__ এই লেখাটি তৈরী করেছেন তানভির আহমেদ রনী
প্রথম প্রকাশঃ ফেসবুক
(এই পোস্ট এ ইসলাম কে খাট করার চেষ্টা করা হচ্ছে না , শুধু কিছু মুসলিম এর একটি ভুল ধারণা ভাঙ্গা হয়েছে... তারপরও কারও ধর্মানুভূতি অত্যাধিক স্পর্শকাতর হলে এই লেখা পড়বেন না, ধন্যবাদ। )
Atheist দের প্রতি আস্তিক (তথা মুসলিমদের) ১টি প্রচলিত প্রশ্ন হচ্ছে “আপনি তো এখন আর মুসলিম নেই তাহলে কেনও এখনও মুসলিম নাম চেঞ্জ করছেন না ? ”
প্রায়ই এই প্রসঙ্গে কিছু আবালীয় মুসলিম (সব মুসলমানরা নন) atheist দের ব্যক্তিগত আক্রমণ করার চেষ্টা করে এবং Atheist এর নামের উৎস নিয়ে ক্যাচাল করে আলোচনা ভিন্ন প্রসঙ্গে ঘোরানোর চেষ্টা করে। প্রসঙ্গটি গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ছাগুরা অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রসঙ্গটি নিয়ে Atheist দের বিরক্তি উৎপাদন করে। এই লেখাটি লেখার মূল উদ্দেশ্য এটাই।
অর্থাৎ, তখন যে তর্ক শুরু হয় আস্তিক-নাস্তিক দের মাঝে তা হচ্ছে: "নাম ধর্মের নাকি ভাষার " ?
তারা দাবি করেন যে নাস্তিক / atheist / Agnostic / skeptic / rationalist ইত্যাদি হওয়ার পরে তাদের নাম পালটিয়ে রাখা উচিৎ ঠিক যেমন এক ধর্ম থেকে আরেক ধর্মে দীক্ষিত হলে নাম পালটিয়ে রাখা হয়।
তাদের দাবির পিছনে যথেষ্ট যুক্তি তারা দিতে পারেন কিন্তু সেই যুক্তি কতটুকু যৌক্তিক তা নিয়ে কিছু যুক্তি দিতে চাই।
১। ইসলামের প্রচলন শুরু হয় ৬১০ খৃষ্টাব্দ থেকে (নবীর বয়স যখন ৪০)। তখন নবী সহ যে সকল মানুষ জীবিত ছিল তারা জন্মের সময় কি মুসলমান ছিল ? ছিলনা। তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে কি তাদের নাম পাল্টে ফেলেছিলও ? না ফেলেনি।
তাদের জন্মের সময় তাদের যে নাম রাখা হয়েছিলো সেই নাম সমূহ কি আদৌ ইসলামী নাম হতে পারে ? বরং যদি দাবি করা হয় যে ঐ সকল নাম খাটি প্যাগানদের নাম তাহলে তা অস্বীকার করার কোন পথ খোলা থাকবে না। বর্তমানে বিভিন্ন মুসলিম পরিবারে সন্তানের নাম রাখা হয় বিখ্যাত সাহাবিদের নামে। সেইসব সাহাবিদের জন্মের সময় কি তাদের ইসলামী নাম ছিল ? অবশ্যই তাদের নাম রাখা হয়েছিলো প্যাগান ধর্ম, ঐতিহ্য অনুসরণে। “আব্দুল্লাহ” নামটি সবথেকে বেশি সহী ইসলামী নাম। আব্দুল্লাহ ছিলেন নবীজির পিতা যিনি নবীজির জন্মেরও আগে মারা যান।
খেয়াল রাখতে হবে, আব্দুল্লাহ পৌত্তলিক হিসেবেই মারা যান। আব্দুল্লাহ নামের অর্থ আল্লাহর দাস। কিন্তু কোন আল্লাহর দাস ? তখনও ইসলামের জন্মও হয়নি এবং ইসলামের প্রচারকেরও জন্ম হয়নি। ইসলামের পূর্ববর্তী ইহুদি খৃষ্টান ধর্মেও আল্লাহ বলে কোন শব্দই নেই। এই আল্লাহ সেই প্যাগানদের মধ্যে প্রচলিত আল্লাহ নামের দেবতা যে লাত, মানাত ও উজ্জাতের পিতা।
নবী ও সাহাবিরা নাম কোন ধর্মের পরিচয় বহন করত বলে মনে করতেন না। কেননা নামকে তারা যদি ধর্মের পরিচয় বহনকারী হিসেবে ভাবতেন তাহলে ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথে তারা তাদের পুরনো পৌত্তলিক ধর্মের নাম বাদ দিয়ে নতুন ইসলামিক নাম নিতেন। অর্থাৎ, "নবী ও সাহাবিরাই প্রমাণ দিয়ে গেছেন "নাম কোন ধর্মের হয় না... " এরপর কি আরও প্রমাণের দরকার আছে ?"
