আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইসলামিক বিনোদন ।

ধর্ম নিয়ে যে কোনো প্রকার যৌক্তিক সমালোচনা করা যেতেই পারে। কিন্তু ইসলামিস্টরা তা মেনে নিতে পারেন না। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম নেই, যা নিয়ে সমালোচনা হয়নি। কিন্তু তার মানে এই না যে, এসবই ধর্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যেমন, কেউ যদি ইসলাম ধর্ম নিয়ে কোনো প্রকার সমালোচনা করে তবে তা ইহুদি, নাসারা, নাস্তিকদের ষড়যন্ত্র বলে চালিয়ে দেন হালের ইসলামিস্টরা।

কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখেন না, তাদের এই ধরনের দাবী আমাদের বিনোদন দান করে, এ জন্য তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য। এই ইসলামিস্টরা ভুলে যান, আস্তিকতা মানেই নির্দিষ্ট কোনো ধর্মে বিশ্বাসীকেই বোঝায় না। আর বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে মুসলিমরা আস্তিকতা বলতে শুধু মাত্র ইসলাম ধর্মকেই বোঝায়, মানে তারা আস্তিকতাকে ইসলাম ধর্মের মাধ্যমেই ব্যাখ্যা করতে চায়। এই মুসলিমদের আরও একটি বিনোদন মূলক দাবী নেট খুললেই দেখবেন---ব্লগে, ফেসবুকে, টুইটারে, চ্যাটরূমে আর কোন ধর্মের প্রতি আক্রমণ নাই। শুধু ইসলামের উপর এই ধরনের হাস্যকর দাবী করার পূর্বে তারা একবারও ভেবে দেখেন না যে, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী, তো এখানে ইসলামের বর্বরতা নিয়ে সমালোচনা হবে না, তো কী নিয়ে হবে? তথাপি বিভিন্ন ফোরামে হিন্দু, ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম নিয়েও তুমুল আলোচনা হয়েছে এবং বেশ কিছু আলোচনায় আমি নিজেও ছিলাম; কিন্তু ইসলামিস্টরা তা উল্লেখ না করে বলে বেড়ায় শুধু ইসলাম ধর্ম নিয়েই আলোচনা হয়।

পৃথিবীতে এখনো তিন হাজারের ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী আছে। মুসলিমরা যখন আস্তিকতা ব্যাখ্যার জন্য ইসলাম নিয়ে আসে, তখন নাস্তিকরা নিশ্চয়ই উগান্ডার জঙ্গলের ভেতরের কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্ম নিয়ে এসে এর অসারতা প্রমাণ করবে না। তাছাড়া আপনারা অ্যামেরিকান, ইংল্যান্ড এর বিভিন্ন হিউম্যানিস্ট, নাস্তিকদের বিভিন্ন ফোরামে ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন, সেখানে কোন ধর্ম নিয়ে বেশী আলোচনা হচ্ছে। অবশ্যই ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম নিয়ে সেখানে খুব বেশি আলোচনা হচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কই, ওখানে কোনো ক্রিশ্চিয়ানরা তো বলে বেড়ায় না এসবই হচ্ছে ক্রিশ্চিয়ান ধর্মের বিপক্ষে নাস্তিক কিংবা মুসলিমদের ষড়যন্ত্র! এবার দেখা যাক যাক ইসলামিস্টদের সবচেয়ে হাস্যকর বিনোদনটি নিয়ে এবং তা হচ্ছে কোরান নাকি একটি বিজ্ঞানময় গ্রন্থ।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে, আজ পর্যন্ত কোথাও কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক জার্নালে কিংবা কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক তত্ত্বে কিংবা কোনো প্রকার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে কোরানের কোনো রেফারেন্স ইউজ হয়নি। ইসলামিস্টদের মতে - বিজ্ঞানের এই বিষয়গুলো নাকি কোরানে সাংকেতিক আকারে রয়েছে। একমাত্র কামেল মানুষরাই তা বের করতে পারবে। এর মানে হচ্ছে: আপনি কোরান পড়ে যতক্ষণ পর্যন্ত এর ভেতর থেকে বিজ্ঞান বের করতে না পারবেন, ততোক্ষণ পর্যন্ত আপনি কোরান কিংবা কোরানের অর্থ বুঝতে পারেননি। আসলে তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের কারণে এবং বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের কারণে ধর্মগুলো বর্তমানে এক প্রকার কৌতুকে পরিণত হয়েছে, যার কারণে ধর্মবাদী এবং ধর্মব্যবসায়ীরা এক নতুন কৌশল অবলম্বন করেছেন নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখার জন্য।

এই নতুন কৌশলটি হচ্ছে - বিজ্ঞানের মাধ্যমে ধর্মকে ব্যাখ্যা করা। এই উপমহাদেশে জাকির নায়েক খুব পরিচিত এ ব্যাপারে। বেচারা বিজ্ঞানের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে কোরানের অর্থই পরিবর্তন করে ফেলেছেন যার কারণে অন্যান্য ইসলামিক পণ্ডিতেরা তাকে ইতিমধ্যেই কাফের বলে অবহিত করেছেন। তাছাড়া জাকির নায়েকের মিথ্যাচার নিয়ে বলতে গেলে আলাদা করে পোস্ট দিতে হবে এবং তা নব্য কিছু ইসলামিস্টদের কাছেই অতি চর্বিত চর্বণ বলে গণ্য হবে। কারণ হচ্ছে, এখন জাকির নায়েক ধরা খেয়ে গেছে ।

