোগের অভাবে কিছুদিন ভাঁটা পড়ে তাদের পরিকল্পনায়।
বছর গড়িয়ে যায়। পরিকল্পনাকে বাস্তব রুপ দিতে এবার নড়ে চড়ে বসেন। সিদ্ধান্ত নেন একসাথে আলোচনায় বসার। আলোচনার সুবিধার্থে সান ফ্রান্সিস্কোতে স্টিভ চেনের বাসায় নৈশ ভোজের দাওয়াত পড়লো সবার। সেখানেই সিদ্ধান্ত হলো ইউটিউব সাইটটি তৈরি করার।
অনলাইনে প্রচুর সাইট থাকলেও ভিডিও শেয়ার করার মত কোন উল্লেখযোগ্য সাইট নেই। এজন্য ভিডিও শেয়ারিং সাইটের সম্ভাবনা যাচাই করে একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট বানানোর সিদ্ধান্ত হলো। ২০০৫ সাল। ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখে ইউটিউব ডটকম নামে ডোমেইন নিবন্ধন করে ফেলা হলো। ডোমেইন নাম নিবন্ধনের পর তিন তরুণ প্রকৌশলী হাত লাগালেন সাইট ডিজাইনের কাজে।
কয়েক মাসের চেষ্টায় দাঁড় করে ফেললেন সুন্দর একটি সাইট।
সাইট ডোমেইন নিবন্ধন এবং ডিজাইন শেষ হলেও এবার মূল কাজ বাকি। একই বছরের ২৩ এপ্রিলে ‘মি এট জু’ নামক প্রথম ভিডিও আপলোড করেন জাভেদ করিম নিজে। ভিডিও-তে সান দিয়াগো পার্কে হাতিশালার দাঁড়ানো তার নিজের এ ভিডিওটি আপলোড করে শুরু করলেন ভিডিও শেয়ারিং। http://bit.ly/meatzoo ঠিকানার ওয়েবসাইটে এখনও মিলবে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিওটি।
মে মাসে সাইটটির পরীক্ষামূলক সংস্করন উন্মুক্ত করলেন তারা। পরীক্ষামূলক সংস্করনে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়াও পেলেন।
দিন দিন বাড়তেই থাকলো ইউটিউবের ব্যবহারকারী সংখ্যা। কিন্তু ব্যবহারকারীদের জন্য সাইটটি পরীক্ষামূলক সংস্করন থেকে উন্মুক্ত করতে প্রয়োজন আরোও হোস্টিং স্পেস। দরকার প্রচুর বিনিয়োগ।
ভেনচার ক্যাপিটালিস্ট বা প্রকল্প বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা চাইতে থাকলেন। তরুণ তিন প্রকৌশলীর পরিকল্পনার কথা শুনে ইউটিউবে বিনিয়োগে রাজি হলেন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান স্কুইয়া ক্যাপিটালিস্ট। নভেম্বর মাসে ‘ব্রডকাস্ট ইওরসেলফ’ স্লোগানে উন্মুক্ত করা হলো ইউটিউব।
দ্রুত বাড়তে থাকলো ইউটিউব ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ২০০৬ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১ কোটি ১৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করলো স্কুইয়া ক্যাপিটাল।
জুলাইয়ে প্রতিদিন সাইটটিতে ৬৫ হাজার ভিডিও আপলোড ঘোষণা দিলো প্রতিষ্ঠানটি। একই বছরের অক্টোবরে ঘটল ইউটিউবের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ১৬৫ কোটি ডলারে ইউটিউব সাইটটি কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিলো সার্চ ইনজিন জায়ান্ট গুগল ইনকর্পোরেশন। ইউটিউব ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি চূড়ান্তভাবে শেষ হলো একই বছরের নভেম্বরের ১৩ তারিখে। ইউটিউবের ৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের শেয়ার পেলেন জাভেদ।
২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই ৬শ কোটি ভিডিও দেখেছেন ব্যবহারকারীরা। অ্যালেক্সা র্যাংকিং-য়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভিজিট হওয়া ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে ইউটিউব রয়েছে ৩য় স্থানে। ইউটিউব ছাড়াও আরো বেশ কিছু প্রকল্পে কাজ করেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুদ এ প্রকৌশলী। পোর্টেবল ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স, সলভিং ড্যাড পাজল, থ্রিডি স্প্রিং সিমুলেশন, রোবোটিক ওয়েবক্যাম, রেডিওসিটি ইনজিন, রে-ট্রেসার, লাইফ থ্রিডি, কোয়াক ২ মডেল ভিউয়ার সহ বেশ কিছু প্রজেক্টের উদ্ভাবকও জাভেদ করিম।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ইউটিউবে প্রতিদিন ৩ মিলিয়ন অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক লোক বিভিন্ন ভিডিও দেখে থাকেন।
প্রতি মিনিটে এ সাইটে ৩৫ ঘন্টার ভিডিও আপলোড হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য মতে এটি ৪৮ ঘন্টায় গিয়ে পৌছেছে। ফলে গত ৬ মাসে ভিডিও আপলোডের পরিমান বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। বর্তমানে পৃথিবীর ২২টি ভাষায় ইউটিউব ব্যবহার করা যায়।
রেফারেন্স
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।