২। মাত্র ২০ জনের মত সাহাবি নাম চেঞ্জ করেছেন কারণ তাদের নামগুলো শিরক ও বাজে অর্থ এর মত দোষে দুষ্ট ছিল ।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেছেন, “পিতার উপর নবজাতকের হক হলো তার জন্য সুন্দর নাম রাখা” (মুসলিম)।
হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যার (রাঃ)থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তার দাদা হাজন রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর খেদমতে গেলে তিনি জিজ্ঞেস করেন তোমার নাম কি? তিনি বললেন আমার না ম হাজন (শক্ত)। নবীজি (সাঃ) বললেন তোমার নাম হওয়া উচিত “সাহল”(সহজ সরল)।
(সহিহ বুখারি গ্রন্থ ৮ এর ২১৩ নং হাদিস ও মেশকাত শরীফ)
সহিহ মুসলিম শরীফ এ নাম সংক্রান্ত অনেক গুলো হাদিস আছে।
১০০৬,১০০৭,১০০৮,১০০৯, ১২৫১ নং হাদিস পড়ে নিন।
নবী আসিয়াহ (অর্থঃ অবাধ্য / দুর্বল) এর নাম পরিবর্তন করে বললেন আজ থেকে তুমি হচ্ছ জমিলাহ (অর্থঃ সুন্দর ও সাস্থবান) (মুসলিমঃ ১০০৭)
“হযরত আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হযরত জুওয়ারিয়া (রাঃ) এর পূর্ব নাম ছিল ‘বাররাহ’।
রাসূল (সাঃ) তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন জুওয়ারিয়া । ” (মুসলিমঃ ১০০৮)
খেয়াল করে পড়ুন পাঠক, নবী নিজেই ইসলামিক নাম রাখতে বলেননি, বলেছেন সহজ, সুন্দর, অর্থবোধক নাম রাখতে।
তারপরও যদি কেউ গোঁ ধরতে চান তাকে আমি বলব কোরানের আয়াত বা হাদিস হাজির করতে... যেখানে বলা আছে “ইসলামিক নাম রাখার কথা” ... আমি আবারও বলছি , সবখানেই বলা হয়েছে “ সহজ, সুন্দর, অর্থবোধক নামের কথা ”।
৩। একটা নাম কোন বিশেষ গোষ্ঠী বারবার ব্যাবহার করতে থাকলে লোকজন সেই নাম ধারীকে সেই গোষ্ঠীর ভাবা শুরু করে... এইটা ঠিক।
কিন্তু তার মানে এই না যে নামটা সেই গোষ্ঠীর একার সম্পত্তি হয়ে গেল। । আর কেউ সেটা রাখতে পারবে না বা ব্যাবহার করতে পারবে না। যেমনঃ “খান” নামটি তো মঙ্গোলিয়ান নাম কিন্তু মুসলমান রা এটিকে এত ব্যাবহার করেছে যে এখন কেউ এই নাম বললে সাধারণত ভাবা হয় সে একজন মুসলিম। কিন্তু তার মানে এই না যে “খান” নামটি এখন মুসলমান ছাড়া আর কারও হতে পারবে না...