আপনারা হারুন ইয়াহিয়া , ডঃ মরিস বুকাইলি এদের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। এই ভদ্রলোকেরাও বিজ্ঞানের মাধ্যমে কোরানকে ব্যাখ্যা করার অনেক চেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু বিজ্ঞানীমহলের কাছে ধরা খেয়ে তাদেরকেও খোয়াড়ে ঢুকতে হয়েছে । এখন ইসলামিস্টরা কুলকিনারা হারিয়ে নতুন আরেক ধরনের বিনোদনের অবতারণা করেছেন এবং তা হচ্ছে দুনিয়ার কোন কোন অঞ্চলের মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছেন, তা ভিডিও করে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করা। কিন্তু তারা একবারও ভেবে দেখে না, কোনো মানুষ যে কোনো সময়ই এক ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। এতে করে কোনো ধর্মের অসারতা প্রমাণ হয় না, যেহেতু ধর্ম বিষয়টা সম্পূর্ণই অলৌকিক একটি বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে।

ভাবতেই কতটা বিনোদিত হই, ইসলামিস্টরা আজকাল তাদের ইসলাম ধর্মের গ্রহণযোগ্যতা পাবার জন্য দুনিয়ার কোন কোন বিখ্যাত ইহুদী, ক্রিশ্চিয়ান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তা ফলাও করে প্রচার করে। অথচ অন্য কোনো ইহুদি, ক্রিশ্চিয়ান যখন ইসলাম ধর্ম নিয়ে যৌক্তিক সমালোচনা করে, তখন হয়ে যায় তা ষড়যন্ত্র। আর আমার মত নাস্তিক, অজ্ঞেয়বাদী, সংশয়বাদীরা যখন ইসলাম ধর্ম এবং মোহাম্মদের চতুরতা, ভণ্ডামি, বর্বরতা নিয়ে সমালোচনা করি, তখন সেটা হয়ে যায় ইহুদি, ক্রিশ্চিয়ানদের গভীর ষড়যন্ত্র। তাছাড়া প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করছে। যখন তাদের মত করেই এসব তাদের সামনে আনা হয়, তখন এসব হয়ে যায় ফেইক এবং তথাকথিত ইহুদি-নাসারাদের ষড়যন্ত্র।

আমার চোখের সামনে যে কত ছেলেপেলে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হয়ে গেছে, তা যদি তাদের মত করে ভিডিও করে তাদের সামনে উপস্থাপন করি, তবে তা-ও তাদের কাছে ইহুদি নাসারাদের ষড়যন্ত্র বলে বিবেচিত হবে। কিছুদিন পূর্বে তারা প্যারিস হিলটনের ইসলাম গ্রহণের কথা চারদিকে ফলাও করে প্রচার করেছে। যখন আবার এই প্যারিস হিলটনই ইসলাম ত্যাগ করে তখন তারা চুপ হয়ে যান এবং তাদের এক কামেল লোক এই বলে বিবৃতি দেন যে, কে ইসলাম গ্রহণ করল কিংবা কে ইসলাম ত্যাগ করল, এতে করে ইসলাম ধর্মের কিছুই যায় আসে না। অবশ্যই তিনি দারুণ কথা বলেছেন, কিন্তু এই বিবৃতিটি তিনি তখনই দিতে বাধ্য হলেন, যখন তাদের ভাষায় কোনো বিখ্যাত কেউ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে চলে গেলেন। শুধু তাই না, এই ইসলামিস্টরা যে কতটা ভণ্ড হয়, তার একটা উদাহরণ দেই।

যখন খবর আসল অ্যামেরিকা চাঁদে মানুষ পাঠিয়েছে এবং নীল আর্মস্ট্রং হচ্ছেন চাঁদে পা রাখা প্রথম মানুষ, তখন তারা চারদিকে প্রচার করতে লাগলেন যে, নীল আর্মস্ট্রং চাঁদ থেকে ফিরে এসে মুসলিম হয়ে গেছে। কারণ হিসেবে তারা ব্যাখ্যা করেছে, তাদের নবী মোহাম্মদ নাকি আঙুল দিয়ে চাঁদকে দ্বিখণ্ডিত করেছিলেন। তো নীল আর্মস্ট্রং নাকি চাঁদে পৌঁছে দেখতে পেল যে চাঁদ আসলেই দ্বিখণ্ডিত এবং সেখানে নাকি তিনি আজানের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন। পাঠক একটু ভেবে দেখুন, এর চেয়ে বড় বিনোদন আর কী হতে পারে? সারা মুসলিম বিশ্বেই ইসলামিস্টরা এই মিথ ছড়িয়ে দিল আর বলদ মুসলিমরা তা বিশ্বাস করতে লাগল। এই খবর নীল আর্মস্ট্রং-এর কানে যাওয়ার পর বেচারা চিঠি লিখে এর প্রতিবাদ করেছিলেন।

ইসলামিক দেশের এম্বাসিগুলোতে চিঠি লিখে তিনি এই ধরনের ভণ্ডামির প্রতিবাদ করেছিলেন । সবশেষে বলতে চাই, বর্তমান সময়ে ধর্মগুলো বিনোদনের উৎসে পরিণত হয়েছে। আর ইসলাম তো বিনোদনের মহাসাগর। এসব নিয়ে লিখতে বসলে এক নতুন মহাকাব্যের জন্ম হবে। আর নাস্তিকতা বিষয়টা নতুন কোনো বিষয়ও না।

বর্তমান সময়ে হয়ত তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নাস্তিক, সংশয়বাদী মানুষগুলো এক হতে পেরেছে এবং একটিভিজম চালাচ্ছে, যার কারণ বিষয়টা সবার নজরে পড়ে গেছে এবং ধর্মবাদীদের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। আপনাদের জন্য সুখবর হচ্ছে, খুব বেশী দিন নেই, আগামি কয়েক শতাব্দীর মধ্যেই আপনাদের তথাকথিত ধর্মগুলো জাদুঘরে স্থান করে নেবে। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.