৪।
নাম একজন মানুষের ধর্মের পরিচয় বহন করে এই ভুল ধারণাটা আসলে মুসলমানদের মধ্যে গেঁথে বসেছে হুজুরদের কারণে । লোকজন সন্তান জন্মের পর হুজুরদের কাছে গিয়ে যখন ইসলামিক নাম চায় তখন হুজুররা সাধারণত আরবি ডিকশনারি খুলে একটা শব্দ ধরিয়ে দেয় বা সাহাবীদের নাম ধরিয়ে দেয় (যদিও সাহাবীদের এই নাম কিন্তু তারা পৌত্তলিক থাকার সময় থেকেই যেটা ছিলও সেই নাম)। এবং তারপর হুজুররা বলে “নেন, আপনার সন্তানের জন্য সহীহ ইসলামিক নাম খুঁজে দিলাম” । অতঃপর সেই অভিভাবক তার সন্তানের সহীহ ইসলামিক (পড়ুন আরবি) নাম নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
ইদানীং অবশ্য সহীহ ইসলামিক নাম এর বই বের হয়েছে যা আসলে আরবি-বাংলা ডিকশনারি থেকে সংকলিত কিছু শব্দ সম্ভার মাত্র।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইসলাম ধর্ম আরবি ভাষায় প্রচলিত হয়েছে বলেই আরবি ভাষার সব শব্দ ইসলামের একার সম্পত্তি হয়ে যায় না। এবং অভিভাবকরা সহিহ ইসলামিক নাম ভেবে সন্তানের যে নাম রাখছেন তা আসলে সাধারণ আরবি শব্দ ছাড়া কিছুই না।
৫। নাম / শব্দ যে কোন ধর্মের হয়না তা ১টা উদাহরণের মাধ্যমে বোঝান যায়।
ধরুন, বাংলাদেশের এই খারাপ আর্থ-সামাজিক অবস্থা দেখে কোন এক সমাজ সংস্কারক বাংলাদেশে বাংলা ভাষার মাধ্যমে “অং-বং” নামে কোন ধর্ম প্রচার করলেন , কিছু বাঙালি অনুসারীও পেলেন... এখন কিছুদিন পর এই অং-বং ধর্মের অনুসারীরা যদি দাবি করেন যে অং-বং ধর্ম যেহেতু বাংলা ভাষায় প্রচারিত হয়েছে অতএব বাংলা ভাষা তাদের নিজেদের, সব বাংলা শব্দ নাম তাদের নিজেদের এবং তারা যদি দাবি করেন “অং-বং” ধর্মের অনুসারীরা ছাড়া আর কেউ বাংলা নাম রাখতে পারবে না ... তাহলে ব্যাপারটা কি হাস্যকর লাগবে না ?
একইভাবে , ইসলাম যেহেতু আরবি ভাষায় প্রচার হয়েছে , সুতরাং মুসলিম রা ছাড়া আর কেউ আরবি নাম রাখতে পারবে না... তাহলে ব্যাপারটা কি হাস্যকর লাগে না ?
পাকিস্তানি শাসকরাও বাংলা কে হিন্দুর ভাষা হিসেবে ভাবত...
১৯৫২ / ১৯৭১ এ এই ভুলের মাশুল তারা দিয়েছে...
৬।
এরাবিক নাম দেখলেই অনেকে ভাবতে শুরু করেন সেটা মুসলিম নাম । তা ঠিক নয়। আরবের মুসলমানরা সহ অনেক খ্রিস্টান-ইহুদি – কাফির সবার নাম এখনও একইরকমই হয়।
প্রমাণঃ
নবী মুহাম্মদ এর সাহাবি ও তার বিরোধীতাকারি কাফেরদের নামে আপনি difference খুঁজে পাবেন না। একই নামের সাহাবি ও কাফের দুইটাই ছিল।
উদাঃ খালেদ বিন ওয়ালিদ (মুসলিম) ও ওয়ালিদ বিন মুঘাইরা ( কাফের)। মুনাফিকদের সর্দার এরও নাম ছিল আব্দুল্লাহ বিন উবায় ইবন সালুলি। আরও একজন ইহুদী মুনাফিক এর নাম ছিল আব্দুল্লাহ ইবন সাবার।
৭। কোন নাম শুধুমাত্র তখন ই ধর্মের একার শব্দ হবে যখন সেটা হবে ধর্মীয় মৌলিক শব্দ (অর্থাৎ ধর্মটি প্রচলনের আগে সেই শব্দটি কোন ভাষায় প্রচলিত ছিলও না...) এরকম মৌলিক শব্দ ইসলামে খুব বেশী নেই... আমি একটাও পাইনি।
(এই বিষয়ে আমার ভুল হতেও পারে এবং ইসলামের মৌলিক শব্দ কারও জানা থাকলে আমাকে বলুন, তাহলে এই নোট এ সেটা Add করে দিব। )
আল্লাহ, আল্লাহর ৯৯টি নাম, মুহাম্মদ, আহমদ , ইত্যাদি কোনটাই মৌলিক শব্দ নয়। সবগুলোই ইসলাম আসার আগে থেকেই পৌত্তলিক আমল থেকেই প্রচলিত ছিল।
সাহাবিদের মধ্যে প্রায় ১৫০ জনের নাম ছিল আব্দুল্লাহ ও শতাধিক সাহাবির নাম ছিল আব্দুর রাহমান। দুইটা শব্দই ইসলাম আসার আগে থেকেই প্যাগান দের মাঝে বহুল প্রচলিত শব্দ ছিল।
কারও নাম যদি কোন ধর্মের এইরকম মৌলিক শব্দ হয় (অর্থাৎ ধর্মটি প্রচলনের আগে সেই শব্দটি কোন ভাষায় প্রচলিত ছিলও না...) শুধুমাত্র তখনই বলা যাবে নামটা হচ্ছে সেই ধর্মের।
৮। উপরের এর যুক্তি গুলোতে স্পষ্ট হয়ে যায় ইসলামিক না বলে কিছু নেই... সবই এরাবিক নাম। তারপরও কেউ যদি জোর করেই বলতে চান যে “ নাম হচ্ছে ধর্মের একার সম্পত্তি ... নাস্তিকরা ধর্মত্যাগের পরও মুসলিম নাম নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে কেন ? ” তাহলে আমি বলব ... নাস্তিক রা / সংশয়বাদীরা আসলে নবী মুহাম্মদ ও তার সাহাবীদেরই আদর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন ... (নবী সাহাবিরাও ধর্ম ত্যাগের পর নাম চেঞ্জ করে নাই, নাস্তিক / সংশয়বাদীরাও ধর্মত্যাগের পর নাম চেঞ্জ করবে না। )
৯।
কেউ যদি আমার নিজের নাম নিয়েও প্রশ্ন তুলতে চান তবে তাদের বলব আমার নাম এর তিনটি শব্দ তিনটি উৎস থেকে এসেছেঃ
তানভির – ভারতীয়
আহমদ – এরাবিক
রনি – অ্যাংলো স্যাক্সন
অন্য সবার মতই আমার অভিভাবকও সহিহ ইসলামিক শব্দ ভেবেই আহমদ শব্দটি আমার নামের মাঝে জুড়ে দিয়েছিলেন এবং অন্য সবার মতই তাঁরাও হয়ত জানতেন না আহমদ শব্দটি ইসলামিক নয়। ইসলাম আসার আগে থেকেই আরবের প্রচলিত শব্দ।
১০। লেখাটি ছাগুদের উদ্দেশ্যেই লেখা... নাম নিয়ে ছাগুদের টেনশন করার কারণ অবশ্য আছে, ইসলামের প্রাথমিক যুগ এ মুসলিম সেজে অনেক ইহুদিরা ইসলামের ক্ষতি করার চেষ্টা করত। তাই তারা ভাবে বর্তমানকালেও কেউ মুসলিম সেজে ইসলামের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে কিনা।
কিন্তু তারা মুসলিম সেজে ইসলামের ক্ষতি করা আর কারও এরাবিক নাম থাকার পার্থক্য ধরতে পারে না।
---------------------------------------------------
মূল লেখাটি পড়ুনঃ ফেসবুক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।